ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

কুড়িগ্রামে তিস্তার ব্যাপক ভাঙ্গন

প্রকাশিত: ০৬:৫২, ৩ জুলাই ২০১৭

কুড়িগ্রামে তিস্তার ব্যাপক ভাঙ্গন

রাজুমোস্তাফিজ, কুড়িগ্রাম ॥ রাজারহাট উপজেলার বিদ্যানন্দ ইউনিয়নের তৈয়বখাঁ এলাকায় প্রায় ৩ কিলোমিটার জুড়ে চলছে তিস্তা নদীর ভাঙ্গন। ভয়াবহ ভাঙ্গনে পাঁচ দিনে প্রায় ৪৫টি ঘরবাড়ি সরিয়ে অন্যত্র নেয়া হয়েছে। ভাঙ্গনের মুখে পড়েছে স্কুল, মসজিদ, মন্দির, বাজারসহ দেড়শ বাড়িঘর। ভাঙ্গন কবলিতরা খেলা আকাশের নিচে আশ্রয় নিয়ে আহাজারি করছে। চরম মানবেতর জীবন কাটাচ্ছে ঐ সব পরিবার। সরেজমিন তৈয়বখাঁ এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে তিস্তার ভয়াবহ রুদ্র রূপ! উজানে গাবুরহালান, মাজা পাড়া, রতি মৌজা, তৈয়বখাঁ, সোমনারায়ণ, রতিদেব গ্রাম পর্যন্ত প্রায় ৩ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে চলছে ভাঙ্গন। তিস্তার মূল স্রোত এসব এলাকা দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ভাঙ্গন কবলিতরা নিরাপদ জায়গায় ঘরবাড়ি সরিয়ে নিচ্ছে। পরিবারের লোকজনসহ গৃহস্থালি জিনিসপত্র সরাতে ব্যস্ত। ভাঙ্গনের কবলে পড়েছে তৈয়বখাঁ জামে মসজিদ, বিদ্যানন্দ নিম্নমাধ্যমিক বিদ্যালয়, তৈয়বখাঁ সার্বজনীন মন্দির এবং বাজারের প্রায় ৩৫টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। দোকানদার আব্দুর রহিম জানান, আবাদি জমি বাড়িঘর মাত্র কয়েকদিনে নদীর ভাঙ্গনে সব শেষ। রতি, সোলাগারী গ্রামের আইজার রহমান (৬৫) ও হালিমা খাতুন (৪২) ৫ থেকে ৭ বার বাড়ি সরিয়েছেন। তবু নদী যেন তাদের পিছু ছাড়ছে না। বাড়িঘর নিয়ে কোথায় যাবেন এ চিন্তায় তারা অস্থির! মসজিদের মোয়াজ্জিন আব্দুল হাই (৬৬) জানান, দীর্ঘ ২৫ বছর ধরে এই মসজিদে আজান দিয়ে আসছি। কতজন এল-গেল কিন্তু কাজের কাজ কেউ করল না। তিনি বলেন সরকারীভাবে নদীর গভীরতার চেয়ে কম দৈর্ঘ্যরে বাঁশ দিয়ে পাইলিং দিচ্ছে। এগুলো দিয়ে কিচ্ছু হবে না। শুকনা মৌসুমে স্থায়ী ভাঙ্গনরোধে কোন ব্যবস্থা না নেয়ায় এলাকার গরিব মানুষ আরও নিস্ব হয়ে গেল। দিনমজুর আজিজুল ইসলাম ভাঙ্গনের হাত থেকে রক্ষার জন্য ঘর সরিয়ে স্কুল প্রাঙ্গণে আশ্রয় নিয়েছে। তিনি জানান, তৈয়বখাঁ বাজারের পাশে ৬টি বাড়ি, ৫টি দোকান এরই মধ্যে ভেঙ্গে গেছে। গত কয়েক দিনে নুরজামাল, সুরতজামাল, রফিকুল বাড়ি সরিয়ে নিয়েছে। নদীর ধারে অবস্থিত ঘরবাড়ি অনেকে সরাতে পারছে না জায়গার অভাবে। দিনমজুর রেজাউল জানান, আমার বাড়ি-ঘর ভেঙ্গে যাচ্ছে। ঘর তোলার জায়গা নাই। কেউ জায়গা দিতে চাচ্ছে না। তৈয়বখাঁ বাজারের ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করেন, এলাকাবাসী চাঁদা তুলে ঢাকায় তদবির করে তৈয়বখাঁ বাজার রক্ষায় ২০ লাখ টাকার বরাদ্দ এনেছে। দরপত্রও হয়েছে। কিন্তু ঠিকাদার এই কাজ ভাঙ্গন প্রবণ তৈয়বখাঁ বাজারে না করে রতি মৌজার কাছে যেখানে ভাঙ্গন কম সেখানে গিয়ে কাজ করছেন। বিদ্যানন্দ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান তাইজুল ইসলাম জানান, বিগত কয়েক বছর ধরে ইউনিয়নের সত্তরভাগ এলাকায় ভাঙ্গনে শতশত বাড়িঘর বিলীন হয়ে গেছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডকে লিখিতভাবে জানিয়েও কোন ফল পাওয়া যাচ্ছে না। কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানায়, ভাঙ্গন কবলিত তৈয়বখাঁর ২৫০ মিটার এলাকায় অস্থায়ী তীর প্রতিরক্ষার কাজ শুরু হয়েছে। পাইলিং ও জিও ব্যাগ ফেলার কাজ চলমান রয়েছে। কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী শফিকুল ইসলাম জানান, ক্ষতিগ্রস্ত ও ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধ মেরামতের জন্য ৩০০ কোটি টাকা বরাদ্দ চাওয়া হয়। পাওয়া গেছে ৬০ লাখ টাকা। এছাড়াও গত বছর পাওয়া গেছে ৭ কোটি টাকা। এসব অর্থ দিয়ে জেলার ১০টি স্পটে কাজের জন্য দরপত্রের কাজ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
×