ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা বাস্তবায়নে কয়েক মন্ত্রণালয়ে কাজ শুরু

প্রকাশিত: ০৫:৩৩, ৪ জুলাই ২০১৭

প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা বাস্তবায়নে কয়েক মন্ত্রণালয়ে কাজ শুরু

তপন বিশ্বাস ॥ প্রধানমন্ত্রীর দিকনির্দেশনাগুলো বাস্তবায়নের লক্ষ্যে কার্যক্রম গ্রহণ করেছে কয়েকটি মন্ত্রণালয়। এ লক্ষ্যে সোমবার দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় আগাম বন্যার প্রস্তুতি হিসেবে দুই কোটি টাকা এবং সাত হাজার মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দিয়েছে। স্থানীয় সরকার বিভাগ, সড়ক বিভাগসহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয় নতুন অর্থবছরের শুরু থেকে প্রকল্প বাস্তবায়নের কার্যক্রম শুরু করতে যাচ্ছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনাগুলো যথাসময়ে বাস্তবায়ন হলে সঠিক সময় প্রকল্প বাস্তবায়ন, দেশের সুশাসন নিশ্চিত হওয়া, দারিদ্র্য হ্রাস, সামাজিক বৈষম্য দূর হওয়াসহ দেশ নিজের পায়ে দাঁড়াবে বলে আমলারা মনে করেন। এ প্রসঙ্গে দুর্যোগ ও ত্রাণ সচিব মোঃ শাহ কামাল জনকণ্ঠকে বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আমরা তা বাস্তবায়নের কার্যক্রম শুরু করেছি। প্রধানমন্ত্রীর এই দিকনির্দেশনাগুলো সুদূরপ্রসারী। এই দিকনির্দেশনাগুলো বাস্তবায়নের জন্য আমরা আমলারা প্রতিশ্রুতিও দিয়েছি। সে মোতাবেক কাজ শুরু হয়েছে। তিনি বলেন, রবিবার প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে দিকনির্দেশনা পাওয়ার পরই বাজেট বইয়ের পাতা প্রত্যয়ন করে নিয়ে এসেছি এবং কার্যক্রম শুরু করেছি। তিনি মনে করেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনাগুলো বাস্তবায়িত হলে দেশের সুশাসন নিশ্চিত হবে। প্রকল্পগুলো সঠিক সময় বাস্তবায়ন হবে। দেশের দারিদ্র্য আরও দ্রুত হ্রাস পাবে। ধনী, দরিদ্রসহ সামাজিক বৈষম্য দূর হবে। উন্নয়নের প্রতি মানুষের আস্থা বাড়বে। সামগ্রিকভাবে মানুষের জীবনযাত্রার মান বাড়বে। দুর্যোগ সচিব আরও বলেন, আমলাদের দক্ষতা বাড়াতে রবিবার বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু অসমাপ্ত আত্মজীবনী ও কারাগারে রোজনামচা বই দুটি সকলকে পড়তে বলেছেন। সেখানে অনেক দিকনির্দেশনা রয়েছে। এছাড়া আমলাদের তিনি সংসদীয় রীতিনীতি (পার্লামেন্টস প্র্যাকটিস), সংবিধান ও কার্যপ্রমাণী বিধি ভালভাবে জানতে বলেছেন। প্রধানমন্ত্রীর এই নির্দেশ মান্য করলে যে কোন আমলা বা ব্যক্তির দক্ষতা বৃদ্ধি পাবেই। এতে দেশ ও জাতি উপকৃত হবে। গোটা জাতিকেও সঠিক ইতিহাস জানাতে তিনি, ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে সকল তথ্য সংগ্রহ করে জাতির জন্য তা সংরক্ষণ করতে বলেছেন। দেশের সকল মানুষকে তিনি দারিদ্র্যের কশাঘাত থেকে মুক্তি দিতে তৃণমূল পর্যায়ে যেখানে আর্থিক অসচ্ছলতা রয়েছে সেগুলো দূর করার নির্দেশ দিয়েছেন। যেখানে রাস্তা তৈরি হবে তার দুই পার্শ্বে জলাধার রাখতে হবে। গছ লাগাতে হবে রাস্তার দুই পাশে। এতে গোটা দেশ নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর ভাবনাটা উঠে এসেছে। স্থানীয় সরকার বিভাগ সূত্র এবং সড়ক বিভাগ সূত্র জানায়, অর্থবছর মাত্র শুরু হলেও প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী আগামী দু’একদিনের মধ্যে নতুন অর্থবছরের প্রকল্পের কার্যক্রম শুরু করতে নিদেশ দেয়া হবে। গণপূর্ত মন্ত্রণালয় ইতোমধ্যে রাজউকে নির্দেশ দিয়েছে, এখন থেকে যত ভবন নির্মাণের নক্সার অনুমোদন দেয়া হবে তার প্রতিটিতে বৃষ্টির পানি সংরক্ষণের জন্য জলাধার রাখা বাধ্যতামূলক করতে হবে। সচিবদের প্রতি প্রধানমন্ত্রীর দেয়া ১৭ দফা নির্দেশনাগুলো হচ্ছেÑ পার্বত্য চট্টগ্রামসহ পাহাড় ও টিলা অধ্যুষিত এলাকায় পরিবেশ রক্ষাসহ ভূমিধস প্রতিরোধে কার্যকর ভূমিকা পালনে আরও আন্তরিক হতে হবে। এবারের মতো মর্মান্তিক দুর্ঘটনার পুনরাবৃত্তি যেন না হয়। ঢাকা মহানগরী ও বুড়িগঙ্গা নদীর পরিবেশ দূষণ রোধে রাজধানীর হাজারীবাগের ট্যানারি কারখানাগুলো সাভারে স্থানান্তর করা হয়েছে। কিন্তু সেখানেও যাতে পরিবেশের কোন ক্ষতি না হয় সে ব্যবস্থা জোরদার করতে হবে। বঙ্গোপসাগরের ১ হাজার ৭৩৮ বর্গকিলোমিটার এলাকাকে ‘মেরিন প্রটেকটেড এরিয়া’ ঘোষণা করা হয়েছে। বৃক্ষরোপণ, পরিবেশ ও বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগ প্রতিরোধে ম্যানগ্রোভ বাগান সৃজন, অংশীদারত্বমূলক ব্লক বাগান ও স্ট্রিপ বাগান সৃজন করতে হবে। গ্রাম উন্নয়নের ওপর জোর দিতে হবে, কর্মসংস্থান তৈরি করতে হবে। যাতে গ্রামের মানুষ কাজের খোঁজে শহরে না আসে। শহরের ওপর জনসংখ্যার চাপ যাতে না বাড়ে সে ব্যবস্থা করতে হবে। ধনী-দরিদ্রের বৈষম্য কমাতে হবে। বৈষম্যহীন সমাজ বিনির্মাণে সম্পদের সুষম বণ্টন নিশ্চিত করতে হবে। উন্নয়ন কর্মসূচী এমনভাবে গ্রহণ করতে হবে যাতে সর্বোচ্চ সংখ্যক মানুষ উপকৃত হয়। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচী বাস্তবায়নের হার আরও বাড়াতে হবে। অর্থবছরের শেষদিকে তাড়াহুড়ো না করে বছরের শুরু থেকেই বাস্তবায়নের কৌশল নির্ধারণে ব্যবস্থা নিতে হবে। বর্ষা মৌসুমে প্রকল্পের পেপার ওয়ার্ক সম্পন্ন করতে হবে। আন্তঃমন্ত্রণালয় সমন্বয়ের প্রয়োজন হলে তা দ্রুত সম্পন্ন করতে হবে। পাশাপাশি কাজের গুণগতমানের সঙ্গে কোন আপোস করা যাবে না। ফাস্ট ট্রাকভুক্ত উন্নয়ন প্রকল্পগুলো নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সম্পন্ন করতে আরও আন্তরিক হতে হবে। দক্ষ এবং যোগ্যদের গুরুত্বপূর্ণ কাজের দায়িত্ব দিতে হবে। ভাল কাজের পুরস্কার আর মন্দ কাজের জন্য তিরস্কার ব্যবস্থা কার্যকর করতে হবে। সুশাসন নিশ্চিত করতে হবে। সেবা প্রদানকারী সংস্থাগুলো থেকে সেবা পেতে জনগণকে যাতে ভোগান্তির শিকার না হতে হয় তার উদ্যোগ নিতে হবে। বেতনভাতা বাড়ানো হয়েছে। কর্মচারীদের দুর্নীতি বন্ধ করতে হবে। আন্তঃক্যাডার বৈষম্য দূর করে সকলের ন্যায়সঙ্গত পদোন্নতি এবং পদায়ন নিশ্চিত করতে ব্যবস্থা নিতে হবে। অপেক্ষাকৃত তরুণ কর্মকর্তা যারা দীর্ঘদিন চাকরি করবেন, প্রশিক্ষণে তাদের অগ্রাধিকার দিতে হবে। জঙ্গীবাদ দমন এবং মাদক ব্যবসায় নিয়ন্ত্রণে মাঠ পর্যায়ে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ এবং এ ক্ষেত্রে আইন প্রয়োগের পাশাপাশি সচেতনামূলক কার্যক্রম গ্রহণ করতে হবে। সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা ও এসডিজির সফল বাস্তবায়নে মেধা, দক্ষতা ও অভিজ্ঞতার যথাযথ প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে। কেবল সরকারী কর্মকর্তা হিসেবে নয়, দেশপ্রেমিক নাগরিক হিসেবে জনকল্যাণে আত্মনিয়োগে সহকর্মীদেরও উদ্বুদ্ধ করতে হবে। দেশের প্রকৃত উন্নয়নের জন্য তিনি বলেছেন, শেষদিকে তাড়াহুড়ো না করে অর্থবছরের শুরু থেকেই বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচী (এডিপি) বাস্তবায়নের কৌশল নির্ধারণ করতে হবে। অর্থবছরের শেষদিকে তাড়াহুড়ো না করে বছরের শুরু থেকেই বাস্তবায়নের কৌশল নির্ধারণ করার নির্দেশ দিয়েছেন। বর্ষা মৌসুমে প্রকল্পের পেপার ওয়ার্ক সম্পন্ন করুন। আন্তঃমন্ত্রণালয় সমন্বয়ের প্রয়োজন হলে তা দ্রুত করে ফেলুন। পাশাপাশি কাজের গুণগতমানের সঙ্গে কোন আপোস করা যাবে না।
×