ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

২০১৯ ওয়ানডে বিশ্বকাপে অধিনায়ক সাকিব

নেতৃত্ব হারাচ্ছেন মাশরাফি!

প্রকাশিত: ০৬:৪৫, ৩ জুলাই ২০১৭

নেতৃত্ব হারাচ্ছেন মাশরাফি!

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ ইংল্যান্ডে ২০১৯ সালে ওয়ানডে বিশ্বকাপ অনুষ্ঠিত হবে। সেই বিশ্বকাপে সরাসরি খেলা নিশ্চিত করে ফেলেছে বাংলাদেশ। তা পুরনো খবর। দৈনিক জনকণ্ঠ পত্রিকার পাঠকরা আগেই তা জেনে গেছেন। বাংলাদেশের বিশ্বকাপ খেলা যে নিশ্চিত হয়েছে রবিবার ‘২০১৯ ওয়ানডে বিশ্বকাপে খেলা নিশ্চিত বাংলাদেশের’ শিরোনামে একটি রিপোর্টও জনকণ্ঠে ছাপা হয়েছে। বাংলাদেশের বিশ্বকাপ খেলা কিভাবে নিশ্চিত হয়ে গেছে তার বিস্তারিতও দেয়া আছে। নতুন খবর হলো এই বিশ্বকাপকে মাথায় রেখে দল গোছানোর তাড়নায় বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের বর্তমান ওয়ানডে অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজাকে নেতৃত্ব থেকে সরিয়ে দেয়ার চিন্তা-ভাবনা হচ্ছে। নেতৃত্ব হারাচ্ছেন মাশরাফি। মাশরাফি যদি নেতৃত্বে না থাকেন তাহলে স্বাভাবিকভাবেই যিনি সহঅধিনায়ক তিনিই হবেন অধিনায়ক। তাই ২০১৯ সালের ওয়ানডে বিশ্বকাপে অধিনায়ক থাকছেন বর্তমান সহঅধিনায়ক সাকিব আল হাসান। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) সভাপতি নাজমুল হাসান পাপনই এ বিষয়গুলোর ইঙ্গিত দিয়েছেন। রবিবার ধানমন্ডির বেক্সিমকো ফার্মায় নিজ অফিসে পাপন সংবাদ সম্মেলন করেন। সেখানে ২০১৯ সালের বিশ্বকাপের অধিনায়ক নিয়ে কথা উঠতেই বিসিবি সভাপতি জানান, ‘অলরেডি এটা (২০১৯ সালের বিশ্বকাপের অধিনায়ক) নিয়ে একটা পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। আপনারা দেখেন টি২০ অধিনায়কত্ব নিয়ে একটা কথা উঠেছিল। আপনারা দেখেন ২০২০-এ মাশরাফি খেলতে পারবে কিনা তা আমরা জানি না। সেজন্য কিন্তু আমরা তখন ওর সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করেছিলাম। তবে ও ডিক্লেয়ারেশন (অবসরের ঘোষণা) নিজ থেকেই দিয়েছে। আমরা বলিনি কবে কখন এটা হবে। আলাপ করার পর সে নিজেই ডিক্লেয়ার দিয়েছে। আমরা প্রসেস নিয়ে আলোচনা করছি এটাও তো বিরাট উদাহরণ। এটা নিয়ে সামনের বোর্ড সভায় আলোচনা হবে এরপর সিদ্ধান্ত হবে।’ এ বিষয় নিয়ে কথা বলার আগেই ২০১৯ সালের বিশ্বকাপে খেলা যে বাংলাদেশের নিশ্চিত হয়ে গেছে তা জানান পাপন। বলেন, ‘এখন পর্যন্ত র‌্যাঙ্কিংয়ের যা অবস্থা তাতে করে বাংলাদেশের সরাসরি বিশ্বকাপ খেলার সম্ভাবনা অত্যন্ত প্রকট। আমাদের কাছে মনে হচ্ছে না বাংলাদেশকে বাছাইপর্ব খেলতে হবে। অস্বাভাবিক কিছু ঘটলে সেটা ভিন্ন কথা। কিন্তু তেমন কোন সম্ভাবনাই নেই। এ ব্যাপারে আইসিসি যেমন পরিকল্পনা গ্রহণ করছে। আমরাও তেমন পরিকল্পনার মধ্যে রয়েছি। আশাকরি বাংলাদেশ সরাসরিই বিশ্বকাপে অংশ নিতে পারবে। দলগুলোর সঙ্গে ব্যবধান এতো বেশি যার কারণে বাংলাদেশের না খেলার কোন সম্ভাবনা নেই।’ সঙ্গে পাপন এও বলেন, ‘আগেও বলা হয়েছে, বাংলাদেশকে বাছাইপর্ব খেলতে হবে না। এখন পর্যন্ত যে হিসেব, কারও মনে হচ্ছে না বাংলাদেশকে সেটা খেলতে হবে। সেদিক থেকে বলতে পারি বাংলাদেশ এবার সরাসরি খেলবে।’ কিভাবে বিশ্বকাপে খেলা নিশ্চিত করল বাংলাদেশ? ভারতের বিপক্ষে ওয়েস্ট ইন্ডিজ দ্বিতীয় ওয়ানডেতে হারাতেই বাংলাদেশের বিশ্বকাপ খেলা নিশ্চিত হয়েছে। শনিবার পর্যন্ত আইসিসি র‌্যাঙ্কিংয়ে পয়েন্ট তালিকার যে হিসেব ছিল। তাতেই বিশ্বকাপে সরাসরি খেলার টিকেট পেয়েছে বাংলাদেশ। শনিবার পর্যন্ত র‌্যাঙ্কিংয়ে বাংলাদেশ ছিল সাত নম্বরে। রেটিং পয়েন্ট ৯৪। বাংলাদেশের পরে আছে শ্রীলঙ্কা। তাদের র‌্যাঙ্কিং আট নম্বর। রেটিং পয়েন্ট ৯১। এরপর নয় নম্বরে আছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। তাদের রেটিং পয়েন্ট ৭৭। বাংলাদেশকে শ্রীলঙ্কা টপকাতে পারলেও ওয়েস্ট ইন্ডিজ আর টপকাতে পারবে না। সেপ্টেম্বর পর্যন্ত যে আটটি দল র‌্যাঙ্কিংয়ের আট নম্বর পর্যন্ত থাকবে। তারাই ২০১৯ সালের বিশ্বকাপে সরাসরি খেলার সুযোগ পাবে। বাংলাদেশ ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের মধ্যকার রেটিং পয়েন্ট পার্থক্য ১৭। কোনভাবেই এই ১৭ পয়েন্ট আর জোগাড় করা সম্ভব নয় ওয়েস্ট ইন্ডিজের। সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ওয়েস্ট ইন্ডিজ আরও ৮টি ওয়ানডে ম্যাচ খেলার সুযোগ পাবে। কিন্তু আর কোনভাবেই তাদের ১৭ পয়েন্ট পাওয়া সম্ভব নয়। ভারতের বিপক্ষে এখন ওয়েস্ট ইন্ডিজের সিরিজ চলছে। সিরিজের আছে বাকি দুই ম্যাচ। এই দুই ম্যাচ জেতার সঙ্গে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে একটি ওয়ানডে ও ইংল্যান্ডের বিপক্ষে আসন্ন ৫টি ওয়ানডে জিতলেও ১৭ পয়েন্ট পাবে না ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ভারতের বিপক্ষে হাতে থাকা দুটি ম্যাচ জিতলে ৮২ পয়েন্ট হবে ওয়েস্ট ইন্ডিজের। এরপর আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে একটি ম্যাচ জিতলে মিলবে ১ পয়েন্ট। হবে ৮৩ পয়েন্ট। যদি ইংল্যান্ডকে টানা ৫ ম্যাচেও হারায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ মিলবে আরও ১০ পয়েন্ট। হবে ৯৩ পয়েন্ট। তারমানে তখনও বাংলাদেশের চেয়ে ১ পয়েন্ট কম থাকবে ওয়েস্ট ইন্ডিজের। তারমানে সামনে ওয়েস্ট ইন্ডিজ শুধু শ্রীলঙ্কাকেই পেছনে ফেলার সুযোগ পাচ্ছে, বাংলাদেশকে নয়। আর তাই বাংলাদেশের বিশ্বকাপে খেলা নিশ্চিত হয়ে গেছে। বাংলাদেশের যেহেতু বিশ্বকাপে খেলা নিশ্চিত হয়ে গেছে তাই এ বিশ্বকাপের পরিকল্পনাই এখন বিসিবিকে হাতে নিতে হবে। কিভাবে দল ২০১৯ সালের বিশ্বকাপে আরও ভাল ফল করতে পারে সেদিকেই মনোযোগ দিতে হবে। মাশরাফি যে নিজেও ২০১৯ সালের বিশ্বকাপ খেলতে পারবেন তারও কোন গ্যারান্টি নেই। যেহেতু গ্যারান্টি নেই তাই নতুন অধিনায়কের হাতে এখনই নেতৃত্ব তুলে দিতে চায় বিসিবি। যদি তা না করা হয় তাহলে মাঝপথে নতুন অধিনায়ক আসলে সেটা দলের জন্যই খারাপ হবে। দলের চেয়ে তো ব্যক্তি বড় নয়। যদিও মাশরাফি সফল অধিনায়ক। তার হাত ধরেই ২০১৫ সাল থেকে টানা সাফল্য পাচ্ছে বাংলাদেশ। কিন্তু ভাবনা যেহেতু ২০১৯ সালের ওয়ানডে বিশ্বকাপকে নিয়ে তাই আগে থেকেই তা নিয়ে এগিয়ে যাওয়া উচিত বলেই মনে করছেন বিসিবির কর্মকর্তারা। আর তাই মাশরাফিকে নেতৃত্ব থেকে সরিয়ে দিয়ে নতুন কাউকে নেতৃত্ব দিতে চাইছে বিসিবি। একটি নামই তাই সবার সামনে আসছে। তিনি সাকিব আল হাসান। বিসিবি সূত্রে এমন খবরই শোনা যাচ্ছে। এ মুহূর্তে বাংলাদেশের কোন ওয়ানডে খেলা নেই। ১৫ অক্টোবরের আগে আর কোন ৫০ ওভারের খেলা নেই। এই সময়ের মধ্যে মাশরাফির সঙ্গে বিসিবি সভাপতি ও উর্ধতন পরিচালকরা বসবেন। মাশরাফির সঙ্গে আলোচনা করেই সব সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। অক্টোবরে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সিরিজটি হবে দক্ষিণ আফ্রিকায়, এরপর ফেব্রুয়ারিতে যে দেশের মাটিতে তিনজাতি সিরিজ রয়েছে, সেই সিরিজটিই হয়তো মাশরাফির নেতৃত্বে শেষ সিরিজ হতে পারে। এখানে একটা আবেগও কাজ করতে পারে। যেটি নিয়েই সবার ভয়। টি২০’র নেতৃত্ব থেকে যখন মাশরাফিকে সরানোর আলোচনা হলো, মাশরাফি অবসরই নিয়ে নিলেন। ওয়ানডের নেতৃত্ব থেকেও যদি সরানোর কথা বলা হয় তাহলে কী মাশরাফি এবারও একই পথে হাঁটবেন? সেই প্রশ্ন এখন সবার মুখে মুখে। কিন্তু বিসিবির কাছে কোন পথ নেই। দলকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যেতে হলে ২০১৯ সালের বিশ্বকাপের আগেই নতুন নেতৃত্বের কাঁধে দল বুঝিয়ে দিতে হবে। তা না হলে যে দলই বিপাকে পড়বে। মাশরাফি তাই নেতৃত্ব হারাচ্ছেন বোঝাই যাচ্ছে। মাশরাফির আসনে বসছেন সাকিব। তাও বোঝা যাচ্ছে।
×