ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

দেশবাসীর কাছে দোয়া প্রার্থনা

হৃদরোগে আক্রান্ত সাবেক জাতীয় ফুটবলার নকীব

প্রকাশিত: ০৬:৩৩, ৪ জুলাই ২০১৭

হৃদরোগে আক্রান্ত সাবেক জাতীয় ফুটবলার নকীব

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন জাতীয় দলের তুখোড় সাবেক স্ট্রাইকার ইমতিয়াজ আহমেদ নকীব। রবিবার সন্ধ্যায় মতিঝিলে সোনালি অতীত ক্লাবে ফুটবল অনুশীলনের পর অসুস্থবোধ করলে তাকে ঢাকার শাহবাগের ইব্রাহিম কার্ডিয়াক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সোমবার দুপুরে এনজিওগ্রাম করে তার হার্টে দুটি রিং পরানো হয়েছে। নকীবের আশু সুস্থতা কামনায় সবার দোয়া চেয়েছেন তার এক সময়ের সতীর্থ, জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক-গোলরক্ষক আমিনুল হক। এক বিবৃতিতে আমিনুল বলেন, ‘নকীব ছিলেন বাংলাদেশের ফুটবলের অন্যতম সেরা ফরোয়ার্ড। এদেশের ফুটবলে তার অবদান অনেক। তার দ্রুত সুস্থতায় দেশবাসীর কাছে দোয়া চাই।’ গোল করাই একজন স্ট্রাইকারের প্রধান বৈশিষ্ট্য। আর এক্ষেত্রে চমৎকার দক্ষতা দেখিয়েছেন নকীব। ছিলেন হাল্কা-পাতলা গড়নের। কিন্তু ভুরি ভুরি গোল করতে কোন সমস্যা হয়নি তার। সালাউদ্দিন ও আসলামের পর গোল করার ক্ষেত্রে তিনিই সেরা সাফল্য দেখিয়েছেন। সুযোগ সন্ধানী এই গোলদাতা কখনও পায়ের মাপা শটে, কখনও নিখুঁত হেডে বল জালে জড়িয়েছেন। তবে তার বেশিরভাগ গোলই হয়েছে হেডের সাহায্যে। ৫ ফুট ৯ ইঞ্চি উচ্চতার নকীবের গোল করাটা ছিল একটা নেশার মতো। নকীবের জন্ম ঢাকায়, ১৯৬৯ সালের ১ সেপ্টেম্বর। ফুটবলে হাতেখড়ি একদম শৈশবে। ঢাকার মহাখালীতে থাকতেন। ১৯৮০ সালে ষষ্ঠ শ্রেণীর ছাত্র অবস্থায় মহল্লায় ফুটবল খেলতেন। শুরুটা হয়েছিল গোলরক্ষক হিসেবে। ঘটনাচক্রে পাড়ার দল বাড্ডা জাগরণীর হয়ে স্ট্রাইকার হিসেবে খেলেন। ১৯৮৫ সালে পাইওনিয়ার লীগে খেলা শুরু করেন। দু’বছর পাইওনিয়ারে খেলার পর ১৯৮৭ ও ১৯৮৮ সালে একই দলের হয়ে খেলেন তৃতীয় বিভাগে। বাফুফে প্রথম বিভাগ ফুটবল লীগের প্রতিটি দলকে দু’জন তরুণ ফুটবলারকে খেলানো বাধ্যতামূলক করলে নকীব ১৯৮৯ সালে সরাসরি মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবে খেলার সুযোগ পেয়ে যান। ওই বছর ফুটবল লীগে বিআরটিসির সঙ্গে হ্যাটট্রিকসহ ৭টি গোল করে চমক সৃষ্টি করেন। এরপর থেকে একের পর এক চমক দেখিয়েছেন। পাঁচ বছর মোহামেডানের হয়ে খেলার পর শীর্ষ তিন ক্লাবের জেন্টেলম্যান্ট এ্যাগ্রিমেন্টের প্রতিবাদে ১৯৯৪ সালে যোগ দেন মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ক্রীড়াচক্রে। ১৯৯৫ সাল থেকে মুক্তিযোদ্ধার হয়ে টানা চার মৌসুম লীগের সর্বাধিক গোলদাতা হওয়ার গৌরব অর্জন করেন। এর আগে এই কৃতিত্ব দেখান আসলাম। ১৯৯৫ সালে ১৩টি, ১৯৯৬ সালে ১৪টি, ১৯৯৭ সালে ১৩টি ও ১৯৯৯ সালে ১২টি গোল করেন। ১৯৯৭ সালে নকীবের নেতৃত্বে চ্যাম্পিয়ন হয় মুক্তিযোদ্ধা। এছাড়াও মহানগরী কাপেরও চ্যাম্পিয়ন হয় মুক্তিযোদ্ধা। ১৯৯৭ সালে কলকাতার ম্যাকডোয়েল ফুটবল টুর্নামেন্টে অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন হয় মুক্তিযোদ্ধা। ৩টি গোল করেন নকীব। ৬ বছর মুক্তিযোদ্ধায় খেলার পর ২০০০ সালে আবারও যোগ দেন মোহামেডানে। সেবার ফুটবল লীগে আবাহনীর বিরুদ্ধে হ্যাটট্রিক করার বিরল গৌরব অর্জন করেন। ওই বছর অল্পের জন্য আসলামের পাঁচবার লীগে সর্বাধিক গোলদাতা হওয়ার রেকর্ড স্পর্শ করতে পারেননি। ১৬ গোল করে দ্বিতীয় সর্বাধিক গোলদাতা হন। আবাহনীর কেনেডি করেন ১৭ গোল। ২০০১ সালে মোহামেডানের অধিনায়ক হিসেবে জেতেন নিটল-টাটা জাতীয় ফুটবলের শিরোপা। ২০০২ সালের লীগে মোহামেডানের হয়ে ভিক্টোরিয়ার সঙ্গে প্রথম ম্যাচে হ্যাটট্রিক করার মাধ্যমে লীগে শততম গোল করার কৃতিত্ব দেখান। তার আগে এই কৃতিত্ব ছিল শুধু সালাউদ্দিন ও আসলামের। নকীব জাতীয় দলে খেলেছেন ১৯৯০-৯৯ পর্যন্ত। ১৯৯১ সালে প্রি-অলিম্পিক ফুটবলের বাছাইপর্বে সিউলে বাংলাদেশ ৮-০ গোলে ফিলিপাইনকে হারায়। আন্তর্জাতিক ফুটবলে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় জয় ছিল সেটি। নকীবের দেয়া পাঁচ গোল কোন খেলোয়াড়ের এক ম্যাচে বাংলাদেশের হয়ে সর্বোচ্চ গোলের রেকর্ড। ১৯৯৫ সালে মায়ানমারে চার জাতি ফুটবলে চ্যাম্পিয়ন হয়ে আন্তর্জাতিক ফুটবলে বাংলাদেশ প্রথম শিরোপা লাভ করে। ফাইনালে বাংলাদেশ স্বাগতিক মায়ানমারকে ২-১ গোলে হারায় মামুন জোয়ারদার ও নকীবের গোলে। বাংলাদেশ ক্রীড়ালেখক সমিতি ১৯৯৭ সালে তাকে সেরা ফুটবলার নির্বাচন করে।
×