ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

রেলে ১৬শ’ জনবল নিয়োগে গড়িমসি বছরজুড়ে

প্রকাশিত: ০৫:৪১, ১ জুলাই ২০১৭

রেলে ১৬শ’ জনবল নিয়োগে গড়িমসি বছরজুড়ে

মাকসুদ আহমদ, চট্টগ্রাম অফিস ॥ রেলে চলমান ১৬শ’ জনবল নিয়োগে প্রায় বছর পার হলেও গড়িমসির কারইে এখনও বাস্তবায়ন হচ্ছে না নিয়োগ। ফলে নিয়োগ প্রার্থীরা হতাশ হয়ে পড়েছে। অভিযোগ রয়েছে, বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী থেকে শুরু করে রেল কর্মকর্তাদের তৈরি করা তালিকা এমনকি নেতাকর্মীদের তালিকা নিয়ে হিমশিম খাচ্ছে রেলমন্ত্রী এমনকি কমিটির আহ্বায়কসহ সদস্যরা। এদিকে, ২০ ক্যাটাগরিতে প্রায় ১৬শ’ জনবল নিয়োগে গঠিত ১৫ কমিটির যোগ্যতা, অভিজ্ঞতা ও সংশ্লিষ্টতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। অর্থ বাণিজ্য ও স্বজনপ্রীতির আশ্রয় নিয়ে এসব কমিটি গঠিত হওয়ায় রেলের উভয় জোনের কর্মকর্তাদের মাঝে চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে। চলমান এ নিয়োগ প্রক্রিয়ায় সরকারী নিয়োগ বিধিমালা মেনে চলা তো দূরের কথা ২০টি ক্যাটাগরিতে অনুমোদিত ১৫ কমিটির বেশির ভাগ সদস্য একাধিক কমিটিতে বিদ্যমান থাকায় প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে নিয়োগ প্রক্রিয়া। এসব কমিটির মধ্যে সদস্য সচিব ছাড়াও এমনও সদস্য রয়েছেন যারা কোনভাবেই নিয়োগ কমিটিতে যুক্ত হওয়ার সুযোগ নেই বলে দাবি করেছেন পূর্বাঞ্চলীয় কয়েক কর্মকর্তা। অভিযোগ রয়েছে, নির্বাচনী কমিটি (আর)-০৭ এর কমিটি নির্ধারণে সংশোধিত দফতরাদেশ দেয়া হয়েছে গত বছরের ১ নবেম্বর। এ সংশোধনী দফতরাদেশ অনুযায়ী পূর্ববর্তী কমিটির আহ্বায়ক সিওএস-পূর্ব-চট্টগ্রাম, সদস্য সচিব এসপিও (পূর্ব)-চট্টগ্রাম, এক্সইএন-পিএন্ডডি (পূর্ব), ডেপুটি সিওপিএস (পূর্ব) এবং এজিএম (পশ্চিম) রাজশাহীকে সদস্য করা হয়েছে। কিন্তু সংশোধিত এ দফতরাদেশে এক্সইএন-পিএন্ডডি (পূর্ব) কে পরিবর্তন করে ডিএন-২/চট্টগ্রামকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। প্রশ্ন উঠেছে কি কারণে কমিটির সদস্য পরিবর্তন করা হয়েছে তা সহকারী জিএম ও সিনিয়র ওয়েলফেয়ার অফিসার (পূর্ব) আমজাদ হোসেনের পক্ষ থেকে কোন বিশ্লেষণ দেয়া হয়নি। তবে মহাব্যবস্থাপকের (পূর্ব) পক্ষে তিনি স্বাক্ষর করেছেন। আরও অভিযোগ রয়েছে, ১৮০টি ট্রেড এপ্রেনটিস পদে নিয়োগের বিপরীতে যে কমিটি নির্ধারণ করা হয়েছিল তা গত বছরের ২ নবেম্বর পরিবর্তন করে দেয়া হয়েছিল। সংশোধিত এ কমিটিতে সিনিয়র ওয়েলফেয়ার অফিসার (পূর্ব) আমজাদ হোসেনের পরিবর্তে এ্যাসিস্ট্যান্ট জেনারেল ম্যানেজার (পূর্ব) ও দায়িত্বপ্রাপ্ত সেই আমজাদ হোসেনকেই তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। প্রশ্ন উঠেছে, শুধু পদের পরিবর্তন দেখিয়ে একই ব্যক্তিকে পুনরায় কমিটিতে পদায়নের হেতু কী? এদিকে, নবনিয়োগ ২০১৬ এর আওতায় নির্বাচনী কমিটি (আর) ১৫ অনুযায়ী ১০৩৮ গেট কিপার নিয়োগে আহ্বায়ক অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী-ট্রাক (পূর্ব), সদস্য সচিব সিনিয়র ওয়েলফেয়ার অফিসার (পূর্ব), ডেপুটি সিওপিএস (পূর্ব), ডিভিশনাল ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার (চট্টগ্রাম) ও এমই-সদর (পশ্চিম) রাজশাহীকে সদস্য করা হয়েছে। কিন্তু ২০১৬ সালের ১৪ ডিসেম্বর এ দফতরাদেশ পরিবর্তিত হয়ে সদস্য হিসেবে ডেপুটি ডিরেক্টর পাবলিক রিলেশন (পূর্ব) কে সংযুক্ত করা হয়েছে। কিন্তু কোন কারণ উল্লেখ করা হয়নি। এ বিষয়ে রেল মন্ত্রণালয়ের জনপ্রশাসন-১ ও ডিজির দফতরের একাধিক কর্মকর্তা ক্ষোভের সঙ্গে জানিয়েছে উভয় অঞ্চলের জিএমদ্বয়কে কমিটি নির্ধারণের ক্ষমতা দেয়া হয়েছিল। কিন্তু কমিটির সদস্য সচিব থেকে শুরু করে সদস্য পর্যন্ত এমন কিছু কর্মকর্তার নাম অন্তর্ভুক্ত হয়েছে যারা নিয়োগ কমিটিতে নিযুক্ত হওয়ার কোন বিধান নেই। এমনকি সংশ্লিষ্ট নয় এমন কিছু কর্মকর্তা কমিটির দায়িত্বে রয়েছেন যারা প্রার্থীদের পদ সংশ্লিষ্ট না হওয়ায় প্রশ্ন করার মতো যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতা নেই। রেল মন্ত্রণালয়ের জনপ্রশাসন-১ ও ডিজির দফতরে প্রেরিত তথ্যের ভিত্তিতে জানা গেছে, গত বছরের সেপ্টেম্বর থেকে দীর্ঘ ১০ মাস ধরে এ নিয়োগ প্রক্রিয়া চালু রয়েছে। ২০টি ক্যাটাগরিতে ১৫৬৪টি শূন্য পদের বিপরীতে লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষার ভিত্তিতে রেলের পূর্ব ও পশ্চিমাঞ্চলে প্রায় ১৫টি কমিটি নিয়োগ প্রক্রিয়া চালু রেখেছে। নির্বাচনী কমিটি (আর)-০৩ অনুযায়ী সহকারী কেমিস্ট ১টি, লাইব্রেরিয়ান ১টি, ফুয়েল চেকার ১টি, সহকারী মৌলভী ২টি, রিভেটার গ্রেড-২-এর ৯টি, টিকেট ইস্যুয়ার ৫টি, টেপ রিডার ১টিসহ মোট ২০ জন নিয়োগের কমিটিতে থাকা এজিএম (পশ্চিম) এবং ডিপিও (পূর্ব) এর কোন সংশ্লিষ্টতা নেই। নির্বাচনী কমিটি (আর)-০৪ অনুযায়ী ফিল্ড কানুনগো ৪টি ও ৮টি আমিন পদের কমিটিতে আহ্বায়ক ছাড়া বাকিরা কেউ সংশ্লিষ্ট বিভাগের নয়। ফলে নিয়োগ প্রক্রিয়া প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। নির্বাচনী কমিটি (আর)-০৫ অনুযায়ী আয়া ১৯টি, ওয়েটিং রুম আয়া ৪টি, ল্যাম্পম্যান ২টি, কুরিয়ার ৫টি, সান্টিং পোর্টার ২টিসহ মোট ৩২ জনবল নিয়োগে নির্বাচনী এ কমিটির সদস্যরা একেকটি পদের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। কেউ পূর্ণাঙ্গভাবে প্রত্যেকটি পদের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নয়। নির্বাচনী কমিটি (আর)-০৬ অনুযায়ী গুডস সহকারী গ্রেড-২ পদের বিপরীতে ১৩টি ও ৩৬টি ট্রেন নাম্বার ট্রেকার পদে জনবলের নির্বাচনী কমিটি হিসেবে সদস্য সচিব এবং বাকি দুই সদস্য এ পদ সংশ্লিষ্ট দফতরের নয়। ফলে কোন মানদ-ে নিয়োগ কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। নির্বাচনী কমিটি (আর)-০৭ অনুযায়ী ২১টি নিরাপত্তা প্রহরীর পদে নির্বাচনী কমিটির সদস্য সিআরএনবি-ঢাকা ছাড়া আহ্বায়ক ও সদস্য সচিবসহ বাকি ৪ জন এ পদ সংশ্লিষ্ট দফতরের নয় বলে অভিযোগ উঠেছে। নির্বাচনী কমিটি (আর)-০৮ অনুযায়ী ১৮০টি ট্রেড এপ্রেনটিস পদের কমিটিতে মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার-সদর-পূর্ব ছাড়া আহ্বায়ক, সদস্য সচিব ও বাকি দুই সদস্য এ পদের প্রার্থী নির্বাচনে এ পদ সংশ্লিষ্ট দফতরের নয় বলে নিয়োগ প্রক্রিয়া প্রশ্নবিদ্ধ। নির্বাচনী কমিটি (আর)-০৯ অনুযায়ী ২১২টি পরিচ্ছন্নতাকর্মী নিয়োগের বিপরীতে কমিটির আহ্বায়ক ডিভিশনাল মেডিক্যাল অফিসার ঢাকা ছাড়া সদস্য সচিব ও তিন সদস্য এ পদের বিপরীতে পরীক্ষা গ্রহণে এ পদ সংশ্লিষ্ট দফতরের নয় । ফলে কমিটি কিভাবে নির্ধারিত হলো, নাকি এ ক্ষেত্রে স্বজনপ্রীতির আশ্রয় নেয়া হয়েছে তা এখন প্রশ্নবিদ্ধ।
×