ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

পদ্মা সেতুর দুই প্রান্তে দুই থানা হচ্ছে

প্রকাশিত: ০৫:৩১, ১ জুলাই ২০১৭

পদ্মা সেতুর  দুই প্রান্তে  দুই থানা হচ্ছে

মীর নাসিরউদ্দিন উজ্জ্বল, মাওয়া থেকে ফিরে ॥ পদ্মা সেতুর দু’প্রান্তে থানা হচ্ছে। প্রকল্পে এই দু’থানার নামকরণ করা হচ্ছে- পদ্মা সেতু উত্তর প্রান্ত থানা এবং পদ্মা সেতু দক্ষিণ প্রান্ত থানা। উত্তর প্রান্তের থানাটি হচ্ছে মাওয়া টোল প্লাজার পাশে। জাজিরা অংশের থানাটিও হবে পদ্মা সেতুর জাজিরা টোল প্লাজার কাছে। দু’থানার ডিজাইন একই রকম। ছয় তলা ফাউন্ডেশনে ভবনটি হবে নান্দনিক। তবে আপাতত চার তলা করা হচ্ছে। গত ডিসেম্বরে এই থানা ভবন দুটির কাজ শুরু হয়েছে। আগামী বছরের ফেব্রুয়ারির দিকে এই ভবন নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। এই ভবন দুটির প্রাক্কলন ব্যয় প্রায় ৩৭ কোটি টাকা। বিশাল এই সেতু চালু হলে নানা কারণেই পুলিশী কর্মকা-ের প্রয়োজন হবে। তাই এই থানা করা হচ্ছে। এই থানা ভবনের কাজটি সংযোগ সড়ক প্রকল্পের সঙ্গে সম্পৃক্ত করা হয়েছে। ইতোমধ্যেই নিরাপত্তা ও প্রকৌশলে সহযোগিতার জন্য সেনাবাহিনীর পুরো একটি ব্রিগেড মোতায়েন করা হয়েছে পদ্মার দুই পাশে। সেনাবাহিনীর জন্যও প্রয়োজনীয় অবকাঠামো করা হচ্ছে। মুন্সীগঞ্জের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জায়েদুল আলম পিপিএম জনকণ্ঠকে জানান, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালের অনুমোদনক্রমে এই নতুন থানা হচ্ছে। থানা ভবনের কাজ চলছে এখন পুরোদমে। অবকাঠামোর কাজ শেষে প্রয়োজনীয় অফিসার এবং ফোর্সকে পোস্টিং দেয়া হবে। সেতু চালু হওয়ার আগেই এই দু’থানার কার্যক্রম চালু হয়ে যাবে। নতুন থানা চালু হলে সেতু এবং আশপাশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে ভূমিকা রাখবে বলে তিনি জানান। বাংলাদেশের আব্দুল মোনেম লিমিটেড ও মালয়েশিয়াভিত্তিক এইচসিএম যৌথভাবে এই কাজ করছে। মাওয়া সংযোগ সড়কের মাওয়া ১৯৩ কোটি টাকা। এর ব্যয় বাড়ছে না। তবে ব্যয় বাড়ছে জাজিরা সংযোগ সড়ক প্রকল্পে। এই এ্যাপ্রোচে ব্যয় নির্ধারণ করা ছিল ১০৯৭ কোটি টাকা। বাজার মূল বৃদ্ধির কারণে বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়েছে ১৮০ কোটি টাকা। এছাড়া ফেরিঘাট মাওয়া থেকে শিমুলিয়ায় স্থানান্তরের ব্যয়ও এই প্রকল্পের সঙ্গে সমন্বয় হচ্ছে। শিমুলিয়ায় ফেরিঘাট স্থানান্তরে ব্যয় হয়েছে প্রায় ৪২ কোটি টাকা। এছাড়া থানা ভবনের জন্য প্রায় ৩৭ কোটি টাকা অতিরিক্ত খরচ। তাই ১০৯৭ কোটি টাকার স্থলে ১৩৫৫ কোটি টাকা করার প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। যেটি অনুমোদনের জন্য সরকারের পারসেচ কমিটিতে রয়েছে। পদ্মা সেতুর সংযোগ সড়ক এবং টোল প্লাজার কাজ সম্পন্ন হচ্ছে সবার আগে। পদ্মা সেতুর নির্বাহী প্রকৌশলী (সড়ক) সৈয়দ রজব আলী জানান, মাওয়া প্রান্তে এ্যাপ্রোচ রোড শতভাগ সম্পন্ন হয়েছে। জাজিরা প্রান্তে ৯৮ দশমিক ৫০ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। বাকি কাজও শীঘ্রই শেষ হওয়ার প্রক্রিয়া চলছে। এদিকে পদ্মায় সেতুর ভিত ক্রমেই মজবুত হচ্ছে। এ পর্যন্ত নদীতে ৬২টি বটম পাইল বসেছে। আর টপ পাইল বসেছে ৪২টি। ছয়টি করে টপ পাইল বসেছে ৩, ৪, ৫, ৩৭, ৩৮, ৩৯ ও ৪০ নম্বর পিলারে। ৬২টি বটম পাইলের মধ্যে এই ৭টি পিলারে ৬টি করে বটম পাইল ছাড়াও বাকি ২০টি পাইল বসেছে অন্য পিলারে। ৬, ৭, ৩৪, ৩৫ ও ৩৬ নম্বর পিলারে ৩টি করে এবং ৪১ নম্বর পিলারে ৫টি বটম পাইল বসেছে। এছাড়া মূল সেতুর ৪২ নম্বর পিলারে ১৬টি পাইল কংক্রিটি সম্পন্ন হয়েছে। ৪২ নম্বর পিলারে পাইলের কাজ শেষ হওয়ার পর এখন চলছে ক্যাপ কংক্রিটিংয়ের কাজ। এছাড়া ৩৭ ও ৩৮ নম্বর পিলারে ক্যাপ কংক্রিটিংয়ের কাজ চলমান রয়েছে। ৩৭ নম্বর পিলারের ক্যাপ কংক্রিটিংয়ের কাজ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে ৬ জুলাই। আর ৩৮ নম্বর পিলারে ক্যাপ কংক্রিটিংয়ের কাজ শেষ হচ্ছে ১৫ জুলাই। এই ক্যাপ কংক্রিটিং শেষ হলে হবে পিয়ার নির্মাণ। পিয়ারের উপরেই বসবে বিয়ারিং। এই বিয়ারিংয়ের উপরে বসবে সুপার স্ট্রাকচার (স্প্যান)। মাওয়ায় রাখা ৮টি স্প্যানের মধ্যে একটিতে রং করা চলছে এখনও। এটিই বসবে ৩৭ ও ৩৮ নম্বর পিলারে। এদিকে নতুন হ্যামারটি ৪১ নম্বর পিলারের পাইল ড্রাইভ করে চলছে। জাজিরা প্রান্তের ভায়াডাক্টের (সংযোগ সেতু) ১২৭টি পাইল স্থাপন হয়েছে। এখানে আরও বসবে ৬৬টি পাইল। জাজিরা প্রান্তে ১৯৩টিসহ দু’পাড়ে ভায়াডাক্টের ৩৬৫টি পাইল বসবে। এর মধ্যে মাওয়া প্রান্তের পাইল বসবে ১৭২টি। আগামী ১০ জুলাই থেকে মাওয়া প্রান্তে ভয়াডাক্টের কাজ শুরু হওয়ার কথা রয়েছে। পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজ এগিয়ে নেয়া হচ্ছে সাতটি ভাগে। মূল সেতু নির্মাণের দায়িত্বে আছে চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি লিমিটেড। চুক্তি অনুযায়ী ১২ হাজার ১৩৩ কোটি টাকায় ৪৮ মাসের মধ্যে তাদের কাজ শেষ করার কথা। সেই হিসেবে মূল সেতুর নির্মাণ কাজ শেষ হবে ২০১৮ সালের মে মাসে। ৮ হাজার ৭০৭ কোটি টাকায় নদী শাসনের জন্য চীনের সিনোহাইড্রো কর্পোরেশন লিমিটেডের সঙ্গে চুক্তি হয়। এই প্রকল্পটিও ৪৮ মাসের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা। বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদের পাস হওয়া ২০১৭-১৮ বছরের বাজেটেও পদ্মা সেতুর জন্য পর্যাপ্ত অর্থ বরাদ্দ রাখা হয়েছে। ঈদের ছুটি শেষে আজ শনিবার শ্রমিকরা কাজে যোগ দিচ্ছে। পদ্মা সেতুতে কর্মরত দেশী ৬০ শতাংশ শ্রমিককে ঈদের ছুটি দেয়া হয়েছিল। তবে ঈদের ছুটিতেও সেতুর কাজ চলমান ছিল। তবে এবার ঈদের ছুটিতে পদ্মা সেতু নির্মাণযজ্ঞ দেখতে আসে বিপুল সংখ্যক কৌতূহলী মানুষ। নিরাপত্তা বেস্টনি থাকা সত্ত্বেও দূর থেকেই দেখে গেছেন বাঙালীর এই বীরত্ত্বগাথা। সেতু হলে পাল্টে যাবে অর্থনীতি ॥ পদ্মা সেতু কেবল দেশের দক্ষিণ আর পূর্বাঞ্চলের সেতুবন্ধ হবে না, এই সেতু এশিয়ান হাইওয়ের রুট এএই-১ এর অংশ হিসেবেও ব্যবহার হবে। পদ্মা সেতু বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ যোগাযোগসহ দক্ষিণ এশিয়ার দেশসমূহের যোগাযোগের ক্ষেত্রে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনবে। পদ্মা সেতু চালু হলে দেশের আর্থিক প্রবৃদ্ধি এক দশমিক ২৩ শতাংশ বাড়বে বলে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে। এত বড় নির্মাণ কাজের সঙ্গে জড়িত থাকা বাংলাদেশী প্রকৌশলী ও প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য বড় একটি অভিজ্ঞতাও হবে; যা পরে কাজে লাগবে।
×