ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

হাইকোর্টের রুল

বিদ্যুতের তারে দুই হাত হারানো সিয়ামকে ৫০ লাখ টাকা দেয়ার নির্দেশ

প্রকাশিত: ০৫:৫৭, ৫ জুলাই ২০১৭

বিদ্যুতের তারে দুই হাত হারানো সিয়ামকে ৫০ লাখ টাকা দেয়ার নির্দেশ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ শরীয়তপুরে পল্লী বিদ্যুতের ছিঁড়ে পড়া তারে জড়িয়ে দুই হাত হারানো সিয়াম খানকে ৫০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। আগামী ৩০ দিনের মধ্যে পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডকে ক্ষতিপূরণের এ অর্থ দিতে বলা হয়েছে। এ বিষয়ে জারি করা হাইকোর্টের রুল নিষ্পত্তি করে বিচারপতি কাজী রেজাউল হক ও বিচারপতি মোহাম্মদ উল্লাহর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের দ্বৈত বেঞ্চ এই আদেশ দেয়। আদালতে রিট আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মাহবুব শফিক। সঙ্গে ছিলেন আবেদনকারী আইনজীবী সিফাত মাহমুদ। পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী শেখ মোহাম্মদ জাকির হোসেন। রিটকারী পক্ষের আইনজীবী মাহবুব শফিক সাংবাদিকদের বলেন, ‘রায়ে আদালত পল্লী উন্নয়ন বোর্ডকে ৫০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে বলেছে। রায়ের আদেশ পাওয়ার ৩০ দিনের মধ্যে এ টাকা দিতে হবে।’ ‘দুটি হাত কেটে ফেলতে হয়েছে সিয়ামের’ শিরোনামে গত ২৪ এপ্রিল কয়েকটি সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন যুক্ত করে গত মে মাসে আদালতে রিট করেন সুপ্রীমকোর্টের আইনজীবী সিফাত মাহমুদ। ওই রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে আদালত রুলসহ অন্তর্বর্তী আদেশ দেয়। প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে বিদ্যুত-সংযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ার পর ওই এলাকায় যথাযথ নিরাপত্তা নিশ্চিতে বিবাদীদের ব্যর্থতা কেন অবহেলা ঘোষণা করা হবে না এবং সিয়াম খান আহত হওয়ার জন্য কেন দায়ী করা হবে না এবং সিয়াম খানকে কেন ক্ষতিপূরণ দেয়া হবে না, রুলে তা জানতে চাওয়া হয়। এ জন্য গত ২৯ মে পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের সদস্য (ডিস্ট্রিবিউশন ও সাপ্লাই), পল্লী বিদ্যুত সমিতির জেনারেল ম্যানেজারসহ চারজনকে হাজির হতে বলা হয়। সে অনুযায়ী তারা আদালতে হাজির হন এবং আইনজীবীর মাধ্যমে জানান, অভ্যন্তরীণ তদন্ত চলছে। পরে তাদের ব্যক্তিগত হাজিরা থেকে অব্যাহতি দিয়ে ৪ জুলাই তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেয় আদালত। এর ধারাবাহিকতায় মঙ্গলবার তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে উপস্থাপন করা হয়। প্রতিবেদনে বলা হয়, দায়িত্বপ্রাপ্ত লাইন্সম্যানরা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ক্ষতিগ্রস্ত লাইন মেরামত করলে দুর্ঘটনা নাও ঘটতে পারত। সেই প্রতিবেদনের ওপর শুনানি নিয়ে আদালত এ রায় দেয়। সংবাদমাধ্যমে আসা খবরে জানা যায়, শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার বিঝারী গ্রামের দরিদ্র জাহাজশ্রমিক ফারুক খানের ছেলে সিয়াম খান (১৭) নড়িয়া সরকারী কলেজের একাদশ শ্রেণীতে পড়ত। পড়াশোনার পাশাপাশি সে টিউশনি করে চলত। গত ৫ এপ্রিল বিকেলে ঝড়ে গ্রামে পল্লী বিদ্যুতের তার ছিঁড়ে মাটিতে পড়ে যায়। সন্ধ্যায় বিঝারী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সাবেক সদস্য মজিবুর রহমান পল্লী বিদ্যুত সমিতির জেলা কার্যালয়ে ফোন করে বিষয়টি জানান। পরদিন সকালে ওই সঞ্চালন লাইন মেরামত করা হবে বলে সেদিন মজিবুরকে জানানো হয়। কিন্তু সঞ্চালন লাইন মেরামত না করেই পরদিন দুপুরে লাইনটি চালু করে পল্লী বিদ্যুত সমিতি। ওই সময় সিয়াম তারে জড়িয়ে বিদ্যুতস্পৃষ্ট হলে বিকট শব্দ হয়। শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে নেয়ার পর অবস্থার অবনতি হলে তাকে পাঠানো হয় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে। সেখানে দুই দফা অস্ত্রোপচারের পরও সংক্রমণ দেখা দিলে ১২ এপ্রিল কবজির ওপর থেকে সিয়ামের বাঁ হাত এবং ১৬ এপ্রিল একই জায়গা থেকে ডান হাত কেটে ফেলতে হয়। তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, গত ৫ এপ্রিল পল্লী বিদ্যুত সমিতির অভিযোগ কেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত লাইনম্যান মোঃ মিজানুর রহমান অভিযোগ পাওয়ার পর তা লিপিবদ্ধ করেননি। ফলে অভিযোগটি এবং ঝড়ে তার ছিঁড়ে পড়ে থাকার বিষয়টি কর্তৃপক্ষের নজরে আসেনি। ‘দুর্ঘটনার পরের দিন ৬ এপ্রিল উপসি সেকশনের আওতাধীন পশ্চিম বিজারি গ্রামের ছেঁড়া তারের বিষয়টি দায়িত্বপ্রাপ্ত লাইনম্যানরা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে মেরামত শেষে ওই সেকশন চালু করলে ওই ঘটনা নাও ঘটতে পারত।’
×