ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

একাত্তরের শব্দসৈনিক সুব্রত সেনগুপ্ত আর নেই

প্রকাশিত: ০৫:৫৮, ৫ জুলাই ২০১৭

একাত্তরের শব্দসৈনিক সুব্রত সেনগুপ্ত আর নেই

স্টাফ রিপোর্টার ॥ প্রিয় পৃথিবী ছেড়ে চিরবিদায় নিলেন স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শব্দসৈনিক সুব্রত সেনগুপ্ত। দীর্ঘদিন প্রোস্টেট ক্যান্সারে ভুগে মঙ্গলবার ভোর সাড়ে ছয়টায় রাজধানীর একটি বেসরকারী হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন এই গীতিকবি। এদিন বিকেলে পোস্তগোলা মহাশ্মশানে তার শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়। তিনি স্ত্রী জলি সেনগুপ্ত এবং দুই ছেলে শুভদীপ সেনগুপ্ত ও সঙ্গীত সেনগুপ্তকে রেখে গেছেন। সুব্রত সেনগুপ্তের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর। সুব্রত সেনগুপ্তের স্ত্রী জলি সেনগুপ্ত জানান, তার প্রোস্টেট গ্ল্যান্ডের ক্যান্সার ফুসফুসে ছড়িয়ে পড়েছিল বলে চিকিৎসকরা জানিয়েছিলেন। একই সঙ্গে স্পাইনাল কর্ড, বক্ষ্ম, মেডিসিন, নিউরো ও ইউরোলজি সমস্যাসহ শারীরিক নানা জটিলতায় ভুগছিলেন। মঙ্গলবার ভোর সাড়ে ৫টার দিকে হাসপাতাল থেকে আমার কাছে ফোন আসে। বলা হয়, তার অবস্থা খারাপের দিকে যাচ্ছে। পরে আমি হাসপাতালে পৌঁছার পর সাড়ে ৬টার দিকে তিনি আমাদের ছেড়ে চিরবিদায় নেন। এর আগে গত ৬ মে হঠাৎ সংজ্ঞাহীন হয়ে পড়লে সুব্রতকে প্রথমে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান বলে জানান জলি। পরে তাকে রাজধানীর একটি বেসরকারী হাসপাতালের নিবিড় পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রে (আইসিইউ) ভর্তি করা হয়। সেখানে তিনি নিউরোসার্জারি বিশেষজ্ঞ আনোয়ার উল্লাহ্ ও আবুল খায়েরের অধীনে চিকিৎসাধীন ছিলেন। ‘রক্ত চাই রক্ত চাই, অত্যাচারীর রক্ত চাই’, ‘ছুটরে সবাই বাঁধ ভাঙা অগণিত গ্রাম মজুর কিষাণ’, ‘শোন জনতা গণ জনতা’সহ স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে পরিবেশিত মুক্তিযুদ্ধের অনেক গান তিনি রচনা করেছেন। স্বদেশী আন্দোলনের নেতা সুধীর সেনগুপ্তের ছেলে সুব্রত সেনগুপ্ত। প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার তার মায়ের আপন বোন। একাত্তরে যখন বাঙালীর স্বাধীনতার যুদ্ধ শুরু হয়, সুব্রত তখন ঢাকার সেগুনবাগিচায় ওস্তাদ বারীণ মজুমদারের সঙ্গীত মহাবিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধ শুরুর পর একপর্যায়ে কসবা হয়ে আগরতলা চলে যান সুব্রত সেনগুপ্ত। সেখান থেকে যান কলকাতায়, যোগ দেন বালীগঞ্জ সার্কুলার রোডে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে। গীতিকার সুব্রত একুশে ফেব্রুয়ারি নিয়ে ১৬০টি গান, আর বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে ৫৫৫টি গান রচনা করেছেন বলে জানান জলি। জলি সেনগুপ্ত জানান, ২০১৩ সালে হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার পর থেকেই সুব্রত সেনগুপ্ত শয্যাশায়ী ছিলেন। তারপর বিভিন্ন দফায় হাসপাতালে ভর্তি হলেও ‘টাকার অভাবে’ উন্নত চিকিৎসা করাতে পারেননি তিনি।
×