ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

সর্বসম্মত বাজেট পাস

প্রকাশিত: ০৩:৩৬, ২ জুলাই ২০১৭

সর্বসম্মত বাজেট পাস

বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে সর্বসম্মতিক্রমে ২০১৭-১৮ অর্থবছরের বাজেট পাস হয়েছে। এই বাজেট পাসের মাধ্যমে জাতীয় সংসদ ২০১৮ সালের ৩০ জুন সমাপ্ত অর্থবছরের সকল ব্যয় নির্বাহের জন্য সরকারকে রাষ্ট্রের সংযুক্ত তহবিল থেকে ৫ লাখ ৩৫ হাজার ২১৪ কোটি ১৫ লাখ ৯২ হাজার টাকা বরাদ্দের অনুমোদন দিয়েছে। বিগত কয়েক বছরের মধ্যে এবারই প্রথম বাজেট নিয়ে সংসদে সরকার ও বিরোধী দলের প্রাণবন্ত আলোচনা হয়েছে। বিরোধী দলের পাশাপাশি সরকারী দলেরও অনেক সিনিয়র নেতা-মন্ত্রী বাজেটের কয়েকটি বিষয় নিয়ে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতকে তীব্র সমালোচনা করতে ছাড়েননি। বিশেষ করে ব্যাংক আমানতের ওপর আবগারি শুল্ক বৃদ্ধি এবং ভ্যাট নিয়েই বেশি সমালোচনার মুখে পড়তে হয় অর্থমন্ত্রীকে। তবে প্রধানমন্ত্রীর সুপারিশের প্রেক্ষিতে অর্থমন্ত্রী ভ্যাট আইন আগামী দুই বছরের জন্য স্থগিত এবং ব্যাংক আমানতের ওপর আরোপিত আবগারি শুল্ক পুনর্বিন্যাস করলে সরকার ও বিরোধী দলের সংসদ সদস্যরা বৃহস্পতিবার সর্বসম্মতিক্রমে বাজেটটি পাস করেন। জনবান্ধব এই বাজেটে ভ্যাট আইন স্থগিত করায় বেসরকারী বিনিয়োগ বাড়বে বলে আশা করা যায়। অন্যবারের তুলনায় এবার বাজেটের আকার বড় হলেও এটি বিগত বাজেটসমূহের ধারাবাহিকতারই অংশ। ইতোপূর্বে প্রতিটি বাজেটেই সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যে আকার বেড়েছে। বাংলাদেশ বিশ্বের জনবহুল দেশগুলোর একটি। আমাদের জাতীয় আয় বাড়ছে, বাড়ছে অর্থনীতির আকারও। বাজেট পর্যালোচনা করলে আমরা দেখব, উন্নয়নের মহাসড়কে দেশের গতি বাড়ানোর জন্য প্রয়োজন বাড়তি অর্থ। অর্থ সংগ্রহের নানা খাত বের করা অর্থমন্ত্রীর একটি বিশেষ দায়িত্ব। সেই দায়িত্ব পালনের জন্য অর্থ সংগ্রহের নানা উপায় তিনি খতিয়ে দেখেছেন। আগামী ২০১৭-১৮ অর্থবছরের এই বাজেটের আকার যেমন বেড়েছে তেমনি বেড়েছে বাজেট ঘাটতি। সকল প্রকার কৃষিপণ্যসহ ৫৪৯টি পণ্যকে ভ্যাটের আওতামুক্ত রাখা হয়েছে, যা সুবিবেচনাপ্রসূত। শিক্ষাই জাতির মেরুদণ্ড আর বর্তমান সময় প্রযুক্তি ব্যবহার করে উন্নতির শিখরে আরোহণের সময়। যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন ছাড়া দেশের সার্বিক অর্থনীতির উন্নয়ন অকল্পনীয়। শিক্ষা ও প্রযুক্তি খাতে এবার সর্বোচ্চ বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। একই সঙ্গে যোগাযোগ খাতে বরাদ্দ যথেষ্ট বেড়েছে। এটিকে ইতিবাচকভাবে না দেখার কোন কারণ নেই। আগামী অর্থবছরের বাজেটে একটি লক্ষ্যযোগ্য দিক হচ্ছে সামাজিক নিরাপত্তা খাতে বিভিন্ন ভাতার হার বৃদ্ধি। একই সঙ্গে বাড়ছে সুবিধাভোগীর সংখ্যাও। এক্ষেত্রে মুক্তিযোদ্ধারাই হচ্ছেন প্রধান বিবেচনার কেন্দ্র। তাদের কেবল সম্মানী ভাতা বৃদ্ধি নয়, ১০ হাজার টাকা হারে বছরে দুটি উৎসব ভাতা প্রদানের প্রস্তাব করা হয়েছে। এছাড়াও অসচ্ছল মুক্তিযোদ্ধাদের উন্নত আবাসন সুবিধা সৃষ্টির লক্ষ্যে সারা দেশে ১০ হাজার ফ্ল্যাট নির্মাণের পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। এটি বাজেটের বড় ইতিবাচক দিক। লক্ষণীয়, বর্তমান সরকারের শাসনামলে প্রতিটি বাজেটেই সামাজিক নিরাপত্তা খাত গুরুত্ব পেয়ে আসছে। অর্থমন্ত্রী এবারের বাজেটকে তার জীবনের শ্রেষ্ঠ বাজেট হিসেবে আখ্যায়িত করে আমাদের আশ্বস্ত করেছেন যে, নিত্যপণ্যের মূল্য বাড়বে না। বাজেট বাস্তবায়নে সরকারের সর্বোচ্চ দক্ষতার ব্যাপারেও আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন তিনি। মত-দ্বিমতের প্রকাশ এবং বিতর্ক ও আলোচনার মধ্য দিয়ে একটি গ্রহণযোগ্য সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়ার বিষয়টি গণতান্ত্রিক রীতিনীতিরই অংশ। স্বস্তিকর দিক হলো সর্বসম্মত ভাবেই বাজেট পাস হয়েছে। বাজেট পাস প্রক্রিয়ায় প্রাসঙ্গিক প্রশ্ন উত্থাপন ও তার জবাব প্রাপ্তির নিশ্চয়তা নিঃসন্দেহে ইতিবাচক দিক। এর ফলে মন্ত্রণালয়ের সক্রিয়তা যেমন বাড়বে, তেমনি অঙ্গীকার রক্ষায় সচেতনতারও প্রকাশ ঘটবে বলে আমরা আশাবাদী হতে পারি।
×