ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

সামসুন্নাহার

ঘরে থাক অরণ্যের ছোঁয়া

প্রকাশিত: ০৭:১৩, ৩ জুলাই ২০১৭

ঘরে থাক অরণ্যের ছোঁয়া

ইট, কাঠ, ধুলাবালি আর যান্ত্রিকতার এই শহরে একটু সবুজ এনে দিতে পারে সজীবতা। সারাদিনের ঘর্মক্লান্ত শ্রান্ত দেহটা নিয়ে যখন ঘরে পা দেবেন, তখন এক ঝলক সবুজ আপনাকে দেবে প্রকৃতির পরশ। মন মাতানো অর্কিড কিংবা বেলি ফুলের ঘ্রাণ আপনাকে নিয়ে যাবে মাদকতার অন্য এক জগতে। তা ছাড়া আপনার বাসায় ফ্রিজ, এ্যারোসেল বা মশার কয়েল এবং আপনি যে পরিমাণ কার্বন-ডাইঅক্সাইড ত্যাগ করেন, তার জন্য ঘরে গাছ লাগানো জরুরী। কাঠাফাটা গরমে আপনার ঘরকে সুশীতল রাখবে গাছপালা। চলুন দেখে আসি কী কী গাছ লাগিয়ে নিজের ঘরে অরণ্যের আবহ নিয়ে আসতে পারেন। প্রথমেই কিছু ইনডোর প্লান্টের নাম জেনে নেই। তারপর দেখা যাবে সেগুলো কোথায় লাগালে ভালো হবে। ইনডোর প্ল্যান্ট হলো যেসব গাছ, কম সূর্যের আলো ও ছায়ায় বেড়ে উঠতে পারে। যেমন : পাতাবাহার, ক্যাকটাস, চাইনিজ পাম, পনিটেইল পাম, পেপেরোমিয়া, জিজি প্লান্ট, বাহারি কচু, মথ অর্কিড, এরিকা রোজ, কেবি রোজ, বাঁশপাতা, গ্রেপ আইভি, ইংলিশ আইভি, ড্রেসিনা, আইভি লতা, কুইনস টিয়ারস (ছঁববহং ঞবধৎং), পেপেরোমিয়া ইত্যাদি। ইনডোর প্লান্টের জন্য খুব বেশি আলো বাতাসের দরকার হয় না, কিন্তু একদম বদ্ধ ঘর হলেও চলবে না। যতেœর পাশাপাশি ঘরে আলো বাতাসের উপযুক্ত ব্যবস্থা রাখবেন। পেপেরোমিয়া (চবঢ়বৎড়সরধ চষধহঃ) প্রথমে আসা যাক পেপেরোমিয়ার কথায়। এটা এতটাই জনপ্রিয় যে প্রায় প্রত্যেক বাসা বাড়ির নিচে এবং ছাদের দেখা যায়। আপনি চাইলে ঘরেও লাগাতে পারেন পেপেরোমিয়া। এর পাতার রঙের ছটা ঘরকে করে তোলে বর্ণময়। বসার ঘরের এক কোনায় পেপেরোমিয়া লাগাতে পারেন। এটা খুব ছোট পটেই এঁটে যায় (ফুটবল সাইজের), বেশি জায়গা নষ্ট করবে না। মাঝারি আলোয় রাখলে ভাল হয়। তবে এই গাছের পাতা বিষাক্ত। বাসায় কুকুর, বিড়াল বা অন্যান্য পোষা প্রাণীর সংস্পর্শ থেকে দূরে রাখবেন। গাছের পাতা দেখলে আপনার আদরের কুকুর বা বিড়ালের তা চিবুতে ইচ্ছা হতেই পারে! গ্রেপ আইভি (এৎধঢ়ব ওাু) গ্রেপ আইভি আর্দ্র পরিবেশে ভাল হয়। তাই এটি বারান্দায়, জানালায় এবং দরজার মুখে লাগাতে পারেন। বাদলা দিনে যখনই বারান্দায় আসবেন, এর কচি সবুজ, সতেজ পাতার যে সৌন্দর্য আপনি দেখবেন তা কখনোই ভুলতে পারবেন না। এর জন্য আপনাকে ঝুড়ি ব্যবহার করতে হবে। মাঝারি সাইজের প্লান্ট ঝুড়িগুলোতে রাখতে পারেন। এটি নিজে নিজেই বাড়ে, বিশেষ যতেœর তেমন প্রয়োজন হয় না। তবে মাঝে মাঝে কচি পাতাগুলো মুছে দিতে পারেন। একইভাবে ইংলিশ আইভিও লাগাতে পারেন বারান্দায়, বাথটাবের পাশে। বাসায় পুরনো চায়ের কেটলি বা সুগার পটের হ্যান্ডেল ভেঙ্গে গেলে, ভাঙ্গা স্থানটি পরিষ্কার করে, রং করে তাতে গাছ লাগিয়ে বাথরুম বা কিচেনে সাজিয়ে রাখলে বেশ শোভাবর্ধিত হয়। তবে এক্ষেত্রে সাবধান থাকবেন। বাচ্চারা একটা বয়সে যাই হাতের কাছে পায় তাই মুখে দেয়। গ্রেপ আইভি এবং ইংলিশ আইভির পাতা অত্যন্ত বিষাক্ত। জিজি প্লান্ট (তববুবব চষধহঃ) জিজি প্লান্টের প্রাণ হলো কৈ মাছের প্রাণ। সহজে মরতে চায় না। এই গাছের পাতা এতটাই সতেজ আর তীব্র সবুজ যে দেখলেই মনে হয় প্লাস্টিকের গাছ। খুব বেশি যতেœর প্রয়োজন হয় না। মাঝে মাঝে পানি দেয়ার পাশাপাশি পাতা মুছে দিলেই হয়। এটি অন্যান্য গাছের চেয়ে খানিক বড় হওয়ায় একে বসার ঘরে কিংবা খাবার ঘরের এক কোনায় জায়গা দিতে পারেন। কেনার সময় একটু বড় দেখে কিনবেন। তারপর নিয়মিত পাতা আর ডাল ছেঁটে দিলেই আর তেমন বড় হবে না। এর পাতাও বিষাক্ত। সুতরাং বুঝতেই পারছেন, বাচ্চা এবং পোষা প্রাণীদের সংস্পর্শ থেকে দূরে রাখবেন। মানিপ্লান্ট (গড়হবু চষধহঃ) মানিপ্লান্টকে সৌভাগ্যের গাছও বলা হয়। ধারণা করা হয়, এই গাছ বাড়িতে বা অফিসে লাগালে, বাড়ির সুখ-শান্তি আর ঐশ্বর্য বৃদ্ধি পায়। এর কারণ হিসেবে কথিত আছে- গাছের প্রত্যেকটি শাখায় ৫টি করে পাতা থাকে। এই পাঁচটি পাতা ধাতু, কাঠ, জল, আগুন ও পৃথিবীর প্রতীক। এই পাঁচটি উপাদান সমৃদ্ধিকে আকর্ষণ করে। পাঠক নিশ্চয়ই জানেন, সুখ-শান্তি আর সমৃদ্ধি মানবসৃষ্ট। সেটা কোন গাছ কিংবা ফুল বয়ে নিয়ে আসতে পারে না। এ ছাড়া মানিপ্লান্টের ফুলের সুগন্ধ বেশ মাদকতাময়। এই মাহাত্ম্যময় গাছটির যতœ করাও বেশ সহজ। পাতা বা ডাল ছিঁড়ে এনে অল্প মাটিতে পুঁতে দিলে দেখবেন কিছু দিনের মাঝে এটি ডালপালা মেলতে শুরু করেছে, চাইলে পানিতেও রাখতে পারেন। পানিতে রাখতে চাইলে কন্টেনার ব্যবহার করতে পারেন।
×