ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

দগ্ধ অবলা পশু

প্রকাশিত: ০৩:৩৭, ২ জুলাই ২০১৭

দগ্ধ অবলা পশু

আগুন সবই গ্রাস করে। গিলে খায় গোগ্রাসে যা পায় সামনে। সবই তার খাদ্য হয়ে ওঠে যখন সে হয় আগ্রাসী। আগুনের আগ্রাসন থেকে মানুষ, পশুপাখি, অবলা প্রাণী, ঘরবাড়ি, গাছপালা কিছুই পায় না রেহাই। আগুনের স্পর্শে বুঝি সবই হয়ে যায় ভস্ম। অনেকাংশেই সর্বভুক আগুনের কবল থেকে রক্ষা পাওয়া সহজসাধ্য হয়ে ওঠে না। আগুন অতি নির্মম দ্রুততার সঙ্গে ছড়িয়ে পড়ে বাতাসের তোড়ে। তাই দেশের সর্ববৃহৎ পশুর হাট গাবতলীতে দগ্ধ হয়ে মারা গেল চল্লিশটির মতো গরু, ছাগল ও ভেড়া। দাউ দাউ করে যখন জ্বলছিল আগুন তখনও খুঁটির বাঁধন ছিঁড়ে যাওয়ার জন্য প্রাণপণ চেষ্টা করছিল পশুগুলো। হাম্বা হাম্বা করে ডাকছিল রক্ষা পেতে। কিন্তু সেই ডাক বেশিক্ষণ স্থায়ী হতে পারেনি। আগুনের লেলিহান শিখায় স্তব্ধ হয়ে যায় তাদের কণ্ঠনিসৃত বাঁচার আকুতি। খুঁটিতে বাঁধা অবস্থায় মারা যায় চল্লিশটি পশু। এছাড়া দগ্ধ হয় আরও অন্তত পঞ্চাশটি পশু। সাতটি গরুকে জীবিত অবস্থায় হাটের মধ্যেই দ্রুত জবাই করা হয়। একদিকে যখন পুড়ছে পশু, তখন অন্যদিকে চোরের দাপট বেড়ে যায়। অন্তত পঞ্চাশটি পশু চুরি হয়ে যায়। এ যে কারও পৌষ মাস, কারও সর্বনাশ। আগুন লাগার সময় অধিকাংশ ব্যাপারী গরু-ছাগলের কাছে ছিল না। ফলে চুরি হওয়া সহজতর হয়ে যায়। আগুন লাগার পর কে বা কারা গরু নিয়ে যাচ্ছে, তা দেখার বা বাধা দেয়ার কেউ ছিল না। এমনটা ধারণা হয়েছিল অনেকের যে, আগুনের হাত থেকে পশুদের রক্ষা করার জন্যই নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। কিন্তু কারা কোথায় তা নিয়ে যাচ্ছে, তা দেখার, বোঝার বা উপলব্ধি করার মানসিকতা ছিল না ব্যাপারীদের। বরং আগুনে পশু পুড়ে মরা দেখার দর্শকের সংখ্যা ক্রমশ বেড়েছে। ভিড়ভাট্টার মধ্যে চোরের কর্মকা- রুখে দেয়ার উদ্যোগ থাকার কথা নয়। ‘ঘরপোড়া গরু সিঁদুরে মেঘ দেখলে ভয় পায়’ বলে প্রবাদ রয়েছে। কিন্তু নিজেকে রক্ষা করার মতো অবস্থা যদি না থাকে, তবে পুড়ে মরা ছাড়া আর বিকল্প থাকে না। তাই শিকল বা চেন দিয়ে বাঁধা পশুগুলো পুড়ে মরল। রশি দিয়ে বাঁধা ছিল যেগুলো, সে সব রক্ষা পেয়েছে বলা যায়। হাটে আনা পশু যেসব ছাউনিতে বেঁধে রাখা হয়, সেগুলো প্লাস্টিকের তৈরি। ফলে আগুন প্লাস্টিক গলে গলে পড়ায় ছাউনিতে বেঁধে রাখা সব পশু রক্ষা করা যায়নি। আগুনে তিনটি শেডই পুড়ে গেছে। আগুনে আহত পশুগুলোর চিকিৎসার কোন ব্যবস্থা ছিল না। সারা বছরই এই হাটে পশু বেচাকেনা হয়। অথচ এই পশু সংরক্ষণের ব্যবস্থা অত্যন্ত দুর্বল। পশুর খাদ্য বিচালিও প্লাস্টিকের ছাউনির কারণে আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়েছিল। ঈদের চতুর্থ দিনের এই ঘটনার সময় অনেক ব্যবসায়ী ও রাখাল পশুর কাছে ছিল না। আশপাশে অবস্থান করছিল তারা। আগুন দেখে ছুটে এসেও অনেক পশুকে সরাতে পারেনি। প্লাস্টিক গলে গলে পশুগুলোর দেহে পড়ছিল। সকাল বেলায় যখন এই ঘটনা ঘটে, তখন হাটে ক্রেতা ছিল নামমাত্র। প্রায় পাঁচ মাস আগেও এই হাটে একবার আগুন লেগেছিল। সেবার তেমন ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। কিন্তু এবারের ঘটনা ভিন্ন রকম, ফায়ার ব্রিগেড বলছেÑ বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিট থেকে আগুনের সূত্রপাত। হাট পরিচালনা কমিটির মতে, সিগারেটের আগুন থেকে সূত্রপাত হতে পারে। নাশকতার কোন আশঙ্কা আশা করা হয়নি। আগুন নেভানোর কোন প্রচেষ্টাই কাজে লাগেনি। ফায়ার সার্ভিস দেরিতে আসায় সব ভস্মীভূত হয়ে যায়। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ প্রাথমিকভাবে বিশ লাখ টাকা বলা হয়েছে। পশু ব্যবসায়ীদের অনেকেই সর্বস্বান্ত। এমনকি ব্যবসায়ীদের লাখ লাখ টাকাও পুড়ে ছাই। দ্রুত শেড মেরামত ও পশু সংরক্ষণের ব্যবস্থা নেয়া না হলে কোরবানিতে পশুর হাট চালু রাখা দুষ্কর যে হবে তা স্পষ্ট। গরু-ছাগল নামক অবলা প্রাণীদের এমন নির্মম মৃত্যু, কাররই কাম্য নয়। তদন্ত করা হলে জানা যাবে, আগুনের সূত্রপাত, আর চুরি হয়ে যাওয়া গবাদি পশু দ্রুত উদ্ধার করার জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা জরুরী। তদন্ত করা হলে জানা যাবেÑ সার্বিক বিষয়। আগুনের লেলিহান শিখা থেকে বেঁচে আসার কোন পথ খোলা না থাকলেও অনেক গবাদি পশু প্রাণে বেঁচেছে। গাবতলীর ঘটনার দ্রুত তদন্ত যেমন জরুরী, তেমনি ব্যবসায়ীদের ক্ষতিপূরণ প্রদান এবং নিরাপদে হাটে গবাদি পশু সংরক্ষণের উদ্যোগ নিতে হবে কর্তৃপক্ষকে। এমন দুর্ঘটনার পুনরাবৃত্তি আর কাম্য নয়।
×