ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

নির্বাচনী অঙ্গীকার পূরণে

প্রকাশিত: ০৬:০২, ৫ জুলাই ২০১৭

নির্বাচনী অঙ্গীকার পূরণে

সঠিক সময়ে সঠিক কাজটি সম্পন্ন করার মধ্য দিয়ে দক্ষতা, যোগ্যতা ও কর্মকুশলতার পরিচয় মেলে। শ্রমনিষ্ঠার ক্ষেত্র হয় প্রসারিত। যদিও যথাসময়ে যথা কাজ নিষ্পন্ন না হলে ফলাফলে শূন্যতা যোগ হয়, বাড়ে সমস্যা। তথাপি যদি হয় কাজের গতি শ্লথ আর অবহেলা ও ঔদাসীন্য পায় প্রাধান্য। স্থবিরতা এসে আঁকড়ে ধরতে বাধ্য। নির্দিষ্ট কাজ নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সম্পন্ন করা না গেলে ক্ষেত্রগুলো ক্রমশ সঙ্কুুচিত হতে থাকে। অগ্রগতি ও উন্নতির সোপানগুলো তখন ধসে পড়ে। আর একবার ধস নেমে এলে তার ভেতর থেকে বেরিয়ে আসা হয়ে পড়ে দুষ্কর। দায়িত্ব ও কর্তব্যবোধের অঙ্গীকার পালনে বিঘœ ঘটার সম্ভাবনা থাকে সব সময়, যদি চালিকাশক্তি হয় অনিয়ন্ত্রিত। এই শক্তি যদি না হন কর্মে মনোযোগী, না হতে পারেন কর্মকুশলতায় দক্ষ, তাহলে অচল সময়ের রথ হতে পারে নিশ্চল, গতিহীন ধারায় নিমজ্জিত। কর্মেই মুক্তি বলে যারা আদ্যোপান্ত অকর্মার ধাড়ি বনে যান, তাদের হাতে পুষ্পিত ইমেজ সৃষ্টি হতে পারে না। বরং সব কাজ হয় ল-ভ-। দুর্ভোগ আর দুর্ভোগ এসে মাথা নাড়ে। দেখা দেয় দুর্যোগের ঘনঘটা। জনমানুষের অর্থে যারা প্রতিপালিত এবং জীবিকা নির্বাহ করেন তাদের কাজের গতি যদি হয় ধীর, দীর্ঘসূত্রতা বিরাজ করে সবকিছুতে, বিধিবিধান হয় উপেক্ষিত সেখানে স্বাভাবিকতা আর থাকে না কার্যকর। অর্জিত জ্ঞান কাজে লাগানো না হলে তাতে মরচে পড়া পেরেকের গানই বেজে ওঠে। অনুশাসন মেনে কর্মের বিস্তার ঘটানোর মধ্যে নিজস্ব দক্ষতা, কর্মকুশলতা, শ্রমনিষ্ঠা, যোগ্যতা প্রকাশিত হয় যেখানে, সেখানে নির্বিকারত্ব কোনভাবেই হতে পারে না গ্রহণযোগ্য। আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন এবং স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক প্রশাসন বিদ্যমান থাকলে দেশ ও জাতির অগ্রগতির সোপানও লাভ করে গতিময়তা। জনগণের জীবনযাত্রার মান হয় উন্নত, সম্পদের সুষম বণ্টনের ক্ষেত্র হয় প্রসারিত, শ্রেণী বৈষম্য হ্রাসের পথগুলো বিস্তৃত হয়। তাই আন্তরিকতার সঙ্গে কর্মসম্পাদন করাই হচ্ছে মুখ্য দায়িত্ববানদের জন্য। দুর্নীতি ও অপচয়মুক্ত সমাজ গড়ার প্রতিশ্রুতি বার বার শোনা গেছে। কিন্তু সেই লক্ষ্যে যথাযথ কাজ আর হয় না বলে এসবের মাত্রা বেড়েই যাচ্ছে। সুতরাং এসবের লাগাম টেনে ধরা যে দরকার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সে কথাটি আবার স্মরণ করিয়ে দিলেন সংশ্লিষ্টদের। আগামী বছরের ডিসেম্বরে একাদশ জাতীয় সংসদের নির্বাচন। তার আগে ক্ষমতাসীন সরকারের নির্বাচনী ইশতেহারের সব এজেন্ডা বাস্তবায়ন এবং উন্নয়নমূলক ও দৃশ্যমান সব কাজ সম্পন্ন করা সঙ্গত। জনগণও চায় তাদের দেয়া প্রতিশ্রুতিগুলো পূরণ করা হোক। কারণ তারা এই ইশতেহারের ভিত্তিতেই নির্বাচনে ভোট দিয়ে প্রার্থী নির্বাচন করেছে। তাই বাস্তবতায় তারা তো চাইবেই সেসব অঙ্গীকার যথাসময়ে যথাযথভাবে পূরণ হোক। আর এক্ষেত্রে যারা সরকারের চালিকাশক্তি তাদের দায়িত্বটাই সর্বাধিক। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই চালিকাশক্তি সচিবদের উদ্দেশ্যে বলেছেন, নির্বাচনের আগে সরকার ইশতেহারের সব এজেন্ডা বাস্তবায়ন করতে চায়। যেসব এজেন্ডা এখনও হয়নি বাস্তবায়ন তা এই সময়ের মধ্যে শেষ করতে হবে। এজন্য সচিবদের বিশেষ ভূমিকা রাখার ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন। মূলত সুশাসন বহাল ও প্রশাসন সচল রাখার ক্ষেত্রে মূল ভূমিকা তাদের। কিন্তু ঘুষ ও দুর্নীতির যে বিস্তার প্রশাসনিক কাজের ক্ষেত্রে ঘটছে তাতে সব উন্নয়ন ও অগ্রগতি ঘুণপোকার খাদ্যে পরিণত হতে বাধ্য। অন্য যে কোন দেশের তুলনায় উঠার সরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা বেশি। স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক প্রশাসন গড়ে উঠার ওপর নিহিত রয়েছে সব কল্যাণ ও মঙ্গলের আবাহন। আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে মন্ত্রী ও সচিবদের একযোগে কাজ করা বাঞ্ছনীয় যেখানে, সেখানে বিঘœ ঘটা মানেই সবকিছু ধ্বংসের দিকে ধাবিত হওয়া। প্রধানমন্ত্রী সচিবদের উদ্দেশে এবার যে কথা বলেছেন, একই ভাষ্য অতীতেও উচ্চারিত হয়েছে। গুরুত্ব দিয়ে কাজ করা হলে অগ্রগতি ও উন্নয়নের ধারা ব্যাপক গতি পেত। নির্বাচনী অঙ্গীকারও পূরণ হতো। দেশ ও জনগণ আশা করে, তাদের সেবায় নিয়োজিত যারা তারা দায়িত্ব পালনে নিজস্ব শক্তিমত্তার বিকাশ ঘটাবেন।
×