ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

প্রতিভাবান শিল্পী এম আই মিঠু

প্রকাশিত: ০৭:১৭, ১ জুলাই ২০১৭

প্রতিভাবান শিল্পী এম আই মিঠু

সাজু আহমেদ ॥ এম আই মিঠু। পুরো নাম মমিনুল ইসলাম মিঠু। একাধারে চিত্রশিল্পী, সঙ্গীতশিল্পী, গীতিকার, সুরকার ও সমাজসেবক। অনেক প্রতিভার স্ফুরণ তার মননে, চিন্তায়, প্রয়োগে ও প্রকাশে। ছোটবেলার স্বপ্ন পুরণে চিত্রশিল্পী হিসেবে নিজেকে তৈরি করতে এম আই মিঠু বগুড়া আর্ট কলেজ ও খুলনা আর্ট কলেজে পড়েছেন। চারুকলায় শিক্ষাজীবন পাঠ চুকিয়েছেন বেশ আগেই। এরপর পরিবার, প্রকৃতি ও প্রাতিষ্ঠানিক অভিজ্ঞতার নির্যাস থেকে নানা শিল্প সৃষ্টি করে চলেছেন। জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে অনুষ্ঠিত বিভিন্ন প্রদর্শনী ও প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে নিজের শিল্প মেধার জাত চিনিয়েছেন। এ পর্যন্ত নয়টি একক এবং পঞ্চাশটিরও অধিক যৌথ চিত্রপ্রদর্শনী এবং প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছেন তিনি। রিয়েলিস্টিক ঘরনার শিল্পচিন্তায় আবদ্ধ মিঠু একসময় সেই সরল সৃষ্টির ভেতরের সৌন্দর্যকে খুঁজতে এ্যাবস্ট্রাক বা বিমূর্ততায় মগ্ন হোন। নিরীক্ষার মাধ্যমে একের পর এক নান্দনিক শিল্প সৃষ্টি করে শিল্পী হিসেবে সফলও হয়েছেন। ফলে বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে ৫ বার সেরা হয়ে পুরস্কৃত হয়েছেন। চিত্রশিল্পী হিসেবে এ পর্যন্ত সহস্রাধিক পেইন্টিং ও ভাস্কর্য তার সংগ্রহে আছে বলে জানিয়েছেন তিনি। উত্তরবঙ্গের জয়পুরহাট জেলার পাঁচবিবির স্টেডিয়াম রোডের এক সম্ভ্রান্ত মধ্যবিত্ত পরিবারে এম আই মিঠুর জন্ম। ৬ ভাইবোনের তৃতীয় সন্তান মিঠু। বাবা আলতাফ হোসেন খোকন এবং মাতা মনোয়ারা বেগম। চিত্রশিল্পী হওয়ার গল্প প্রসঙ্গে মিঠু বলেন ছবি আঁকার প্রতি দুর্বলতা স্কুল জীবন থেকেই ছিল তার। ওই সময়ে জাতীয় নেতাদের পোট্রেট আঁকতেন তিনি। ছোটবেলায় মায়ের বানানো শৈল্পিক কাজ দেখে মুগ্ধ হতেন। শিল্পী হওয়ার স্বপ্ন বুনে দেয় তার মায়ের কাজ। এক সময় মিঠুদের বাড়িতে তার মা রবিন ব্লু, লাল মাটি এবং পুঁইশাকের ফুল দিয়ে রং বানিয়ে দেয়ালে নক্সা করতেন। নক্সাকৃত দেয়ালগুলোতে মিঠু পেনসিলে ও কয়লা দিয়ে দেয়ালে মনের আনন্দে গ্রামীণ দৃশ্য, বীরপুরুষ, কাজলা দিদি, তাল গাছ এক পায়ে দাঁড়িয়ে, দৃশ্য আঁকতেন। মৃদু হেসে মিঠু বলেন, স্কুলে ক্লাস চলাকালে পড়া না করে বেঞ্চেতে ছবি আঁকার জন্য বিভিন্ন ধরনের শাস্তির শিকারও হয়েছেন তিনি। এলাকার বড় ভাইবোনদের পরীক্ষার ব্যবহারিক খাতা আঁকার বিনিময়ে উপহার পাওয়ার আনন্দও ছিল। এছাড়া বৈশাখ, বিজয় দিবস, স্বাধীনতা দিবসে, অমর ২১ ফেব্রুয়ারিসহ জাতীয় দিবসগুলোতে স্থানীয় সড়কে আলপনা ও স্থানীয় স্টেডিয়ামে মুক্তিযুদ্ধের ছবি আঁকতেন। দর্শনার্থীরাও সারিবদ্ধভাবে দেখতেন আর উদ্বুদ্ধ হতেন মিঠু। পারিবারিকভাবে রাজনীতিতে সম্পৃক্ত থাকায় স্কুল এবং চারুকলায় পড়াকালে তার শিল্পচর্চা অনেকটাই ব্যাহত হয়। তবে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা আর অভিজ্ঞতায় ভর করে ২০০৪ সালে জাতীয় পর্যায়ে প্রথম একটা প্রতিযোগিতামূলক ভাস্কর্য প্রদর্শনীতে অংশ নেন। প্রতিযোগিতায় ভাস্কর্য বিভাগে বাঁশের মুড়ার একটি কাজ দিয়ে ‘বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ পদক’ পান। সেই থেকে স্বপ্নের পথচলা শুরু। পরের বছর ২০০৫ আবারও একটি এক্সিবিশনে সম্মান পুরস্কার পেয়ে জাপানের চুয়া গ্যালারিতে তার কাজ স্থান পায়। ২০০৬ সালে ঢাবির জয়নুল গ্যালারিতে ‘উই এ্যান্ড বায়ো ডাইভার্সিটি’ নামে প্রথম একক প্রদর্শনী করেন মিঠু। জাপানের টোকিও মেট্রোপলিটন গ্যালারিতে কাজ পাঠানোর আমন্ত্রণ পান। তবে যাওয়া হয়নি তার। রাজনৈতিক বিড়ম্বনায় জেল জীবনেও ছবি আঁকেন মিঠু। মুক্ত হয়ে ২০০৭ সালে সিডরের ভয়াবহ তা-বকে স্মরণ করে ‘সিডর-২০০৭’ শিরোনামের একটা ভাস্কর্য তৈরি করেন। ওই বছর মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুর জিকে-৩ আয়োজিত বিশ্বজ্ঞান সম্মেলনে তা উপস্থাপন করা হয়। সে সময়ে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি আয়োজিত আরও একটি প্রদর্শনীতে অংশ নিয়ে সম্মান পুরস্কার পান। ২০০৮ সালে বাংলাদেশ হাইকমিশন টু মালয়েশিয়ার আমন্ত্রণে ‘মালয়েশিয়া ট্রেড সেন্টার ইন্টারন্যাশনাল’ এবং ‘দাতারাম মারদেকা স্কয়ারে প্রথম বাংলা মেলা-২০০৮’-এ অংশ নেন। ২০১৩ সালে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি আয়োজিত প্রয়াত শিল্পী রাশেদ পর্ষদ থেকে ভাস্কর্যে মেরিট পুরস্কার পান। এছাড়া ৯-বার বিদেশের মাটিতে বাংলাদেশকে রিপ্রেজেন্ট করে প্রদর্শনী, কনসার্ট, ভ্রমণে অংশ নেন। এর মধ্যে জাপান, শ্রীলঙ্কা, ইন্ডিয়া, নেপাল, হলিউড, জার্মান, মালয়েশিয়ায় গিয়েছেন তিনি। মেধাবী এই চিত্রশিল্পী সাম্প্রতিক সময়ে ‘বন্ধু সাড়া দাও’ গানের মিউজিক ভিডিওর মাধ্যমে আলোচনায় এসেছেন। দ্বিতীয় একক ‘স্বপ্নের সাইকেল’ এ্যালবামের ‘বন্ধু সাড়া দাও’ গানটির মিউজিক ভিডিওর জন্য নন্দিত হয়েছেন তিনি। ছোটবেলার স্বপ্ন অনুযায়ি নিজের গড়া ব্যান্ডদল ‘বিবি’ নিয়ে কাজ করছেন মিঠু।চিত্রশিল্পী, সঙ্গীতশিল্পী মিঠু পাঁচবিবিতে অসহায় হতদরিদ্র মানুষের কল্যাণে চ্যারিটি সংগঠন ‘দুস্থ কল্যাণ সংস্থা পাঁচবিবি’ প্রতিষ্ঠা করে অসহায়দের কল্যাণে কাজ করছেন। পৃথিবীর সব মানুষের সুন্দর এবং সৃশৃঙ্খল জীবনের স্বপ্ন দেখেন এম আই মিঠু। তার শিল্প সৃষ্টি, চিত্রশিল্প ও সঙ্গীত সাধনার রং ও রূপ প্রতিনিয়ত সেই কথাই বলে। শিল্পী মিঠুর স্বপ্নগুলো ছুঁয়ে যাক সাফল্যের স্বর্ণচূড়া। তার জন্য অনেক অনেক শুভ কামনা।
×