ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

নাদিম মজিদের স্বপ্নের ‘ব্রেইন ইকুয়েশন’

প্রকাশিত: ০৬:৪০, ৪ জুলাই ২০১৭

নাদিম মজিদের স্বপ্নের  ‘ব্রেইন ইকুয়েশন’

নাদিম মজিদ। পড়াশোনা করছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগে। গত ৪ মে তার নেতৃত্বাধীন এ্যাপ ‘ব্রেইন ইকুয়েশন’ জিতেছে ন্যাশনাল মোবাইল এ্যাপলিকেশন এ্যাওয়ার্ড। অনলাইন শিক্ষামাধ্যম কোর্সেরার মেন্টর হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। বাংলাদেশের জনপ্রিয় কয়েকটি দৈনিকের নিয়মিত ফিচার লেখক নাদিম মজিদ। নাদিম মজিদের সাক্ষাতকার নিয়েছেনÑ বেনজির আবরার ডিপ্রজন্ম : প্রথমে আপনার তৈরি এ্যাপ ‘ব্রেইন ইকুয়েশন’ সম্পর্কে জানতে চাই? নাদিম মজিদ : সরল অঙ্কের মৌলিক নিয়মকে ভিত্তি করে পাজেল আকারে তৈরি এ্যাপ ‘ব্রেইন ইকুয়েশন’। সরল অঙ্কে যেমন যোগ, বিয়োগ, গুণ এবং ভাগের কাজ থাকে। প্রায় সকল শিক্ষার্থী এ ধরনের কাজ একসঙ্গে আসলে বিব্রত হয়। ভুল করে। কারণ অনুশীলন না করার কারণে তারা কিসের কাজ আগে করতে হবে বুঝতে পারে না। শিক্ষার্থীদের এ ধরনের সমস্যা সমাধান করার জন্য আমরা তৈরি করেছি ‘ব্রেইন ইকুয়েশন’ এ্যাপ। বর্তমানে ইংরেজী ভাষার এ্যাপটি এ্যান্ড্রয়েড এ্যাপে পাওয়া যাচ্ছে। আমরা ভবিষ্যতে আইফোনের জন্যও এমন এ্যাপ তৈরি করব। ডিপ্রজন্ম : পড়াশোনা, চাকরি, লেখালেখি, এ্যাপস এত কিছুর মাঝে কিভাবে সমন্বয় করেন? নাদিম মজিদ : আমি বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগে পড়াশোনা করছি। অফিস চলাকালীন সময়ে ক্লাস শুরু“ হয় সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টায়। শেষ হয় রাত সাড়ে নয়টা। শনিবারে ক্লাস হয় বিকেল তিনটা থেকে রাত সাড়ে নয়টা পর্যন্ত। অফিস শেষ করে ক্লাসে যাওয়ার সময় এবং ক্লাস শেষ করে বাসায় ফেরার সময় পড়ার ওপর চোখ বুলিয়ে নিই। ক্লাসটেস্ট এবং এ্যাসাইনমেন্টের ওপর আলাদা চোখ রাখি। উন্নয়ন অধ্যয়ন বিষয়টি আমার প্রিয় হওয়ায় পড়াশোনা করতে বিরক্তি লাগে না। ক্লাস হয় সপ্তাহে তিন দিন। বাকি দিনগুলোতে লেখালেখির কাজ করি। পত্রিকায় ফিচার লেখা এবং পাজেল তৈরির কাজ করি। লেখার সময় নিজের প্রিয় বিষয়গুলো নিয়ে লিখতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি। মিডটার্ম এবং ফাইনাল পরীক্ষার সময় লেখালেখি কম করি। তাই লেখালেখি আমার জন্য এখনও বিরক্তির কারণ হয়ে দাঁড়ায়নি। এ্যাপসের ক্ষেত্রেও একই অবস্থা। ‘ব্রেইন ইকুয়েশন’ এ্যাপের আইডিয়াকে আমার কাছে দুর্দান্ত মনে হয়েছিল। এ এ্যাপের আইডিয়া নিয়ে আগে বাংলাদেশের একটি পত্রিকায় পাজেল লিখতাম। অনলাইনে এ ধরনের পাজেল না থাকায় ইংরেজী ভাষায় এ্যাপ তৈরির মাথায় আসে। এতে এ আইডিয়ার এককত্ব আমার হাতেই থাকবে। সারাবিশ্বে জানানো যাবে, সরল অঙ্ককে সহজ করে উপস্থাপন করার এ্যাপ বাংলাদেশে তৈরি। এ্যাপের প্রোগ্রামিংয়ের জন্য দুই ছোট ভাই সাহায্য করেছে। এ্যাপের সাইজ ছোট রাখার জন্য আমরা ইন্টারনেটে ডাটা ইনপুট রেখেছিলাম। বর্তমানে ‘ব্রেইন ইকুয়েশন’ এ্যাপে পাঁচটি ডিফিকাল্টি লেভেলে ১৬৮টি পাজেল রয়েছে। কোন কোন পাজেল তৈরি করতে ১ ঘণ্টার বেশি সময় লেগেছে। ডিপ্রজন্ম : জাতীয় মোবাইল এ্যাপলিকেশন এ্যাওয়ার্ড জিতেছে আপনার এ্যাপসটি। অবাক করা তথ্য, মাত্র বিশ দিনে জিতেছে পুরস্কার। যদি অনুভূতি জানাতেনÑ নাদিম মজিদ : ভাগ্য ‘ব্রেইন ইকুয়েশনে’র সহায়ক ছিল। এটি ছিল বাংলাদেশে আয়োজিত দ্বিতীয় মোবাইল এ্যাপলিকেশন এ্যাওয়ার্ড প্রতিযোগিতা। আমরা গত ১৪ এপ্রিল আনুষ্ঠানিকভাবে ‘ব্রেইন ইকুয়েশন’ এ্যাপের উদ্বোধন করি। অথচ জাতীয় মোবাইল এ্যাপলিকেশন এ্যাওয়ার্ডের মনোনয়ন জমা দেয়ার শেষ দিন ছিল ৩১ মার্চ। এ্যাপটি আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করার আগের দিন ১৩ এপ্রিল পত্রিকায় দেখি, ন্যাশনাল মোবাইল এ্যাপলিকেশন এ্যাওয়ার্ড প্রতিযোগিতার মনোনয়ন জমা দেয়ার সময়সীমা ১৮ এপ্রিল পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। দেরি না করে গুগল প্লে­স্টোরে পরীক্ষামূলকভাবে রাখা এ্যাপটি দিয়ে আবেদন করি। ২৪ এপ্রিল ই-মেইল করে জানানো হয়, আমাদের এ্যাপটি ন্যাশনাল এ্যাওয়ার্ডের জন্য মনোনীত হয়েছে। ২৬ এপ্রিল বাছাইকৃত এ্যাপগুলোর প্রেজেন্টেশন। আমাদের এ্যাপটি ছিল লার্নিং এ্যান্ড এডুকেশন ক্যাটাগরিতে। মোট আটটি ক্যাটাগরির প্রেজেন্টেশন ছিল। প্রেজেন্টেশন দিতে গিয়ে দেখি, সবচেয়ে বেশি এ্যাপ শর্টলিস্টে এসেছে আমাদের ক্যাটাগরিতে। অন্যান্য ক্যাটাগরিতে ৪-৫টি করে এ্যাপ শর্টলিস্টে থাকলেও আমাদের ক্যাটাগরিতে শর্টলিস্টে আছে ষোলোটি। বেশি এ্যাপ শর্টলিস্টে থাকায় পুরস্কার জেতা নিয়ে দোদুল্যমান ছিলাম। ‘ব্রেইন ইকুয়েশন’ আমাদের প্রথম এ্যাপ। আমরা গুণগতমানসম্পন্ন এবং ভিন্ন ধারণাকে কেন্দ্র করে এ্যাপ বানিয়েছি। কিন্তু কোন এ্যাপ প্রতিযোগিতায় সরাসরি অংশ নিয়ে প্রেজেন্টেশন দেয়ার অভিজ্ঞতা ছিল না। আত্মবিশ্বাসের জায়গায় ছিল শুধু আমাদের আইডিয়া ইউনিক, আমাদের এ্যাপ মানের ক্ষেত্রে আপোসহীন। গত ৪ মে কৃষিবিদ ইনস্টিটিউটে ‘ব্রেইন ইকুয়েশন’কে ন্যাশনাল মোবাইল এ্যাপলিকেশন এ্যাওয়ার্ড প্রদান করা হয়। এ পুরস্কার জেতার অনুভূতি অসাধারণ। প্রথম তৈরি এ্যাপ আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধনের বিশদিনের মাথায় জাতীয় পদক জেতা আমাদের জন্য উৎসাহের। ডিপ্রজন্ম : ডিপ্রজন্ম পরিবার বিশ্বাস করে, ‘তরুণদের ব্যতিক্রমী চিন্তাই হতে পারে ডিজিটাল বাংলাদেশের সহায়ক শক্তি।’ ব্যক্তি নাদিম মজিদ কথাটিকে যেভাবে মূল্যায়ন করবেনÑ নাদিম মজিদ : কথাটির সঙ্গে আমি একমত পোষণ করছি। বয়স্ক ব্যক্তিদের জীবনে অভিজ্ঞতা নেয়ার পরিমাণ বেশি। তাই তারা কোন কাজ করার সময় ঝুঁকি নেয়ার সাহস কম করেন। কিন্তু তরুণদের ক্ষেত্রে বিষয়টি ব্যতিক্রম। তাদের জীবন মাত্র শুরু। আশপাশের চাপ কম। যে কোন কাজ করার ক্ষেত্রে তারা ভয়ডরহীন। কাজ করে হেরে গেলেও তারা আফসোস করে না। নতুন নতুন আইডিয়া করে। নতুন করে সাহস সঞ্চয় করে তারা এগিয়ে যায়। মানুষের জীবনকে সহজ করার জন্য তারা নতুন নতুন উপায় খুঁজে। তাদের কাজের জায়গায় থাকে ভাল লাগা এবং সাহস। তারা লাভের বিষয়টি মুখ্য রাখে না। ডিজিটাল বাংলাদেশের প্রধান কাজ অনলাইনের মাধ্যমে কাজ করে মানুষের সময় বাঁচানো এবং কাজকে সহজ করে দেয়া। এ ধরনের কাজ করার জন্য প্রচুর উদ্ভাবনীমূলক কাজের প্রয়োজন। বাংলাদেশের তরুণদের দক্ষতা বিশ্বমানের। এ তরুণরাই উদ্ভাবনীমূলক কাজে এগিয়ে আসছে। ডিজিটাল বাংলাদেশ গঠনের কাজকে এগিয়ে নিচ্ছে। ডিপ্রজন্ম : বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় অনলাইন শিক্ষামাধ্যম কোর্সেরার মেন্টর আপনি। বাংলাদেশের তরুণরা কোর্সেরাকে কিভাবে কাজে লাগাতে পারে? নাদিম মজিদ : সময়োপযোগী প্রায় ২০০০ বিষয়ে পাঠদান করানো হয় অনলাইন শিক্ষামাধ্যম কোর্সেরায়। এখানকার বিষয় এবং শিক্ষকেরা বিশ্বমানের। এখানকার পড়াশোনার টুলসগুলো অত্যাধুনিক প্রযুক্তিকে ব্যবহার করে। আমি কোর্সেরা থেকে ১৪ বিষয়ে সফলভাবে কোর্স সম্পন্ন করেছি। দুটি কোর্সের মেন্টর। পারসোনাল ব্র্যান্ডিং, সোশ্যাল মিডিয়া, ই-পোর্টফোলিও, গেম ডেভেলপমেন্ট, আইডিয়া টু প্রোডাক্ট বিভিন্ন বিষয়ে কোর্স করেছি। এখানকার বিষয়গুলো সাজানো হয় সম্পূর্ণ রূপে। পাইথন নিয়ে একটি বিষয় রয়েছে। এ বিষয়টি সঠিকভাবে রপ্ত করার জন্য পঁাঁচটি কোর্স করতে হয়। প্রতিটি কোর্স থাকে ৪-৫ সপ্তাহের। অনলাইনে পড়াশোনা করতে হয়। অনলাইনে অনুশীলন করতে হয়। এ্যাসাইনমেন্ট জমা দিতে হয়। কুইজ পরীক্ষা দিয়ে ৮০% নম্বর পেয়ে পাস করতে হয়। একটি কোর্সের একটি পরীক্ষায়ও যদি সে পাস না করে তাহলে সে কোর্স সমাপনী সনদ পাবে না। কারও যদি আগ্রহ থাকে, সে অনলাইনে কোর্স করতে পারে। অনলাইনে কোর্স করতে বিশেষ শিক্ষাগত যোগ্যতার প্রয়োজন হয় না। কোর্স ফি সাধারণত ৪৯ ডলার থেকে ৭৯ ডলার হয়ে থাকে। তবে যাদের সামর্থ্য নেই, তারা আবেদন করে কোর্স ফি মওকুফ করে নিতে পারে। কোর্স ছাড়াও ইডিএক্স, ইউডেমিসহ বিভিন্ন মাধ্যমে নিজের দক্ষতা বাড়ানোর জন্য যে কেউ পড়াশোনা করতে পারে। ডিপ্রজন্ম : দীর্ঘদিন ধরে দেশের বিভিন্ন দৈনিকে নিয়মিত লিখছেন। কখনও ভেবেছিলেন, নিজেই হবেন জাতীয় দৈনিকের শিরোনাম? ‘ব্রেইন ইকুয়েশন’ নিয়ে প্রত্যাশা জানতে চাইÑ নাদিম মজিদ : আমি ভাল লাগা থেকে লেখালেখি করে আসছি। পত্রিকায় ফিচার লেখা থেকে জানি, কোন কারণ ছাড়া কাউকে নিয়ে ফিচার হয় না। লেখালেখির ক্ষেত্রে বড় কোন অর্জন থাকলে কখনও আমাকে নিয়ে ফিচার ছাপা হতে পারেÑ এমনটা মনে ছিল। কিন্তু ধারণা ছিল না, লেখালেখির আগেই নিজেদের প্রথম এ্যাপ ব্রেইন ইকুয়েশনের কারণে ফিচার ছাপা হবে পত্রিকায়! ব্রেইন ইকুয়েশনের মাধ্যমে সারাবিশ্বে আমরা বাংলাদেশকে প্রতিনিধিত্ব করতে চাই। ক্রসওয়ার্ডের উৎপত্তির কারণে যুক্তরাষ্ট্র পরিচিত, সুডোকুর কারণে জাপান পরিচিত। ‘ব্রেইন ইকুয়েশনের’ কারণে বাংলাদেশও সমান খ্যাতি পাবে বলে বিশ্বাস করি। ডিপ্রজন্ম : ভবিষ্যত পরিকল্পনা হিসেবে কি থাকছে? নাদিম মজিদ : পড়াশোনা চালিয়ে নিয়ে যেতে চাই। বিষয়ভিত্তিক লেখালেখি অব্যাহত রাখতে চাই। আর বাংলাদেশকে গুণগত মানসম্পন্ন বিশ্বমানের আরও সুন্দর সুন্দর এ্যাপ তৈরি করতে চাই্। ডিপ্রজন্ম : ধন্যবাদ আপনাকে। নাদিম মজিদ : ধন্যবাদ, আপনাকেও।
×