ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

শিরোপার বৃত্ত পূরণ বিশ্বচ্যাম্পিয়ন জার্মানির

প্রকাশিত: ০৬:২৭, ৪ জুলাই ২০১৭

শিরোপার বৃত্ত পূরণ বিশ্বচ্যাম্পিয়ন জার্মানির

জাহিদুল আলম জয় ॥ সেমিফাইনাল আর ফাইনাল ট্র্যাজেডির দল বলা হয় জার্মানিকে। ফুটবলের যে কোন আসরে সবসময়ই ফেবারিটের তকমা থাকে তাদের গায়ে। ফাইনাল আর সেমিতে হারের লম্বা মিছিলে যোগ না দিলে জার্মানদের বিশ্ব ফুটবলের সেরা দল আপনাকে বলতেই হতো। সেক্ষেত্রে ব্রাজিলের আগে তাদের নামটিই উচ্চারণ করতে হতো। তবে এখন বোধহয় সেই সময়টি এসে গেছে। সাফল্যে সাম্বা ছন্দের দেশটিকেও ছাড়িয়ে যাচ্ছে ইউরোপের পাওয়ার হাউসরা। প্রথমবারের মতো ফিফা কনফেডারেশন্স কাপ জিতে সে স্বাক্ষরই রেখেছে জোয়াকিম লোর দল। রবিবার রাতে রাশিয়ার সেন্ট পিটার্সবার্গের ক্রেস্টোভোস্কি স্টেডিয়ামে ফাইনাল ম্যাচে কোপা আমেরিকার টানা দুইবারের চ্যাম্পিয়ন চিলিকে ১-০ গোলে হারিয়ে এ কৃতিত্ব দেখিয়েছে বর্তমান বিশ্বচ্যাম্পিয়ন জার্মানি। পুরো ম্যাচে বলের দখল ও আক্রমণে এগিয়ে থাকলেও জার্মানদের কৌশলে হার মানতে বাধ্য হয়েছেন সানচেজ, ভিদালরা। আর তাতেই সাফল্যের বৃত্ত পূরণ হয়ে গেছে বিশ্বচ্যাম্পিয়নদের। কেননা এর আগে বৈশ্বিক সব টুর্নামেন্টের ট্রফি জিতলেও কনফেডারেশন্স কাপই শুধু বাকি ছিল। সেটিও এবার হয়ে গেল। এখন জার্মানদের শোকেসে চারটি বিশ্বকাপ, তিনটি ইউরো ও একটি কনফেডারেশন্স কাপের ট্রফি। ইউরোর ইতিহাসে জার্মানিই এককভাবে সর্বোচ্চ তিনবার শিরোপা জয় করেছে (১৯৭২, ১৯৮০, ১৯৯৬)। ইউরোতে সর্বোচ্চ তিনবার রানার্সআপ হওয়ার রেকর্ডও জার্মানদের (১৯৭৬, ১৯৯২, ২০০৮)। নব্বইয়ের দশকের মাঝামাঝিতে পাওয়া সাফল্যের (১৯৯৬ ইউরো) পর দীর্ঘ ১৮ বছর বড় কোন আসরের শিরোপা জয় করতে ব্যর্থ হয় অদম্য জার্মানরা। এ সময়ে কি ইউরো, কি বিশ্বকাপ প্রতিটি আসরেই তীরে এসে তরী ডুবে তাদের। ২০০২ বিশ্বকাপের ফাইনালে ব্রাজিলের কাছে হার, ২০০৬ ও ২০১০ বিশ্বকাপে তৃতীয়। অন্যদিকে ২০০৮ ইউরোর ফাইনালে স্পেনের কাছে হেরে রানার্সআপ হতে হয়েছিল। ধারাবাহিক এই কষ্টের বোঝাটা তারা নামাতে পারে ২০১৪ ব্রাজিল বিশ্বকাপে। ফাইনালে আর্জেন্টিনাকে হারিয়ে দীর্ঘ দেড় যুগ পর বড় আসরের ট্রফি জেতে তারা। সাফল্যের এ ধারা এখনও ধরে রেখেছে তারা। দিনকয়েক আগে দেশটির যুবারা জিতেছে অনুর্ধ-২১ বিশ্বকাপের শিরোপা। সবমিলিয়ে এখন ফুটবলবিশ্বে চলছে জার্মানদের জয় জয়কার। ম্যাচের শুরু থেকেই জার্মানদের রক্ষণে আক্রমণের ঢেউ বইয়ে দিতে থাকে চিলি। পাঁচ মিনিটের মধ্যে এ্যান্টোনিও রুডিগা ডি বক্সের মধ্যে চার্লস আরানগুইজের প্রচেষ্টা কোনরকমে ব্যর্থ করেন। ফিরতি বলে আর্টুরো ভিদালের শট জার্মান গোলরক্ষক মার্ক-আন্দ্রে টার স্টেগান রক্ষা করেন। এডুয়ার্ডো ভারগাস ও মরিসিও ইসলার শট টার স্টেগান আটকে দেন। কার্যত প্রথম ১৫ মিনিটে জার্মান রক্ষণভাগকে কঠিন পরীক্ষা দিতে হয়। ভিদালের শট থেকে বার্সিলোনা গোলরক্ষকের হাত ঘুরে পাওয়া বলে সানচেজ সুযোগ নষ্ট না করলে চিলি তখনই এগিয়ে যেতে পারতো। কিন্তু শেষ পর্যন্ত চিলি নয় ডেডলক ভাঙ্গে জার্মানরাই। ২০ মিনিটে সেল্টা ভিগো খেলোয়াড় মার্সেলো ডিয়াজের ভুলে বল পেয়ে যান টিমো ওয়ার্নার। তাকে আটকাতে চিলি গোলরক্ষক ক্লডিও ব্রাভো এগিয়ে আসলে আগুয়ান লার্স স্টিন্ডলের কাছে বল বাড়িয়ে দেন ওয়ার্নার। সেই বলে কোন ভুল করেননি ২৮ বছর বয়সী বরুশিয়া মনশেনগ্লাডব্যাচের এই স্ট্রাইকার। সহজেই লক্ষ্যভেদ করেন তিনি। এক গোলে পিছিয়ে থেকে চিলি আরও বেশি আক্রমণাত্মক হয়ে ওঠে। কিন্তু সহজ সুযোগ বারবার মিস করতে থাকে কোপা চ্যাম্পিয়নরা। বিরতির পর ৫৫ মিনিটে ড্রাক্সলারের শক্তিশালী শট ইসলা কোনরকমে রক্ষা করেন। ৬৫ মিনিটে জারার কনুইয়ের আঘাতে ওয়ার্নার আঘাত পেলেও তা রেফারি মিলোরাড মাজিসের চোখ এড়িয়ে যায়। কিন্তু ফিফার নতুন ভিডিও এসিসটেন্ট রেফারি পদ্ধতির সহায়তায় পরবর্তীতে জারাকে হলুদ কার্ড দেখিয়ে সতর্ক করা হয়। এরপর থেকে চিলি দারুণভাবে চাপ প্রয়োগ করে খেলতে থাকে। ৮৫ মিনিটে ম্যাচের সবচেয়ে সুবর্ণ সুযোগ নষ্ট করেন আনইয়েরো সাগাল। এডসন পাচের কাছ থেকে বল পেয়ে টার স্টেগানকে একা পেয়েও তিনি পরাস্ত করতে পারেননি। অব্যাহত এই মিসের কারণে শেষ পর্যন্ত ম্যাচে ফিরতে পারেনি চিলি। শিরোপা জয়ের উচ্ছ্বাস করে জার্মানি। এবারের আসরের সেরা খেলোয়াড় নির্বাচিত হয়ে ‘গোল্ডেন বল’ এ্যাওয়ার্ড জিতেছেন জার্মান অধিনায়ক জুলিয়ান ড্রাক্সলার। চিলিয়ান আইকন আলেক্সিস সানচেজ ‘সিলভার বল’ ও ‘ব্রোঞ্জ বল’ জিতেছেন ড্রাক্সলারের স্বদেশী মিডফিল্ডার লিওন গোরেটজকা। সর্বোচ্চ গোলস্কোরার তালিকায় জার্মানির একক আধিপত্য। ‘গোল্ডেন বুট’ এ্যাওয়ার্ড জিতেছেন উদীয়মান ফরোয়ার্ড টিমো ওয়ার্নার। সমান তিনটি গোল করলেও সতীর্থদের গোলে সহায়তা (এ্যাসিস্ট) না থাকায় যথাক্রমে দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থানের পুরস্কার হাতে নেন গোরেটজকা ও ফরোয়ার্ড লার্স স্টিন্ডল। ফাইনালে স্বপ্নভঙ্গ হলেও ফিফা প্রেসিডেন্ট জিয়ান্নি ইনফান্টিনোর কাছ থেকে সেরা গোলরক্ষকের স্বীকৃতি ‘গোল্ডেন গ্লাভস’ পুরস্কার নিয়েছেন চিলির ব্রাভো। ফেয়ার প্লে এ্যাওয়ার্ড চ্যাম্পিয়ন জার্মানির।
×