ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

প্রাণ গোপাল দত্ত

একি মোর অপরাধ!

প্রকাশিত: ০৩:৩৯, ২ জুলাই ২০১৭

একি মোর অপরাধ!

প্রত্যেকটা মানুষের জন্মদিন তাঁর এবং তাঁর পরিবারের কাছে অমূল্য দিন। প্রত্যেকটা জাতির জন্মক্ষণ, তেমনি জাতির জন্য মূল্যবান এক অর্জন। পারিবারিকভাবে মানুষ তাঁর সবচেয়ে অপদার্থ সন্তানেরও জন্মদিন পালন করেন। সন্তান বাবা-মায়ের জন্মদিন পালন করে। কারণ এটা একটা পারিবারিক বন্ধন। রাষ্ট্রের জনকদের জন্মদিনও প্রত্যেক দেশে ছুটির মাধ্যমে পালন করা হয়। তার সঙ্গে হয়ত আনুষঙ্গিক অনুষ্ঠান থাকে এবং সেই আনুষ্ঠানিক অনুষ্ঠানগুলো সাধারণত তাদের ক্ষণিকের জন্য স্মরণ করা অথবা তাদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে। বাংলাদেশের জাতির জনক, বাংলাদেশের স্থপতি, ইতিহাসের মহানায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মদিনটি কিন্তু তাঁর পরিবার জাতীয় শিশু ও কিশোর দিবস হিসাবে উৎসর্গ করে দিয়েছেন। তাতেই বোঝা যায় যে, কেন সেটা জাতীয় শিশু ও কিশোর দিবস হিসাবে ঘোষণা করা হয়েছে। ইতিহাসের এই মহানায়কের জন্মদিনটি পালনে গ্রাম থেকে শুরু করে রাজধানী, রাজধানী থেকে শুরু করে যেখানে তিনি চিরনিদ্রায় শায়িত আছেন সেই টুঙ্গিপাড়া, কোথাও কিন্তু অবহেলার সঙ্গে পালন করা হয় না। যথাযোগ্য মর্যাদার সঙ্গেই পালন করা হয়। আমি ১৯৮০ সালের ২১ জানুয়ারি নাক, কান, গলা রোগের ওপর এমএস এবং পিএইচডি করার জন্য তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নের ইউক্রেনের বন্দরনগরী অডেসাতে যাই। সেখানে ২২ এপ্রিল মহামতি লেনিনের জন্মদিন পালনের অনুষ্ঠানটি আমার মনে এক অবিস্মরণীয় দাগ কাটে। লেনিন শুধু সোভিয়েত ইউনিয়নের জন্মদাতা নন, তিনি মার্কস এঙ্গেলসের আদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়ে সমাজতান্ত্রিক চেতনার এক মহান মূল্যবোধ নিয়ে ১৯১৭ সালের বিপ্লবের মাধ্যমে সমাজতান্ত্রিক সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। মহামতি লেনিনের জন্মদিনটি আমার সোভিয়েত ইউনিয়নে পদার্পণের তিন মাসের মাথায় পালিত হলো। আমি তখন রাশিয়ান ভাষা শিক্ষার পাশাপাশি নাক, কান, গলা বিভাগে কাজ করি। সে দিনটি কিভাবে পালন করা হবে সেই উপলক্ষে আমার কোন ধারণা ছিল না। আমার গাইড প্রফেসর দ্রাগমেরেস্কি আমাকে বললেন, দাদুর জন্মদিন পালিত হবে সুতরাং তুমি এখানে এসো। এখন যে মহান জন্মদিন পালনের জন্য আমাকে যেতে বললেন, জিনিসটা আমার কাছে কেমন জানি ধোয়াটে মনে হলো। যাই হোক অতি উৎসাহ ভরে সেই হোস্টেল থেকে দুবার ট্রাম পরিবর্তন করে অডেসার রিজিওনাল হাসপাতালে আমার কর্মস্থলে আমি পৌঁছে যাই। ওখানে পৌঁছে দেখলাম সেকি বিশাল কর্মযজ্ঞ। পরিবেশ রক্ষকরা রাস্তাঘাট, বাগান সব পরিষ্কার করছে, ড্রেন পরিষ্কার করছে এবং বড় বড় সার্জনরা সবাই নিজ নিজ ডিপার্টমেন্টে বসে রোগী দেখছে এবং সেই রোগী দেখার নিয়ম হলো অফিস টাইম সকাল ৮টায় শুরু হয়েছে। কিন্তু যতক্ষণ রোগী থাকে ততক্ষণ তারা রোগী দেখে যাবেন। টিকেট দেয়া বন্ধ হবে না। এবং যে চারটা অপারেশন থিয়েটার ইএনটি ডিপার্টমেন্টে ছিল, অন্যান্য দিনে দেখতাম যে হয়ত দুটাতে অপারেশন হচ্ছে বাকি দুটো খালি আছে। সেদিন দেখলাম চারটাতেই অপারেশন হচ্ছে। এবং মজার ব্যাপার হলো, এই অপারেশনগুলো যে হচ্ছে, অন্যান্য দিনে দৈনিক যে অপারেশন হতো সেদিন মনে হলো তার দুইগুণ বা তিনগুণ অপারেশন হয়েছে। আমি দেখে আমার প্রফেসরকে জিজ্ঞেস করলাম, তোমরা আজকের ছুটির দিন লেনিনের জন্মদিন ২২ এপ্রিল পালন করছ কেন। ২২ এপ্রিল তো চলে গেছে। কিন্তু তোমরা আজকে শনিবার দিন কেন এইটা উদযাপন করছ?। উনি জবাব দিলেন, এটা ‘লেনিনসকি সুবতনিক’ অর্থাৎ ছুটির দিনটাকে আমরা লেনিনের জন্মদিন উপলক্ষে কর্মের মাধ্যমে উৎসর্গ করি। অমনি সেটা আমার স্মৃতির মণিকোঠায় বিশাল স্থান দখল করে নিল। ১৯৮৩ সালে আমি দেশে ফিরে আসি। তারপর থেকে আমি এই চিন্তাচেতনা নিয়ে কাজ করতে থাকি। আমার ধারণা ছিল যে, কোন একদিন আমি যদি পারি তাহলে আমিও দিবসটিকে অর্থাৎ আমার জাতির জন্মদাতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মদিনটিকে ওই রকম একটা কর্মময় জন্মদিন হিসেবে পালন করব। অথবা জন্মদিনের পরের একটা শুক্রবার সবাই কর্মের মাধ্যমে উৎসর্গ করব। এবং এই কর্মময় দিনটিকে পালন করতে হলে আমার মতো মানুষের বুদ্ধি বা বিবেচনা যে কেউ নেবে না সেটাও আমি খুব ভালভাবে জানি। স্রষ্টা আমার প্রতি অত্যন্ত সহানুভূতিশীলÑ আমার স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য উনি যেন গভীর আগ্রহে অপেক্ষা করছিলেন। ২০০৯ সালে প্রধানমন্ত্রী আমাকে যখন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ প্রদান করেন তখনই আমার মনে এই বাস্তবতার নিরিখে বঙ্গবন্ধুর জন্মদিনে কিছু সেবা দেয়া যায় কিনা জনগণকে সেটা পালন করার জন্য সচেষ্ট হলাম। যেহেতু ২০০৯ সালের ২৫ মার্চ আমি দায়িত্ব নিয়েছি, আমার দুর্ভাগ্য ২০০৯ সালের ১৭ মার্চটা আমি পালন করার সুযোগ পাইনি আমার মনের মতো করে। হ্যাঁ ২০০৯ সালের ১৭ মার্চ টুঙ্গিপাড়াতে জাতীয় শিশু-কিশোর দিবস এবং বঙ্গবন্ধুর চিরনিদ্রায় শায়িত সেই পুণ্যস্থানে যদিও উপস্থিত ছিলাম এবং প্রধানমন্ত্রীর অনুষ্ঠান দেখেছিলাম। তারপরও যেন একটা কর্মের অতৃপ্তি আমার প্রাণে বার বার বেজে উঠছিল। যাই হোক সেখান থেকে আমি চিন্তা করতে লাগলাম ২০১০ সালের ১৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে ফ্রি চিকিৎসা দেয়ার ব্যবস্থা করব। আমার শুভাকাক্সক্ষী, বঙ্গবন্ধুর প্রতি অগাধ শ্রদ্ধাশীল যে সব সহকর্মী ছিলেন তাদের মধ্যে ওইটা ভ্যান্টিলেট করতে শুরু করলাম। ২০১০ সালের মার্চ মাসের শুরুতেই আমি তৃতীয় শ্রেণী, চতুর্থ শ্রেণী, দ্বিতীয় শ্রেণীর কর্মচারীসহ আমার সহকর্মী ডাক্তারÑ সবার মধ্যে ভাবের আদান-প্রদান করে সিদ্ধান্ত নেই যে, ১৭ মার্চ আমি যে করেই হোক একটা ফ্রি হেলথ সার্ভিসের ব্যবস্থা করব। এবং সেই ফ্রি হেলথ সার্ভিসের ব্যবস্থা করার জন্য যা যা করা দরকার সব আনুষঙ্গিক ব্যাপারকে সঙ্গে নিয়ে আসলাম। আমার প্রোভিসি অধ্যাপক শহীদুল্লাহকে দায়িত্ব দিলে সে হাসপাতাল পরিচালককে নিয়ে নেমে পড়েন। হাসপাতালের পরিচালক ব্রি. জে. এমএ মজিদকে যখন আমি বললাম, এই কাজটা সুন্দরভাবে করে দিতে হবে, তখন তিনি সহাস্যে বললেন, স্যার আমার ওপর আপনি দায়িত্ব দিয়ে দেন। প্রোভিসি শহীদুল্লাহ সাহেব আমাকে ইতোমধ্যে বলেছেন, আমি সত্যিই তাঁর প্রশংসা না করে পারছি না প্রচ- পরিশ্রম করে, নির্ভুলভাবে কোন রকমের ত্রুটি ছাড়া সে দিনটি পালনের ব্যবস্থা তিনি করে দিয়েছিলেন। তার আগে অবশ্যই আমি আমার অত্যন্ত শ্রদ্ধেয় চিকিৎসকদের বাংলাদেশে যারা স্বনামধন্য ছিলেন। তাদের অনেককেই নিমন্ত্রণ করলাম যেন তারা এসে আমার রোগী দেখার এই প্রক্রিয়াতে নিজেদের সম্পৃক্ত করেন। তাদের মধ্যে ছিলেন অধ্যাপক রশিদই মাহবুব, অধ্যাপক মাহমুদ হাসান, অধ্যাপক শাহলা খাতুন, অধ্যাপক এম আর খান। এবং সেদিন প্রত্যেকে এসেছিলেন। এবং সেদিন রোগী দেখার যে আনন্দ উৎসব হলো অনানুষ্ঠানিকভাবে না হলেও সেটা যেন পহেলা বৈশাখের মতো একটা প্রাণের মেলা হয়ে গিয়েছিল। রোগীদের উৎফুল্লতা তাদের সচেতনতা এইগুলো দেখে তাদের সহযোগিতা আমার মনে এক বিরাট সাহস ও বিশ্বাস যুগিয়েছিল আমার স্বপ্ন বাস্তবায়নের পক্ষে। যাই হোক পরবর্তীতে আমাদের স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোঃ নাসিম সাহেব গত দুতিন বছর ধরে এই চিকিৎসাব্যবস্থা চালু করেছেন সরকারী হাসপাতালগুলোতে। এবারের জন্মদিনটা ছিল ১৭ মার্চ, শুক্রবার এবং ২০১৫ সালের পরের ২০১৬ সালের ১৭ মার্চ আমি রোগী দেখতে না পেরে অত্যন্ত মনোক্ষুণœ অবস্থায় বাসায় ছিলাম। কেননা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় আমাকে ডাকেনি। পরবর্তীতে ১৮ মার্চ আমার চেম্বারে যে সব রোগী আসল তাদের অনানুষ্ঠানিকভাবে সবাইকেই বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে ফি না নিয়ে দেখে দিলাম। আমি কাউকেই বলিনি যে, ১৭ মার্চ উপলক্ষে আমি আপনাদের ফ্রি দেখেছি। কিন্তু মনে মনে লালন করছিলাম যে, কোথায় যেয়ে এই সেবাটা দেয়া যায়। সিদ্ধান্ত নিলাম ২০১৭ সালের ১৭ মার্চ আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত অর্থাৎ বঙ্গবন্ধু ট্রাস্ট কর্তৃক পরিচালিত শেখ ফজিলাতুননেছা মুজিব মেমোরিয়াল কেপিজে হাসপাতালকে বেছে নিলাম। কারণ ওইখানে আমি অনেক দিন ধরেই অর্থাৎ হাসপাতালটি প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকে প্রতি মঙ্গলবার রোগী দেখতে যাই। এবং অনেক রোগীকে আমি ওইখানে সাহায্য বা চিকিৎসা দিতে পারি। কারণ তাঁরা শিল্প এলাকার বঞ্চিত হত দরিদ্র না হলেও দরিদ্র ক্যাটাগরিতেই পড়েন। নিচু আয়ের লোকজন, খেটে খাওয়া শ্রমিক, কৃষক যাদের দেখে আমি খুব পরিতৃপ্তি পাচ্ছিলাম। তাই হাসপাতালের চীফ এক্সিকিউটিভ অফিসার মালয়েশিয়ান ভদ্র মহিলা, যিনি একজন ক্যান্সার সার্ভাইবার এবং আমার প্রতি তার বেশ শ্রদ্ধা এবং ভালবাসা, আমি তাকে বললাম যে, এইবারের ১৭ মার্চ চল আমরা এই হাসপাতালে একটু সুন্দরভাবে পালন করি। সে আমাকে জিজ্ঞাসা করল, আপনার পরামর্শ কি, আমি তাকে বললাম, দেখ এবার আমরা শুধু ফ্রি রোগী দেখব না, আমাদের প্রেসক্রিপশনের ওপর ভিত্তি করে যদি কেউ হাসপাতালের ডিসপেনসারি থেকে ওষুধ কিনে তাদের আমরা ৫% কনসেশন দেব। যদি কেউ এই হাসপাতালে নির্দেশিত প্রেসক্রিপশনের ওপর লেখা কোন ল্যাবরেটরির টেস্ট করতে চায় তাহলে তাদের ২০% কনসেশন দেয়া হবে। এবং সকাল থেকেই হাসপাতালের কর্মীরা প্রত্যেকটা শিশুকে একটা বেলুন দেবে, একটু খাদ্য দেবে বা পানীয় দেবে এবং হাসপাতালটাকে অত্যন্ত সুন্দরভাবে সাজিয়ে একটা উৎসবমুখর দিন হিসেবে রোগীদের সেবা দিতে চেষ্টা করব। আমি জানি না, সিইও কেন এক বাক্যে আমার সব কথা গ্রহণ করলেন। তিনি মালয়েশিয়ায় তার প্রধানের সঙ্গে আলাপ করেছেন কিনা জানি না। আমি ১৭ মার্চ সকাল বেলায় খুব ভোরে যখন ওইখানে গিয়ে দেখলাম আমি যা বলেছি তাই হচ্ছে। শেষাবধি আমি অত্যন্ত প্রশান্তির একটা মন নিয়ে আমার নাক, কান, গলা বিভাগের যেখানে রোগী দেখার কথা সেখানে উঠে গেলাম। দেখলাম অসংখ্য রোগী অপেক্ষা করছে। আমার সহকর্মী, আমার সঙ্গে যে গত ১০ বছর ধরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে এবং আমার চেম্বারে কাজ করেছিল ডাক্তার জুয়েল ইতোমধ্যেই রোগী দেখা শুরু করে দিয়েছে। তারপরে দুজন মিলে আমরা ১১৯ জন রোগী দেখলাম। এবং সত্যিকার অর্থে ১১৯ জনের মধ্যে কেউ ফ্রি চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে বলেই যে রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিল ওইখানে ফ্রি চিকিৎসা দেয়া হবে বলে ভেতরে ঢুকে ডাক্তার দেখিয়ে যাননি। সবাই রোগী ছিলেন। এবং যাদের চিকিৎসা দরকার ছিল তারাই এসেছিলেন। এটা একটা ব্যতিক্রমী ঘটনা। যেটা আমি কখনও দেখিনি। তা ছাড়াও আমি যেটা দেখলাম সেটা হলো রোগীরাও অত্যন্ত আন্তরিকতার সঙ্গে এই দিবসটাকে গ্রহণ করেছেন, এই সেবাটাকে গ্রহণ করেছেন। কিন্তু দুর্ভাগ্য হলো আমারই এক সহকর্মী ১৭ তারিখ ভোরে আমি যখন তার দেখা পাই তখন সে বলল, স্যার আপনি যেই পদ্ধতি চালু করেছেন সেটার জন্য ডাক্তারদের মধ্যে স্বল্পসংখ্যক চিকিৎসক এটা পছন্দ করেননি। আমি জিজ্ঞাসা করলাম, কেন? এবারের এইটা তো পড়েছে শুক্রবার, শুক্রবারে তো অনেক ডাক্তার ঢাকা শহর ছেড়ে বিভিন্ন শহর, উপজেলা বা প্রত্যন্ত অঞ্চলে রোগী দেখতে যান। যেখানে মেডিক্যাল কলেজ আছে, সেখান থেকে সবাই গ্রামাঞ্চলে রোজগারের জন্য যান। তারা আজকে যেতে পারবেন না তাই। তারপর আমার আরেকজন সহকর্মী বললেন, এইটা বস (অর্থাৎ আমি) চালু করছি। এ কথা শুনে আমার কাছে মনে হলো, আমি কি খুব বড় একটা অপরাধ করেছি? তারপরও যদি অপরাধ করে থাকি সেটা কি এতবড়ই অপরাধ ৩৬৫ দিনের একটি দিন শুধুমাত্র পেরিফেরিতে না গেলে রোগীরা সেবা বঞ্চিত হবে বা আমার সামান্যটুকু উপার্জন কমে যাবে। সবকিছু মিলে আমি সিদ্ধান্ত নিলাম, আমি যা করেছি আমার বিবেক তা বলে দিয়েছে। আমি একটা ভাল জিনিসকে অনুকরণ করেছি এবং সেটাকে বাস্তবায়নের চেষ্টা করেছি। ডাক্তারদের মধ্যে এই ক্ষোভটা হয়ত বা থাকত না। যদি ওই ১৭ মার্চ রোডস এ্যান্ড হাইওয়ের সব কর্মীরা রাস্তায় নেমে রাস্তাটা ঠিক করত। ওয়াসার কর্মীরা তাঁর পানির লাইনগুলো ঠিক করত। পরিবেশ বা পরিচ্ছন্ন কর্মীরা ঢাকাকে পরিষ্কার রাখার জন্য উঠেপড়ে লাগত তাহলে সবাই সানন্দে গ্রহণ করত। এবং আমি আশা করব ভবিষ্যতে সর্বক্ষেত্রে সর্বজন যদি এই দিনটাকে উৎসবের মতো করে গ্রহণ করে নেন তাহলেই বোধহয় আমার চিন্তার সার্থকতা আসবে। পবিত্র ধর্মগ্রন্থ গীতায় উদ্ধৃতÑ ‘কর্ম বন্ধনের কারণ নয়, অহঙ্কার ও কামনাই বন্ধনের কারণ। মোক্ষের জন্য চাই অহঙ্কার ও ফলাশক্তি ত্যাগ, কর্মত্যাগ নয়। কেহই কখনও ক্ষণকালও কর্ম না করিয়া থাকিতে পারে না, প্রকৃতির গুণে অবশ হইয়া সকলেই কর্ম করিতে বাধ্য হয়।’ আমি তো মনে করি ২০১৮ সালে অথবা এ বছর থেকেই আমরা বঙ্গমাতা ফজিলাতুননেছার জন্ম দিনটিও বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুননেছা কেপিজে মেমোরিয়াল হাসপাতালে একইভাবে বঙ্গবন্ধুর জন্মদিনের মতো উদযাপন করব এবং তাতে করে বছরে ন্যূনতম দুবার করে আমরা মানুষকে এই সেবাটা দিয়ে যেতে পারব। ‘জয়তু : জন্মদিন’ জয়তু : জাতির জনক। লেখক : সাবেক উপাচার্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়
×