ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

কেউ কেউ জঙ্গলে রাত কাটাচ্ছে ॥ সে দেশের সঙ্গে কথা বলা হবে ৭ জুলাই

মালয়েশিয়ায় পুলিশের জালে আটকা দেড় হাজার বাংলাদেশী

প্রকাশিত: ০৫:১০, ৪ জুলাই ২০১৭

মালয়েশিয়ায় পুলিশের জালে আটকা দেড় হাজার বাংলাদেশী

ফিরোজ মান্না ॥ মালয়েশিয়া আটক প্রবাসী কর্মীদের দেশে ফেরত পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। পনেরোটি ‘সোর্স কান্ট্রি’ থেকে দেশটিতে ৬ লাখের বেশি অবৈধ কর্মী কাজ করে আসছিল। ই-কার্ডের আওতায় যে সব কর্মী আসতে পারেনি তাদের বিরুদ্ধে গত শুক্রবার থেকে পুলিশ অভিযান শুরু করেছে। সোমবার পর্যন্ত বিভিন্ন দেশের কয়েক হাজার কর্মীকে আটক করেছে দেশটির ইমিগ্রেশন পুলিশ। এর মধ্যে বাংলাদেশের দেড় হাজারের বেশি কর্মী পুলিশের হাতে আটক হয়েছে। তাদের অচিরেই দেশে ফেরত পাঠানো হতে পারে। বিভিন্ন দেশের বিপুল সংখ্যক কর্মীকে আটক করে অযথা জেলখানায় খাওয়াতে চায় না কর্তৃপক্ষ। ব্যাপক ধরপাকড়ের কারণে বৈধ কর্মীরাও দেশটিতে আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন। কোথাও কোথাও তারাও পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদ ও নাজেহালের শিকার হচ্ছেন। অনেক কর্মী রাতে জঙ্গলে রাত কাটাচ্ছেন। বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন দেশের পক্ষ থেকে কূটনৈতিক তৎপরতা চালানো হচ্ছে। যাতে আটক কর্মীদের কোনভাবে দেশটির কর্তৃপক্ষ বৈধ করে নেয়। তবে মালয়েশিয়া কোন অবস্থাতেই তাদের বৈধ করবে না বলে সে দেশের সংবাদ মাধ্যমে খবর বের হয়েছে। এ বিষয়ে সোমবার প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব জাবেদ আহমেদ বলেন, আমরা বিষয়টি নিয়ে এখন পর্যন্ত মালয়েশিয়ার কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলাপ আলোচনা করছি না। আগামী ৭ জুলাইয়ের পরে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করা হবে। কারণ বর্তমানে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসি মালয়েশিয়ায় ব্যক্তিগত সফরে রয়েছেন। তিনি মালয়েশিয়া থেকে সিঙ্গাপুর হয়ে দেশে ফিরবেন আগামী ৭ জুলাই। মন্ত্রী দেশে ফেরার পর মন্ত্রণালয়ের উচ্চপর্যায়ের বৈঠক হবে। বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী মালয়েশিয়া কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আটক কর্মীদের নিয়ে আলোচনায় যাওয়া হতে পারে। তবে যারা আটক হয়েছে, মনে হয় তাদের বিষয়ে আলোচনা করে খুব একটা লাভ হবে না। কারণ তাদের জন্য মালয়েশিয়া সরকার দীর্ঘ তিন মাস সময় দিয়েছে বৈধ হওয়ার জন্য। এত সময় পাওয়ার পরেও যারা ই-কার্ড নিতে পারেনি, তাদের আরও তিন মাস সময় দিলেও ই-কার্ড নিতে পারবেন না। কারণ ই-কার্ড নেয়ার জন্য মালয়েশিয়ায় অবস্থিত বাংলাদেশ হাইকমিশন সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে ব্যাপক প্রচার চালিয়েছে। শুধু তাই নয় লিফলেট ছাপিয়ে বাংলাদেশী কর্মীদের পৌঁছে দিয়েছে। তারপরও তারা বৈধ হতে পারেননি। এখন মালয়েশিয়া সরকার কঠোর অবস্থানে চলে গেছে। কোন অবৈধ কর্মী দেশটিতে রাখবেন না। এমনকি যারা কারখানার মালিক তাদেরও ছাড় দেবে না। এ পর্যন্ত ২০ জনের বেশি কারখানা মালিককে আটক করেছে দেশটির পুলিশ। জাবেদ আহমেদ বলেন, আটক কর্মীদের নিজ নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর বিষয়টির কথা তিনি শুনেছেন। কারণ এতগুলো মানুষকে কেন মালয়েশিয়া কর্তৃপক্ষ জেলে বসিয়ে খাওয়াবে। তারা কেন এত খরচ বহন করবে। কূটনৈতিক তৎপরতার বিষয়ে তিনি বলেন, ১৫ সোর্স কান্ট্রি থেকে দেশটি কর্মী নিয়োগ করে। বাংলাদেশ তাদের একটি কান্ট্রি। ওই সব দেশও বিষয়টি নিয়ে চিন্তা করছে। তারা কি কৌশলে যায়-তা দেখার পর আমরা কৌশল নির্ধারণ করব। এককভাবে তেমন কিছু করা সম্ভব নয়। তবে যাই কিছু করা হোক আগামী ৭ জুলাইয়ের আগে কিছু করা সম্ভব হবে না। মন্ত্রী দেশে ফিরলেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে। মালয়েশিয়া থেকে প্রাপ্ত খবরে জানা গেছে, মালয়েশিয়ায় অবৈধ অভিবাসীদের বিরুদ্ধে অভিযানে শুক্রবার থেকে সোমবার পর্যন্ত বিভিন্ন দেশের কয়েক হাজার কর্মী আটক করা হয়েছে। এর মধ্যে বাংলাদেশে দেড় হাজারের বেশি কর্মী রয়েছে। সাঁড়াশি অভিযানে বিপুল সংখ্যক অবৈধ কর্মী আটক করার কারণে দেশটিতে অস্থায়ী ‘ডিটেনশন সেন্টার’ তৈরি করা হয়েছে। আটক কর্মীদের ওইসব সিটেনশন সেন্টারে রাখা হচ্ছে। মালয়েশিয়ার ইমিগ্রেশন দফতরের মহাপরিচালক মুস্তাফার আলী আবারও হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছে, কাউকে ছাড় দেয়া হবে না। অবৈধ কোন কর্মীকে দেশে রাখা হবে না। আর যে সব মালিক অবৈধ কর্মীদের কম বেতন দিয়ে কাজ করাচ্ছেন তাদেরও আইনের আওতায় আনা হচ্ছে। এ পর্যন্ত বেশ কিছু মালিককেও আটক করা হয়েছে। দেশটির সংবাদ মাধ্যমে মুস্তাফার আলীর বরাদ দিয়ে সোমবার এমন খবর প্রকাশ করেছে। দেশটির ২৫৫ এলাকায় অভিযান চালানো হয়েছে। এসব এলাকা থেকে কয়েক হাজার বিভিন্ন দেশের কর্মীকে আটক করা হয়েছে। দেশটিতে স্থায়ীভাবে বসবাসকারী বেশ কয়েক জন টেলিফোনে জানিয়েছেন, আসলে আটককৃতরা ই-কার্ডের জন্য আবেদন না করার বিভিন্ন কারণ উল্লেখ করেছেন। কেউ কেউ বলেছেন, তারা আবেদনের সময়সীমা জানতেন না। আবার কেউ বলেছেন, ওই সময়সীমা বাড়ানো হবে বলে চাকরিদাতারা তাদের আশ্বাস দিয়েছিলেন। আবার কেউ বলেছেন, কিছু বাঙালী দালাল কর্মীদের কাছ থেকে টাকা পয়সা ও কাগজপত্র নিয়ে ই-কার্ড করে দেয়ার। কিন্তু দালালরা টাকা মেরে দিয়েছে। ই-কার্ড করে দিতে পারেনি। এভাবেও অনেক কর্মী ই-কার্ড থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। মালয়েশিয়ায় অবস্থিত বাংলাদেশ হাই কমিশনের শ্রম কাউন্সিলর সায়েদুল ইসলাম জনকণ্ঠকে বলেন, আটক কর্মীদের বিষয়ে মালয়েশিয়া সরকার কি সিদ্ধান্ত নিয়েছে তা এখন পর্যন্ত হাইকমিশনকে চিঠি দিয়ে জানায়নি। তবে আমরা যেটা জানতে পেরেছি, সেটা হচ্ছে আটক কর্মীদের দেশে ফেরত পাঠাবে।
×