ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

ভাইব্রেটর মেশিনের পরিবর্তে বাঁশ

মির্জাগঞ্জে ৮ সেতু নির্মাণে ব্যাপক অনিয়ম

প্রকাশিত: ০৯:২৪, ১ জুলাই ২০১৭

মির্জাগঞ্জে ৮ সেতু নির্মাণে ব্যাপক অনিয়ম

স্টাফ রিপোর্টার, গলাচিপা ॥ পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জ উপজেলায় গ্রামীণ রাস্তায় ত্রাণ দফতরের ৮টি সেতু (কালভার্ট) নির্মাণে সীমাহীন দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। যথাযথ তদারকি না থাকায় ঠিকাদাররা তাদের ইচ্ছানুযায়ী নির্মাণ কাজ করছে। কোথাও প্রাক্কলন অনুযায়ী কাজ হচ্ছে না। ব্যবহার হচ্ছে নিম্নমানের নির্মাণ সামগ্রী। এমনকি সঠিক মাপও অনুসরণ করা হচ্ছে না। ইতোমধ্যে নির্মাণে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে এলাকাবাসী একটি সেতুর নির্মাণ কাজ বন্ধ করে দিয়েছে। বাকি সেতুগুলোর স্থায়িত্ব নিয়েও এলাকাবাসী নানান প্রশ্ন তুলেছে। সরেজমিন অনুসন্ধানে এলাকাবাসীর কাছ থেকে এসব অভিযোগ পাওয়া গেছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সকল অভিযোগ অস্বীকার করেছে। উপজেলা প্রকল্পবায়ন কর্মকর্তার দফতর সূত্রে জানা গেছে, বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচীর আওতায় ২০১৬-১৭ অর্থবছরে গ্রামীণ রাস্তায় সেতু/কালভার্ট নির্মাণ প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদফতর। প্রকল্পের আওতায় মির্জাগঞ্জ উপজেলার ৬ ইউনিয়নে ৮টি সেতু নির্মাণের জন্য ২ কোটি ৫৬ লাখ ৯২৪ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। এলাকাবাসীর অভিযোগ, প্রাক্কলন অনুযায়ী সেতু ঢালাইয়ের কাজে কোথাও মিকশ্চার মেশিন ব্যবহার করা হচ্ছে না। সনাতন পদ্ধতিতে কোদাল দিয়ে (হাতে মিশিয়ে) পাথর, বালু ও সিমেন্ট মিশ্রণে ঢালাই করা হচ্ছে। ফলে সেতুর কাজ সম্পন্ন হওয়ার আগেই মানসুরাবাদ মাদ্রাসা সংলগ্ন খালের ওপর নির্মাণাধীন সেতুর ওয়ালের বিভিন্ন স্থানে দেখা দিয়েছে ফাটল। এলাকাবাসীর চোখে বিষয়টি ধরা পড়লে তা সিমেন্টের প্রলেপ দিয়ে ঢেকে দেয়া হয়। ঢালাইয়ের সময় যাতে কংক্রিট মিশ্রণের মধ্যে বাতাস ঢুকে না যায় এ জন্য ভাইব্রেটর মেশিন ব্যবহার করার নিয়ম রয়েছে। অথচ ভাইব্রেটর মেশিনের কাজ করা হয়েছে বাঁশ দিয়ে। বাধ্য হয়ে এলাকাবাসী ওই সেতুর নির্মাণ কাজ বন্ধ করে দিয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েক ঠিকাদার ও এলাকাবাসীর অভিযোগ, তিনটি সেতু পিআইও নিজে ঠিকাদারদের সঙ্গে যৌথভাবে করেছেন। আর এ তিনটি সেতুর কাজ পুরোটাই দেখভাল করেছে পিআইও অফিসের পিয়ন সঞ্জয় মালী। ফলে সেতু তিনটি নির্মাণে চরম অনিয়ম ও দুর্নীতি হয়েছে। সরেজমিনে দেখা গেছে, ছৈলাবুনিয়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় সংলগ্ন দাসের ডাঙ্গা খালের ওপর সেতুটি নির্মাণে ব্যাপক অনিয়ম করা হয়েছে। ৩২ লাখ ৫২ হাজার ৬৫৩ টাকা ব্যয়ে ৪০ ফুট দৈর্ঘ্যরে সেতুর দু’পাশে ৪ ফুট দূরত্বে ১০টি করে মোট ২০টি রেলিং পিলার থাকার কথা। অথচ নির্মাণ করা হয়েছে ১৮টি। সেতুর বেজমেন্ট ১৬ ফুট প্রস্থ করার কথা কিন্তু করা হয়েছে ১২ ফুট। বেজমেন্টসহ সেতুর বিভিন্ন কাজের রড বাঁধাইয়ে সিডিউল মোতাবেক করা হয়নি বলে অভিযোগ করেছে এলাকাবাসী। ব্যবহার করা হয়নি প্রকল্প সাইনবোর্ড। সিডিউলে রয়েছে সেতুর বেজ ঢালাইয়ে নিচে গজারি অথবা মেহগনি কাঠ দিয়ে ক্ষেত্র বিশেষ ৮ থেকে ১০ ফুট গভীর পর্যন্ত পাইল করতে হবে। এ নিয়ম মানা হয়নি। বেজ নির্মাণে দুই স্তরে রডের পরিবর্তে করা হয়েছে এক স্তর। স্থান বিশেষে সেতুগুলোর উচ্চতা ২০ ফুটের পরিবর্তে মাত্র ১৩-১৪ ফুট করা হয়েছে। রড দিয়ে বাঁধা জালগুলো নির্দিষ্ট মাপ অনুসরণ করা হয়নি। মির্জাগঞ্জ সদর ইউনিয়নের মানসুরাবাদ মাদ্রাসা সংলগ্ন খালের ওপর নির্মাণাধীন সেতুটির ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান শেলিনা এন্টারপ্রাইজের নিয়োজিত শ্রমিকরা জানায়, মিকশ্চার মেশিন ও ভাইব্রেটর মেশিন না থাকায় তারা হাতে কাজ করেছে। মজিদবাড়িয়া ইউনিয়নের চালিতাবুনিয়া গ্রামের খালের ওপর নির্মাণাধীন অপর একটি সেতু নির্মাণেও পাইলের কাজ করা হয়নি। উইনিংওয়াল লম্বায় ৫২ ফুটের পরিবর্তে করা হয়েছে ৪৮ ফুট। কাটাবল ৩ ফুটের জায়গায় করা হয়েছে দেড় ফুট। এলসি পাথরের পরিবর্তে ব্যবহার হয়েছে মিক্স পাথর। বেজে রড ব্যবহার করা হয়েছে সিডিউলের চেয়ে ৪ ইঞ্চি ফাঁকা। সেতু নির্মাণ কাজে এসব দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ অস্বীকার করে মির্জাগঞ্জ উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা দেলোয়ার হোসেন বলেন, জুন মাসে কাজের অনেক চাপ তাই মিকশ্চার মেশিন পাওয়া যায়নি। আর মানসুরাবাদ সেতুটির ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মালিকের অনুরোধে কাজ দেখাশোনা করেছি।
×