ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

মোবাইল ব্যাংকিং

প্রকাশিত: ০৬:০৩, ৫ জুলাই ২০১৭

মোবাইল ব্যাংকিং

ব্যাংকিং সেবায় অপব্যবহার ঠেকাতে বাংলাদেশ ব্যাংক কড়াকড়ি আরোপ করেছে। ইতোমধ্যে তিন কোটির বেশি মোবাইল এ্যাকাউন্ট বন্ধ করা হয়েছে। যে কোন কার্যক্রম চালাতে হয় নিয়মনীতির মধ্যে। এখানে অস্বচ্ছতা ও অপব্যবহারের কোন সুযোগ নেই। সর্বশেষ হিসাব মতে দেশে মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসের গ্রাহক সংখ্যা ছাড়িয়েছে ৫ কোটি ২৬ লাখ। এর মধ্যে ৩ কোটি ১২ লাখ ৩৮ হাজার হিসাবই বন্ধ রয়েছে। বাকি ২ কোটি ১৪ লাখ সক্রিয় হিসাব দিয়ে মে মাসে গড়ে লেনদেন হয়েছে ৮৪৪ কোটি টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে দেশের ১৯টি ব্যাংক মোবাইল ব্যাংকিং করার অনুমোদন পেলেও ১৭টি ব্যাংক বর্তমানে মোবাইল ব্যাংকিং চালু করেছে। এর মধ্যে ব্র্যাক ব্যাংকের সহযোগী প্রতিষ্ঠান ‘বিকাশ’ এবং ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের ‘রকেট’ মোবাইল ব্যাংকিং এ সেবায় এগিয়ে রয়েছে। বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের ইতিবাচক ব্র্যান্ডিংয়ে মোবাইল ব্যাংকিং বা এমএফএসের (মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস) গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। গ্রাহক সংখ্যার দিক থেকে বাংলাদেশের অবস্থান বর্তমানে বিশ্বে শীর্ষস্থানীয় বলে গণ্য করা হয়। দৈনিক লেনদেন কোটি কোটি টাকা। বছরে দুই লাখ ৬০ হাজার কোটি টাকার ওপরে লেনদেনেরও নজির রয়েছে। সব শ্রেণি-পেশার মানুষ এ সেবার সুফল ভোগ করছে। সবচেয়ে বেশি উপকৃত হয়েছে শ্রমজীবী মানুষ। ফেরিওয়ালা বা ফুটপাথের দোকানদার, মুটে-মজুর, বাস-ট্রাকের ড্রাইভার, রিক্সাওয়ালা সারাদিন পরিশ্রম করে বিকেল বেলা কোন এজেন্টের কাছে গিয়ে বিকাশ করে টাকা পাঠিয়ে দিতে পারেন বাড়িতে। তারা দেখছেন স্ত্রী-পরিবার নিরাপদে টাকা পেয়ে যাচ্ছে। গার্মেন্টসের লাখ লাখ নারী কর্মী মোবাইলে বেতন পান। তার একটা অংশ মোবাইলেই গ্রামে পাঠান। টাকা পাঠান বুয়া বা গৃহকর্মীরা পর্যন্ত। এটা অনস্বীকার্য যে, মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে গ্রামীণ অর্থনীতিতে গতি সৃষ্টি হয়েছে। প্রবাসীদের প্রেরিত অর্থ গ্রামের আত্মীয়স্বজনের কাছে সরাসরি পৌঁছে দিতে মোবাইল ব্যাংকিং ভূমিকা রাখছে। সিম রেজিস্ট্রেশন হওয়ায় মোবাইল ব্যাংকিংয়ের ক্ষেত্রে নিরাপত্তা বেড়েছে। আর্থিক লেনদেনের ক্ষেত্রে আমাদের দেশে মোবাইল ব্যাংকিং ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। নগদ টাকা বহন করা ঝুঁকিপূর্ণ। তা ছাড়া কারও কাছ থেকে টাকা পেতে ও পাঠাতে আগে অনেক সময় লাগত। দেশে মোবাইল ব্যাংকিং দ্রুত টাকা প্রাপ্তি ও পাঠানোর সুযোগ করে দিয়েছে। তবে প্রযুক্তিনির্ভর এ লেনদেনের কিছু ঝুঁকিও রয়েছে। এসব ক্ষেত্রে গ্রাহকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা জরুরী। প্রযুক্তি এখন রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের হাতিয়ার। আজ মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে আমাদের দেশে ব্যাপক অর্থনৈতিক উন্নয়ন হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে মোবাইল অপারেটররা এ উন্নয়নের অন্যতম অংশীদার। এই দীর্ঘ সময়ে মোবাইল অপারেটরদের অনেক সফলতার মধ্যে একটি বড় সফলতা হলো তারা মোবাইল ব্যাংকিংয়ের গ্রাহকদের আস্থা অর্জনে সফল হয়েছে। সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনায় বলা হয়েছে, একজন ব্যক্তি একটি সিম দিয়ে যে কোন মোবাইল ব্যাংকিং সেবায় একটি মাত্র হিসাব চালু রাখতে পারবেন। নির্দেশনা মোতাবেক মোবাইল সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের তথ্য হালনাগাদ করায় নিষ্ক্রিয় হিসাবের সংখ্যা বেড়েছে এটা সত্য। তবে বন্ধ হিসাবের সংখ্যা বাড়লেও দৈনিক গড় লেনদেনের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে এমন কথা শোনা যায়নি। আমরা আশা করব, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দিকনির্দেশনা ও নিয়মনীতি মেনেই দেশে মোবাইল ব্যাংকিং আরও বিকশিত হবে এবং দেশের অর্থনীতির চাকা সচল রাখায় এটি কার্যকর ভূমিকা রাখতে সমর্থ হবে।
×