ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

খাগড়াছড়ি-রাঙ্গামাটি আঞ্চলিক সড়ক তিন সপ্তাহ বন্ধ

প্রকাশিত: ০৫:৪৩, ৪ জুলাই ২০১৭

খাগড়াছড়ি-রাঙ্গামাটি আঞ্চলিক সড়ক তিন সপ্তাহ বন্ধ

চট্টগ্রাম অফিস/ পার্বত্যাঞ্চল প্রতিনিধি, খাগড়াছড়ি ॥ স্মরণকালের ভয়াবহ পাহাড়ধসে যেন যুদ্ধ বিধ্বস্ত এক জনপদে পরিণত হয়েছে খাগড়াছড়ি-রাঙ্গামাটি আঞ্চলিক সড়ক। কোথাও কোথাও সড়ক তলিয়ে গিয়ে পাহাড়ী ছড়া, আবার কোথাও সড়কের ওপর পাহাড় ভেঙ্গে পড়ে টিলায় পরিণত আবার কোথাও পুরো সড়কই প্রায় বিলীন হয়ে গেছে। ফলে দুই জেলার মধ্যে সড়ক যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে প্রায় তিন সপ্তাহ ধরে। সড়কের পথ বিধ্বস্ত তাই বিকল্প হিসেবে খাগড়াছড়ির মহালছড়ি-রাঙ্গামাটির নৌ রুট চালু হলেও যাত্রীদের জিম্মি করে রীতিমতো রমরমা বাণিজ্য করছে নৌ পরিবহন ব্যবসায়ীরা। পিছিয়ে নেই থ্রি হুইলার এবং ভাড়ায় মোটরসাইকেল চালকরাও। নৌ পরিবহনে ভাড়া নৈরাজ্যের অভিযোগ উঠলেও প্রশাসনের হস্তক্ষেপ না থাকায় হতাশ যাত্রীরা। এদিকে, ফের ভারিবর্ষণ শুরু হওয়ায় আবারও পাহাড়ধস শুরু হয়েছে। বিপর্যয় এড়াতে ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাসকারীদের সরে যাবার অনুরোধ জানিয়ে মাইকিং করছে প্রশাসন। খোলা হয়েছে ৫টি আশ্রয় কেন্দ্র। সড়ক যোগাযোগ বন্ধ থাকায় আম-কাঁঠাল ও আনারসসহ কৃষিজ পণ্য নিয়ে বিপাকে পড়েছেন চাষীরা। তবে এক সপ্তাহের মধ্যে খাগড়াছড়ি-রাঙ্গামাটি আঞ্চলিক সড়ক হালকা যানবাহন চলাচলের উপযোগী করা সম্ভব হবে বলে জানিয়েছেন সড়ক বিভাগের কর্মকর্তারা। গত ১৩ জুন প্রবল বর্ষণ ও ভয়াবহ পাহাড়ধসে তিন পার্বত্য জেলার ১৩০ জন নিহত হয়। আহত প্রায় শতাধিক, গৃহহীন দুই হাজারেরও বেশি। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ও সড়ক বিভাগ অক্লান্ত পরিশ্রম করে এক সপ্তাহের মধ্যে রাঙ্গামাটি-চট্টগ্রাম আঞ্চলিক সড়কটিকে হালকা যানবাহন চলাচলের জন্য উপযোগী করতে সক্ষম হলেও প্রায় তিন সপ্তাহ সময় পার হলেও খাগড়াছড়ি-রাঙ্গামাটি আঞ্চলিক সড়ক যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। সরেজমিনে দেখা গেছে, খাগড়াছড়ি-রাঙ্গামাটি আঞ্চলিক সড়কের কোথাও কোথাও সড়ক তলিয়ে গিয়ে পাহাড়ী ছড়া, কোথাও সড়কের ওপর পাহাড় ভেঙ্গে পড়ে টিলায় পরিণত হয়েছে। কোথাও কোথাও নেই সড়কের কোন অস্তিত্ব। অথচ মাত্র ক’দিন আগেও এ সড়ক দিয়ে প্রতিদিন বাস, ট্রাক, মাইক্রোবাস, সিএনজি ও মোটরসাইকেলসহ শত শত যানবাহন চলাচল করেছে। কিন্তু সর্বনাশা প্রাকৃতিক দুর্যোগ সব কিছু স্তব্ধ করে দিয়েছে। ফলে চরম বিপাকে পড়েছে দুই জেলার হাজারও মানুষ। এদিকে বিকল্প হিসেবে প্রায় ২৫ বছর আগের খাগড়াছড়ির মহালছড়ি রাঙ্গামাটির নৌ রুট চালু হলেও যাত্রীদের জিম্মি করে রীতিমতো রমরমা বাণিজ্য করছে নৌ পরিবহন ব্যবসায়ীরা। পিছিয়ে নেই থ্রি হুইলার ও ভাড়ায় চালিত মোটরসাইকেল চালকরাও। নৌ পরিবহনে ভাড়া নৈরাজ্যের অভিযোগ উঠলেও প্রশাসনের হস্তক্ষেপ না থাকায় হতাশ যাত্রীরা। খাগড়াছড়ির মহালছড়ি থেকে রাঙ্গামাটি সড়ক পথে বাসে সময় লাগত মাত্র সোয়া এক ঘণ্টা। ভাড়া ছিল ৭০ টাকা। এখন ইঞ্জিনচালিত নৌকায় রাঙ্গামাটি যেতে সময় লাগছে তিন থেকে সোয়া তিন ঘণ্টা। আর ভাড়া আদায় করা হচ্ছে মাথা পিছু ২ শত টাকা করে। নৌপথে যাতায়াত সময় সাপেক্ষের পাশাপাশি অনেক ঝুঁকিপূর্ণ। নৌকাগুলোতে লাইফ জ্যাকেট সাপোর্ট নেই। এতে করে যে কোন সময় দুর্ঘটনার আশঙ্কা আছে। তার ওপর অতিরিক্ত ভাড়া নেয়া হচ্ছে। অথচ দেখার যেন কেউ নেই। মকবুল হোসে খন বেশ কিছু নৌকা ছিল তখন যাতায়াত করতে পারতাম। এখন মহালছড়ি থেকে মাত্র দুইটি ইঞ্জিন চালিত নৌকা চলাচল করায় অফিস করতে অসুবিধা হয়। অনেক সময় রাঙ্গামাটিতে অবস্থান করতে হচ্ছে অনেককে। মংরে মার্মা নামে এক শিক্ষক জানান, নৌপথে যাতায়াত সময় সাপেক্ষের পাশাপাশি অনেক ঝুঁকিপূর্ণ। নৌকাগুলোতে লাইফ জ্যাকেট সাপোর্ট নেই। এতে করে যে কোন সময় দুর্ঘটনার সম্ভাবনা আছে। রাঙ্গামাটির মনতুলা পাড়া কেসিং এলাকার বাসিন্দা বিজয় চাকমা জানান, দীর্ঘ ২০ দিন অতিবাহিত হলেও রাঙ্গামাটি সদরের কতুকছড়ি এলাকার ভাঙ্গা অংশ মেরামতে সড়ক বিভাগ কোন পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। সড়ক যোগাযোগ বন্ধ থাকায় কতুকছড়ি, মনতুলা পাড়া কেসিংসহ আশপাশের ৪-৫টি গ্রামের ৫ শতাধিক পরিবার খুব অসুবিধায় রয়েছে। বীর বালা ত্রিপুরা জানান, আগে সিএনজিতে করে খাগড়াছড়ি থেকে রাঙ্গামাটি যেতে খরচ হতো ২০০ টাকা এখন জনপ্রতি খরচ হয় ৫-৬ শত টাকা। তার মধ্যে ৪ কিমি. পথ হাঁটতে হচ্ছে। ইঞ্জিন নৌকার চালক রিপন চাকমা জানান, সাময়িক লাইন হওয়ায় ভাড়া বেশি নেয়া হচ্ছে। অনেক সময় যাত্রী কম হলেও তাদের নৌকা চালাতে হয়। কতুকছড়ি এলাকার চাষী উদয় শংকর চাকমা জানান, হাট বাজারে কৃষিজ পণ্য ও ফলমূল আনা হলেও ক্রেতা না থাকায় পণ্য নষ্ট হচ্ছে। সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হওয়ায় বাইরের ক্রেতারা আসতে পারছে না। খাগড়াছড়ি সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ মোসলেহ উদ্দিন চৌধুরী জানান, খাগড়াছড়ি-রাঙ্গামাটি সড়কটি চালু করতে সেনাবাহিনী ও সড়ক বিভাগ কাজ করে যাচ্ছে। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে হালকা যানবাহন চলাচলের উপযোগী করা সম্ভব হবে।
×