ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

বিবিসির বিশ্লেষণ

যেসব কারণে কাতারের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসে মদদ দেয়ার অভিযোগ

প্রকাশিত: ০৩:৫০, ৪ জুলাই ২০১৭

যেসব কারণে কাতারের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসে মদদ দেয়ার অভিযোগ

উগ্র ধর্মীয় গোষ্ঠীগুলোকে সহায়তা দিয়ে মধ্যপ্রাচ্যে অস্থিতিশীলতা বাড়ানোর অভিযোগে সৌদি ও তার মিত্ররা আরব উপদ্বীপের গ্যাস-সমৃদ্ধ ছোট্ট দেশ কাতারকে একঘরে করে রেখেছে। স্বতন্ত্র পররাষ্ট্রনীতি মেনে চলা কাতারের বিরুদ্ধে আরব প্রতিবেশীরা বহু আগ থেকেই অসন্তোষ প্রকাশ করে আসছে। এর আগে ২০১৪ সালে দেশগুলোর মধ্যে নয় মাসের জন্য কূটনৈতিক সম্পর্কোচ্ছেদের ঘটনা ঘটেছিল। প্রথমত মিসরের নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন মুসলিম ব্রাদারহুডকে কাতার সমর্থন দিলে দেশগুলোর মধ্যে উত্তেজনা চরমে পৌঁছায়। এরপর তালেবান ও আল-কায়েদা সমর্থনপুষ্ট বিভিন্ন সন্ত্রাসী সংগঠনের সঙ্গেও কাতারের নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। মধ্যপ্রাচ্যে সৌদি আরবের চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ইরানের সঙ্গে রয়েছে দোহার ঘনিষ্ঠতা। কাতারের রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন টেলিভিশন আল জাজিরা ইয়েমেনের বিদ্রোহী হুতি গোষ্ঠীকে সমর্থন দিচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। টেলিভিশনটির সৌদি আরবের সম্প্রচার কার্যক্রমের অনুমতি বাতিল করে দেয়া হয়েছে। সৌদি ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের সহায়তায় ইয়েমেন সরকার হুতিদের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে। তবে কাতার প্রতিবেশীদের সব অভিযোগ নাকচ করে দিয়ে বলেছে, মধ্যপ্রাচ্যের যে কোন দেশের তুলনায় সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে তাদের পদক্ষেপ জোরালো। তবে দেশটি তার বিপুল সম্পদ কাজে লাগিয়ে মধ্যপ্রাচ্যে যে কূটনৈতিক চাল চেলে যাচ্ছে, মূলত সেটাকে কেন্দ্রবিন্দু করেই চলছে সাম্প্রতিক সঙ্কট। ইরান-সমর্থিত ইরাকি শিয়া মিলিশিয়ারা রাজ পরিবারের ২৬ সদস্যকে অপহরণ করলে তাদের ছাড়িয়ে নিতে গত এপ্রিলে সিরিয়ায় সাবেক আল-কায়েদা সম্পর্কযুক্ত একটি গোষ্ঠী ও মধ্যস্থতাকারী ইরানি নিরাপত্তা বাহিনীর কর্মকর্তাদের এক শ’ কোটিরও বেশি ডলার মুক্তিপণ দিতে হয়েছে। এছাড়া সিরিয়ায় জিহাদিদের হাতে আটক কয়েক ডজন শিয়া যোদ্ধাদের মুক্তি দিতে বাধ্য করা হয়েছে। উগ্র মতাদর্শী গোষ্ঠীগুলোকে তহবিল সরবরাহের একের পর এক অভিযোগ উঠছে কাতারের বিরুদ্ধে। আর এসব কেন্দ্র করেই মধ্যপ্রাচ্যের অস্থিতিশীলতা বাড়ছে। ৯/১১’র সন্ত্রুাসী হামলার পর যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে সন্ত্রাসীদের অর্থায়ন বন্ধের অব্যাহত চেষ্টা চলছে। এ জন্য যুক্তরাষ্ট্রে আইন পাসের পাশাপাশি জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদেও প্রস্তাব পাস হয়েছে। সন্ত্রাসীদের অর্থ যোগান দিলে ব্যক্তি কিংবা প্রতিষ্ঠানকে জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞার মুখোমুখি হতে হবে। এমনকি উগ্রপন্থীদের তহবিল সরবরাহের সন্দেহে হলে রেমিটেন্স কোম্পানি ও দাতব্য সংস্থাগুলোকেও বন্ধ করে দেয়ার আইন করা হয়েছে। এসব কিছুর পরেও কাতারসহ বেশকিছু দেশের প্রতিশ্রুতি নিয়ে প্রশ্ন জেগেছে। ২০১৪ সালে তখনকার যুক্তরাষ্ট্রের সন্ত্রাসবাদ ও অর্থনৈতিক গোয়েন্দা বিভাগের রাজস্ব আন্ডার সেক্রেটারি ডেভিড কোহেন বলেন, ওয়াশিংটনের দীর্ঘদিনের মিত্র কাতার। কিন্তু বহু বছর ধরে আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা নষ্টের জন্য দায়ী সংগঠন হামাসকে প্রকাশ্যে অর্থ যোগান দিয়ে যাচ্ছে। এছাড়া বেশকিছু গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সিরিয়ায় কিছু উগ্রপন্থী গোষ্ঠীকে কাতার অর্থ সরবরাহ করছে। তিনি বলেন, আল-কায়েদা ও কথিত ইসলামিক এস্টেটের জন্য তহবিল সরবরাহের উপযোগী পরিবেশ রয়েছে কাতারে। ২০১৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রের রাজস্ব বিভাগের দায়িত্ব পান কোহেন। তিনি এডাম জুবিনের স্থলাভিষিক্ত হন। কোহেনের জন্য রেখে যাওয়া নোটে জুবিন বলেন, ইচ্ছা প্রকাশের পরেও সন্ত্রাসীদের অর্থ যোগানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে কাতারের রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাব রয়েছে। এ কারণে সন্ত্রাসীদের অর্থ যোগানের পথ বন্ধ করা যাচ্ছে না। যুক্তরাষ্ট্র বেশকিছু কাতারি নাগরিকের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। কিন্তু কাতারের অর্থনৈতিক তৎপরতার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়ে ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সফরে নতুন করে আত্মবিশ্বাসী হওয়ার পরেও সৌদি আরবও সন্ত্রাসবাদের অভিযোগ থেকে রেহাই পেতে পারে না। ৯/১১‘র সন্ত্রাসী হামলার ১৯টি বিমানের মধ্যে ১৫টির ছিনতাইকারী ছিলেন সৌদি নাগরিকরা। ২০০৯ সালে উইকিলিকসের ফাঁস করা কূটনৈতিক তথ্যে দেখা গেছে, কৌশলগত অগ্রাধিকার হিসেবে সন্ত্রাসীদের অর্থায়নের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিতে সৌদি সরকারের ভূমিকায় হতাশা প্রকাশ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। এমনকি বিশ্বব্যাপী স্কুল ও মসজিদে ওয়াহাবি মতবাদ প্রচারে সৌদি অর্থ খরচ করে যাচ্ছে। যেটাকে সন্ত্রাসবাদের একটি প্রধান উৎস হিসেবে বিবেচনা করা হয়। যদিও হাতে গোনা কয়েক সৌদি ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে দায়ী করা হয়েছে, তবুও দেশটিতে সন্ত্রাসবাদকে সহায়তার সুযোগ কাতারের চাইতে অনেক গুণ বেশি রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের রিয়াদ সফরে সন্ত্রাসের অর্থায়নের আসন্ন হুমকির মোকাবিলায় যৌথভাবে আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদ অর্থায়ন শনাক্তকরণ কেন্দ্র উদ্বোধন করা হয়েছে। সম্ভবত সন্ত্রাসবাদের অর্থায়নকে উপসাগরীয় অঞ্চলের মূল সমস্যা হিসেবে বিবেচনায় নেয়ার প্রতিফলনই হচ্ছে এ উদ্যোগ। -বিবিসি
×