ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

কুষ্টিয়ার আস্তানায় অভিযান;###;‘টেপিড পাঞ্চ’ সমাপ্তি ঘোষণা ॥ সুইসাইডাল ভেস্ট, অত্যাধুনিক পিস্তল ও গানপাউডার উদ্ধার

নব্য জেএমবির আমির আইয়ুব আলীর স্ত্রীসহ ৩ নারী জঙ্গী আটক

প্রকাশিত: ০৫:৪৩, ২ জুলাই ২০১৭

নব্য জেএমবির আমির আইয়ুব আলীর স্ত্রীসহ ৩ নারী জঙ্গী আটক

নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। সন্ধ্যা ৬টায় এ রিপোর্ট পাঠানো পর্যন্ত দ্বিতীয় পর্যায়ের চূড়ান্ত অভিযানের অপেক্ষায় ওই জঙ্গী আস্তানা ঘিরে রেখেছে পুলিশ ও কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের সদস্যরা। কুষ্টিয়া পুলিশ জানায়, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে শুক্রবার রাত ১২টার দিকে কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের এডিসি আব্দুল মান্নানসহ ভেড়ামারা থানা পুলিশ, কুষ্টিয়া ও ডিবি পুলিশের একটি যৌথ টিম জঙ্গী আস্তানার সন্দেহে ভেড়ামারা শহরের বামনপাড়ায় একটি টিনশেড বাড়ির চারপাশে অবস্থান নেয়। রাত ৩টার দিকে ঘটনাস্থলে পুলিশ ও কাউন্টার টেররিজম ইউনিট যৌথভাবে ওই বাড়িতে অভিযান শুরু করলে একজন মহিলা সুইসাইড ভেস্ট পরিহিত অবস্থায় পুলিশের ওপর হামলা চালানোর চেষ্টা করে। এ সময় পুলিশ সদস্যরা তা বিস্ফোরিত হওয়ার আগেই মহিলা ওই জঙ্গীকে আটক করে। এক পর্যায়ে সেখান থেকে আরও দুই মহিলা জঙ্গীকে আটক করা হয়। কুষ্টিয়া পুলিশ সুপার এসএম মেহেদী হাসান জানান, আটককৃত তিন জঙ্গীর মধ্যে বর্তমানে নব্য জেএমবির আমির আইয়ুব আলী ওরফে বাচ্চু ওরফে সজিবের স্ত্রী তিথি, নিউ জেএমবির সেকেন্ড ইন কমান্ড রাজিবুল ওরফে রাশেদের স্ত্রী সুমাইয়া ও আরমান আলীর স্ত্রী টলিআরা রয়েছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তাদের বাড়ি নাটোর বলে জানা গেছে। তিনি জানান, কাউন্টার টেররিজম ইউনিট নিশ্চিত হয় যে, তালতলার ওই বাড়িটি একটি জঙ্গী আস্তানা। সেখানে নিয়মিত যাতায়াত করে নব্য জেএমবির আমির আইয়ুব আলী ওরফে আইয়ুব বাচ্চু এবং সেকেন্ড ইন কমান্ড আব্দুর রশিদ। সেখানে বসেই তারা নাশকতার পরিকল্পনা করত। বাড়িতে আইয়ুব আলীসহ আব্দুর রশিদ অবস্থান করছে এমন সংবাদের ভিত্তিতে কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের এডিসি আব্দুল মান্নান কুষ্টিয়া পুলিশ, ভেড়ামারা থানা পুলিশ ও ডিবি পুলিশের একটি যৌথ টিম ওই রাতে সেখানে অবস্থান নেয়। পুলিশ সুপার বলেন, অভিযান অব্যাহত রয়েছে। এখনও আমরা বাড়ির ভেতর প্রবেশ করতে পারিনি। বর্তমানে বাড়ির আশপাশ থেকে জনসাধারণকে সরিয়ে দেয়া হয়েছে। চূড়ান্ত অভিযানের অপেক্ষায় জঙ্গী আস্তানা ঘিরে রেখেছে পুলিশ ও কাউন্টার টেররিজম ইউনিট সদস্যরা। সূত্র জানায়, জঙ্গী আস্তানার বাড়িটির মালিক জনৈক মাসুদের স্ত্রী নাসিমা খাতুন। তিনি ভেড়ামারা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বর্তমানে কর্মরত। প্রায় দুই মাস আগে জঙ্গীরা ওই বাড়িটি ভাড়া নেয়। বাড়িটি পুরানো একতলা বিশিষ্ট। তার ঠিক বিপরীতে নিজের ৪ তলা একটি বাড়িতে থাকেন তিনি। নাসিমা খাতুন ভেড়ামারা উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতরের অফিস সহকারী পদে কর্মরত। তিনি জানান, গত ১ নবেম্বর ২০১৬ বাড়িটি ভাড়া নেন আরমান হোসেনের স্ত্রী টলিআরা। পেশায় দর্জি টলিআরার স্বামী ডিস লাইনের কাজ করে। গত ২৯ জুন রাতে টলির আত্মীয় পরিচয় দিয়ে শিশুসহ দু’জন মহিলা বাড়িতে বেড়াতে আসেন। একদিন পর সকালে জানতে পারি পুলিশ অভিযান চালিয়ে তাদের ৩ জনকেই গ্রেফতার করেছে। তিনি জানান, তিনি জানতেন না তারা জঙ্গী সংগঠন জেএমবির সদস্য। ভেড়ামারা সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কামরুল হাসান জানান, ঢাকা থেকে ইতোমধ্যেই ঘটনাস্থলে পৌঁছেছে বোমা ডিসপোজাল টিম। শনিবার দুপুর ২টার দিকে ঢাকা থেকে সিআইডি’র ফরেনসিক বিভাগের ৫ সদস্যের একটি টিম ঘটনাস্থলে পৌঁছে তারা নমুনা সংগ্রহ করে। সন্ধ্যা ৬টায় এ রিপোর্ট পাঠানো পর্যন্ত দ্বিতীয় পর্যায়ের চূড়ান্ত অভিযানের অপেক্ষায় ওই জঙ্গী আস্তানা ঘিরে রেখেছে পুলিশ ও কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের সদস্যরা। এদিকে ভেড়ামারায় জঙ্গী আস্তানার খবরে আতঙ্কিত হয়ে পড়ে ভেড়ামারার মানুষ। ভোর থেকেই উৎসুক মানুষ ভিড় করে ওই এলাকায়। যে পরিচয়ে বাসা ভাড়া নেয় জঙ্গীরা স্বামী ডিস লাইন আর স্ত্রী বাড়িতে দর্জির কাজ করে বলে বাসা ভাড়া নেয় ভেড়ামারা বামনপাড়ার তালতলায় কাউন্টার টেররিজম ইউনিট ও পুলিশের হাতে নারী জঙ্গী আরমান হোসেনের স্ত্রী টলিআরা। এ কথা জানান, জঙ্গী আস্তানা সন্দেহে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর ঘিরে রাখা বাড়ির মালিক মাসুদের স্ত্রী নাসিমা খাতুন। তিনি জানান, ২০১৬ সালের ১ নবেম্বর এক মেয়েসহ আরমান ও টলিআরা নামের এক দম্পতি বাড়ি ভাড়া নেয়ার জন্য আসেন। এ দম্পতির বাড়ি ভেড়ামারা উপজেলার কুচিয়ামোড়া এলাকায়। তারা স্বামী ডিস লাইন ও স্ত্রী দর্জির কাজ করে এমন কথা বলে আমাদের কাছ থেকে বাড়ি ভাড়া নেন। এ সময় তাদের পরিচয়সহ যাবতীয় কাগজপত্র থানা পুলিশের কাছে জমা দেয়া হয়। গত ২৯ জুন রাতে টলির আত্মীয় পরিচয় দিয়ে শিশুসহ দু’জন মহিলা বাড়িতে বেড়াতে আসেন। শনিবার সকালে জানতে পারি পুলিশ অভিযান চালিয়ে তাদের ৩ জনকেই গ্রেফতার করেছে। তিনি জানান, তিনি জানতেন না তারা জঙ্গী সংগঠন জেএমবির সদস্য। শুক্রবার মধ্যরাতে ভেড়ামারার বামনপাড়া তালতলায় জঙ্গী আস্তানা থেকে তিন নারী জঙ্গীকে আটক করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এদের মধ্যে টলিআরা বাসাটি ভাড়া নেয় বলে জানান নাসিমা খাতুন। সাধারণ মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ভেড়ামারায় তালতলার জঙ্গী আস্তানায় অভিযান ও দুইটি সুইসাইডাল ভেস্টসহ তিন নারী জঙ্গী আটক হওয়া নিয়ে স্থানীয় সাধরণ মানুষের মধ্যে বিরাজ করেছে আতঙ্ক। শুক্রবার রাত ১২টার দিকে পুলিশের একটি দল জঙ্গী আস্তানা সন্দেহে ভেড়ামারা শহরের বামনপাড়া তালতলার টিনশেড একটি একতলা বাড়ি ঘিরে ফেলে। এ খবর রাতারাতি চাউর হলে এলাকায় সাধারণ মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে চরম আতঙ্ক। চারদিকে বিরাজ করতে থাকে থমথমে অবস্থা। স্থানীয় বাসিন্দা মফিজুর রহমান জানান, ভেড়ামারা একটি শান্ত এলাকা। তাই এমন একটি নিরিবিলি এলাকায় জঙ্গী আস্তানা পাওয়া যাবে আমরা ভাবতেও পারিনি। নজরুল ইসলাম নামের অপর একজন বলেন, যে বাড়িতে জঙ্গী আস্তানার সন্ধান পাওয়া গেছে ওই বাড়িতে এমন জঙ্গী কর্মকা- হয় তা আমরা আগে জানতাম না। বর্তমানে জঙ্গী নিয়ে আমাদের মনে বিরাজ করছে আতঙ্ক। স্কুল শিক্ষার্থী সোহেল রানা বলে, আমরা প্রায়ই ওই বাড়ির পাশে খেলাধুলা করতাম। তবে বাসার মধ্যে থেকে কাউকে কখনও বাইরে আসতে দেখিনি। এ নিয়ে কুষ্টিয়া পুলিশ সুপার এসএম মেহেদী হাসান জানান, শুক্রবার মধ্যরাত থেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা বাড়িটির চারপাশ ঘিরে রেখেছে। এ নিয়ে মানুষের আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই।
×