ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

গাজীপুরে বয়লার বিস্ফোরণে নিহত পায়েলের পরিবারে মাতম

প্রকাশিত: ০৫:৪৬, ৫ জুলাই ২০১৭

গাজীপুরে বয়লার বিস্ফোরণে নিহত পায়েলের পরিবারে মাতম

নিজস্ব সংবাদদাতা, নওগাঁ, ৪ জুলাই ॥ গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের কাশিমপুরের নয়াপাড়া এলাকায় মাল্টি ফ্যাবস লিমিটেড নামে একটি পোশাক কারখানায় বয়লার বিস্ফোরণের ঘটনায় নিহতদের মধ্যে নওগাঁর যুবক আমিরুজ্জামান আমির ওরফে পায়েল (২৭) একজন। সোমবার সন্ধ্যা সোয়া ৭টার দিকে এ দুর্ঘটনা ঘটে। ঘটনার পর থেকে পরিবারের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করলেও মঙ্গলবার সকালে নিহতের সংবাদ এবং মরদেহ শনাক্তের পর থেকে পরিবারে চলছে শোকের মাতম। নিহতের বাড়ি শহরের চকরামপুর মহল্লায়। নিহত পায়েল ওই মহল্লার মৃত আজিজুল ইসলামের ছেলে। জানা গেছে, নিম্ন-মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান আমিরুজ্জামান পায়েল। গত ৬ বছর আগে তার বাবা মারা যান। চার সদস্য নিয়ে পরিবারের টানাপোড়েন শুরু হয়। অভাবের মধ্য দিয়েও পায়েল বগুড়া পলিটেকনিক কলেজ থেকে ইলেকট্রিক বিষয়ের ওপর ডিপ্লোমা পাস করে। এরপর ঢাকা উত্তরা বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএসসি পাস করার পাশাপাশি পাঁচ বছর থেকে মাল্টি ফ্যাবস লিমিটেডে ইলেকট্রিক ইঞ্জিনিয়ার পদে চাকরি শুরু করে আমিরুজ্জামান পায়েল। গত দুই বছর আগে পড়াশুনা শেষ হলেও সেখানেই সে ফুল টাইম চাকরি করে। আর আমিরুজ্জামান পায়েল ছিল পরিবারের একমাত্র উপার্জনশীল ব্যক্তি। ঘটনার দিন পায়েলসহ আরও কয়েকজন সেখানে দায়িত্বরত ছিল। সোমবার সন্ধ্যার দিকে ওই কারখানায় বিকট শব্দে বয়লার বিস্ফোরণ ঘটে। এতে কারখানার চারতলা ভবনের দু’তলা পর্যন্ত একপাশের অংশ ধসে পড়ে। ফলে হতাহতের ঘটনা ঘটে। বিষয়টি টেলিভিশনে দেখার পর থেকে পায়েলের পরিবারের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করে। পরে তার মোবাইল ফোনে বারবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। পরবর্তী সময়ে তার বড় ভাই পলাশ ও খালাতো ভাই মামুনুর রশিদ রাতেই ঢাকায় চলে যায়। অবশেষে মঙ্গলবার সকালে তারা আমিরুজ্জামান পায়েলের মরদেহ শনাক্ত করলে মৃত্যুর এ বিষয়টি নিশ্চিত হয়। সরেজমিনে এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, প্রতিবেশীরা পায়েলের মা ও বোনকে ঘিরে বসে আছে। সবাই তাদের সান্ত¡না দেয়ার চেষ্টা করছিলেন। কিন্তু কোন কথাই যেন তাদের তর সইছে না। বারবার মা ও বোন মূর্ছা যাচ্ছিলেন। জ্ঞান ফেরার পর মা পুষ্প বেওয়া আবার হাউমাউ করে কান্না করছেন। আর বলছেন ‘ঈদের মধ্যে বাবা আমার সুন্দর শাড়ি কিনে দিয়েছে। নামাজ পড়ার পর বাবা তার জন্য দোয়া করতে বলতো। ফোনে বাবা আর কথা বলবে না। আমার কেউ আর খোঁজ নেবে না’। প্রতিবেশী সুলতান আহমেদ বলেন, পায়েল কষ্ট করে পড়াশোনা শেষ করেছে। পোশাক কারখানায় ইঞ্জিনিয়ার পদে কয়েক বছর থেকে চাকরি করছে। সে ছিল পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী। চাকরির সুবাদে পরিবারে কিছুটা সচ্ছলতা এসেছে। গত তিন মাস আগে তার ছোট বোন আফসানা মিম পুলনকে বিয়েও দিয়েছে। আমিরুজ্জামান পায়েলের মৃত্যুতে পরিবারটি নিঃস্ব হয়ে গেল। যদি ওই কারখানা থেকে পরিবারটিকে সহযোগিতা প্রদান করে তাহলে ভাল হতো। পায়েলের বড় বোন আফরোজা বলেন, ঘটনার পর ভাইয়ের মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। সেখানে আমাদের আত্মীয় ছিল। তাকে ঘটনাস্থলে সকালে পাঠানো হলে অনেক খোঁজাখুঁজির পর ভাইয়ের মরদেহ শনাক্ত করে। নওগাঁ জেলা প্রশাসক ড. মোঃ আমিনুল ইসলাম ঘটনাটি শুনে শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করে তিনি আমিরুজ্জামান পায়েলের পরিবারকে আর্থিক সহযোগিতা প্রদানের আশ্বাস দেন। মরদেহ গাজীপুর হাসপাতাল মর্গে আছে। মরদেহ উদ্ধার করে আমিরুজ্জামান পায়েলের গ্রামের বাড়িতে নিয়ে আসার জন্য অপেক্ষা করছেন তার পরিবারের লোকজন। এখন এলাকায় চলছে শোকের মাতম।
×