ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

বর্ষায় ফুটেছে কুরচি

দুর্লভ সাদা ফুল মিষ্টি ঘ্রাণ, মুগ্ধ করে রাখে

প্রকাশিত: ০৫:৫০, ৫ জুলাই ২০১৭

দুর্লভ সাদা ফুল মিষ্টি ঘ্রাণ, মুগ্ধ করে রাখে

মোরসালিন মিজান ॥ বর্ষার জলে নতুন প্রাণ পেয়েছে প্রকৃতি। গাছের পাতা এখন আরও সবুজ। চমৎকার সব ফুল ফুটে আছে। আজ কুরচির কথা হোক। সাদা দেখতে ফুল। হ্যাঁ, সাদা। তবে সাদামাটা নয়। এইটুকুন ফুল যেমন সুন্দর, তেমনি সুগন্ধি। এখানে ওখানে ফুটে আছে- এমন নয়। যথেষ্ট দুর্লভ। এ কারণে বাংলাদেশের ২০১২ সালের বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইনের তফসিল ৪ অনুযায়ী এ প্রজাতিটি সংরক্ষিত। শহর ঢাকার বিভিন্ন স্থানে সচেতনভাবেই গাছটির চারা রোপণ করা হয়েছিল। বলধা গার্ডেন, জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যান, রমনা পার্ক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্জন হলে এখনও দৃশ্যমান হচ্ছে। একটু খুঁজে নিতে হয়, এই যা। আলাদা করে বলা যায় ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের কুরচি গাছটির কথা। নিজ হাতে এই গাছের চারা রোপণ করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ২০১০ সালের ৮ মে বঙ্গবন্ধু জাদুঘরের সামনে তিনি নিজ হাতে এই বৃক্ষরোপণ করেন। একাধিকবার সেখানে গিয়ে দেখা গেছে, আপন মনে বেড়ে উঠছে গাছটি। ফুলভর্তি গাছের দিকে মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে থাকতে ইচ্ছে করে। আর ঘ্রাণ? সে তো আপনি নাকে এসে লাগে। এ জন্যই হয়তো মুগ্ধ রবীন্দ্রনাথ লিখেছিলেন, ‘কুরচি, তোমার লাগি পদ্মেরে ভুলেছে অন্যমনা/যে ভ্রমর, শুনি নাকি তারে কবি করেছে ভর্ৎসনা।/আমি সেই ভ্রমরের দলে...।’ কুরচির আরও কয়েকটি নাম আছে। এই যেমন- কুটজ বা গিরিমল্লিকা। ইংরেজীতে বলা হয় ইস্টার ফ্লাওয়ার। বৈজ্ঞানিক নাম হোলারে‌্যনা এ্যান্টিডিসেন্টেরিকা। এটি অঢ়ড়পুহধপবধব পরিবারের অন্তর্ভুক্ত। জন্মস্থান বাংলাদেশ ও ভারত। ছোট-খাট গাছ। উচ্চতা ১০ থেকে ১২ ফিট। গাছের বিষদ বর্ণনা দিয়েছেন উদ্ভিদবিদ দ্বিজেন শর্মা। তার বর্ণনা মতে, এটি ক্ষুদ্রাকৃতি বৃক্ষ। কা- সরল। গাছের বাকল অমসৃণ ও হালকা ধূসর রঙের। ওপরের দিকে অজস্র উর্ধমুখী শাখায় এলোমেলো। পাতা লম্বা-ডিম্বাকৃতির, মসৃণ এবং উভয়ের বিপরীত দিকে সমভাবে বিন্যস্ত থাকে। শীতকালে পাতা থাকে না। মঞ্জরিতে ফুল সংখ্যা কম হলেও বিক্ষিপ্ত মঞ্জরির সংখ্যা অজস্র। অন্য অনেক ফুলের মতো এটিও ৫ পাপড়ির। ফুলের নিচের অংশ নলাকৃতির। ভেষজগুণও আছে কুরচির। দ্বিজেন শর্মা জানান, গাছেল বাকল ফুল ও ফল থেকে আমাশয়ের ওষুধ তৈরি হয়। তাছাড়া ফুল রক্তদোষে, পাতা বাত ও ক্রনিক ব্রঙ্কাইটিসে, বীজ অর্শ্ব ও একজিমায় উপকারী। এর নরম কাঠ থেকে পুতুল ও খেলনা তেরি হয়। আসামে কুরচি কাঠের কবজ ব্যবহার করার প্রচলন রয়েছে। সে যাই হোক, ফুলের সৌন্দর্য আর মিষ্টি ঘ্রাণের জন্যই কুরচি। এই বর্ষার পুরোটাজুড়ে আছে। উপভোগ করতে যেন কেউ ভুল না করেন।
×