ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

গত কয়েকদিন দফায় দফায় সন্ত্রাসী কর্মকা-॥ বিজিবি পুলিশের টহল জোরদার

রামগড়ে ইউপিডিএফ ‘শান্তি’ বিনষ্টের অপচেষ্টায় লিপ্ত

প্রকাশিত: ০৫:৪০, ৩ জুলাই ২০১৭

রামগড়ে ইউপিডিএফ ‘শান্তি’ বিনষ্টের অপচেষ্টায় লিপ্ত

মোয়াজ্জেমুল হক/জীতেন বড়ুয়া ॥ খাগড়াছড়ি জেলার রামগড়ে পাহাড়ী-বাঙালীদের মাঝে সহিংসতা সৃষ্টির অপতৎপরতা চলছে। গত ২৬ থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত পর্যায়ক্রমে কয়েকটি ঘটনার পর এলাকায় সিভিল ও সেনা প্রশাসনের সন্ত্রাসীবিরোধী তৎপরতা জোরদার করা হয়েছে। এ নিয়ে পাহাড়ী-বাঙালীদের মাঝে উদ্বেগ উৎকণ্ঠার জন্ম নিয়েছে। বড় ধরনের ঘটনা ঘটিয়ে ফায়দা লোটার চেষ্টায় রয়েছে অশুভ চক্র। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ইউপিডিএফের সন্ত্রাসীরা লংগদুর ঘটনার পর একে একে বেশ কয়েকটি অপকর্ম চালিয়েছে। কিন্তু শান্তিপ্রিয় পাহাড়ী-বাঙালীদের যৌথ প্রচেষ্টায় এ পর্যন্ত তাদের অসৎ উদ্দেশ্য নস্যাত হয়ে গেছে। তবে উদ্বেগ উৎকণ্ঠার কমতি নেই। ছোটখাটো বেশ কয়েকটি ঘটনার পর বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এমন অপপ্রচার শুরু হয়েছে, যা নিয়ে এক ধরনের অনিশ্চিত শঙ্কা বিরাজ করছে। গত ২৬ জুন রাতে রামগড়ের সোনাইআগায় ইউপিডিএফের একটি সন্ত্রাসী গ্রুপ এলাকাবাসীর কাছ থেকে চাঁদা দাবি করতে থাকে। সন্ত্রাসীরা একপর্যায়ে কয়েক রাউন্ড গুলিও চালায়। এ ঘটনার পর আতঙ্কিত এলাকাবাসী এক কাতারে এসে তাদের ধাওয়া দিয়ে প্রতিরোধ করে। একপর্যায়ে সন্ত্রাসীরা পালিয়ে যায়। এ ঘটনার পর পাহাড়ী-বাঙালীরা মিলে যৌথ বৈঠক করে সব ধরনের সন্ত্রাসী তৎপরতা রুখে দেয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করে। এর আগে চাঁদা না পেয়ে ইউপিডিএফ সন্ত্রাসীরা এলাকার একটি সমবায় সমিতির বাগান থেকে বেশকিছু সেগুন গাছ কেটে নিয়ে যায়। আরও আগে গত ১৩ জুন পাহাড়জুড়ে ভূমিধসের ঘটনার পর ইউপিডিএফ তিন দিনব্যাপী শোক কর্মসূচী ঘোষণা করে। ওই সময়ে অবরোধের নামে রামগড়ে ইউপিডিএফ সন্ত্রাসীরা যানবাহনে হামলা চালায়। পরে পুলিশী ধাওয়া খেয়ে তারা পালিয়ে যায়। সন্ত্রাসীদের তা-ব চলে এবং বিশটিরও বেশি যানবাহনে আগুন দেয়। এছাড়া রামগড়ে ইউপিডিএফের সন্ত্রাসী চাঁদাবাজরা মালিকানাধীন একটি রাবার বাগানের বিপুলসংখ্যক গাছ কেটে নিয়ে যায়। কারণ, তাদের দাবি অনুযায়ী চাঁদার অর্থ পরিশোধ না করায়। অপরদিকে, পাতাছড়া ইউনিয়নের বালুখালি এলাকায় প্রতিনিয়ত ইউপিডিএফের সন্ত্রাসীরা চাঁদার দাবিতে সাধারণ মানুষকে অতিষ্ঠ করে রেখেছে। ফলে এক ধরনের আতঙ্কজনক পরিস্থিতিতে রয়েছে শান্তিপ্রিয় সাধারণ পাহাড়ী-বাঙালী সম্প্রদায়ের লোকজন। রামগড় থানা পুলিশ জানিয়েছে, বর্তমানে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। রামগড় ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ শাহ আলম মজুমদার বলেন, বর্তমানে সাধারণ পাহাড়ী-বাঙালীরা এককাতারে রয়েছে। সন্ত্রাসীরা পুনরায় এলে ছাড় পাবে না। গত ঈদের পরদিনও ইউপিডিএফ সন্ত্রাসীরা ফাঁকা গুলি ছুড়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে। রামগড় ইউপির মেম্বার ক্যারি মার্মা প্রকাশ্যে বলেছেন, ৩০ জুনের ঘটনায় পাহাড়ী-বাঙালী নির্বিশেষে ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে ঝোপ জঙ্গলে আশ্রয় নিয়েছেন। পুলিশ ও বিজিবির হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসার পর তারা ঘরে ফিরে আসে। রামগড় উপজেলা নির্বাহী অফিসার আল মামুন মিয়া সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, পরিস্থিতি বর্তমানে শান্ত রয়েছে। তবে এক ধরনের আতঙ্ক রয়েছে জনমনে। বাঙালীদের পক্ষে সোনাইআগায় নিরাপত্তা ক্যাম্প প্রতিষ্ঠার দাবি জানানো হয়েছে। রাঙ্গামাটির লংগদুর পর খাগড়াছড়ির রামগড়ে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা বাধানোর অপচেষ্টা চলছে। তবে এলাকাবাসীর তাৎক্ষণিক প্রতিরোধে তা ভ-ুল হয়ে যায়। রামগড়ে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা বাধিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামকে উত্তপ্ত করার সৃষ্ট একটি নীলনক্সা প্রণীত হয়েছে। যার নেপথ্যে রয়েছে জনসংহতি বিরোধী ইউপিডিএফের (ইউনাইটেড ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট) সশস্ত্র ক্যাডাররা। ৩০ জুনের ঘটনার পর সোনাইআগা প্রাইমারি স্কুল মাঠে পাহাড়ী-বাঙালীদের এক বৈঠকে ইউপিডিএফের সন্ত্রাসীদের অপকর্মের বিষয়টিকে ঢাকা দিতে যেসব মহল তৎপর রয়েছে তাদের মিথ্যাচারের নিন্দা জানানো হয়। এছাড়া সব ধরনের সন্ত্রাসী তৎপরতা ঐক্যবদ্ধভাবে মোকাবেলার ঐকমত্য হয়। স্থানীয় এলাকাবাসীদের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, একদল পাহাড়ী সন্ত্রাসী (বিশেষ করে ইউপিডিএফের ক্যাডার বাহিনী) দীর্ঘদিন থেকে এলাকায় বসবাসরত ব্যবসায়ীসহ সকল শ্রেণী পেশার মানুষের কাছ থেকে বল প্রয়োগ করে অস্ত্রের মুখে চাঁদা আদায় করে আসছিল। তাদের অত্যাচারে গ্রামবাসীদের মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। কালাডেবা এলাকার বাসিন্দা ও পৌরসভার কাউন্সিলর কাজী আবুল বসর জানিয়েছেন, এলাকায় নতুন করে দাঙ্গাহাঙ্গামা বাধানোর ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে, যা অত্যন্ত উদ্বেগজনক। বিজিবি ও পুলিশের তৎপরতা জোরদার হওয়ায় এখন পরিস্থিতি শান্ত। তবে ষড়যন্ত্র চলছে। এ ষড়যন্ত্র পাহাড়কে নতুন করে সহিংসতার আগুনে জ্বালিয়ে ছারখার করার ষড়যন্ত্র, যা কখনও কাম্য হতে পারে না। রামগড় থানা অফিসার ইনচার্জ মোঃ শরিফুল ইসলাম জানিয়েছেন, ৩০ জুনের ঘটনায় বাঙালী-পাহাড়ীরা সম্মিলিতভাবে সন্ত্রাসীদের ধাওয়া করলে সর্বত্র আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। এদিকে শনিবার দুপুরে স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে এলাকায় শান্তি সমাবেশ করা হয়। পাহাড়ী ও বাঙালী উভয় সম্প্রদায়ের লোকজন সমাবেশে যোগ দেন। ৪৩ বিজিবির উপ-অধিনায়ক মেজর হুমায়ুন কবীর, রামগড় সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সৈয়দ মোঃ ফরহাদ, ওসি শরিফুল ইসলাম, ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল কাদের, পৌর কাউন্সিলর আহসান উল্ল্যাহ, আওয়ামী লীগ নেতা বিশ্বত্রিপুরা, মোঃ কামাল, দেবু শর্মা, লিটন দাশ, শিপন পৌর কাউন্সিলর কাজী বসর ও স্থানীয় সাংবাদিকসহ এলাকাবাসী শান্তি সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে উপস্থিত সরকারী কর্মকর্তা, জনপ্রতিনিধি ও পাহাড়ী বাঙালী নেতৃবৃন্দ বলেন, গুজবের মাধ্যমে এলাকার শান্তি সম্প্রীতি নষ্ট হয়, হিংসা হানাহানি মতো বড় ধরনের ঘটনার সৃষ্টি হয়। ফেসবুকের মাধ্যমে সোনাইআগার ঘটনা নিয়ে জঘন্য মিথ্যা, বানোয়াট তথ্য অপপ্রচার করে পাহাড়ী বাঙালীদের মধ্যে সংঘাত সৃষ্টি অপচেষ্টা চালাচ্ছে স্বার্থাণ্বেষী গোষ্ঠী। এসব অপপ্রচারকারী ও গুজব রটনাকারীদের চিহ্নিত করে প্রশাসনকে অবহিত করার আহ্বান জানানো হয় বৈঠকে। উল্লেখ্য, পাহাড়ে বিশেষ করে খাগড়াছড়ি ও রাঙ্গামাটিতে ইউপিডিএফের সন্ত্রাসীদের অপতৎপরতা বেড়েই চলেছে। বিশেষ করে খাগড়াছড়ির রামগড়ে রয়েছে এদের বড় ধরনের ঘাঁটি। এ জাতীয় ঘাঁটি নির্মূলে প্রয়োজন সাঁড়াশি অভিযান। সাধারণ বাঙালী-পাহাড়ীদের মধ্যে ২৬ থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত বিক্ষিপ্তভাবে সংঘটিত ঘটনাবলী নিয়ে আতঙ্কের কমতি নেই।
×