ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

হলি আর্টিজানে হামলা

কেমন আছেন নিহত এসি রবিউলের পরিবারের সদস্যরা?

প্রকাশিত: ০৫:৩১, ১ জুলাই ২০১৭

কেমন আছেন নিহত এসি রবিউলের পরিবারের সদস্যরা?

নিজস্ব সংবাদদাতা, মানিকগঞ্জ, ৩০ জুন ॥ মোহাম্মদ রবিউল করিম ওরফে কামরুল। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলায় অনার্স ও মাস্টার্স করে ৩০তম বিসিএসের মাধ্যমে পুলিশ বিভাগে যোগ দেন। গত বছর ১ জুলাই রাজধানীর গুলশান হলি আর্টিজানে জঙ্গী হামলায় নিহত হওয়ার আগ মুহূর্ত পর্যন্ত তিনি ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের সহকারী কমিশনারের (এসি) দায়িত্বে নিয়োজিত ছিলেন। তার প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে স্থানীয়ভাবে র‌্যালি, দোয়া মাহফিল ও স্মরণসভার আয়োজন করা হয়েছে নিজ গ্রামে। রবিউলের গ্রামের বাড়ি মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার কাটিগ্রামে। তার পিতা আব্দুল মালেক একটি বেসরকারী উন্নয়ন সংস্থায় চাকরিরত অবস্থায় ২০০৬ সালে মারা যান। পিতার অকাল মৃত্যুতে গোটা পরিবার পড়ে যায় বিপাকে। রবিউলের চাকরি হওয়ার পর পরিবারটি যখন ঘুরে দাঁড়িয়েছিল, ঠিক তখনই জঙ্গী হামলার সন্ত্রাসের ভয়াল থাবায় পরিবারটি আবার গভীর সঙ্কটে পড়ে যায়। রবিউলই ছিলেন পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। রবিউলের মা বৃদ্ধ করিমুন নেছা জানান, রবিউলের মৃত্যুর পর সরকারীভাবে প্রাপ্ত আর্থিক সহায়তা ব্যাংকে জমা আছে। ব্যাংক থেকে প্রাপ্ত ইন্টারেস্ট থেকে যা পাচ্ছি তাতে সংসার কোনরকমে চলে যাচ্ছে। ছোট ছেলে শামসুজ্জামান শামস ও রবিউলের স্ত্রী উম্মে সালমার একটি চাকরি হলেই আমরা বেঁচে যাই। তিনি বলেন, তার কনিষ্ঠপুত্র শামসুজ্জামান সামস উচ্চ শিক্ষিত। সে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলায় অনার্স ও মাস্টার্স (৩৫তম ব্যাচ) সম্পন্ন করেছে। অন্যদিকে রবিউলের স্ত্রী সাভার বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ভূগোল ও পরিবেশে অনার্স ও মাস্টার্স করেছে। সন্তান রবিউল দেশের জন্য প্রাণ দিয়েছে। কাজেই সরকারের উচিত তার স্ত্রী ও ছোট ভাইকে তাদের যোগ্যতা অনুযায়ী চাকরি দিয়ে পরিবারটির পাশে দাঁড়ানো। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ রবিউলের স্ত্রী উম্মে সালমাকে সেখানে প্রথম শ্রেণীর একটি পদে চাকরির আশ্বাস দিয়েছিল। ভিসি বলেছিলেন, গত বছরের সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাসের মধ্যে হবে। কিন্তু এক বছর অতিবাহিত হলেও তার চাকরি এখনও হয়নি। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এখনও আশ্বাস দিচ্ছেন বলে জানিয়েছেন উম্মে সালমা। রবিউলের স্ত্রী উম্মে সালমা বলেন, আট বছরের পুত্র সামি ও ১১ মাসের কন্যা রাইয়ানকে বাবার আদর্শে গড়ে তুলতে চান, তার সন্তানরা ভাল মানুষ হোক- এটাই তার প্রত্যাশা। যেমনটি প্রত্যাশা ছিল তাদের বাবা প্রয়াত রবিউলের। রবিউলের ভাই শামসুজ্জামান শামস জানান, ভাই মারা যাওয়ার পর ভাবী ভাইয়ের স্মৃতিকে আকরে ধরে আছেন। দিনের সবটা সময়ই ভাইকে আগলে রাখছেন তিনি। ভাবীকে যদি কোন কর্মক্ষেত্রে প্রবেশ করানো যেত তবে ভাইয়ের স্মৃতিগুলোকে ভুলে থাকার সুযোগ তৈরি হতো। আবদ্ধ জীবন থেকে মুক্তি ও আত্মর্নিভরশীল হওয়ার জন্য তার একটি চাকরির বিশেষ দরকার। এদিকে রবিউলের হাতে গড়া প্রতিষ্ঠান বিকনিং লাইট অর্গানাইজেশন অব ম্যানকাইন্ড এ্যান্ড সোসাইটি- বুমসের শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাকরা স্কুলের ভবিষ্যতের ব্যাপারে উদ্বিগ্ন। এ ব্যাপারে ওই বিদ্যালয়ের পরিচালক (প্রশাসন) জাহাঙ্গীর আলম জানান, স্কুলটি ছিল রবিউল এর স্বপ্ন। তার পরিবার, অন্যান্য সদস্যসহ বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ বিদ্যালয়টিকে রবিউলের পরিকল্পনা অনুসারে চালাতে ও সহায়তা দিতে অঙ্গীকার করেছেন। ২০১১ সালে রবিউল প্রতিবন্ধী শিশুদের জন্য এই স্কুলটি প্রতিষ্ঠা করেন। এখন এর শিক্ষার্থী সংখ্য ৪১। প্রতিষ্ঠার পর থেকে রবিউল ইউনিফর্ম, টিফিন খাদ্য, বই, স্টেশনারি এবং সরঞ্জাম এবং স্কুল-ভ্যানসহ স্কুলের শিক্ষার্থীদের সমস্ত খরচ বহন করতেন। শামসুজ্জামান শামস বলেন, তিনি শিক্ষার্থী এবং দরিদ্রদের জন্য ক্যাম্পাসে একটি আবাসিক ভবন এবং হাসপাতাল নির্মাণ করতে চেয়েছিলেন। গড়তে চেয়েছিলেন অসচ্ছল বৃদ্ধদের জন্য বৃদ্ধনিবাস। প্রতিষ্ঠানের তহবিলের জন্য একটি কৃষি প্রকল্প করার উদ্যোগ নিয়েছিলেন। রবিউল চাচার মালিকানাধীন ১৩৭ শতাংশ জমির ওপর একটি কলাবাগান এবং পুকুরে মাছ চাষ শুরু করেন। ২০০৭ সালে তিনি তার পিতার স্বপ্ন পূরণের জন্য তার গ্রামে নজরুল বিদ্যাশিরী নামের একটি কিন্ডারগার্টেন প্রতিষ্ঠা করেন। রবিউলের স্মৃতি ধরে রাখতে এবং এসব প্রতিষ্ঠানের কল্যাণে সমাজ যাতে আলোকিত হয় সেদিকে লক্ষ্য রেখে সরকার এবং সুশীল সমাজকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান প্রয়াত রবিউলের ছোট ভাই শামসুজ্জামান শামস।
×