ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

রক্তের ঘাটতি

প্রকাশিত: ০৫:৪৪, ৩ জুলাই ২০১৭

রক্তের ঘাটতি

দেশে প্রতিবছর রক্তের প্রয়োজন প্রায় ৯ লাখ ব্যাগ। তবে বছরে পাওয়া যায় প্রায় ৭ লাখ ব্যাগ। ঘাটতি থাকে প্রায় ২ লাখ ব্যাগ রক্তের। তবে স্বভাবতই ঈদের আগে পরে সড়ক দুর্ঘটনার হার বেড়ে গেলে, পার্বত্য অঞ্চলে পাহাড়ধসে অসংখ্য মানুষ নিহত ও আহত হলে অথবা গার্মেন্টসে আগুন লাগলে মুমূর্ষু আহতদের জন্য তাৎক্ষণিকভাবে রক্তের চাহিদা বেড়ে যায় বহুগুণ। তখন মরণাপন্ন রোগী ও স্বজনদের অবস্থা হয় বর্ণনাতীত শোচনীয়, উদ্বেগাকুল তো বটেই। থ্যালাসেমিয়া, কিডনি রোগে আক্রান্তদেরও নিয়মিত রক্ত সঞ্চালনের প্রয়োজন পড়ে। প্রতিবছর গড়ে যে ৭ লাখ ব্যাগ রক্ত পাওয়া যায়, তার মধ্যে ৩০ শতাংশ আসে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকে, ৬০ শতাংশ পাওয়া যায় রোগীর আত্মীয়-পরিজন, বন্ধু-বান্ধবদের কাছ থেকে আর বাকি ১০ শতাংশ পাওয়া যায় পেশাদার রক্ত বিক্রেতাদের কাছ থেকে। তবে পেশাদার রক্ত বিক্রেতাদের অধিকাংশই এইচআইভিএইডস, লিভারসিরোসিস, জন্ডিস, মাদকাসক্তিসহ নানাবিধ রোগ-ব্যাধিতে জর্জরিত। ফলে তাদের কাছ থেকে সংগৃহীত রক্তে রোগীর ঝুঁকি মারাত্মক। ১৬ কোটি জনসংখ্যা অধ্যুষিত একটি দেশে আদৌ রক্তের ঘাটতি থাকা বাঞ্ছনীয় নয়। সংশ্লিষ্ট বিষয়ে বিশেষজ্ঞদের মতে, দেশের জনগোষ্ঠীর মাত্র ২ শতাংশ লোক প্রতিবছর অন্তত একবার রক্তদান করলে রক্তের চাহিদা পূরণ করা সম্ভব। রক্ত দেয়া নিয়ে বিশ্বের অনেক দেশের মতো বাংলাদেশেও কিছু সংস্কার রয়েছে। রক্ত দিলে নাকি শরীর-স্বাস্থ্য খারাপ হয়ে যায়। রোগ-ব্যাধিতে আক্রান্ত হওয়ার ভয় থাকে। সম্ভবত সে কারণেই বিশ্বব্যাপী রক্তদানে জনসাধারণের মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে প্রতিবছর ১৪ জুন পালিত হয়ে থাকে বিশ্ব রক্তদাতা দিবস। তবে তাতেও যে খুব একটা কাজ হচ্ছে তেমন মনে হয় না। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্যমতে, উন্নত বিশ্বে প্রতি হাজারে রক্ত দিয়ে থাকে ৪৫০ জন। অন্যদিকে বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল বিশ্বে প্রতি হাজারে মাত্র তিনজন। গত কয়েক বছর ধরে দেশে সন্ধানী, বাঁধন, কোয়ান্টামসহ কয়েকটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন রক্তের চাহিদা মেটাতে আন্তরিকভাবে কাজ করলেও পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে এক্ষেত্রে আশাব্যঞ্জক অগ্রগতি সাধিত হচ্ছে না। চাহিদার তুলনায় স্বল্পতার পাশাপাশি নেগেটিভ গ্রুপসহ দুর্লভ গ্রুপের রক্ত অনেক ক্ষেত্রে পাওয়া যায় না বললেই চলে। সে অবস্থায় রক্তদানে উদ্বুদ্ধকরণের অংশ হিসেবে বাড়াতে হবে জনসচেতনতা। বিশেষ করে স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ইত্যাদি পালন উপলক্ষে রক্তদানে উদ্বুদ্ধ ও অনুপ্রাণিত করতে হবে তরুণ প্রজন্মকে। মাধ্যমিক পর্যায় থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত হাতে নেয়া যেতে পারে বিশেষ কার্যক্রম। দূর করতে হবে প্রচলিত কুসংস্কার। চিকিৎসাবিজ্ঞান বলে, সুস্থ সবল একজন নারী-পুরুষ ১৮ থেকে ৫৭ বছর পর্যন্ত ৪ মাস পর পর এক ব্যাগ করে রক্ত দিতে পারে। রক্তদানের ৪৮ ঘণ্টার মধ্যেই স্বাভাবিক হতে থাকে রক্তের পরিমাণ এবং ২ সপ্তাহের মধ্যে সেই ঘাটতি পূরণ হয়ে যায়। তবে রক্ত সংগ্রহ ও যথাযথভাবে সংরক্ষণের ব্যাপারে চাই আধুনিক মানসম্মত ব্লাড ব্যাংক, যে ক্ষেত্রে ঘাটতি রয়েছে দেশে। এমনকি দু’চারটি ব্যতিক্রম বাদে সরকারী ব্লাড ব্যাংকগুলোর অবস্থাও যথেষ্ট ভাল নয়। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে এক্ষেত্রে জরুরী উদ্যোগ নিতে হবে। এর পাশাপাশি গণমাধ্যমসহ সামাজিক ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলোকে আরও তৎপর হয়ে কাজ করতে হবে সম্মিলিতভাবে।
×