ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

মিটার রিডারদের গাফিলতি

টাঙ্গাইলে বিদ্যুত গ্রাহকদের চরম ভোগান্তি

প্রকাশিত: ০৫:১৫, ৪ জুলাই ২০১৭

টাঙ্গাইলে বিদ্যুত গ্রাহকদের চরম ভোগান্তি

ইফতেখারুল অনুপম, টাঙ্গাইল ॥ বিদ্যুত বিল নিয়ে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন গ্রাহকরা। ঠিকমতো বিল না পাওয়ায়, অনেকের কয়েক মাসের বিল একত্রে বকেয়াসহ নানা অভিযোগ রয়েছে। আবার কেউ কেউ বিলের জন্য বিদ্যুত অফিসে যোগাযোগ করেও বিড়ম্বনার শিকার হয়েছে। অন্যদিকে বিদ্যুতের মাত্রাতিরিক্ত লোডশেডিংয়ে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। একদিকে তীব্র গরম, তার ওপর লোডশেডিং। ফলে দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে জনজীবন। রাতদিনে কয়েকবার করে দীর্ঘ সময় লোডশেডিং হচ্ছে। চাহিদার চেয়ে সরবরাহ কম থাকায় এ লোডশেডিং হচ্ছে বলে জানায় বিদ্যুত বিভাগ। বিদ্যুত উন্নয়ন বোর্ড টাঙ্গাইলের বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগ এবং সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, বিদ্যুত উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) কাছ থেকে মুন পাওয়ার নামের একটি প্রতিষ্ঠান বিদ্যুত বিল বিতরণের সাব-কন্ট্রাক্ট নেয়। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে তারা কার্যক্রম শুরু করে। এ প্রতিষ্ঠানটি টাঙ্গাইলের ৩৮ হাজার ৩৪৫ গ্রাহকের বিল বিতরণ করতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছে। মাঠপর্যায়ে বিলের কাগজ বিতরণের জন্য ৮০ স্টাফ থাকলেও নিয়মিত বিদ্যুত বিলের কাগজ পাচ্ছে না গ্রাহক। এছাড়া নিয়োগকৃত স্টাফরা কিছুদিন কাজ করে চাকরি ছেড়ে চলে যায়। এ অফিস থেকে অনেক গ্রাহককে কয়েক মাসের বিল একত্রে দেয়া হচ্ছে। মুন পাওয়ার প্রতিষ্ঠানের মাঠপর্যায়ের স্টাফরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে মিটার দেখে বিল করার কথা থাকলেও তা না করে গড় বিল করে যাচ্ছে। আবার অনেক এলাকায় মিটার রিডাররা মিটার চেক করছে না। সদর উপজেলার সুরুজ নওগাঁ গ্রামের ফুলচান বলেন, আমার মিটারে ৪৬৮ ইউনিট থাকলেও বিল আসছে ১৫১৫ ইউনিটের। আমি এ বাড়তি বিলের টাকা দিমু ক্যামনে? বৈল্লার সৈয়দ শামসুল হক বলেন, অনেক দিন কোন বিল না পাওয়ায় বিদ্যুত অফিসে যোগাযোগ করি। সেখান থেকে সাবালিয়ায় পাঠানো হয়। সেখানে গিয়েও ঠিকমতো কাউকে পাওয়া যাচ্ছিল না। পরে একজনকে ধরে বিলের খোঁজ নেয়া হয়। অফিসের সবাই নতুন। তারা গ্রাহকের বাড়িও ঠিকমতো চেনে না। এ জন্য বিলও ঠিকমতো পাওয়া যায় না। দেওলা এলাকার রুমেল খান বলেন, ‘তিন মাসের বিল দেয়া হয়েছে প্রায় চার হাজার টাকার মতো। এত বিল একত্রে দেয়া খুব কষ্টের। তবু দিতে হবেই। আমাদের কষ্টে বিদ্যুত বিভাগের কিছু যায়-আসে না তো। শহরের নতুন বাস টার্মিনালের ব্যবসায়ী মিজানুর রহমান জানান, তার প্রতি মাসে গড়ে ২৭২ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ৫০০ টাকা বিল হতো। অথচ গত এপ্রিলে বিল হয়েছে ১০ হাজার ১৫৬ টাকা। মিটার দেখে বিল করার কথা থাকলেও কোন দিন কেউ মিটার দেখে না। নিজেদের মতো করে কম বিল করতে করতে শেষে জমাকৃত সব বিল একত্রে দেয়া হয়। এতে যে সমস্যা হয়, সেটা বোঝার মতো জ্ঞান হয়তো তাদের হয়নি। শহরের কলেজপাড়া এলাকার বাসিন্দা ইফতিয়ার তনুমন বলেন, এ এলাকার কোন মিটারের বিল হচ্ছে না। বাসায় দীর্ঘ পাঁচ মাস ধরে কোন বিল পাচ্ছি না। এলাকার মিটার চেক করার লোককে জানিয়েও কোন খবর পাইনি তার। অফিসে গিয়েও অভিযোগ করেছি, কিন্তু অফিস কোন পদক্ষেপ নেয়নি। মুন পাওয়ারের প্রধান প্রকৌশলী রেজাউল করিম বলেন, নতুন কাজ। কিছু সমস্যা হচ্ছে। সেগুলো সমাধানের সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হচ্ছে। সফটওয়্যার সমস্যার কারণে এক হাজার ১০০ থেকে এক হাজার ২০০ এর মতো বিল প্রিন্ট হয়নি। সেগুলো নতুন করে প্রিন্ট করা হয়েছে। সেগুলো গ্রাহকের কাছে পৌঁছে দেয়া হবে। যাদের অতিরিক্ত বিল দেয়া হয়েছে, সেগুলো যাচাই করে সংশোধন করা হচ্ছে। এক মাসের মধ্যে সব সমস্যা দূর হবে। বিদ্যুত উন্নয়ন বোর্ড বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী শাহাদাত আলী বলেন, তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণে ট্রান্সফর্মারে ওভারলোড হওয়ায় সমস্যা হচ্ছে। এ জন্য বিদ্যুত সরবরাহ স্বাভাবিক রাখা কঠিন হয়ে পড়ছে। তবে কিছুদিনের মধ্যে এ সমস্যা কমে যাবে। বিদ্যুত বিল নিয়ে তিনি বলেন, গ্রাহকের জমাকৃত বিল একত্রে দেয়ায় মানে হচ্ছে বিল বেশি করা হয়েছে।
×