ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

ভ্যাট আইন বাস্তবায়ন পেছাল যে কারণে

প্রকাশিত: ০৫:০৬, ৪ জুলাই ২০১৭

ভ্যাট আইন বাস্তবায়ন পেছাল যে কারণে

অর্থনৈতিক রিপোর্টার॥ অনেক জল্পনাকল্পনা শেষে নতুন ভ্যাট আইন বাস্তবায়ন পিছিয়ে গেলো দুই বছরের জন্য। আগামী ১ জুলাই থেকে নতুন আইন বাস্তবায়নের কথা থাকলেও তা আর হচ্ছে না। আগের ১৯৯১ সালের আইনেই ভ্যাট আদায় করা হবে আগামী দুই বছর। গত বুধবার জাতীয় সংসদে প্রস্তাবিত বাজেট আলোচনায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পরামর্শে এই আইন বাস্তবায়ন পিছিয়ে দিয়ে অর্থবিল ২০১৭ পাস করা হয়েছে। অনেকেই বলছেন, জাতীয় নির্বাচনে বিরূপ প্রভাবের আশঙ্কা থেকেই এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গবর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ব্যবসায়ীদের প্রস্তুতির অভাবকে বড় করে দেখানো হলেও ভ্যাট আইনের বাস্তবায়ন দুই বছর পিছিয়ে দেয়ার অর্থ হলো আগামী জাতীয় নির্বাচনে যেন কোন বিরূপ প্রভাব না পড়ে। তিনি বলেন, ১৫ শতাংশ ভ্যাট অনেক বেশি। এ কারণে জনগণের ওপর এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ত। দীর্ঘদিন ধরেই নতুন ভ্যাট আইনের হার ও বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া নিয়ে ব্যবসায়ীরা আপত্তি জানিয়ে আসছেন। তাদের দাবি, নতুন আইন অনেক নিত্যপণ্যের দাম বাড়িয়ে দেবে। এতে মূল্যস্ফীতির চাপ বাড়বে। বাজেট ঘোষণার আগে ভ্যাট আইন সংশোধনে সুনির্দিষ্ট সুপারিশ দিয়েছে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই। এছাড়া, এ আইন বাস্তবায়নের প্রতিবাদে এর মধ্যে সারাদেশের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা আন্দোলনের হুমকিও দেন। ব্যবসায়ীদের প্রবল আপত্তির মধ্যেও আগামী অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে ১ জুলাই ২০১৭ থেকে নতুন ভ্যাট আইন কার্যকরের ঘোষণা দিয়েছিলেন অর্থমন্ত্রী। পরে গত ১ জুন বাজেট ঘোষণার পর থেকে সংসদের ভেতরে-বাইরে নতুন ভ্যাট আইন নিয়ে সমালোচনার ঝড় ওঠে। খোদ সরকারী দলের প্রভাবশালী মন্ত্রী ও এমপিরাও নতুন ভ্যাট আইনের বিরোধিতা করছেন। কেউ কেউ অর্থমন্ত্রীর পদত্যাগও দাবি করেন। পরবর্তী সাধারণ নির্বাচনের দুই বছর আগে এই ভ্যাট আইন কার্যকর না করতে ক্ষমতাসীন দলের সংসদ সদস্যরা আহ্বান জানান অর্থমন্ত্রীর প্রতি। এর পরিপ্রেক্ষিতে বুধবার সংসদে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, নতুন ভ্যাট আইন নিয়ে নানা ধরনের কথা হচ্ছে, ব্যবসায়ীরাও তাতে সাড়া দিচ্ছেন না। সে কারণে আমি মনে করি এই আইন আগে যেমন ছিল আগামী দুই বছরও তেমনই থাকবে। প্রধানমন্ত্রীর এই বক্তব্যের পর অর্থমন্ত্রী সংসদে বলেন, আমি মূসক আইনের পূর্ণ কার্যকারিতা পিছিয়ে দেয়ার প্রস্তাব করছি। আগের ধারাবাহিকতায় কিছু সংশোধন করে ২০১২ সালের আইনই যেভাবে গত চার বছর ধরে পর্যায়ক্রমে বাস্তবায়িত হচ্ছে, ঠিক তেমনিভাবে আমাদের বর্তমান সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ নেবে। অর্থমন্ত্রীর এই প্রস্তাবের পর কার্যত ২০১২ সালে প্রণীত ভ্যাট আইনটি বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে কার্যকর হচ্ছে না। এ প্রসঙ্গে অগ্রণী ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান বিআইডিএসের গবেষক ড. জায়েদ বখত বলেন, যথাযথ প্রস্তুতি না থাকার কারণে নতুন ভ্যাট আইন বাস্তবায়ন দুই বছর পিছিয়ে দেয়া হয়েছে। এই সিদ্ধান্তকে সঠিক বলেও মনে করেন এই অর্থনীতিবিদ। তিনি বলেন, সবাই এখনও এই ভ্যাট আইন সম্পূর্ণভাবে বুঝে উঠতে পারেনি। এ কারণে গ্যাপ থাকলে সময় নিয়ে সেটা দূর করা গেলে এর ফল পাওয়া যাবে। এবারের বিশাল বাজেটের খরচ মেটাতে দুই লাখ ৪৮ হাজার ১৯০ কোটি টাকা জনগণের কাছ থেকে কর ও শুল্ক হিসেবে আদায়ের পরিকল্পনা করেছিলেন অর্থমন্ত্রী। এর মধ্যে ৯১ হাজার ২৫৪ কোটি টাকা ভ্যাট বা মূল্য সংযোজন কর থেকে আদায়ের লক্ষ্য ধরেছিলেন তিনি। নতুন ভ্যাট আইনের বাস্তবায়ন পিছিয়ে যাওয়ায় এখন তার পরিকল্পনা দৃশ্যত বাধাগ্রস্ত হলো। জানা গেছে, নতুন ভ্যাট আইন আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) পরামর্শে প্রণীত। সহজশর্তে এক শ’ কোটি ডলার সমপরিমাণ আট হাজার কোটি টাকা ঋণ পাওয়ার অন্যতম শর্ত হিসেবে এ আইন তৈরি করা হয়। এরই মধ্যে পুরো ঋণ পেয়েছে সরকার। এছাড়া, নতুন আইনটি বাস্তবায়নে সারাদেশের ভ্যাট অফিস অটোমেশনের জন্য এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) থেকেও সাড়ে পাঁচ শ’ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে সরকার। প্রসঙ্গত, ভ্যাট আইনটি ২০১৬ সালের ১ জুলাই থেকে কার্যকর করার পরিকল্পনা ছিল সরকারের। কিন্তু ব্যবসায়ীদের দাবির মুখে তা এক বছর পিছিয়ে দিয়েছিল সরকার। এখন আরও দুই বছরের জন্য পেছাল এই ভ্যাট আইনের বাস্তবায়ন।
×