ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

নব্য জেএমবির আমিরসহ সব জঙ্গী শীঘ্রই ধরা পড়বে ॥ আইজিপি

প্রকাশিত: ০৫:৩৪, ৩ জুলাই ২০১৭

নব্য জেএমবির আমিরসহ সব জঙ্গী শীঘ্রই ধরা পড়বে ॥ আইজিপি

স্টাফ রিপোর্টার ॥ পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) এ কে এম শহীদুল হক বলেছেন, নব্য জেএমবির বর্তমান আমির আইয়ুব বাচ্চুসহ সব জঙ্গী পলাতক রয়েছে। তারা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নজরদারির মধ্যে আছে। যে কোন সময় তারা ধরা পড়বে। রবিবার দুপুরের দিকে পুলিশ সদর দফতরে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন। সেখানে বিভিন্ন গণমাধ্যমের অপরাধ-বিষয়ক প্রতিবেদকদের সঙ্গে ঈদ পুনর্মিলনীর শুভেচ্ছা বিনিময় শেষে সৌজন্য সাক্ষাত করেন পুলিশ মহাপরিদর্শক। শহীদুল হক জানান, গুলশান ও শোলাকিয়ায় হামলার পর জঙ্গীবিরোধী অভিযানে নব্য জেএমবির নেতৃস্থানীয় অনেকেই নিহত হন। অনেক জঙ্গী গ্রেফতার হয়। এরপর সংগঠনটির নেতৃত্বে আসা আইয়ুব বাচ্চু ছদ্মনামের এক জঙ্গীসহ গুলশান হামলায় জড়িত আরও প্রায় পাঁচ জঙ্গী এখনও ধরা ছোঁয়ার বাইরে রয়ে গেছে। তিনি জানান, আমরা জঙ্গীদের নির্মূল করতে পারিনি। এটা সত্য। তবে শক্তি ভেঙ্গে দিয়েছি। তাদের সব সিনিয়র জঙ্গী এখন পরাস্ত। অনেকেই নিহত হয়েছে। কেউ কেউ গ্রেফতার হয়ে জেল-হাজতে আছে। জঙ্গীবাদকে সমূলে ধ্বংস করতে হলে দলমত নির্বিশেষে দেশবাসীকে এগিয়ে আসতে হবে। এ সময় পুলিশের মহাপরিদর্শক জানান, আইয়ুব বাচ্চু বলেন আর যাই বলেন, সবগুলোই আমাদের জালে ধরা পড়বে। আমরা (পুলিশ) সবগুলোকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হব। আমাদের পুলিশ গোয়েন্দাসহ সব গোয়েন্দা তাদের গ্রেফতারে কাজ করছে। পুলিশ মহাপরিদর্শক শহীদুল হক জানান, আমরা আশা করি, তারা অবশ্যই যত বড় জঙ্গী নেতাই হোক না কেন? তারা দুষ্কৃতকারী, তারা মানবতাবিরোধী, তারা দেশবিরোধী। তাদের গ্রেফতার করা আমাদের পক্ষে সম্ভব হবে। তিনি জানান, অচিরেই হয়তো তারা গ্রেফতার হবে। জঙ্গীদের অর্থদাতা সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট তথ্য পেলে পুলিশ জাতিকে জানাবে। আইজিপি জানান, জঙ্গীদের বিরুদ্ধে সরকারে নীতি হলো ‘জিরো টলারেন্স। জঙ্গীবাদ দমনে গোটা জাতিকে এগিয়ে আসতে হবে। জনগণকে সরকার আহ্বান জানিয়েছে, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আহ্বান জানিয়েছেন এবং আমরাও (পুলিশ) আহ্বান জানিয়েছি। আমাদের সঙ্গে বিভিন্ন শ্রেণী- পেশার মানুষ, মাওলানা, আলেম এরা সবাই এগিয়ে এসেছেন। জঙ্গীদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছেন। সবাইকে সচেতন হওয়ার আহ্বান জানিয়ে শহীদুল হক জানান, জঙ্গীরা সমাজে বসবাসকারী জনগণের মধ্যে রয়েছে। জনগণ যখন চোখ কান খোলা রাখবে, সচেতন হবে এবং এদের (জঙ্গী) বিরুদ্ধে সোচ্চার হবে। তখনই এদের নির্মূল করা সম্ভব। তবে আমি আশাবাদী, যেহেতু এই পর্যন্ত আমরা সকল মহলের সহযোগিতা পেয়েছি। সমর্থন পেয়েছি। এই বাংলাদেশে এই বঙ্গবন্ধুর দেশে কোন জঙ্গীবাদ থাকবে না। জঙ্গীবাদ অবশ্যই নির্মূল হবে। আমরা দৃঢ়ভাবে আশাবাদ ব্যক্ত করি। উত্তরবঙ্গে এত জঙ্গী কেন সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে আইজিপি জানান, ‘বাংলা ভাইয়ের আমলে এক সঙ্গে ৬৩ জেলায় বোমা ফাটানো হয়েছিল। তখন বাংলা ভাইদের অনুসারী ছিল সারাদেশে। উত্তরবঙ্গে এবং পশ্চিমাঞ্চলে এদের দৌরাত্ম্য বেশি ছিল। তখন উত্তরবঙ্গে তাদের অবস্থান। পরবর্তীতে তাদের কিছু অনুসারী সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে নব্য জেএমবি তৈরি করে। সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে যুবকশ্রেণী বেশি বিপথে যাচ্ছে। এজন্য জনগণের মাঝে সচেতনতা সৃষ্টি করতে চাই। যাতে ধর্মের দোহাই ও ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে যুবকদের বিপথে নিতে না পারে। রাজীব গান্ধীসহ নব্য জেএমবি নেতাদের নাম পুলিশের কাছে দুই বছর আগেই এসেছিল। জাতীয় দৈনিকের এমন খবরের কথা উল্লেখ করে জঙ্গীদের বিরুদ্ধে অভিযান শুরুর ক্ষেত্রে বিলম্বের কারণে জানতে চাইলে আইজিপি জানান, এ বিষয়ে হয়ত বা পুরো পুলিশ বাহিনী জানত না। পুলিশ বাহিনী জেনে পদক্ষেপ নেবে না এমন ঘটনার কোন কারণ নেই। অনুষ্ঠানে অতিরিক্ত আইজিপি মোঃ মোখলেসুর রহমান, অতিরিক্ত আইজিপি ও ডিএমপি কমিশনার মোঃ আছাদুজ্জামান মিয়া, ডিআইজি মোঃ মহসিন হোসেনসহ উর্ধতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভাষ্যমতে, গুলশান হলি আর্টিজানে হামলায় জড়িত যে পাঁচ জঙ্গী এখনও ধরা ছোঁয়ার বাইরে। তারা হচ্ছে, সোহেল মাহফুজ ওরফে হাতকাটা মাহফুজ ওরফে নসরুল্ল্যাহ, হাদিসুর রহমান ওরফে সাগর, বাশারুজ্জামান ওরফে চকলেট, মিজানুর রহমান ওরফে ছোট মিজান ও রাশেদ ওরফে র‌্যাশ। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভাষ্যমতে, নব্য জেএমবির বর্তমান প্রধান আইয়ুব বাচ্চু। মইনুল ওরফে মুসা মৌলভীবাজারের বড়হাটের জঙ্গী আস্তানায় নিহত হওয়ার পর আইয়ুব বাচ্চু নব্য জেএমবির প্রধান হন। এটা তার ছদ্মনাম। গতকাল শনিবার কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা পৌরসভায় সন্দেহভাজন একটি জঙ্গী আস্তানা থেকে আইয়ুব বাচ্চুর স্ত্রী তিথিসহ তিন নারী ও দুই শিশুকে আটক করার কথা জানিয়েছে পুলিশ।
×