ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

চীন সাগরে মার্কিন রণতরী

প্রকাশিত: ০৩:৪৯, ৪ জুলাই ২০১৭

চীন সাগরে মার্কিন রণতরী

দক্ষিণ চীন সাগরের বিতর্কিত জলসীমার কাছে মার্কিন রণতরীর উপস্থিতিকে উস্কানিমূলক কাজ বলে অভিহিত করেছে চীন। রবিবার চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে দেয়া এক বিবৃতিতে এ কথা জানান হয়। সাগরের ওই এলাকায় কৃত্রিম দ্বীপ তৈরি সামরিক স্থাপনা বসিয়ে চীন নিজের সীমানা বাড়ানো চেষ্টা করছে বলে সম্প্রতি অভিযোগ শোনা যাচ্ছিল। খবর বিবিসি ও গার্ডিয়ানের। দক্ষিণ চীন সাগরের বিতর্কিত জলসীমায় চীনের কর্মকা-ের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র বারংবার হুঁশিয়ারি দিয়েছে। কিন্তু বেজিং বলেছে এটি তাদের আন্তর্জাতিক জলসীমার মধ্যে পড়ে এবং সেখানে সামরিক স্থাপনা বসানোর অধিকার তাদের রয়েছ। চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে রবিবার দেয়া এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, মার্কিন রণতরী ইউএসএস স্টেথেম দক্ষিণ চীন সাগরে অনুপ্রবেশ করেছে। রণতরী যেখানে প্রবেশ করেছে সাগরের ওই অংশের ওপর চীন নিজের সার্বভৌমত্ব দাবি করে থাকে। এদিকে মার্কিন প্রতিরক্ষা কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে ফক্স নিউজ জানিয়েছে, ইউএসএস স্টেথেম পার্সেল দ্বীপপুঞ্জের নিকটবর্তী ট্রাইটন দ্বীপ থেকে ১২ নটিক্যাল মাইল দূরে অবস্থান করছে, আইন অনুসারে সেখানে যে কোন দেশেরই স্বাধীনভাবে নৌ চলাচলের অধিকার রয়েছে। জাতিসংঘের নিয়ম অনুসারে উপকূল থেকে ১২ নটিক্যাল মাইলের মধ্যে যে কোন দেশ কোন ভূখ-ের ওপর মালিকান দাবি করতে পারে। মার্কিন রণতরী ওই সীমার ভেতর দিয়ে চলাচলের অর্থ যুক্তরাষ্ট্র দক্ষিণ চীন সাগরে ওই দ্বীপগুলোর ওপর চীনের দাবি স্বীকার করে না। চীনের দিক থেকেও জাতীয় নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে বলে দাবি করা হয়েছে। চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে আরও অভিযোগ করা হয়েছে, চীন এবং তার দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার প্রতিবেশী দেশগুলো যখন সাগরের জলসীমা নিয়ে শান্তিপূর্ণ বিতর্ক নিরসনের চেষ্টা করছে তখন যুক্তরাষ্ট্র সেখানে ইচ্ছাকৃতভাবে উত্তেজনা উস্কে দেয়ার নীতি গ্রহণ করেছে। ক্ষুদ্র ওই দ্বীপটির ওপর তাইওয়ান ও ভিয়েতনাম মালিকানা দাবি করে থাকে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে কয়েকটি প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে সীমান্ত নিয়ে বিরোধে জড়িয়েছে চীন। চীনের বিতর্কিত কর্মকা-ের প্রতিবাদে যুক্তরাষ্ট্র ‘ফ্রিডম অব নেভিগেশন’ কর্মসূচী শুরু করেছে। সাগর ও আকাশপথে যে কোন দেশের অস্বাভাবিক দাবিকে চ্যালেঞ্জ করাই এ কর্মসূচীর লক্ষ্য। যুক্তরাষ্ট্র চাইছে সব দেশ যেন জাতিসংঘের বিধি মেনে চলে। মার্কিন পররাষ্ট্র দফতর জানিয়েছে, স্থানীয় অন্য দেশের সরকারের সঙ্গে সমম্বয় রেখেই এ কর্মসূচী পরিচালিত হচ্ছে। ডোনাল্ড ট্রাম্প আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হওয়ার এ নিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো মার্কিন রণতরী দক্ষিণ চীন সাগরের বিতর্কিত চলসীমার কাছে গেল। এর এগ মে মাসে ইউএসএস ডেউই দক্ষিণ চীন সাগরের স্পার্টলি দ্বীপপুঞ্জের ১২ নটিক্যাল মাইলের মধ্যে প্রবেশ করেছিল। সেখানে প্রবাল প্রাচীরের ওপর বালু ফেলে কৃত্রিমভাবে দ্বীপ তৈরি করেছে চীন। এর কদিন পর মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী জেমস ম্যাটিস বলেছিলেন কৃত্রিমভাবে তৈরি করা দ্বীপকে সামরিক ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহারের চেষ্টা যুক্তরাষ্ট্র মেনে নেবে না। গত কয়েক বছর ধরে চীন, মালয়েশিয়া, ফিলিপিন্স, তাইওয়ান ও ভিয়েতনামের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র ‘ফ্রিডম অব নেভিগেশন’ কর্মসূচী পালন করেছে। দক্ষিণ চীন সাগরের এ জায়গাটি একটি গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক রুট। ধারণা করা হয় সাগরতলে তেল ও গ্যাসের বিশাল মজুদ সঞ্চিত আছে। বিতর্কিত জলসীমার সবচেয়ে বড় অংশের ওপর মালিকানা দাবি করে থাকে চীন। চীনের দাবি ১৯৪৭ সালে তৈরি করা মানচিত্র অনুসারে সাগরের অংশের ওপর তাদের অধিকার রয়েছে। কৃত্রিমভাবে তৈরি দ্বীপগুলো সামরিকীকরণ করা হচ্ছে বলে যুক্তরাষ্ট্রের অবিয়োগ অবশ্য প্রত্যাখ্যান করেছে চীন। দেশটির দাবি সামরিক ও বেসামরিক উভয় উদ্দেশ্যে ওসব স্থাপনা ব্যবহার করা হবে। চীনের কর্মকর্তারা বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র যা করেছে তাতে দুদেশের মধ্যকার বিদ্যমান সম্পর্কের অবনতি ঘটতে পারে। তবে চীনের রাষ্ট্রীয় বার্তাসংস্থা সিনহুয়া জানিয়েছে চলতি বছর এপ্রিলে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং যুক্তরাষ্ট্র সফরের পর দুদেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক শক্ত ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়েছে।
×