ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

বিচারপ্রার্থীদের দুর্ভোগ, বিড়ম্বনা

আটকে গেছে পঞ্চগড়ের সিনিয়র সহকারী জজের বদলি

প্রকাশিত: ০৬:০১, ৫ জুলাই ২০১৭

আটকে গেছে পঞ্চগড়ের সিনিয়র সহকারী জজের বদলি

আরাফাত মুন্না ॥ পঞ্চগড়ে সিনিয়র সহকারী জজ এজিএম মনিরুল হাসান সরকারের বদলি আপাতত আটকে গেছে। এই বিচারকের বিরুদ্ধে আইনজীবীদের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ করার অভিযোগ তুলে গত চার মাস ধরে তার আদালত বর্জন করে আসছেন জেলার আইনজীবীরা। ফলে ওই আদালতে থাকা এক হাজারেরও বেশি মামলার বাদী ও বিবাদী পড়েছেন বিড়ম্বনায়। সাধারণ বিচারপ্রার্থীদের ভোগান্তি লাঘবে সরকার ও সুপ্রীমকোর্ট এই বিচারকের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন বলে আশা সংশ্লিষ্টদের। সুপ্রীমকোর্ট সূত্রে জানা গেছে, পঞ্চগড় জেলা আইনজীবী সমিতির অভিযোগ সংযুক্ত করে গত ২৪ এপ্রিল এই বিচারককে চাঁপাইনবাবগঞ্জের জেলা লিগ্যাল এইড কর্মকর্তা হিসেবে বদলি করার প্রস্তাব তুলে ধরে সুপ্রীমকোর্টের পরামর্শের জন্য চিঠি দেয় আইন মন্ত্রণালয়। একই চিঠিতে আরও চার জনের বদলিযোগ্য মেয়াদ পূর্ণ হওয়ায় তাদের অন্যত্র বদলির প্রস্তাব দেয় মন্ত্রণালয়। পরে গত ১ জুন সুপ্রীমকোর্টের হাইকোর্ট বিভাগ এই চিঠির জবাবে চার জনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত জানালেও পঞ্চগড়ের সিনিয়র সহকারী জজ এজিএম মনিরুল হাসান সরকারের বিষয়ে কোন সিদ্ধান্ত জানায়নি। এ বিষয়ে সুপ্রীমকোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘এই বিচারকের বদলির বিষয়ে সরকারের প্রস্তাব অত্র কোর্টে প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।’ হাইকোর্ট বিভাগের এই সিদ্ধান্তের ফলে ওই বিচারকের অধীনে থাকা মামলাগুলোর ভবিষ্যত নিয়ে চিন্তিত সংশ্লিষ্টরা। মঙ্গলবার পঞ্চগড় জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক এ্যাডভোকেট এরশাদ হোসেন সরকার টেলিফোনে জনকণ্ঠকে জানান, তাদের বর্জন কর্মসূচী এখনও চলমান। এই বিচারককে পঞ্চগড় থেকে না সরানো পর্যন্ত ওই আদালতে কোন আইনজীবী যাবেন না। ওই আদালতে থাকা বিচারপ্রার্থীদের ভোগান্তি দূর করতে সরকার ও সুপ্রীমকোর্ট দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি। গত ২৪ এপ্রিল সুপ্রীমকোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেলকে পাঠানো আইন ও বিচার বিভাগের সিনিয়র সহকারী সচিব মোঃ শাহাবুদ্দিন স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে বলা হয়, ‘পঞ্চগড় জেলা আইনজীবী সমিতি জেলা জজশীপের সিনিয়র সহকারী জজ এজিএম মনিরুল হাসান কর্তৃক প্রকাশ্য এজলাসে উচ্চ চিৎকার, দুর্ব্যবহার এবং রুঢ় আচরণের কারণে গত ৮ মার্চ জরুরী সভায় সংশ্লিষ্ট বিচারকের আদালত বর্জনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করায় তাকে অন্যত্র বদলি করা আবশ্যক। জেলা আইনজীবী সমিতি কর্তৃক তার আদালত বর্জন হওয়ার প্রেক্ষিতে বিচার কাজের বিঘœতা এড়ানোর জন্য তার বদলি প্রয়োজন। ওই চিঠিতে বিচারক এজিএম মনিরুল হাসান সরকারকে চাঁপাইনবাবগঞ্জের জেলা লিগ্যাল এইড কর্মকর্তা হিসেবে বদলির প্রস্তাব দেয়া হয়। একই চিঠিতে আরও চারজন বিচারকেরও বদলির প্রস্তাব করে আইন মন্ত্রণালয়। এর মধ্যে গাইবান্ধার জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ জয়নাল আবেদীনকে পঞ্চগড়ের সহকারী জজ হিসেবে, বগুড়ার জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট শরিফুল ইসলামকে পঞ্চগড়ের সহকারী জজ হিসেবে, ঠাকুরগাঁওয়ের সিনিয়র সহকারী জজ এস রমেশ কুমার ডাগাকে গাইবান্ধার সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে এবং পঞ্চগড়ের জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট এস এম শফিকুল ইসলামকে গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ চৌকির জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে বদলির প্রস্তাব করা হয়। এই চিঠির জবাবে গত ১ জুন সুপ্রীমকোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের সহকারী রেজিস্ট্রার (বিচার) মোঃ তাছিম বিল্যাহ স্বাক্ষরিত একটি চিঠি পাঠানো হয় আইন ও বিচার বিভাগের সচিব বরাবরে। ওই চিঠিতে মন্ত্রণালয়ের পাঠানো পাঁচটি প্রস্তাবের মধ্যে দুইটির সঙ্গে একমত প্রকাশ করে সুপ্রীমকোর্টের হাইকোর্ট বিভাগ। মোঃ জয়নাল আবেদীন ও এস রমেশ কুমার ডাগার বিষয়ে আইন মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবের সঙ্গে একমত পোষণ করে হাইকোর্ট বিভাগ। এছাড়া শরিফুল ইসলাম ও এস এম শফিকুল ইসলামের বিষয়ে হাইকোর্ট বিভাগ মন্ত্রণালয়ের পাঠানো প্রস্তাবে একমত পোষণ না করে অন্যত্র বদলির পরামর্শ দেয়। আর আলোচিত বিচারক পঞ্চগড়ের সিনিয়র সহকারী জজ এজিএম মনিরুল হাসান সরকারের বিষয়ে মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাব হাইকোর্ট বিভাগে প্রক্রিয়াধীন আছে বলে সিদ্ধান্ত জানানো হয়। গত ৩০ জুন ‘পঞ্চগড়ে চার মাস আদালত বর্জন ॥ বিচার কার্যক্রম ব্যাহত’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয় জনকণ্ঠে। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, এই বিচারক সিনিয়র সহকারী জজ হিসেবে দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি জেলার তেঁতুলিয়া, আটোয়ারী ও দেবীগঞ্জ উপজেলার সহকারী জজ হিসেবে অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করছেন। আদালত বর্জনের কারণে এসব উপজেলার দেওয়ানি মামলার কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়েছে। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, পঞ্চগড় সদরের জজ আদালতের জ্যেষ্ঠ সহকারী জজ এজিএম মনিরুল হাসান সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে আদালতে বিভিন্ন সময় জ্যেষ্ঠ আইনজীবীদের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক ও অবিচারকসুলভ আচরণ করেন। গত ৭ মার্চ জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মাহবুব উল আলমের সঙ্গে অবিচারকসুলভ, অসৌজন্যমূলক আচরণ করায় আইনজীবীদের মাঝে ক্ষোভ দেখা দেয়। এ নিয়ে পরদিন ৮ মার্চ দুপুরে বিশেষ বর্ধিত সভা আহ্বান করে জেলা আইনজীবী সমিতি। সভায় সর্বসম্মতিক্রমে সিনিয়র সহকারী জজ এজিএম মনিরুল হাসানের অপসারণের দাবিসহ তার আদালত অনির্দিষ্টকালের জন্য বর্জনের ঘোষণা দেয়া হয়। একজন বিচারপ্রার্থীর বক্তব্য তুলে ধরে জনকণ্ঠের ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, চার মাস ধরে খালি ঘুরছি। কোন আইনজীবী আদালতে যাচ্ছেন না। খালি তারিখ পড়ছে। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, সরকারী কৌঁসুলি (জিপি) এ্যাডভোকেট আফজাল হোসেন বলেন, আইনজীবীদের দীর্ঘদিন আদালত বর্জনের ফলে বিচারপ্রার্থীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।
×