ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

‘অতীতের যে কোন সময়ের চেয়ে সামরিক দক্ষতায় এগিয়ে নয়াদিল্লী’

সৈন্যদের প্রস্তুতি দেখতে সিকিম সীমান্তে ভারতীয় সেনাপ্রধান

প্রকাশিত: ০৫:৫৪, ১ জুলাই ২০১৭

সৈন্যদের প্রস্তুতি দেখতে সিকিম সীমান্তে ভারতীয় সেনাপ্রধান

ভারতের সিকিম-ভুটান-তিব্বত এই ত্রিদেশীয় সংযোগস্থলের সীমান্ত এলাকায় ভারত ও চীন বিপুল সৈন্য সমাবেশ করে একেবারে মুখোমুখি অবস্থায় রয়েছে। প্রত্যন্ত এ অঞ্চলে দুটি দেশ তাদের রণসম্ভারের মজুদ অব্যাহতভাবে বাড়িয়ে দেয়ায় দু’দেশের মধ্যে তীব্র উত্তেজনা বিরাজ করছে, যা গত কয়েক দশকে দৃষ্টিগোচর হয়নি। Ñটাইমস অব ইন্ডিয়া। এদিকে, এ এলাকায় ভারতীয় অবস্থান ও সৈন্য প্রস্তুতি স্বচক্ষে দেখার উদ্দেশে শুক্রবার ভারতীয় সেনাপ্রধান জেনারেল বিপিন রাওয়াত সেখানে যান। তিনি গ্যাংটকের ১৭ পার্বত্য ডিভিশনের ও কালিংপনের ২৭ পার্বত্য ডিভিশনের সদর দফতর পরিদর্শন করেন। ভারতীয় পক্ষ থেকে সেনাপ্রধানের এ সফরকে রুটিনওয়ার্ক বলে চিহ্নিত করা হয়েছে। বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে, উভয়পক্ষের প্রত্যেকে তিন থেকে চার হাজারের মতো সেনা সমাবেশ ঘটিয়েছে। ভারতীয় পক্ষ থেকে তাদের সৈন্য সংখ্যা ও প্রস্তুতি নিয়ে কোনরূপ মন্তব্য করা না হলেও বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, ত্রিদেশীয় সংযোগস্থলে রণকৌশলের দিক থেকে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ স্থান ডোকা-লা এলাকায় আগে থেকে অবস্থানরত সৈন্যদের সঙ্গে অতিরিক্ত সৈন্য মোতায়েনের ফলে সার্বিক নিরাপত্তা পরিস্থিতি ভারতীয় বাহিনীর অনুকূলেই রয়েছে। তদ্সত্ত্বেও ভারতীয় বাহিনী সীমান্তে উত্তেজনা হ্রাসের লক্ষ্যে আলোচনা বৈঠক বা ফ্ল্যাগ মিটিংয়ের আহ্বান জানালে চীনা পক্ষ নানা অজুহাতে তা এড়িয়ে যায়। প্রথমত তারা যুক্তি দেখায় যে, কোন জুনিয়র সেনা কর্মকর্তার সঙ্গে তারা বৈঠকে বসবে না। পরবর্তীতে গত ২০ জুন ভারতের এক ব্রিগেডিয়ার এবং চীনের এক মেজর জেনারেলের উপস্থিতিতে সে বৈঠক হয়। কিন্তু কোন ধরনের সমঝোতা ছাড়াই বৈঠকটি শেষ হয়। ডোকা-লা এলাকা ভারতীয় সীমান্তের মধ্যে পড়লেও চীন সেখানে রাস্তা নির্মাণের পরিকল্পনা করছে এবং সেনা তৎপরতা জোরদার করছে বলে জানা গেছে। এদিকে, ভুটান ও সিকিম সীমান্তের কাছে দোকলাম এলাকায় রাস্তা নির্মাণের কাজ শুরু করায় চীনের কাছে প্রতিবাদ জানিয়েছে। কেননা দোকলাম সিকিমের কাছে হলেও এটি ভুটানের মালিকানাধীন একটি বিতর্কিত ভূখ-। পক্ষান্তরে চীন একটি প্রাচীন মানচিত্র অনুযায়ী এটিকে তাদের ভূখ- বলে দাবি করে আসছে। তাই ভুটানের দাবি হচ্ছে, আন্তর্জাতিকভাবে এটির গ্রহণযোগ্য সমাধান না হওয়া পর্যন্ত ভূখ-টিতে ‘স্ট্যাটাস কো’ অবস্থায় বজায় রাখা হোক। চীনের কাছে সীমান্ত বিরোধ নিয়ে ভুটানের এ দাবিকে ভারত উস্কে দিয়েছে বলে গত বুধবার চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র লু ক্যাং উল্লেখ করেন। তিনি আরও বলেন, দোকলাম ভুটান বা ভারত কারও নয়, এটি চীনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। এদিকে, চীন তিব্বত থেকে ভুটান সীমান্ত পর্যন্ত ভারি যানবাহন ও ট্যাঙ্ক চলাচলের উপযোগী বেশ কয়েকটি মজবুত রাস্তা নির্মাণ করে ফেলেছে। ভারতের উত্তরাঞ্চলে চীনের এ ধরনের সামরিক তৎপরতার তাৎক্ষণিক কারণ খুঁজে পাওয়া না গেলেও অনেকে মনে করেন, সম্প্রতি ভারতীয় সেনাপ্রধান জেনারেল বিপিন রাওয়াতের একটি মন্তব্য চীনকে শঙ্কিত করে তুলেছে। জেনারেল বিপিন রাওয়াত বলেন, ভারত অতীতের যে কোন সময়ের চেয়ে সামরিক দক্ষতায় এগিয়ে রয়েছে। তারা এখন অভ্যন্তরীণ গোলযোগ দমনের পাশাপাশি যুগপৎভাবে দুটি দেশের (চীন ও পাকিস্তান) সঙ্গে যুদ্ধ চালিয়ে যেতে সক্ষম। এর জবাবে চীনা সামরিক বাহিনীর মুখপাত্র কর্নেল উ কিয়াং বলেন, এ ধরনের বাগাড়ম্বর চরম দায়িত্বজ্ঞানহীনতার পরিচয় দেয়। আমরা আশা করি ভারতীয় সেনাবাহিনীর ওই বিশেষ ব্যক্তি (বিপিন রাওয়াত) ইতিহাস (১৯৬২ সালের যুদ্ধ) থেকে শিক্ষাগ্রহণ করবেন এবং যুদ্ধ শুরুর জন্য হৈ-হল্লা করা থেকে বিরত হবেন। ভারতীয় সেনাপ্রধান সে দেশের রণপ্রস্তুতি অথবা সমরসম্ভার নিয়ে বেশ আত্মতুষ্টি নিয়েই হয়ত সে কথা বলেছেন। কেননা বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা গেছে, ভারত মহাশূন্যে সর্ববৃহৎ নভো খেয়াযান পাঠানো থেকে শুরু করে দেশীয় প্রযুক্তিতে সর্বাধুনিক ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের অধিকারী হয়ে গেছে। তাছাড়া দেশটি পার্বত্য এলাকায় অত্যন্ত কার্যকর দূরপাল্লার কামান (যা ওজনে অনেকটা হালকা) বিদেশ থেকে সংগ্রহ করেছে। এছাড়াও সেনাবাহিনীকে পার্বত্যাঞ্চলের বিপদসঙ্কুল ও বরফাচ্ছাদিত এলাকার যুদ্ধ প্রস্তুতিতেও দক্ষ করে গড়ে তোলা হয়েছে। এসব ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, ইসরাইলসহ অন্যান্য মিত্র দেশের চৌকস সমরনায়কদের অধীনে ভারতীয় বাহিনীর প্রশিক্ষণ দেশটিকে সমরশক্তিতে বলীয়ান ও আত্মবিশ্বাসী করে তুলেছে। এ প্রেক্ষিতে চীন যদি ১৯৬২ সালে অপ্রস্তুত ভারতের ওপর আকস্মিক হামলার ফলাফলকে নিজেদের বিজয় ভাবা শুরু করে তবে তা হবে অর্বাচীনতা। কারণ ১৯৬২ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত যেমন পৃথিবীর অনেক পরিবর্তন ঘটেছে, ভারতও নিজেকে দেশ-বিদেশে গ্রহণযোগ্য ও সুদৃঢ় ভিত্তির ওপর স্থাপন করেছে। বিদেশী পরাশক্তিগুলোর কাছে ভারসাম্য বজায় রেখে কিভাবে কী ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে হয় প্রধানমন্ত্রী মোদি তার একটি প্রকৃষ্ট উদাহরণ। তাই ১৯৬২ সালের যুদ্ধ নিয়ে চীনের তির্যক মন্তব্য কার্যক্ষেত্রে বুমেরাং হয়ে দেখা দিতে পারে বলে বিশ্লেষকরা মনে করেন।
×