ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ব্রাভোর হাতে স্বপ্নভঙ্গ রোনাল্ডোদের

প্রকাশিত: ০৬:৩৫, ৩০ জুন ২০১৭

ব্রাভোর হাতে স্বপ্নভঙ্গ রোনাল্ডোদের

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ নায়ক বললেও কম বলা হবে। ক্লাউডিও ব্রাভো যা করেছেন তা যেন রূপকথার গল্পকেও হার মানিয়েছে। তারকা এই গোলরক্ষক অনেকটা এক হাতে নিজ দেশ চিলিকে প্রথমবারের মতো ফিফা কনফেডারেশন্স কাপের ফাইনালে পৌঁছে দিয়েছেন। বুধবার রাতে রাশিয়ার কাজানের কাজান এ্যারানায় প্রথম সেমিফাইনালে ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়ন পর্তুগালের মুখোমুখি হয় কোপা আমেরিকার চ্যাম্পিয়ন চিলি। দুই মহাদেশের চ্যাম্পিয়ন দলের শ্রেষ্ঠত্বের লড়াইয়ে শেষ হাসি হেসেছে দক্ষিণ আমেরিকার সেরারা। নির্ধারিত ৯০ ও অতিরিক্ত ৩০ মিনিটসহ মোট ১২০ মিনিটের খেলা গোলশূন্য অমীমাংসিত ছিল। এরপর ভাগ্যনির্ধারণী টাইব্রেকারে পর্তুগালের প্রথম তিনটি শটই ফিরিয়ে দেন ব্রাভো। আর প্রথম তিনটি শটেই গোল করে চিলি। ফলে দু’টি করে শট বাকি থাকতেই ৩-০ গোলে জিতে ফাইনাল নিশ্চিত করেন সানচেজ, ভিদালরা। টানা দুই বছর কোপা আমেরিকার ফাইনালে উঠেও শিরোপা জয়ের স্বাদ পায়নি লিওনেল মেসির আর্জেন্টিনা। ফাইনালে হার মানতে হয়েছিল চিলির কাছে। এবার সেই চিলি কনফেডারেশন্স কাপে ধরাশায়ী করেছে মেসির চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডোর দেশকে। গ্রুপ পর্বের শেষ দুটি ম্যাচেই গোলের দেখা পেয়েছিলেন সি আর সেভেন। তার দারুণ নৈপুণ্যে ভর করেই পর্তুগাল এসেছিল সেমিফাইনালে। কিন্তু শেষ চারের লড়াইয়ে বল জালে পাঠাতে পারেননি এ সময়ের অন্যতম সেরা ফুটবলার। ২০১৫ ও ২০১৬ কোপার ফাইনালের পর ২০১৭ সালের কনফেডারেশন্স কাপের সেমিতে টাইব্রেকারে জিতলো চিলি। টানা তিনটি টাইব্রেকার জয়ের রেকর্ড এটি। অন্যদিকে টাইব্রেকারে পর্তুগীজদের মন্দভাগ্য বরাবরই। অবাক করা বিষয় হচ্ছে, পাঁচ বছর আগে ২০১২ সালের ইউরো চ্যাম্পিয়নশিপের সেমিফাইনালেও স্পেনের কাছে টাইব্রেকারে হেরেছিল পর্তুগাল। মজার বিষয় হচ্ছে, সেই ম্যাচের তারিখও ছিল ২৮ জুন। হারের ব্যবধান ছিল ৪-২। পাঁচ বছর পর ঠিক একইদিনে আরেকবার কাঁদতে হলো রোনাল্ডো, ন্যানিদের। কাজানে ম্যাচ শুরু হওয়ার ঠিক আগে ম্যানচেস্টার সিটির নতুন চুক্তিকৃত বার্নান্ডো সিলভা পায়ের ইনজুরিতে ছিটকে পড়েন পর্তুগাল দল থেকে। ডিফেন্ডার পেপে নিষেধাজ্ঞায় থাকায় সেন্টার ব্যাকে জেশে ফন্টের সঙ্গে ছিলেন ব্রুনো আলভেস। আক্রমণভাগে এসি মিলানের ২১ বছর বয়সী স্ট্রাইকার আন্দ্রে সিলভা ছিলেন রোনাল্ডোর সঙ্গী। কিন্তু চিলির শক্তিশালী রক্ষণভাগের বিপরীতে এই জুটি খুব একটা সুবিধা করতে পারেননি। অন্যদিকে চিলি কোচ এ্যান্টোনিও পিজ্জি বিশ্বচ্যাম্পিয়ন জার্মানির সঙ্গে ১-১ গোলে ড্র হওয়া ম্যাচটির দলের ওপরই আস্থা রাখেন। ম্যাচের শুরুতে দু’দলই গোলরক্ষকের নৈপুণ্যে রক্ষা পায়। ষষ্ঠ মিনিটে সানচেজের দারুণ একটি পাস থেকে এডুয়ার্ডো ভারগাসের শট আটকে দেন প্যাট্রিসিও। পরের মিনিটেই রোনাল্ডোর ক্রস থেকে আন্দ্রে সিলভা ব্রাভোকে পরাস্ত করতে ব্যর্থ হন। আরানগুইজ দুইবার চেষ্টা করেও চিলিকে গোল উপহার দিতে পারেননি। ভারসগাসের শক্তিশালী ভলি প্যাট্রিসিও কোনরকমে রক্ষা করেন। কাউন্টার এ্যাটাক থেকে রোনাল্ডোর শট ব্রাভো না আটকালে বিরতির পরপরই হয়ত পর্তুগাল এগিয়ে যেতে পারতো। অতিরিক্ত সময়ে অর্থাৎ ম্যাচের ১১৮ মিনিটে গোলবঞ্চিত হয় চিলি। প্রথমে সানচেজের শট সাইডপোস্টে লেগে ফিরে আসার পর ভিদালের ফিরতি শটও বারপোস্টে লেগে প্রতিহত হয়। এরপর খেলা গড়ায় টাইব্রেকারে। স্পট কিকে পর্তুগালের প্রথম তিন শ্যূটার রিকার্ডো কারেসমা, জোয়াও মোটিনহো ও ন্যানির তিনটি শটই আটকে দিয়ে চিলিকে ফাইনালের টিকেট উপহার দেন ম্যানচেস্টার সিটি গোলরক্ষক ব্রাভো। বিপরীতে আর্টুরো ভিদাল, চার্লস আরানগুইজ ও এ্যালেক্সিস সানচেজের শট ফেরাতে ব্যর্থ হন পর্তুগীজ গোলরক্ষক রুই প্যাট্রিসিও। এরপরও ম্যাচ শেষে ৩৪ বছর বয়সী ব্রাভো শিষ্যদের সতর্ক করে দিয়েছেন। তিনি বলেন, এই ফলাফল এবং যেভাবে সবাই খেলেছে তাতে আমরা সন্তুষ্ট। কিন্তু এখনও আমরা কিছুই জয় করতে পারিনি। রবিবার সেন্ট পিটার্সবার্গে ফাইনালে চিলির প্রতিপক্ষ হবে জার্মানি ও মেক্সিকোর মধ্যকার বিজয়ী দল। ব্রাভো এমন অতিমানবীয় পারফর্মেন্স নাকি চোট নিয়েই দেখিয়েছেন। কাফ মাসলের চোটে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে ম্যাচ ছাড়া আর কোন ম্যাচেই মূল একাদশে ছিলেন না। সেমির মতো গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে একাদশে ফিরেই নিজের জাতটা আরেকবার মনে করিয়ে দিয়েছেন ম্যানসিটির গোলরক্ষক। ব্রাভো বলেন, আমি খুবই নিয়ন্ত্রিত একজন মানুষ। চোটের কারণে স্বাভাবিক খেলাটা খেলতে পারিনি। চোট নিয়ে এমন খেলতে পারাটাও যে গর্বের তা নিজেও মানছেন চিলিয়ান চীনের প্রাচীর। তবে সন্তুষ্টির ঢেঁকুর না তুলে ফাইনালের দিকে দৃষ্টি তার। বলেন, যেভাবে খেলেছি, ম্যাচটা নিজেদের দিকে টেনে এনেছি। তাতে আমরা খুশি। তবে এখনই সব শেষ নয়। ফাইনালটা তো বাকি। চিলির কোচ জুয়ান এ্যান্টোনিও পিজ্জি বলেন, এই দলকে নিয়ে আমি দারুণ গর্বিত। ব্রাভো পুরো ম্যাচে দারুণ কতগুলো বল রক্ষা করেছে যা আমাদের ম্যাচে টিকিয়ে রেখেছিল। খেলোয়াড়রা কোথায় শট নিচ্ছে তা চিন্তা করার দক্ষতা তার আছে। এখন আমাদের সামনে প্রতিপক্ষ যেই আসুক না কেন সেটা কোন বিষয় নয়। আমাদের এখন একটাই লক্ষ্য ফাইনালে জয় পাওয়া।
×