ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

ব্যাংকিং সেবায় অপব্যবহার ঠেকাতে বাংলাদেশ ব্যাংকের কড়াকড়ি

তিন কোটির বেশি মোবাইল এ্যাকাউন্ট বন্ধ

প্রকাশিত: ০৫:৩১, ৩ জুলাই ২০১৭

তিন কোটির বেশি মোবাইল এ্যাকাউন্ট বন্ধ

রহিম শেখ ॥ দ্রুততম সময়ে এক স্থান হতে অন্য স্থানে টাকা পাঠানোর অন্যতম জনপ্রিয় মাধ্যম মোবাইল ব্যাংকিং। বর্তমানে এ সেবা ব্যবহার করেই মানুষ তাদের পরিবার পরিজন ও নিকটাত্মীয়ের কাছে বেশি টাকা পাঠাচ্ছেন। সর্বশেষ হিসাব মতে, দেশে মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসের গ্রাহক সংখ্যা ছাড়িয়েছে ৫ কোটি ২৬ লাখ। এরমধ্যে ৩ কোটি ১২ লাখ ৩৮ হাজার হিসাবই বন্ধ রয়েছে। বাকি ২ কোটি ১৪ লাখ সক্রিয় হিসাব দিয়ে মে মাসে গড়ে লেনদেন হয়েছে ৮৪৪ কোটি টাকা। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, হিসাব খোলা ও পরিচালনায় কড়াকড়ি আরোপের ফলে সক্রিয় হিসাবের সংখ্যা কমেছে। জানা গেছে, নিয়ম অনুযায়ী, কোন এ্যাকাউন্ট থেকে টানা তিন মাস কোন ধরনের লেনদেন না হলে তা ইন-এ্যাকটিভ বা নিষ্ক্রিয় এ্যাকাউন্ট হিসেবে বিবেচিত হয়। আর তিন মাসের মধ্যে একটি লেনদেন হলেই তা সক্রিয় হিসেবে বিবেচিত। অবশ্য বড় কোন অনিয়ম না পাওয়া গেলে এ্যাকাউন্ট বন্ধ করে না ব্যাংক। কিন্তু সম্প্রতি মোবাইল ব্যাংকিং সেবায় অপব্যবহার ঠেকাতে বেশকিছু নির্দেশনা দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এতে হিসাব খোলা ও পরিচালনা এবং লেনদেনে আরও বেশি কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে। নির্দেশনায় বলা হয়, এখন কোন ব্যক্তি একটি সিম দিয়ে যেকোন মোবাইল ব্যাংকিং সেবায় একটি মাত্র হিসাব চালু রাখতে পারবেন। ওই নির্দেশনার পর যাদের একাধিক হিসাব ছিল তা বন্ধ করা হয়। যেগুলো চলমান রয়েছে, তা দ্রুত বন্ধ করার নির্দেশনা দেয়া হয়। এই অবস্থায় মে মাস শেষে সক্রিয় হিসাবের সংখ্যা ১৬ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ২ কোটি ১৪ লাখ ৪৬ হাজার। আর বন্ধ হিসাবের সংখ্যা দাঁড়ায় ৩ কোটি ১২ লাখ ৩৮ হাজার। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশিসংখ্যক বন্ধ হিসাবের সংখ্যা মোবাইল ব্যাংকি প্রতিষ্ঠান বিকাশের। এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র শুভঙ্কর সাহা জনকণ্ঠকে বলেন, নতুন নির্দেশনার আলোকে মোবাইল সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের তথ্য হালনাগাদ করায় নিষ্ক্রিয় বা বন্ধ হিসাবের সংখ্যা বেড়েছে। সাময়িক সময়ের জন্য সক্রিয় হিসাবের সংখ্যা কমলেও ভবিষ্যতের জন্য এটা ভাল দিক বলে তিনি মনে করেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মোবাইল ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠান বিকাশের একজন উর্ধতন কর্মকর্তা জনকণ্ঠকে বলেন, আগে মোবাইল ব্যাংকিং সেবায় একাধিক হিসাব চালু রাখতে পারতেন গ্রাহকরা। সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনায় বলা হয়েছে, একজন ব্যক্তি একটি সিম দিয়ে যেকোন মোবাইল ব্যাংকিং সেবায় একটি মাত্র হিসাব চালু রাখতে পারবেন। নির্দেশনা মোতাবেক মোবাইল সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের তথ্য হালনাগাদ করায় নিষ্ক্রিয় হিসাবের সংখ্যা বেড়েছে। তিনি বলেন, বন্ধ হিসাবের সংখ্যা বাড়লেও দৈনিক গড় লেনদেন কমেনি। বরং আগের তুলনায় বেড়েছে বলে তিনি জানান। বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদনে দেখা যায়, এপ্রিল মাসে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে মোট লেনদেন হয়েছিল ২৫ হাজার ৪৬ কোটি ৬৭ লাখ টাকা। ফলে ঐ মাসে দৈনিক গড় লেনদেনের পরিমাণ ছিল ৮৩৪ কোটি ৭ লাখ টাকা। সেখানে মে মাস শেষে এ সেবায় মোট লেনদেন কিছুটা বেড়েছে। দৈনিক লেনদেন বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮৪৪ কোটি ২৩ লাখ টাকা। প্রতিবেদন অনুযায়ী, মে মাস শেষে ব্যাংকগুলোর মনোনীত এজেন্টের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৭ লাখ ৪৬ হাজার ৪৭৫ জন। এপ্রিল পর্যন্ত এজেন্টের সংখ্যা ছিল ৭ লাখ ৩৪ হাজার ৭০৭ জন। ফলে এক মাসে এজেন্ট বেড়েছে ১ দশমিক ৬ শতাংশ। প্রতিবেদনে দেখা যায়, মে মাসে মোবাইল ব্যাংকিংয়ে ক্যাশ ইন ট্রানজেকশন হয়েছে ১১ হাজার ১১৪ কোটি ২২ লাখ টাকা। এ সময়ে ক্যাশ আউট ট্রানজেকশন হয়েছে ৯ হাজার ৯৩৪ কোটি ২৫ লাখ টাকা। মে মাসে ব্যক্তি থেকে ব্যক্তি পর্যায়ে ট্রানজেকশন হয়েছে ৩ হাজার ৯৩৬ কোটি ৩৮ লাখ টাকা। অন্যদিকে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে মে মাসে ৪১৯ কোটি ৬৫ লাখ টাকার বেতন পরিশোধ করা হয়েছে। আগের মাসের তুলনায় মে মাসে ইউটিলিটি বিল পরিশোধ ১৪ দশমিক ৩৪ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২২৭ কোটি ৯৮ লাখ টাকা। এছাড়া মে মাসে অন্যান্য বিল বাবদ লেনদেন হয়েছে ৫০২ কোটি ২৪ লাখ টাকা। যা আগের মাসে ছিল ৪৯৩ কোটি ৪২ লাখ টাকা। অনিয়ম ঠেকাতে দৈনিক ও মাসিক লেনদেনের সীমা হ্রাস এদিকে মোবাইল ব্যাংকিং ব্যবস্থায় দৈনিক ও মাসিক লেনদেনের সীমা কমিয়ে নির্ধারণ করা হয়েছে। বর্তমানে একজন মোবাইল ব্যাংকিংয়ের গ্রাহক একবারে সর্বোচ্চ ১০ হাজার টাকা উত্তোলন করতে পারবেন। পূর্বে এই হার ছিল ২৫ হাজার টাকা। গ্রাহক দৈনিক দুই বার এবং মাসে ১০ বার এই সেবা নিতে পারবেন, যা আগে ছিল দৈনিক তিন বার এবং মাসে ১০ বার। একইসঙ্গে দৈনিক জমার সীমাও পরিবর্তন করা হয়েছে। এতে এখন থেকে দিনে সর্বোচ্চ দুই বারে ১৫ হাজার টাকা করে পাঠানো যাবে। যা মাসে সর্বমোট ২০ বারে এক লাখ টাকার বেশি হতে পারবে না। আগে দিনে পাঁচ বারে ২৫ হাজার টাকা এবং মাসে সবর্বোচ্চ ২০ বারে দেড় লাখ টাকা করে জমা করা যেত। এছাড়া একটি মোবাইল ব্যাংকিং হিসাবে টাকা জমার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ঐ হিসাব থেকে সর্বোচ্চ পাঁচ হাজার টাকার বেশি নগদ উত্তোলন করা যাবে না। পাশাপাশি ৫০০০ টাকা বা এর অধিক লেনদেন করার ক্ষেত্রে জাতীয় পরিচয়পত্র প্রদর্শনের বিধান করা হয়েছে। এমনকি রেজিস্ট্রারে গ্রাহকের স্বাক্ষর বা টিপসই সংরক্ষণের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। কোন এজেন্ট এ ধরনের কার্যাদি যথাযথভাবে সম্পন্ন না করলে বা গাফিলতির প্রমাণ পাওয়া গেলে এজেন্টশিপ বাতিল করার নির্দেশ দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। প্রসঙ্গত, বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে দেশের ১৯টি ব্যাংক মোবাইল ব্যাংকিং করার অনুমোদন পেলেও ১৭টি ব্যাংক বর্তমানে মোবাইল ব্যাংকিং চালু করেছে। এর মধ্যে ব্র্যাক ব্যাংকের সহযোগী প্রতিষ্ঠান ‘বিকাশ’ এবং ডাচ্ বাংলা ব্যাংকের ‘রকেট’ মোবাইল ব্যাংকিং এ সেবায় এগিয়ে রয়েছে।
×