ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

সুমন্ত গুপ্ত

শুভ জন্মদিন হ্যারি পটার

প্রকাশিত: ০৬:৪০, ৪ জুলাই ২০১৭

শুভ জন্মদিন হ্যারি পটার

চমশা পরা বোকাসোকা হ্যারি পটারকে চেনেন না, এমন মানুষ বোধহয় খুব কমই আছে। আর কিশোর তরুণ বয়সের হলে তো কথাই নেই। চোখে গোল গোল চশমা লাগানো এক কিশোর। একটি গোপন স্কুলে জাদু শেখে সে। তার বাবা-মা নেই। তবে আছে দুজন ভাল বন্ধু। তাদের নিয়েই শিহরণ জাগানো সব এ্যাডভেঞ্চারে অংশ নেয় সে। নাম তার হ্যারি পটার। হ্যারি পটারের বই পড়ে, ছবি দেখে মনে হতেই পারে হ্যারি আসলে গল্পের কোন চরিত্র নয়, রক্ত-মাংসের মানুষ! হগওয়ার্টসের জাদুর স্কুলে গেলেই হয় তো গোল চশমা চোখে ছেলেটার খোঁজ মিলবে! কে জানে, ৪ হাজার ২২৬ পাতায় লেখা সেই জাদুকরি দুনিয়া হয় তো সত্যিই আছে, আমরা যার খোঁজ জানি না। তাই বলে হগওয়ার্টসের রাস্তা খুঁজতে গিয়ে আবার রেলস্টেশনের প্ল্যাটফর্মের দেয়ালে ঠুস খেয়ো না যেন! তরুণদের চিন্তার জগত খুলে দেয় হ্যারি পটার। এই সিরিজের প্রথম বই ‘হ্যারি পটার এ্যান্ড ফিলোসফার স্টোন’ প্রকাশ পায় ১৯৯৭ সালের ২৬ জুন। সারাবিশ্বেই তুমুল জনপ্রিয় এই সিরিজের বইগুলো। এ পর্যন্ত প্রায় ৬০টি ভাষায় অনুবাদ হয়েছে বইগুলো। আর বিক্রি হয় ৪৫০ মিলিয়ন কপি। ২০ বছরে পা দিয়েছে এই কল্পিত চরিত্রটি। সেই ১৯৯৭ সালে লেখা হয়েছে প্রথম বই, তবে জে কে রাওলিংয়ের মাথায় হ্যারি পটার লেখার পোকা ঢুকেছিল তারও সাত বছর আগে। ১৯৯০-এর দশকে ম্যানচেস্টার ও লন্ডনের মধ্যকার এক ট্রেন ভ্রমণ দিয়ে হ্যারির যাত্রা শুরু। তার দুই বন্ধু রন ওয়েসলি ও হারমিওনে গ্রেঞ্জার। হগওয়ার্টস স্কুল অব উইচক্রাফট এ্যান্ড উইজারড্রির শিক্ষার্থী হ্যারি ও তার বন্ধুরা। সেখানকার প্রধান শিক্ষক এ্যালবাস ডাম্বলডোর। হ্যারি পটার সিরিজের মূল কাহিনী আবর্তিত হয়েছে কালো জাদুর অধীশ্বর লর্ড ভোলডেমর্ট ও হ্যারি পটারের মধ্যকার লড়াই নিয়ে। এককথায় শুভ ও অশুভের মধ্যে লড়াই গল্পের মূল উপজীব্য। এতে আছে প্রতিশোধের আগুনও। কারণ, হ্যারি যখন নেহাত শিশু, তখনই ভোলডেমর্টের হাতে মারা যান তার মা-বাবা। শেষে জয় হয় হ্যারির। কালো জাদুর হাত থেকে মুক্তি পায় পৃথিবী। প্রথমদিকে বইটি ছাপানোর জন্য রাওলিংকে অনেক প্রকাশকের কাছে ঘুরতে হয়েছে। কাহিনী অনেক লম্বা, ছেলেমানুষী গল্প-এসব অজুহাতে ফিরিয়ে দিয়েছিল সবাই। শেষে ব্লুমসবারি পাবলিশিং থেকে বইটি ছেপেছে। প্রকাশের পরই তুমুল জনপ্রিয় হয়ে ওঠে হ্যারি। এই কিশোরের জাদুতে লেখিকা রাওলিংও ধনী বনে যান। ১০ বছরের মধ্যে সিরিজের সাতটি কিস্তি প্রকাশিত হয়। শুধু বই নয়, সিনেমার রুপালি পর্দাতেও আলোড়ন তোলে হ্যারি। তৈরি হয়েছে মোট আটটি সিনেমা। হয়েছে মঞ্চনাটক। নির্মিত হয়েছে বিনোদন পার্ক। হ্যারি পটার সিরিজের মোট উপন্যাস ৭টি। ১৯৯৭ থেকে ২০০৭ সাল এ দশ বছরের মধ্যে প্রকাশিত হয় এসব উপন্যাস। প্রতিটি কিস্তিতে বলা হয়েছে হ্যারির জাদুর স্কুলের একেকটি বছরের কথা। ১৯৯১ সালের গ্রীষ্মে যখন হ্যারি পটারের বয়স মাত্র বছর দশেক, তখনই হগওয়ার্টের জাদুর স্কুল থেকে ডাক পায় সে। আর তা থেকেই উপন্যাসের শুরু“। হ্যারি পটার সিরিজের সাতটি উপন্যাস ২০০টি দেশে ৭৯টি ভাষায় প্রকাশিত হয়েছে। বিশ্বজুড়ে সিরিজটির প্রায় ৪৫ কোটি কপি বই বিক্রি হয়েছে। স্ট্যাটিসটিকব্রেইন নামের একটি পরিসংখ্যান সংস্থার হিসাব অনুযায়ী, ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত এই সিরিজের সিনেমাগুলো বিশ্বজুড়ে ৭২০ কোটি ডলার আয় করেছে। বই বিক্রি হয়েছে প্রায় ৭৭০ কোটি ডলারের। আর হ্যারি পটার-সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন পণ্য বিক্রি করে আয় হয়েছে ৭৩০ কোটি ডলার। হ্যারি পটারের সাতটি উপন্যাস থেকে তৈরি হয়েছে আটটি সিনেমা। ‘হ্যারি পটার এ্যান্ড দ্য ডেথলি হ্যালোওস’ নামের উপন্যাসটি নিয়ে তৈরি হয় দুই পর্বের সিনেমা। হ্যারি পটার সিরিজের প্রথম দুটি সিনেমা পরিচালনা করেছিলেন ক্রিস কলম্বাস। তৃতীয়টিতে পরিচালনায় আসেন আলফোনসো কুঁয়ারোন। চতুর্থ সিনেমাটি পর্দায় আসে মাইক নিউওলের হাত ধরে। আর সিরিজের শেষ চারটি পর্ব পরিচালনা করেন ডেভিড ইয়েটস।
×