ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব দেবে বিএনপি

প্রকাশিত: ০৫:৩৫, ১ জুলাই ২০১৭

সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব দেবে বিএনপি

শরীফুল ইসলাম ॥ একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি ক্রমেই জোরদার করছে বিএনপি। তবে এ নির্বাচন যাতে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে সম্পন্ন হয় সে জন্য সুনির্দিষ্ট কিছু প্রস্তাব তৈরি করছে দলটি। আগস্টে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সঙ্গে সংলাপকালে লিখিতভাবে এসব প্রস্তাব তুলে ধরবে বিএনপি। সূত্র মতে, সুষ্ঠুভাবে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য নির্বাচন কমিশনের কাছে দিতে ইতোমধ্যেই বিএনপি যেসব প্রস্তাব তৈরি করেছে তার মধ্যে রয়েছে নির্বাচন কমিশনকে সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ থেকে দায়িত্ব পালন করা, নিবন্ধিত সকল রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা, সংসদীয় আসনের সীমানা পুনঃনির্ধারণ অর্থাৎ অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচন যেভাবে হয়েছে সেভাবে সীমানা নির্ধারণ করা, সবার জন্য সমান সুযোগ অর্থাৎ লেবেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করা, নির্বাচনকালে সেনা মোতায়েন করা, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও প্রশাসনকে নিরপেক্ষ রাখা, নির্বাচনের অন্তত এক মাস আগে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও প্রশাসনের সকল স্তরে রদবদল করা, আরপিও (গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ) সংশোধন, প্রিসাইডিং অফিসারসহ ভোট কেন্দ্রে দায়িত্ব পালনরত সকল কর্মকর্তাকে নির্ভয়ে দায়িত্ব পালনের নিশ্চয়তা প্রদান, ভোট কেন্দ্রে সকল প্রার্থীর এজেন্টের উপস্থিতি নিশ্চিত করা, দেশী-বিদেশী পর্যবেক্ষকদের জন্য ভোটকেন্দ্র পরিদর্শনের অবাধ সুযোগ রাখা, ইভিএম পদ্ধতিতে ভোট গ্রহণ না করা ও রাজনৈতিক দলের নেতাদের মামলার নামে হয়রানি না করা। জানা যায়, বিএনপির ক’জন সিনিয়র নেতা ও এ দল সমর্থক ক’জন বুদ্ধিজীবী মিলে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু করতে প্রস্তাব তৈরির কাজ করছেন। আর তাদের সহযোগিতা করছেন অতীতে নির্বাচন কমিশনে কাজ করার অভিজ্ঞতা রয়েছে এমন ক’জন সাবেক আমলা। এ নিয়ে ইতোমধ্যেই তারা বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার সঙ্গে একাধিকবার পরামর্শ করেছেন। নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকারের দাবিতে বিএনপি সোচ্চার থাকলেও এ দাবি আদায় না হলেও যাতে নির্বাচন কমিশনের মাধ্যমে সুষ্ঠু নির্বাচনের নিশ্চয়তা পাওয়া যায় সে লক্ষেই দলীয় প্রস্তাবগুলো তৈরি করা হচ্ছে। নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে সংলাপে যাওয়ার আগেই এসব প্রস্তাব তৈরি করা হবে বলে জানা গেছে। এসব প্রস্তাব নির্বাচন কমিশনে দেয়ার পর সংবাদ সম্মেলন করে মিডিয়ার সামনেও তুলে ধরা হবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, যেসব দেশে ক্ষমতাসীন সরকারের অধীনে নির্বাচন হয় সেসব দেশের নির্বাচন কমিশন সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য কিভাবে কাজ করেন সেসব তথ্যই বিএনপি সংগ্রহ করছে। এসব তথ্য পর্যালোচনা করে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে যেগুলো প্রযোজ্য সেগুলো পয়েন্ট আকারে লিপিবদ্ধ করতে দলীয় কিছু নেতা কাজ করছেন। নির্বাচন কশিনের কাছে দেয়ার জন্য যেসব প্রস্তাব তৈরি করা হচ্ছে সেখানে এগুলোও লিপিবদ্ধ করা হচ্ছে। নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা যায়, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ১৬ জুলাই রোডম্যাপ প্রকাশ করা হবে। এ রোডম্যাপ অনুসারে প্রথমেই সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে সংলাপ করবে ইসি। ৩০ জুলাই এ সংলাপ অনুষ্ঠিত হবে। এরপর গণমাধ্যম ও সাবেক নির্বাচন কমিশনারদের সঙ্গে সংলাপ করবে ইসি। সাবেক নির্বাচন কমিশনারদের সঙ্গে ৩ আগস্ট ও গণমাধ্যমের সঙ্গে ১৮ আগস্ট সংলাপ হবে। আর ২৫ আগস্ট থেকে থেকে ২ অক্টোবর পর্যন্ত ৪০টি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংলাপ করবে নির্বাচন কমিশন। এর মধ্যে আগস্টের শেষ দিকেই বিএনপির সঙ্গে ইসির সংলাপ হবে বলে জানা গেছে। সবার সঙ্গে সংলাপ শেষে সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য যেসব প্রস্তাব বা সুপারিশমালা পাওয়া যাবে তা ১৮ নবেম্বর খসড়া হিসেবে প্রকাশ করা হবে। আর ১৮ ডিসেম্বর তা চূড়ান্তভাবে প্রকাশ করা হবে। সংবিধান অনুযায়ী ২০১৯ সালের ২৮ জানুয়ারির আগের ৯০ দিনের মধ্যে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। ২০১৮ সালের ৩১ অক্টোবরের পর শুরু হবে একাদশ সংসদ নির্বাচনের সময় গণনা। একাদশ জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে গত ২৩ মে নির্বাচনী রোডম্যাপের খসড়া প্রকাশ করে নির্বাচন কমিশন। খসড়া রোডম্যাপে রাজনৈতিক দলসহ সুশীল সমাজ ও গণমাধ্যম প্রতিনিধিদের সঙ্গে সংলাপ, আইন সংস্কার, সংসদীয় আসনের পুনর্বিন্যাস, নতুন রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন, ভোটার তালিকা হালনাগাদ, একাদশ জাতীয় নির্বাচনের জন্য ভোট কেন্দ্র নির্ধারণ এবং নির্বাচনী কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণসহ বিভিন্ন বিষয় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। ইতোমধ্যে ২৫ জুলাই থেকে ভোটার তালিকা হালনাগাদের সময়সূচীও ঘোষণা করা হয়েছে। আগস্টের ৯ তারিখ পর্যন্ত ভোটার তালিকা হালনাগাদ করা হবে। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে সাধারণ মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে ইতোপূর্বে ভিশন-২০৩০ ঘোষণা করেছে বিএনপি। শীঘ্রই নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকারের রূপরেখা ঘোষণা করবে দলটি। ইতোমধ্যেই দলের কিছু সিনিয়র নেতা ও জাতীয়তাবাদী বুদ্ধিজীবীদের সহায়তায় সহায়ক সরকারের রূপরেখার খসড়া তৈরি করা হয়েছে। এটি প্রকাশের আগেই দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠক করে তা চূড়ান্ত করা হবে বলে জানা গেছে। আর সহায়ক সরকারের রূপরেখা প্রকাশের পর সারাদেশে গণসংযোগ করে খালেদা জিয়াসহ বিএনপির সিনিয়র নেতারা এ বিষয়ে জনমত তৈরি করার পরিকল্পনা করেছে। বিএনপি নেতাকর্মীরা মনে করছেন নির্বাচন কমিশন মোটামুটি নিরপেক্ষ থাকলেই একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দল ভাল ফল করবে। তবে দলের কোন কোন নেতার বিরুদ্ধে স্পর্শকাতর মামলা থাকায় তাদের শেষ পর্যন্ত নির্বাচনের অযোগ্য ঘোষণা করা হয় কি না এমন আশঙ্কা আছে। অবশ্য এ জন্য দলীয় হাইকমান্ডের আগাম প্রস্তুতিও রয়েছে। এরই অংশ হিসেবে ৩০০ আসনে নির্বাচনের প্রার্থী বাছাইয়ের ক্ষেত্রে একটি কৌশলও গ্রহণ করা হয়েছে। এ কৌশলের অংশ হিসেবে সম্ভাব্য প্রার্থী বাছাইয়ের সময় প্রতিটি সংসদীয় এলাকা থেকে ৩টি নাম রাখতে বলা হয়েছে। কোন কারণে ১ নম্বরে থাকা লোকটি নির্বাচন করতে না পারলে যাতে ২ নম্বরে থাকা লোকটি নির্বাচন করতে পারে। আর ২ নম্বরে থাকা ব্যক্তিও যদি নির্বাচন করতে না পারে তাহলে যেন ৩ নম্বরে থাকা ব্যক্তি নির্বাচন করতে পারে। এছাড়া নির্বাচন কশিনের সঙ্গে সংলাপকালে রাজনৈতিক মামলায় যেন কোন বিএনপি নেতাকে নির্বাচনকালে হয়রানি না করা হয় সে ব্যবস্থা করার প্রস্তাব দেয়া হবে। এদিকে নির্বাচন কমিশন রোডম্যাপের খসড়া প্রকাশ করার পর থেকেই বিএনপি একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেয়ার কথা জোরেশোরে উচ্চারণ করছে। রোজার মাসে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া নিজেই এ নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে দলীয় নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। এমনকি তিনি ধানের শীষে ভোট দেয়ার জন্য দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। আর খালেদা জিয়ার এ আহ্বানে সাড়া দিয়ে এবার ঈদে বিএনপির সর্বস্তরের নেতাকর্মীরা ব্যাপক গণসংযোগ করেছেন। খালেদা জিয়া নিজেই বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে জাঁকজমকভাবে বিদেশী কূটনীতিকসহ সর্বস্তরের মানুষের সঙ্গে ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময় করেছেন। শীঘ্রই দলের কেন্দ্রীয় নেতারা সারাদেশের জেলা-উপজেলা সফর কর্মসূচী শুরু করবেন বলেও জানা গেছে। এ ব্যাপারে জানতে চাওয়া হলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিএনপির একজন কেন্দ্রীয় নেতা জনকণ্ঠকে বলেন, বিএনপি একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি চালিয়ে যাচ্ছে। এ জন্য নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকারের দাবির পাশাপাশি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য নির্বাচন কমিশনে লিখিতভাবে জমা দিতে কিছু সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব তৈরি করা হচ্ছে। নির্বাচন কশিনের সঙ্গে সংলাপকালে এসব প্রস্তাব প্রধান নির্বাচন কমিশনারের কাছে দেয়া হবে।
×