ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

অষ্টম শ্রেণির পড়াশোনা কৃষি শিক্ষা

প্রকাশিত: ০৪:০০, ৪ জুলাই ২০১৭

অষ্টম শ্রেণির পড়াশোনা কৃষি শিক্ষা

বি.এস.এস,বি-এড (কৃষি ডিপ্লোমা) সিনিয়র শিক্ষক, কানকিরহাট বহুমূখী উচ্চ বিদ্যালয়, সেনবাগ, নোয়াখালী। পরীক্ষকঃ মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড, কুমিল্লা। মোবাইলঃ ০১৭১৮-৮৬৩০৪৫ (দ্বিতীয় অধ্যায়ঃ কৃষি প্রযুক্তি) প্রিয় পাঠক, আন্তরিক প্রীতি ও শুভেচ্ছা রইল। প্রযুক্তি উদ্ভাবন এক চলমান প্রক্রিয়া। একটি প্রযুক্তি উদ্ভাবন হওয়ার পর এর ব্যবহার কিছুদিন চলে। কিছুদিন অতিবাহিত হবার পর এর চেয়েও আরও উন্নত লাগসই প্রযুক্তির উদ্ভাবন হয়। মানুষ তার প্রয়োজন মোতাবেক এই উন্নত লাগসই প্রযুক্তির ব্যবহার শুরু করে। যেমনঃ সার একটি রাসায়নিক প্রযুক্তি। দীর্ঘদিন মানুষ গাছকে পুষ্টি সরবরাহের জন্য অধিক পুষ্টিমান সমৃদ্ধ উন্নত সার ব্যবহার করে আসছে। গুটি ইউরিয়ার পরিচয়ঃ আমাদের চাষী ভাইয়েরা ধান চাষে জৈব-অজৈব অনেক সার ব্যবহার করে থাকেন। এর মধ্যে নাইট্রোজেন (অজৈব) সম্বলিত ইউরিয়া সার প্রধান। দানাদার ইউরিয়া সারের সাশ্রয়ী ব্যবহারের জন্য মেশিনের সাহায্যে এটাকে গুটি ইউরিয়ায় রুপান্তর করা হয়েছে। গুটি ইউরিয়ার প্রয়োজনীয়তা: প্রচলিত দানাদার ইউরিয়া ব্যবহারের অসুবিধা থেকেই গুটি ইউরিয়া ব্যবহারের প্রয়োজন দেখা দেয়। প্রচলিত দানাদার ইউরিয়া ব্যবহারের সুবিধা ও অসুবিধা আমাদের জানা থাকা দরকার। তাই এখানে প্রথমে প্রচলিত দানাদার ইউরিয়ার সুবিধা ও অসুবিধা আলোচনা করা হলো। দানাদার ইউরিয়া ব্যবহারের সুবিধাঃ ১। এটি প্রয়োগ করা খুব সহজ। ২। প্রয়োগে সময় ও শ্রম কম লাগে । ৩। গাছের মূল বা শিকড় ক্ষতি গ্রস্থ হয় না। ৪। বাজারে সহজ লভ্য। দানাদার ইউরিয়া ব্যবহারের অসুবিধাঃ ১। দানাদার ইউরিয়া কিস্তিতে কয়েকবার প্রয়োগ করতে হয়। ২। এই সার পানিতে পানিতে মিশে দ্রুত গলে চুঁইয়ে মাটির নিচে গাছের শিকড় অঞ্চলের বাইরে চলে যায়। ৩। বৃষ্টি বা সেচের পানির সাথে এই সার সহজেই ক্ষেত হতে বের হয়ে যায়। ৪। এই সার ব্যবহারে অপচয় ও খরচ বেশি। গুটি ইউরিয়া ব্যবহারের সুবিধাঃ কৃষিতাত্ত্বিক ১। একবার প্রয়োগ করা হলেই ধান পাকা পর্যন্ত আর ইউরিয়ার প্রয়োজন হয় না। ২। গুটি ইউরিয়া প্রয়োগকৃত জমিতে ঘাস কম হয়। ৩। বার বার ইউরিয়া প্রয়োগের ঝামেলা থাকেনা। ৪। গুটি ইউরিয়া মাটিতে বিদ্যমান অন্যান্য খাদ্য গ্রহণে গাছকে সাহায্য করে। আর্থ-সামাজিক ১। বেশি ফলন, বেশি মুনাফা এবং খাদ্য সংকট সমাধানে সহায়তা করে। ২। নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করে। ৩। কৃষকের আয় বৃদ্ধি ও দারিদ্র্যতা কমায়। পরিবেশের উপর প্রভাব: ১। পরিবেশ দূষণ মুক্ত থাকে। গ্যাস আকারে নাইট্রোজেন বাতাসে মিশতে পারে না। ২। পানির সাথে ইউরিয়া মিশে যায় না, বিধায় পানি কম দূষিত হয়। গুটি ইউরিয়া ব্যবহারে অসুবিধাঃ ১। গাছের শিকড় ক্ষতিগ্রস্থ হতে পারে। ২। চাহিদানুযায়ী গুটির আকার পাওয়া দুষ্কর। ৩। শুকনো মাটিতে প্রয়োগ করা যায় না। ৪। সার প্রয়োগে সময় ও শ্রম বেশি লাগে। ধান চাষে গুটি ইউরিয়ার প্রয়োগ পদ্ধতি: গুটি ইউরিয়া ব্যবহারের পাঁচ থেকে সাত দিন পূর্বে ২০*২০ সে.মি. লাইন থেকে লাইন চারা থেকে চারার দূরত্বে ধানের চারা রোপণকরতে হবে। ধানের চারা রোপণের ৫-৭ দিনের মধ্যে মাটি শক্ত হওয়ার আগে গুটি ইউরিয়া প্রয়োগ করা জরুরী। জমিতে যখন ২-৩ সে.মি. পরিমাণ পানি থাকে সে সময় গুটি ইউরিয়া প্রয়োগ করা সহজ হয়। গুটি ইউরিয়ার ওজন বিভিন্ন রকম হয়। যথাঃ ০.৯ গ্রাম, ১.৮ গ্রাম, ২.৭ গ্রাম। ওজন অনুযায়ী ধান ক্ষেতে ব্যবহারের মাত্রা নির্ধারণ করা হয়। ওজন যদি ০.৯ গ্রাম হয় তবে চারটি গুছির মাঝখানে বোরে ধানে ৩ টি এবং আমন ও আউশে ২ টি করে ব্যবহার করতে হয়। ওজন যদি ১.৮ গ্রাম হয় তবে বোরোতে ২টি এবং আমন-আউশে ১ টি করে ব্যবহার করতে হবে। আবার ওজন যদি ২.৭ গ্রাম হয় তবে বোরোতে ১ টি গুটি প্রয়োগই যথেষ্ঠ। গুটি ইউরিয়া লাইনে চাষ করা ক্ষেতে প্রয়োগ করা সুবিধাজনক। প্রথম লাইনের প্রথম চার গোছার মাঝে ১০ সে. মি. গভীরে গুটি ইউরিয়া পুঁতে দিতে হয়। তারপর চার গোছা বাদ দিয়ে পরবর্তী চার গোছার মাঝে একই গভীরতায় পুঁতে দিতে হবে। প্রথম লাইন শেষ করে দ্বিতীয় লাইনে, তৃতীয় লাইনে, চতুর্থ লাইনে গুটি ইউরিয়া পুঁতে দিতে হবে। এভাবে সমগ্র ক্ষেতে গুটি ইউরিয়া প্রয়োগ করতে হবে।
×