ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

বাগান করতে প্রশিক্ষণও দেয়া হচ্ছে

ফুল-ফলের সঙ্গে পরিচিত হতে যেতে পারেন বৃক্ষমেলায়

প্রকাশিত: ০৫:৫৬, ৪ জুলাই ২০১৭

ফুল-ফলের সঙ্গে পরিচিত হতে যেতে পারেন বৃক্ষমেলায়

এমদাদুল হক তুহিন ॥ শহরে এক টুকরো সবুজে হারিয়ে যেতে কিংবা জানা-অজানা ফুল-ফল সম্পর্কে জানতে যেতে পারেন বৃক্ষমেলায়। বাসার ছাদে বাগান করতেও বৃক্ষমেলা হয়েছে সহায়ক। বাগান করতে করণীয় সম্পর্কে জানাতে প্রযুক্তিনির্ভর প্রশিক্ষণও দিচ্ছে কোন কোন প্রতিষ্ঠান। বাহারি ফুলের ঘ্রাণে মুগ্ধ না হলেও, চোখের খোরাক পূরণে; কনক্রিটের শহরে এর চেয়ে বড় সমারোহ আর নেই। মেলায় উপচেপড়া ভিড় না থাকলেও দর্শনার্থীর কমতি নেই। সবুজ ভালবাসেন যারা তারা যাচ্ছেন পরিবারসহ। স্কুলের শিক্ষার্থীরাও যাচ্ছে। উচ্চবিত্ত শ্রেণীর প্রকৃতিপ্রেমী মানুষেরা গাছ কিনে ফিরছেন গাড়ি করে। কোন কোন কর্মকর্তা লাখ টাকার গাছ কিনেও বাড়ি পাঠাচ্ছেন। সাজিয়ে নিচ্ছেন বাড়ির আঙ্গিনা। বাড়িওয়ালার ছাদ হয়ে উঠছে প্রশান্তির স্থান। ‘বৃক্ষরোপণ করে যে, সম্পদশালী হয় সে’ প্রতিপাদ্যে শুরু হওয়া বৃক্ষমেলায় এখন পর্যন্ত সাড়ে তিন কোটি টাকার গাছ বিক্রি হয়েছে। বিক্রীত চারার পরিমাণ ৮ লাখ ৯ হাজার ৭২৫ টি। মেলায় ফুল-ফল মিলিয়ে প্রায় ৫০০ প্রজাতির অধিক গাছ রয়েছে। আর ১০০টি স্টলে সরকারী-বেসকারী প্রতিষ্ঠানসহ সাজানো এ মেলা শেষ হবে ১৫ জুলাই। মেলা চলছে রাজধানীর শেরেবাংলা নগর বাণিজ্যমেলার মাঠে। সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত থাকছে সকাল ৮টা থেকে শুরু হয়ে রাত ৮টা পর্যন্ত। মেলা ঘুরে ও সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে। মেলায় কথা হয় যাত্রাবাড়ী থেকে আসা ৬ষ্ঠ শ্রেণীর ছাত্র সাফাত রশিদের সঙ্গে। নতুন কি দেখেছ এমন প্রশ্নে তার উত্তর, লজ্জাবতী গাছ দেখেছি। যা আগে দেখিনি। আগে দেখিনি এমন গাছের মধ্যে রয়েছে শাপলা ও অপরাজিতা। মেলা ঘুরে সুন্দর মনে হচ্ছে। মন ভাল লাগছে। হেসে হেসে বলে এই শিশু। সে এসেছিল মা শামসুন নাহারের সঙ্গে। শিশুর মতো তার মায়ে ভাষ্য, আগে দেখিনি এমন গাছও আছে। হাসিব নামের আরেক তরুণ বলেন, আম গাছে ঝুলে থাকা আম দেখে মুগ্ধ হচ্ছি। বাড়ির গাছে যদি এমন আম ধরত! মিরপুর থেকে আসা হৃদি নামের এক তরুণী বলেন, ফুলের গাছ সংগ্রহ করতে এসেছি। কয়েকটি নতুন গাছ কিনেছি। কনকচাঁপা ও মালতি আমার খুব প্রিয়। সংগ্রহ করেছি তাই। এছাড়া রঙ্গন ও বেলীও হৃদয় কেড়েছে। লাইফ টু নেচারনামক প্রতিষ্ঠানের স্টলে কথা হয় দায়িত্বে থাকা তিন তরুণীর সঙ্গে। তাদের একজন রোজ। প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম প্রসঙ্গে তিনি জানান, প্রতিষ্ঠানটি ছাদে বাগান করা সম্পর্কে প্রযুক্তিনির্ভর প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকে। মোবাইলভিত্তিক এ্যাপসের মাধ্যমে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত বাগানিরা তার বাগানের সব তথ্য জানাতে পারেন। ছবি, টেক্স ও ভয়েস সংযুক্ত করে সমস্যা জানালে প্রতিষ্ঠানের অভিজ্ঞ কর্মকর্তারা রোগটি সম্পর্কে সমাধান দিয়ে থাকেন। জানিয়ে দেন বাগান করার করণীয়। তিনি আরও বলেন, ২০০৬ সালে এ কে রাশেদুল ইসলামের নেতৃত্বে এই প্রতিষ্ঠানের যাত্রা শুরু হয়। ২০১৬ সাল থেকে তারা পরিকল্পিতভাবে মাঠে কাজ করছে। গত মেলায় তারা ৮২ জনকে প্রশিক্ষণ দিয়েছে। আর চলতি মেলায় এখন পর্যন্ত নিবন্ধন করছেন ১৩৫ জন। মেলা উপলক্ষে প্রশিক্ষণ ফি ১ হাজার ২০০ টাকা। জানালেন, মেলায় তারা বেশ সাড়া পেয়েছেন। কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশনের স্টলে কথা হয় দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তা মাহবুবে আলমের সঙ্গে। স্টলে থাকা ব্যতিক্রম ধর্মী বৃক্ষ সম্পর্কে জানাতে গিয়ে তিনি জাবুটিকা ও টকআতার বর্ণনা দেন। জাবুটিকা গাছ দেখিয়ে বলেন, এর ফল খুবই সুস্বাদু। সাধারণত ফেব্রুয়ারি মাসে যখন দেশে কোন ফল থাকে না, তখন এর মৌসুম। মানুষ এর প্রতি প্রচুর আগ্রহ দেখাচ্ছে। আর টকআতা প্রসঙ্গে এই কর্মকর্তা বলেন, প্রাথমিক পর্যায়ে যদি কারও ক্যান্সার ধরা পড়ে তাহলে নিয়মিত টকআতা খেলে তা সেরে উঠবে। বাংলাদেশে টকআতা বহুকাল ধরেই ছিল। কাশিমপুর খামারেও ছিল। দেশী এই ফলে মারাত্মক উপকার আছে। এছাড়াও টকআতা গাছের শুকনা পাতা দিয়ে চা করে খেলে শরীরে কোন ব্যথা থাকে না। আর বেলী গার্ডেনে ব্যতিক্রম ধর্মী গাছের মধ্যে রয়েছেÑ এবাকেটা, রাম্বুটান, জয়ফল, মেঙ্গোস্টিন, দিনাজপুরের লিচু, আপেল পেয়ারা ও রোজ আপেল। মূলত, স্টলটিতে এসব গাছের বেচাকেনাই বেশি। পুষ্পকানন এ্যান্ড ইকবাল নার্সারিতে কথা হয় মোহাম্মদ ইউনুসের সঙ্গে। তিনি জানান, থাই মিষ্টি তেঁতুল, থাই কমলা, থাই লটকান তাদের দোকানের ব্যতিক্রম। তার ভাষ্য, বিদেশী গাছই অধিক বিক্রি হচ্ছে। তাদের স্টলে দেশী-বিদেশী ২০০ অধিক গাছ রয়েছে। মহুয়া নার্সারিতে ব্যতিক্রম ধর্মী গাছের মধ্যে রয়েছেÑ ডে ফল, বিলাতি গাব ও দেশী গাব। স্টলটিতে ফুল-ফল মিলিয়ে প্রায় ৪০০ অধিক প্রজাতির গাছ রয়েছে। রাশেদা নার্সারির স্টলে দেখা গেল, ৫৫ বছর বয়স্ক গোল্ডেন ব্যারেল। এটি এক ধরনের ক্যাকটাস। সৌন্দর্যবর্ধক এ গাছটির দাম ৩ লাখ টাকা। স্টলের দায়িত্বে থাকা নোমান মাহমুদ জানান, ভারত থেকে আনা এ গাছটির দাম এখন পর্যন্ত ২ লাখ টাকা হাঁকা হয়েছে। ডি সি নার্সারিতে রয়েছে দেড় লাখ টাকা দামের রাম্বুটান গাছ। এত দাম হওয়ার কারণ হিসেবে জানা গেল এতে ফল ধরছে। সাধারণত এর চারা গাছের দাম ২ থেকে ৩ হাজার টাকা। একইভাবে এই স্টলে থাকা সবচেয়ে বয়স্ক শ্বেত চন্দন গাছের দাম উঠেছে ২ লাখ টাকা। ছোট গাছের দাম এত বেশি হওয়ার কারণ হিসেবে স্টলের এক কর্মকর্তা বলেন, চন্দন গাছ ৩ ফিট মোটা হলে দাম পড়ে সাড়ে ৫ কোটি টাকা। এটি খুবই দামী গাছ। পল্লী নার্সারির কাজল মিয়া জানান, তার স্টলে একটি লটকান গাছ বিক্রি হয়েছে সর্বোচ্চ ২৫ হাজার টাকায়। রাশিদা নার্সারিতে সৌন্দর্যবর্ধক ভারতীয় বাঁশ বিক্রি হচ্ছে ৮০০ টাকায়। তবে লিভিং আর্টের স্টলে দেখা গেল, প্রায় ২ লাখ টাকা দামের বনসাই গাছও রয়েছে। স্টলের দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তারা জানান, তাদের স্টলে বনসাইয়ের বিক্রি বেশ। ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা দামের বনসাই গাছও বিক্রি হচ্ছে হারহামেশায়। আর বেচাকেনায় তারা বেশ সন্তুষ্ট।
×