ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ঢাকা মেডিক্যালে গড়ে ২৬ রোগী মারা যায় প্রতিদিন

রোগাক্রান্তের সংখ্যার দিক দিয়ে এবারও এক নম্বরে ডায়রিয়া

প্রকাশিত: ০৫:৩৯, ৩ জুলাই ২০১৭

রোগাক্রান্তের সংখ্যার দিক দিয়ে এবারও এক নম্বরে ডায়রিয়া

নিখিল মানখিন ॥ আক্রান্তের সংখ্যার বিবেচনায় এবারও এক নম্বরে রয়েছে ‘ডায়রিয়া’। দেশের জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের সরকারী হাসপাতালগুলোতে এ চিত্র পাওয়া গেছে। গত চার বছর ধরে এ অবস্থা চলছে। চিকিৎসাসেবা গ্রহণকারী মোট রোগীর মধ্যে এককভাবে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যাই বেশি ছিল। ডায়রিয়ার পরই রয়েছে আঘাতজনিত রোগীর সংখ্যা। তৃতীয় ও চতুর্থ স্থানে রয়েছে পেপটিক আলসার ও নিউমোনিয়া। তবে মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালগুলোতে আঘাতজনিত রোগীর সংখ্যাই বেশি দেখা গেছে। আর চিকিৎসাধীন রোগীর মৃত্যু হওয়ার দিক দিয়ে প্রথম স্থানে রয়েছে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল। এ হাসপাতালে গড়ে প্রতিদিন অন্তত ২৬ রোগীর মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। স্বাস্থ্য অধিদফতর সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে, উপজেলা পর্যায়ে হাসপাতালগুলোতে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত চিকিৎসাসেবা গ্রহণকারী মোট রোগীর মধ্যে গত এক বছরে ডায়রিয়ায় ১৮.৫১ ভাগ, আঘাতজনিত কারণে ১২.৫৯ ভাগ, পেপটিক আলসার ৬.৯০ ভাগ, নিউমোনিয়া ৬.২৩ ভাগ, ব্রংকিয়াল এ্যাজমায় ২.৭১ ভাগ, সড়ক দুর্ঘটনায় ২.৩৯ ভাগ, ভাইরাল জ্বরে ২.৩০ ভাগ, বিষাক্ততায় ২.৩১ ভাগ, হাইপারটেনশন ১. ৯৪ ভাগ, এ্যানেমিয়ায় আক্রান্ত ১.৩০ ভাগ রোগীসেবা গ্রহণ করেন। এভাবে জেলা পর্যায়ের হাসপাতালগুলোতে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত চিকিৎসাসেবা গ্রহণকারী মোট রোগীর মধ্যে ডায়রিয়ায় ১২.৬৫ ভাগ, আঘাতজনিত কারণে ৭.১২ ভাগ, নিউমোনিয়ায় ৩. ৯৩ ভাগ, সড়ক দুর্ঘটনায় ৩.৮৯ ভাগ, পেপটিক আলসারে ৩.৪০ ভাগ, ব্রংকিয়াল এ্যাজমায় ২.৬৫ ভাগ, হাইপারটেনশনে ২. ১৬ ভাগ, বিষাক্ততায় আক্রান্ত হয় ২.০৭ ভাগ রোগী। তবে মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালগুলোতে এক নম্বরে অবস্থান করছে সড়ক দুর্ঘটনাজনিত কারণে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। এসব হাসপাতালে চিকিৎসাধীন মোট রোগীর মধ্যে গত এক বছরে সড়ক দুর্ঘটনাজনিত কারণে ৬.১২ ভাগ, আঘাতজনিত কারণে ৫.৭০, ডায়রিয়ায় ৩.০১, নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত ২.৪০ ভাগ রোগী ছিল। এদিকে, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সর্বশেষ হেলথ বুলেটিন-২০১৬ অনুযায়ী ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে এক বছরে ৮ হাজার ৭৭১ রোগীর মৃত্যু ঘটেছে। অর্থাৎ দিনে গড়ে ২৪.২৯ জন মারা গেছে। এভাবে হেলথ বুলেটিন অনুযায়ী এক বছরে সিলেটের এমএজি ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে বছরে মৃত রোগীর সংখ্যা ৪ হাজার ৩১৮, যা প্রতিদিন প্রায় ১২। তাদের মধ্যে স্ট্রোকে ৯.৩৬ ভাগ, সেপটিসিমিয়ায় ৮.৫৭ ভাগ, ইনজুরিজনিত কারণে ২.৮৭ ভাগ, দুর্ঘটনাজনিত কারণে ২.৬২ ভাগ, নিউমোনিয়ায় ১.৬৭ ভাগ, এবং ভাইরালজনিত কারণে শিশুমৃত্যু ১.৫৫ ভাগ মৃত্যু ঘটে। এক বছরে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মোট মৃত রোগীর সংখ্যা ৫ হাজার ১৮৫ জন (দিনে গড়ে ১৪.১৫), দিনাজপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ১ হাজার ৪৪৮ (দিনে গড়ে ৩.৯৭), শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ২ হাজার ৮৮১ (দিনে গড়ে ৭.৮৯), ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ৭ হাজার ৬৭৫ (দিনে গড়ে ২১), স্যার সলিমুল্লাহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ১ হাজার ৯৫৫ (দিনে গড়ে ৫.৩৬), ফরিদপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ১ হাজার ৭৮৩ (দিনে গড়ে ৪.৯), শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ৬৯১ (দিনে গড়ে ১.৮৯), কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ১ হাজার ৬৭৮ (দিনে গড়ে ৪.৫৯), চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ৭ হাজার ৫০৮ (দিনে গড়ে ২০.৫৭) এবং শেরে বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ৩ হাজার ২৭০ (দিনে গড়ে ৮.৯৬)। স্বাস্থ্য অধিদফতর আরও জানায়, সারাদেশের সরকারী হাসপাতালের বহির্বিভাগে প্রতিদিন চিকিৎসা গ্রহণ করে ৩ লাখের বেশি মানুষ। দরিদ্র রোগীর জন্য সরকারী হাসপাতাল এখনও বড় ভরসার জায়গা। বিপুলসংখ্যক রোগী প্রতিদিন সরকারী হাসপাতালে বিনামূল্যে বা নামমাত্র মূল্যে এ চিকিৎসাসেবা পায়। ম্যালেরিয়া ও যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণে লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়েছে। স্বাস্থ্যবিষয়ক সহস্রাব্দ অর্জনে বাংলাদেশের বেশ অগ্রগতি হয়েছে। দেশে অনুর্ধ ১২ মাস বয়সের শিশুদের সকল টিকা প্রাপ্তির হার ৮১ ভাগ। বিভাগীয় পর্যায় থেকে শুরু করে মফস্বল পর্যন্ত ডিজিটাল স্বাস্থ্যসেবার ব্যাপক প্রসার ঘটেছে। স্বাস্থ্য অধিদফরের সর্বশেষ প্রতিবেদনে তথ্য জানানো হয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডাঃ আবুল কালাম আজাদ বলেন, প্রতিদিন বিপুলসংখ্যক রোগী সরকারী হাসপাতালে বিনামূল্যে বা নামমাত্র মূল্যে চিকিৎসাসেবা পায়। দরিদ্র মানুষের জন্য সরকারী হাসপাতাল এখনও বড় ভরসার জায়গা। সেবাগ্রহণকারীর সংখ্যা বেশি থাকায় কিছু কিছু সময় দুর্ভোগে পড়তে হলেও বেসরকারী চিকিৎসা ব্যয়ের তুলনায় অনেক কম খরচে সেবা পাচ্ছে সাধারণ মানুষ। দেশের অধিকাংশ মানুষ এখনও বেসরকারী হাসপাতালগুলোর ব্যয়বহুল চিকিৎসা গ্রহণের সামর্থ্য রাখেন না। এ ক্ষেত্রে অসহায় রোগীদের সেবায় সরকারী হাসপাতালগুলোর অনেক অবদান বলে জানান মহাপরিচালক।
×