স্টাফ রিপোর্টার, রাজশাহী ॥ পবায় স্থানীয় সংসদ সদস্যের নামে ভুয়া ডিও লেটার দিয়ে ১৭৮ মেট্রিক টন চাল লোপাটের অভিযোগ উঠেছে বিএনপি-জামায়াতপন্থী ৬ চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে। রমজান মাসে বিভিন্ন মসজিদ ও মাদ্রাসার নামে ইফতার এবং আহার্যের নামে ভুয়া ভাউচার দাখিল করে ত্রাণ ও পুনর্বাসন মন্ত্রণালয় থেকে বরাদ্দ চাল লোপাটের চেষ্টা করা হয়। যার অধিকাংশ ঈদের আগেই উত্তেলন করা হয়েছে।
তবে সর্বশেষ শনিবার বরাদ্দের বাকি চাল উত্তোলন করতে গেলে বিষয়টি জানাজানি হয়ে যায়। এরপর স্থানীয় সংসদ সদস্য আয়েন উদ্দিন নিজেই বিষয়টি জেলা প্রশাসককে অবহিত করে চাল উত্তোলন বন্ধ করে তদন্ত করার নির্দেশ দেন। পবা উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা আবু বাসির বলেন, ‘উপরের’ নির্দেশে এবং প্রয়োজনীয় কাগজ থাকায় চাল উত্তোলনের চিঠি (ডিও) ইস্যু করা হয়। ঈদের আগে প্রায় একশ’ মেট্রিক টন চাল উত্তোলনের ডিও দেয়া হয়। ঈদের পরে ২০ মেট্রিক টন উত্তোলন করা হয়। তবে শনিবার স্থানীয় সংসদ সদস্যের মৌখিক নির্দেশের ভিত্তিতে চাল উত্তোলন বন্ধ করে দেয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।
স্থানীয় সংসদ সদস্য আয়েন উদ্দিন বলেন, তার নাম ব্যবহার করে জাল ডিও লেটার দিয়ে মসজিদ মাদ্রাসার নামে ইফতার ও আহার্যের জন্য ত্রাণ ও পুনর্বাসন বিভাগ থেকে এ বরাদ্দ নেয়া হয়েছে। যা শুধু বিএনপি-জামায়াত নিয়ন্ত্রিত ৫০টি প্রতিষ্ঠানের নামে এই বরাদ্দ উত্তোলন করা হচ্ছিল। এই জালিয়াতির সঙ্গে বিএনপি-জামায়াতপন্থী উপজেলার ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ও পাঁচ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ছাড়াও জেলা ও উপজেলার ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তারা জড়িত বলে জানান তিনি। সংসদ সদস্য আয়েন আরও বলেন, শনিবার বিষয়টি তিনি জানতে পারেন। এরপর বিষয়টি জেলা প্রশাসককে জানানো হয়। একই সঙ্গে ত্রাণ ও পুনর্বাসন মন্ত্রীকেও জানানো হয়েছে। পরে জেলা প্রশাসক বরাদ্দের চাল উত্তোলন বন্ধ করে দিয়েছেন। এদিকে, স্থানীয় সংসদ সদস্যের ডিও লেটার জাল করে ইফতার, মিলাদ মাহফিল ও আহার্যের নামে ১৭৮ মেট্রিক টন রিলিফের চাল লোপাটের ঘটনায় পবায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।
জেলা ও পবা উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তাদের মধ্যে তোলপাড় শুরু হয়েছে। পবা উপজেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন দফতর সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জামায়াত নেত্রী বেগম খায়রুন্নেসা, হড়গ্রাম ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জামায়াত নেতা অধ্যাপক আবুল কালাম আজাদ, দামকুড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও বিএনপি নেতা আব্দুস সালাম, বড়গাছি ইউপি চেয়ারম্যান ও বিএনপি নেতা সোহেল রানা, হুজুরিপাড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শিক্ষক আকতার ফারুক ও পারিলা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সাইফুল বারী ভুলু তদবির করে এ বরাদ্দ নিয়ে এসেছে। এরসঙ্গে জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা আমিনুল হক, পবা উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা আবু বাসির ও খাদ্য কর্মকর্তা আলমাস উদ বিল জড়িত বলে জানায় সূত্রটি। এ বিষয়ে মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করে জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা আমিনুল হককে পাওয়া যায়নি। তবে হুজুরিপাড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আখতার ফারুক বলেন, তিনি নতুন চেয়ারম্যান।
বড় ভাইয়েরা যেভাবে বলেছেন সেভাবে তালিকা করে দিয়েছি। এর বেশি কিছু জানা নেই। জানা গেছে, ভুয়া ডিও দিয়ে চাল উত্তোলনে যেসব প্রতিষ্ঠান দেখানো হয়েছে তার সবই বিএনপি-জামায়াত নিয়ন্ত্রিত মসজিদ, মাদ্রাসা ও এতিমখানা। সংসদ সদস্য আয়েন উদ্দিন সুষ্ঠু তদন্ত দাবি করেন।