ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

জবানবন্দীতে গার্মেন্টস মালিক ইমরানের তথ্য

বনানীর নিখোঁজ তরুণরা নব্য জেএমবিতে যোগ দিয়েছে

প্রকাশিত: ০৫:১১, ২ জুলাই ২০১৭

বনানীর নিখোঁজ তরুণরা নব্য জেএমবিতে যোগ দিয়েছে

শংকর কুমার দে ॥ গুলশানের এক মসজিদের এক মোয়াজ্জিনের ছেলে তাওহিদের মাধ্যমে বনানীর নিখোঁজ তরুণরা জঙ্গী সংগঠন নব্য জেএমবিতে যোগ দিয়েছে। নব্য জেএমবিতে যোগ দেয়ার আগে নিষিদ্ধ জঙ্গী সংগঠন হরকত-উল-জিহাদের (হুজি) সঙ্গে যুক্ত ছিল তাওহিদ। বনানীর নিখোঁজ তরুণরা এখন সম্ভবত নব্য জেএমবির আত্মঘাতী সেলে রয়েছে। নব্য জেএমবির কার্যক্রম ও জঙ্গীদের বিষয়ে অনেক তথ্য দিয়েছে জঙ্গীবাদের অর্থের যোগান দেয়ার অভিযোগে র‌্যাবের হাতে গ্রেফতার হওয়া গার্মেন্টস মালিক ইমরান আহমেদ। তার দেয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দীতে এই ধরনের তথ্য পেয়েছেন তদন্তকারীরা। র‌্যাব ও পুলিশ সূত্রে এ খবর জানা গেছে। তদন্তের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা বলেছেন, ইমাম হোসেনের দেয়া জবানবন্দীতে জানা যায়, বনানীর নিখোঁজ তরুণরা নব্য জেএমবিতে যোগ দিয়েছে। নব্য জেএমবির আত্মঘাতী সেলের সদস্য তারা। নিখোঁজ চারজন হলো- কামাল হোসেন (২১), ইমাম হোসেন (২৭) ও হাসান মাহমুদ (২৬) এবং তাওহিদুর রহমান। তাদের মধ্যে তাওহিদুর ছাড়া বাকি তিনজন একসঙ্গে একইদিনে নিখোঁজ হন। জঙ্গীবাদের অর্থের যোগান দেয়ার অভিযোগে র‌্যাবের হাতে ইমরান আহমেদ নামে একটি গার্মেন্টসের মালিক গ্রেফতার হন নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে। নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ থানার পৃথক মামলায় ইমরানকে রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। পুলিশ, র‌্যাব ও আদালতে এই বিষয়ে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দিয়েছেন ইমরান আহমেদ। স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দেয়ার পর তাকে কারাগারে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে। তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ইমরান আহমেদকে কারাগারে পাঠানোর আগে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দীতে ইমরান দাবি করেন, নিখোঁজ চার তরুণের মধ্যে একজন ইমাম হোসেন। সে নব্য জেএমবির গুলশান শাখার আমির। বনানী থেকে তিন সহকর্মীসহ চার তরুণ নিখোঁজ হওয়ার বিষয়টি গুরুত্বসহকারে তদন্ত করছেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কয়েকটি সংস্থা। দীর্ঘ দুই সপ্তাহের তদন্তের পর তদন্ত কর্মকর্তারা বলছেন, নিখোঁজদের চারজনই ঘর ছেড়ে নব্য জেএমবির ‘আত্মঘাতী সেলে’ যোগ দিয়েছেন। নিখোঁজ চার তরুণের মধ্যে দুইজনের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট তথ্য প্রমাণও পেয়েছেন তদন্তকারীরা। র‌্যাবের একজন কর্মকর্তা বলেন, গার্মেন্টস মালিক জঙ্গী অর্থায়নকারী ইমরান আহমেদ জিজ্ঞাসাবাদে জেএমবির সারোয়ার-তামিম গ্রুপের (নব্য জেএমবি) কার্যক্রম সম্পর্কে অনেক তথ্য দিয়েছেন। আরও অনেক জঙ্গীর বিষয়ে তিনি তথ্য দিয়েছেন। তার দেয়া তথ্য যাচাই-বাছাই এবং অনুসন্ধান করা হচ্ছে। নিখোঁজদের সবাই একসঙ্গে গোপন কোথাও আস্তানা করে অবস্থান করছেন। তারা সবাই তাওহীদুরের মাধ্যমে নব্য জেএমবিতে যোগ দেন। তাওহীদুল গুলশানের একটি মসজিদের এক মোয়াজ্জিনের ছেলে। আগে নিষিদ্ধ জঙ্গী সংগঠন হরকত-উল-জিহাদের (হুজি) সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। পুলিশের কাউন্টার টেররিজম এ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের কাছে যে তথ্য রয়েছে তাতে নিখোঁজ চার তরুণের মধ্যে তাওহীদ ২০০৩ সাল থেকে হুজির সঙ্গে সম্পৃক্ত। ওই সময় থেকে তিনি হুজির বড় বড় নেতার সঙ্গে কারাগারে দেখা করেছে। তবে হুজি দুর্বল হয়ে পড়লে সাজিদের মাধ্যমে নব্য জেএমবিতে যোগ দেয়। সাজিদের আরেক নাম আইয়ুব বাচ্চু। পুলিশের সিটিটিসি ইউনিটের তদন্ত অনুযায়ী আইয়ুব বাচ্চু বর্তমানে নব্য জেএমবির প্রধান। তবে র‌্যাব দাবি করছে, নব্য জেএমবির বর্তমান আমির ও প্রধান আবু মুহারিব। গোয়েন্দা সংস্থার সূত্র জানিয়েছেন, নব্য জেএমবির বর্তমান প্রধান আইয়ুব বাচ্চু নতুন করে সংগঠনকে সক্রিয় করার চেষ্টা করছেন। এমনকি বড় হামলার পরিকল্পনাও করছে সে। এ কারণে নতুন করে আত্মঘাতী সেল তৈরি করছেন। বনানী থেকে নিখোঁজ চার তরুণ সেই সেলে যোগ দিয়েছে। চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে বনানী থেকে চার তরুণের নিখোঁজ হওয়ার পর দুই সপ্তাহ অতিবাহিত হয়ে গেছে। পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) এ কে এম শহীদুল হক দুই সপ্তাহের বেশি সময় ধরে নিখোঁজ থাকা তরুণদের বিষয়ে এক অনুষ্ঠানে বলেছিলেন, বনানীর নিখোঁজ তিন তরুণ (কামাল, ইমাম, হাসান) জঙ্গীবাদে জড়িয়েছে কি না তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। তবে এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তদন্ত সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা বলেন, রাজধানীর বনানী থেকে নিখোঁজ তরুণদের মধ্যে তিন জন একটি তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানে কাজ করত। তিন নিখোঁজ তরুণ কামাল হোসেন, ইমাম হোসেন ও হাসান মাহমুদ। এর মধ্যে কামাল ১ থেকে ৩ জুনের মধ্যে এবং ইমাম ও হাসান ৩ জুন বিকেলে নিখোঁজ হয়। এ ঘটনায় বনানী থানায় পৃথক তিনটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) হয়েছে। এর আগে গত বছরের ১ ডিসেম্বর বনানীর একটি রেস্তরাঁ থেকে বের হওয়ার পরে একসঙ্গে চার তরুণ নিখোঁজ হয়। সম্প্রতি এদের দু’জন ফিরে এসেছেন বলে খবর পাওয়া গেছে। নিখোঁজ তিনজনের মধ্যে কামাল ইস্কাটনের একটি মাদ্রাসা থেকে দাওরা হাদিস পাস করেছে। বাকি দু’জন একটি বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইলেকট্রিক ও ইলেকট্রনিকস ইঞ্জিনিয়ারিং থেকে পাস করেছে। তিনজনই বনানীর চার নম্বর সড়কে ইন্টারন্যাশনাল টেলেক্স লিমিটেড নামের একটি প্রতিষ্ঠানে কাজ করতেন বলে জানা গেছে। নিখোঁজ ওই তিনজনের খোঁজ নিতে তাঁদের অফিসে গিয়ে পুলিশ জানতে পারে, তাওহিদুর রহমান নামের আরেক তরুণও নিখোঁজ হয়েছে, যার নামে নিখোঁজ হওয়ার বিষয়ে থানায় কেউ কোন অভিযোগ করেনি। এই তাওহিদের মাধ্যমেই তিন তরুণ নিখোঁজ হন বলে নিশ্চিত হয়েছেন তদন্তকারীরা। প্রসঙ্গত: গত ১ জুন সকালে ও বিকেলে বনানী থেকে চার তরুণ নিখোঁজ হয়। তাদের মধ্যে তিনজন বনানীর মোস্তফা ম্যানশন ভবনের পৃথক দুটি প্রতিষ্ঠানে কাজ করত। গত বছরের ডিসেম্বরে ৫ তরুণ নিখোঁজের পর এবার এই চার তরুণ নিখোঁজ হলো।
×