ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

দেশব্যাপী চলচ্চিত্র উৎসব

প্রকাশিত: ০৫:৪৪, ৩ জুলাই ২০১৭

দেশব্যাপী চলচ্চিত্র উৎসব

প্রতিটি উৎসবে আমাদের সংস্কৃতি প্রাণ পায়। জীবন আরও অর্থপূর্ণ হয়ে ওঠে। সঙ্গীত, কবিতা, ছবি অঙ্কন, ভাস্কর্য, সাহিত্য, দার্শনিক চিন্তা প্রভৃতি এক একটা জাতির সংস্কৃতির প্রকাশ মাধ্যম এবং দর্পণ। এসব সৃজনধর্মী কাজেই অর্জিত হয় মন ও হৃদয়ের সুখানুভূতি-আনন্দ ও উৎফুল্লতা। মানুষ উৎসবে তখনই যুক্ত হয়, যখন তার কাছে জীবন স্বস্তিকর এবং উপভোগের। উৎসবের সময় ও পরিবেশ সৃষ্টিও তাই অনেক গুরুত্বপূর্ণ। জীবন থেকে উৎসব উপড়ে নিলে সপ্রাণ দেহ আর শবের মধ্যে বিশেষ ব্যবধান অবশিষ্ট থাকে না। জীবনকে বর্ণিল করার জন্য যেমন রচিত হয়েছে নানাবিধ উৎসব, তেমনি জীবনের বাঁকে বাঁকে সঙ্কট উজিয়ে সংগ্রাম করেই অর্জন করে নিতে হয়েছে বিবিধ উৎসব। উৎসবের উপলক্ষ সৃজন করতে পারাটাও তাই এক অর্থে অগ্রসরতা, জীবনমুখিতা এবং উজ্জ্বল আনন্দের প্রসারিত প্রাঙ্গণ উদ্ভাবন। এক যোগে ৬৪ জেলায় চলচ্চিত্র উৎসব হবে অক্টোবরে, তারই জোর প্রস্তুতি চলছে শিল্পকলা একাডেমিতে। পক্ষকালব্যাপী এ বর্ণাঢ্য উৎসবের জন্য ইতোমধ্যে গঠিত হয়েছে নির্বাচক ও জুরি কমিটি। প্রতিটি জেলার শিল্পকলা একাডেমিতে ছবি দেখার সুযোগ মিলবে স্ব স্ব জেলার দর্শকদের। বিষয়ভিত্তিক পাঁচটি বিভাগে সাজানো হয়েছে উৎসব। এগুলো হলোÑ বাংলাদেশ ধ্রুপদী চলচ্চিত্র, আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত বা পুরস্কৃত চলচ্চিত্র, মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক চলচ্চিত্র, নারী নির্মাতাদের চলচ্চিত্র ও সমকালীন দেশীয় চলচ্চিত্র। সাধারণ মানুষের চিত্তবিনোদনের অন্যতম প্রধান মাধ্যম হিসেবে চলচ্চিত্রের তুলনা নেই। বাস্তব জীবনের নিত্যনৈমিত্তিক সঙ্কট ও টানাপোড়েন ভুলে দু-আড়াই ঘণ্টার জন্য হাসি-কান্না আর নাটকীয়তায়পূর্ণ নাচে-গানে ভরপুর ছায়াছবি খেটে খাওয়া মানুষকে আমোদের পাশাপাশি এক ধরনের জীবনশক্তিও দান করে থাকে। স্বাভাবিক সুস্থ চিত্তবিনোদনের অভাবে একজন মানুষ মনোবৈকল্যর শিকার হতে পারে বলে সতর্ক করে দেয়া হয় আধুনিক মনোবিজ্ঞানে। আমাদের দেশের গড়পড়তা মানুষ যাত্রা-পালা, নাটক এবং সিনেমাকেই পছন্দের বিনোদন মাধ্যম হিসেবে গ্রহণ করে নিয়েছে আবহমানকাল থেকে। বিশেষ করে নগরবাসী শ্রমজীবী এবং মধ্যবিত্ত চাকরিজীবী শ্রেণীর কাছে সিনেমা হল বা প্রেক্ষাগৃহে গিয়ে চলচ্চিত্র দর্শন দারুণ এক চিত্তবিনোদন। এর মধ্য দিয়ে ঘরের বাইরে যাওয়া, সামাজিক মেলামেশা এবং একইসঙ্গে আনন্দ লাভের চমৎকার সুযোগ ঘটে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সমাজ বদলেছে, মানুষের বিনোদন লাভের ধরনে পরিবর্তন এসেছে। সবচেয়ে বড় কথা প্রযুক্তির ক্ষেত্রে এসেছে ব্যাপক পরিবর্তন। সিনেমা হলগুলোর কদর আর আগের মতো নেই। সারাদেশে হাজারের ওপর সিনেমা হলের ভেতর কমতে কমতে তার সংখ্যা এসে দাঁড়িয়েছে তিন শ’র কিছু ওপরে। দেশের প্রায় সব জেলা শহরেই ছিল সিনেমা হল। এখন বহু জেলায় আর নেই। দেড় কোটি মানুষের রাজধানী মেগাসিটি ঢাকায় প্রেক্ষাগৃহের সংখ্যা ৩৩ থেকে কমে ঠেকেছে ১৮টিতে। তবে সময় যতই বদলাক মানুষের সহজাত আনন্দস্পৃহার প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো ঘরের বাইরে দল বেঁধে আনন্দ সন্ধান; সেটি মিলনায়তনের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হোক, কিংবা হোক সিনেমা হলে গিয়ে সিনেমা দেখা। পছন্দের সিনেমা আর অনুকূল পরিবেশ পেলে নিশ্চয়ই মানুষ আবার সিনেমা হলে যাবে। সে লক্ষ্যে যুগের চাহিদা মাথায় রেখে বিনোদনসমৃদ্ধ সুস্থ ধারার ছবি নির্মাণ করতে হবে। সিনেমা হলগুলোকে যেমন বাঁচাতে হবে সাধারণ মানুষের চিত্তবিনোদনের স্বার্থে; তেমনি চলচ্চিত্র শিল্পটির শেকড়েও প্রয়োজনীয় জল ঢালার সুষ্ঠু পরিকল্পনা নিতে হবে, যাতে করে মানসম্পন্ন বিনোদনধর্মী আকর্ষণীয় ছবি নির্মাণ সম্ভবপর হয়। দেশীয় চলচ্চিত্রের দর্শক বৃদ্ধি এবং সিনেমা হলগুলোয় দর্শক টানার জন্য আসন্ন চলচ্চিত্র উৎসব কার্যকর ভূমিকা রাখুক, উৎসব সফল হোক- এটাই প্রত্যাশা।
×