ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

জাতিসংঘ দলকে রাখাইনে প্রবেশ করতে দেয়ার দাবি

মিয়ানমার সরকারের আচরণে বিক্ষুব্ধ সচেতন মহল

প্রকাশিত: ০৫:১০, ২ জুলাই ২০১৭

মিয়ানমার সরকারের আচরণে বিক্ষুব্ধ সচেতন মহল

এইচএম এরশাদ, কক্সবাজার ॥ বাংলাদেশের সঙ্গে মিয়ানমারের সুসম্পর্ক রয়েছে। তবে মিয়ানমারের একগুঁয়েমিতে সচেতন মহল মনে করে তারা আমাদের সঙ্গে সম্পর্ক রাখে কেবল তাদের স্বার্থের জন্যই। তা না হলে তাদের দেশের লাখ লাখ নাগরিককে (রোহিঙ্গা) যুগের পর যুগ আমাদের দেশে বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা দিয়ে আশ্রয় দেয়া হলেও ওদের ফিরিয়ে নেয়ার বিষয়ে কোন মাথাব্যথা নেই মিয়ানমারের। সচেতন মহল বলছেন, তারা আমাদের সঙ্গে সম্পর্ক রাখছে ‘মুখে শেখ ফরিদ-বগলে ইট’। অভিজ্ঞ মহল আরও জানান, সে দেশের সৈন্যরা পাখির মতো গুলি করে রোহিঙ্গাদের হত্যা করবে, পার্শ্ববর্তী মুসলিম রাষ্ট্র হিসেবে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে পালিয়ে আসবে, দোষ-গুণ বের করতে জাতিসংঘ তদন্ত করতে যেতে পারবে না-এটা কোন ধরনের আচরণ? মগের মুল্লুক বলেই কি কথা! স্থানীয়রা জানান, তাদের আচরণে বোঝা যায়, মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ সে দেশ থেকে রোহিঙ্গাদের নিশ্চিহ্ন করতে পর্যায়ক্রমে এদেশে ঠেলে দেবে। জাতিসংঘ প্রতিনিধিদলকে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে প্রবেশ করতে না দেয়ার বিষয়কে কেন্দ্র করে তীব্র প্রতিবাদ মুখর হয়ে উঠেছে কক্সবাজারের বাসিন্দারা। তারা বলেন, যুগের পর যুগ রোহিঙ্গাদের আমরা আশ্রয় দেব-আর মিয়ানমার নাকে তেল দিয়ে ঘুমাবে, তা কখনও মেনে নেয়া যায় না। জাতিসংঘ প্রতিনিধিদলকে রাখাইন রাজ্যে প্রবেশ করতে না দেয়ার বিষয়ে বহির্বিশ্বের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন কক্সবাজারের সুশীল সমাজ। সূত্র জানায়, গত বছরের অক্টোবরে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা মুসলিমদের ওপর সেনাবাহিনীর নির্যাতনের অভিযোগ তদন্তে জাতিসংঘ কোন দল পাঠালে তাদের দেশটিতে প্রবেশ করতে দেয়া হবে না বলে জানিয়েছেন মিয়ানমার সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের এক কর্মকর্তা। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পার্লামেন্ট সেক্রেটারি কিয়াও জেয়া বলেন, ‘যদি তারা তদন্তের জন্য কোন দল পাঠাতে চায় তবে তাদের মিয়ানমারে প্রবেশ করতে দেয়ার কোন কারণ আমরা দেখছি না।’ অর্ধশতাব্দীর বেশি সময় ধরে চলা সামরিক জান্তা শাসনের অবসান ঘটিয়ে গত বছর নির্বাচনের মাধ্যমে মিয়ানমারের ক্ষমতায় আসে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী আউং সান সুচির দল ন্যাশনাল লীগ ফর ডেমোক্রেসি। অক্টোবরে রোহিঙ্গা ‘বিচ্ছিন্নতাবাদী গ্রুপ’ মিয়ানমার সীমান্ত পুলিশের তিনটি পোস্টে হামলা চালিয়ে নয় পুলিশ কর্মকর্তাকে হত্যা করে। এর পর রাখাইন রাজ্যে ব্যাপক সেনা অভিযানে শতাধিক মানুষ (রোহিঙ্গা) নিহত ও অসংখ্য নারী ধর্ষণের শিকার হয়। পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে হাজারো বসতবাড়ি। প্রাণ ভয়ে ৭৫ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে আসে। বাংলাদেশ সরকার মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে এসব রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়েছে। সেনা অভিযানের নামে রাখাইনে রোহিঙ্গা হত্যা, ধর্ষণ ও নিপীড়ন মানবাধিকারের গুরুতর লঙ্ঘন বলে অভিযোগ তুলেছে বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন। যদিও আউং সান সুচি সরকার বরাবরই ওই অভিযোগ অস্বীকার করেছে এবং পরিস্থিতি যাচাইয়ে সরকার তদন্ত দল গঠন করেছে বলে জানিয়ে দায়িত্ব-কর্তব্য শেষ করছেন। প্রত্যাবাসনের ব্যাপারে সিদ্ধান্তের কথা না বলে উল্টো মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ এক গুঁয়েমি মনোভাব দেখিয়ে বলছে, জাতিসংঘের প্রতিনিধিদলকে রাখাইন রাজ্যে প্রবেশ করতে দেবে না।
×