ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

রুদ্ধশ্বাস অভিযানে যশোর থেকে ফরহাদ মজহার উদ্ধার

প্রকাশিত: ০৬:০১, ৪ জুলাই ২০১৭

রুদ্ধশ্বাস অভিযানে যশোর থেকে ফরহাদ মজহার উদ্ধার

স্টাফ রিপোর্টার, খুলনা অফিস ॥ ‘অপহৃত’ কবি ও প্রাবন্ধিক ফরহাদ মজহারকে প্রায় ১৯ ঘণ্টা পর যশোরের নওয়াপাড়া বাসস্ট্যান্ড থেকে উদ্ধার করেছে র‌্যাব। সোমবার বিকেল থেকে খুলনায় রুদ্ধশ্বাস অভিযান চালানোর পর রাত পৌনে বারোটার দিকে নওয়াপাড়া বাসস্ট্যান্ড থেকে তাকে উদ্ধার করে অভয়নগর থানায় নেয়া হয়। তিনি খুলনা থেকে হানিফ পরিবহনের একটি বাসে চড়ে ঢাকায় ফিরছিলেন। র‌্যাব-৬ খুলনার সিও খন্দকার রফিকুল ইসলাম ঢাকার বাসা থেকে নিরুদ্দেশ হওয়া ফরহাদ মজহারের উদ্ধারের বিষয়টি সাংবদিকদের নিশ্চিত করেন। র‌্যাব জানায়, সোমবার ভোর পাঁচটার দিকে ঢাকার বাসা থেকে ফরহাদ মজহার নিরুদ্দেশ হওয়ার পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে মোবাইল ফোন ট্রাক করে তার অবস্থান খুলনায় নিশ্চিত হন। এর পর বিকেল সাড়ে পাঁচটা থেকে নগরীর কেডিএ এ্যাপ্রোচ রোড ও ইব্রাহিম মিয়া সড়কের পনেরোটির অধিক বাড়িতে অভিযান চালায়। একই সঙ্গে রাত সাড়ে নয়টার দিকে নিউমার্কেট সংলগ্ন গ্রীল হাউস রেস্তরাঁ ও কেডিএ নিউমার্কেটে অভিযান পরিচালনা করে। গ্রীল হাউস রেস্তরাঁর স্বত্বাধিকারী আব্দুল মান্নান জানান, রাত সাড়ে আটটার দিকে ফরহাদ মজহার তাঁর রেস্তরাঁয় খাবার খেয়েছেন। তখন তাঁকে অনেকটা বিমর্ষ দেখাচ্ছিল। ডাল, ভাত-সবজি খেয়ে তিনি ৫/৬ মিনিট তন্দ্রাচ্ছন্ন ছিলেন। এরপর তিনি ওঠে চলে যান। রেস্তরাঁ মালিক আব্দুল মান্নান র‌্যাবের কর্মকর্তাসহ পুলিশ-সাংবাদিক সকলকেই নিশ্চিত করে বলেন, টিভিতে যাকে উদ্ধার অভিযানের খবর দেখানো হচ্ছে তিনিই তার রেস্তরাঁয় খেয়েছেন। গ্রীল হাউসে অভিযানের পর কেডিএ নিউ মার্কেটে অভিযান চালানো হয়। র‌্যাবের অভিযান পরিচালনা শুরুর পর ডিবি পুলিশ এসে যুক্ত হয়। ফরহাদ মজহারের সন্ধানে যশোরসহ বিভিন্ন স্থানে র‌্যাবকে জানানো হয়। রাত পৌনে বারোটার দিকে যশোরের অভয়নগর থানার নওয়াপাড়া বাসস্ট্যান্ডে ঢাকাগামী হানিফ পরিবহনের একটি বাস থেকে উদ্ধার করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী খুলনা ও যশোরের দু’টি টিম তাকে অভয়নগর থানায় নিয়ে যায়। র‌্যাব জানায়, ফরহাদ মজহার সোমবার রাত নয়টা ২৫ মিনিটে হানিফ পরিবহনের বাসে করে ঢাকায় ফিরে যাচ্ছিলেন। ওই পরিবহনের খুলনার কাউন্টারম্যান সাদি বলেন, ফরহাদ মজহার নিজ নামে টিকেট নিয়েছেন। সিট নং আই-৩ এবং কোচ নম্বর ৫০৫। র‌্যাব কর্মকর্তারা ফরহাদ মজহারকে উদ্ধারের বিষয়টি পরে নিশ্চিত করেন। তবে তিনি অপহৃত হয়েছিলেন, নাকি অন্য কোন কারণে বাসা ছেড়ে এসেছিলেন সে সম্পর্কে তাৎক্ষণিকভাবে র‌্যাব কর্মকর্তা কোন মন্তব্য করেননি। এদিকে, অভিযান চলাকালে গুঞ্জন শোনা যায় হঠাৎ বাসা থেকে নিখোঁজ হওয়া ফরহাদ মজহার খুলনা থেকে তার স্ত্রীর সঙ্গেও পাঁচবার মোবাইল ফোনে কথা বলেছেন। পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের উপকমিশনার বিপ্লব কুমার সরকার জানান, সিসি ক্যামেরার ফুটেজ পর্যালোচনা করে সোমবার ভোর পাঁচটা পাঁচ মিনিটের দিকে তাকে হেঁটে বাড়ি থেকে বের হতে দেখা গেছে। তার যাওয়ার মধ্যে কোন তাড়াহুড়া বা ব্যস্ততা ছিল না। ধীরস্থিরভাবেই তাকে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যেতে দেখা গেছে। মোবাইল ফোন ট্র্যাকিংয়ের মাধ্যমে তাঁর অবস্থান আরিচা, ফরিদপুর আবার কখনও মাগুরায় পাওয়া গেছে। বার বার স্থান পরিবর্তন হচ্ছে। তার হদিস করতে সব ধরনের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। পরিবারের বরাত দিয়ে আদাবর থানার দায়িত্বরত কর্মকর্তা উপ-পরিদর্শক মোহাম্মদ মহসীন জনকণ্ঠকে বলেন, সোমবার ভোর চারটার দিকে এক ব্যক্তির ফোন পেয়ে তিনি আদাবর থানাধীন শ্যামলী রিং রোডের হক গার্ডেন নামের বাড়ি থেকে বের হন। এরপর থেকে তার আর সন্ধান পাওয়া যাচ্ছে না। তবে ওই ব্যক্তিটি কে তা জানাতে পারেনি ফরহাদ মজহারের পরিবার। তাঁর নিখোঁজের বিষয়টি প্রথম তারই এক আত্মীয় থানাকে জানান। অভিযোগ পাওয়ার পর উর্ধতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। সকাল সাড়ে নয়টা পর্যন্ত পরিবারের সঙ্গে ফরহাদ মজহারের কথা হয়। তাকে অপহরণ করা হয়েছে বলে ফোনে জানানো হয়। তার মুক্তিপণ হিসেবে ৩৫ লাখ টাকা দাবি করা হয়। তিনি আরও জানান, দুপুরে তার স্ত্রী ফরিদা আখতার থানায় একটি জিডি করেন। জিডির তদন্ত করছেন আদাবর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আমিনুল ইসলাম। এদিকে খোমেনি ইহসান নামে একজন ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছেন, কবি ফরহাদ মজহারকে সোমবার ভোরে রাজধানীর শ্যামলী থেকে অপহরণ করা হয়েছে। তিনি বাসা থেকে পাঁচটা ৬ মিনিটের দিকে বের হন। ফরহাদ মজহারের মোবাইল ফোন বন্ধ রয়েছে। ফেসবুক স্ট্যাটাসের সতত্যা যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। বিষয়টি তারা অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে দেখছে। ফরহাদ মজহারকে অপহরণ করেছে সরকার ॥ বিএনপি এদিকে ফরহাদ মজহারকে অপহরণে সরকারী কোন সংস্থা জড়িত বলে সন্দেহ করছে বিএনপি। পরিবারের কাছে অভিযোগ পাওয়ার পর ফরহাদ মজহারকে উদ্ধারের চেষ্টা চলছে বলে পুলিশের বক্তব্যের মধ্যে দলের নেতা রুহুল কবীর রিজভী এই সন্দেহের কথা জানান। সোমবার বিকেলে নয়াপল্টনে এক জরুরী সংবাদ সম্মেলনে রিজভী বলেন আমরা যেটা মনে করি সরকারের অজান্তে এই ঘটনা ঘটেনি। সরকারের কোন এজেন্সি বা কোন টিম এই ঘটনার সাথে জড়িত।
×