ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

লুটপাটের জন্যই বিশাল ঘাটতির বাজেট পাস ॥ রিজভী

প্রকাশিত: ০৬:২৬, ৩০ জুন ২০১৭

লুটপাটের জন্যই বিশাল ঘাটতির বাজেট পাস ॥ রিজভী

স্টাফ রিপোর্টার ॥ লুটপাটের জন্যই জাতীয় সংসদে বিশাল ঘাটতির বাজেট পাস করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেন, গণবিরোধী এ বাজেটে উন্নয়ন খাতে যে ব্যয় ধরা হয়েছে তার বেশিরভাগই লুটপাট হবে। বৃহস্পতিবার বিকেলে নয়াপল্টন বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির পক্ষ থেকে তিনি এ অভিযোগ করেন। রুহুল কবির রিজভী বলেন, সাধারণ মানুষের ওপর অতিরিক্ত কর চাপিয়ে রাজস্ব আয় নির্ভর বাজেট হলো গরিব মারার বাজেট। কারণ রাজস্ব আয় যেসব খাত থেকে ধরা হয়েছে তা গরিবের পকেট কেটেই আদায় করা হবে। বাজেটে যে বিশাল অংকের ঘাটতি দেখানো হয়েছে তা পূরণ করা অসম্ভব। আবার বাজেটে যে কাল্পনিক প্রবৃদ্ধি দেখানো হয়েছে তাও বাস্তবসম্মত নয়। বিশ্বব্যাংক বিষয়টি নিয়ে আগেই বলেছেন ৭ দশমিক ৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধি কাল্পনিক। যা বাস্তবের সঙ্গে কোন মিল নেই। সুতরাং এক কথায় বলা যায় গরিব মারার এ বিশাল ঘাটতির বাজেট অলীক এবং জনগণকে ধোঁকাবাজির শামিল। রিজভী বলেন, জাতীয় সংসদে ২০১৭-১৮ অর্থবছরের জন্য ৪ লাখ ২৬৬ কোটি টাকার বাজেট পাস করা হয়েছে। জাতীয় সংসদে নির্দিষ্টকরণ বিল পাসের মাধ্যমে এ বাজেট পাস করা হয়। গত ১ জুন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত এ বাজেট পেশ করেন। এ বাজেটে সার্র্বিক বাজেট ঘাটতি ১ লাখ ১২ হাজার ২৭৫ কোটি টাকা দেখানো হয়েছে। এ ঘাটতি অর্থায়নে বৈদেশিক সূত্র থেকে ৫১ হাজার ৯২৪ কোটি টাকা এবং অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে ৬০ হাজার ৩৫২ কোটি টাকা। অভ্যন্তরীণ উৎসের মধ্যে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে ২৮ হাজার ২০৩ কোটি টাকা এবং সঞ্চয়পত্র ও অন্যান্য ব্যাংক বহির্ভূত উৎস থেকে ৩২ হাজার ১৪৯ কোটি টাকার সংস্থানের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। রিজভী বলেন, প্রধানমন্ত্রী বুধবার সংসদে বলেছেন ভিক্ষা অনুদানের ওপর নির্ভরশীলতা থেকে তারা বেরিয়ে এসেছেন। ওনারা নাকি নিজস্ব আর্থিক ক্ষমতা নির্মাণ করেছেন। অথচ এবারই বাজেটের ঘাটতি মোকাবেলায় বিদেশী ঋণ ৪৫ হাজার ৪২০ কোটি টাকা আর অনুদান হিসেবে ৫ হাজার ৫০৪ কোটি টাকা সংগ্রহ করা হবে বলে বাজেটে বলা হয়েছে। এর প্রভাবে বিনিয়োগযোগ্য অর্থ হ্রাস পেতে পারে এবং সুদ পরিশোধের পরিমাণ বৃদ্ধি পাবে। ফলে আর্থিক ব্যবস্থাপনা চরম বিশৃঙ্খলার মধ্যে পড়বে। এতে প্রতিয়মান হয় প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য ছিল ভাওতাবাজি। বিএনপির মুখপাত্র বলেন, বাজেটে অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে যে টাকা ধরা হয়েছে তার মধ্যে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে ২৮ হাজার ২০৩ কোটি টাকা এবং সঞ্চয়পত্র ও অন্যান্য ব্যাংক বহির্ভূত উৎস থেকে ৩২ হাজার ১৪৯ কোটি টাকা। বৃহস্পতিবার অর্থমন্ত্রী সংসদে বলেছেন দেশের ব্যাংকিং খাত অত্যন্ত নাজুক অবস্থায় আছে। যা সমস্ত অর্থনীতিকে বড় ধরনের ঝুঁকিতে ফেলতে পারে। এই যদি পরিস্থিতি হয় তাহলে ব্যাংক থেকে টাকা নিয়ে বাজেটের ঘাটতি মেটানো বন্যা প্রবণ নদীর তীরে বালির বাঁধ নির্মাণের শামিল। রিজভী বলেন, প্রধানমন্ত্রী আরও বলেছেন, নিজের পায়ে নাকি বাংলাদেশ দাঁড়িয়েছে। ভয়ংকর আর্থিক নৈরাজ্যের মধ্যে দেশকে ঠেলে দিয়ে যারা পার্শ্ববর্তী দেশের মাটিতে পা রেখে চলেন তারা নিজের দেশকে কতটুকু নিজের পায়ের ওপর দাঁড়াতে সক্ষম করে তুলেছেন তা দেশবাসী এখন হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছেন। তিনি বলেন, সুপ্রীমকোর্টের প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা কয়েক মাস আগে প্রকাশ্যেই বলেছেন উন্নয়নের ৬০ ভাগ টাকা যায় ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীদের পকেটে। বাকি ৪০ ভাগেরও কাজ হয় না কারণ এর মধ্যে ইনকামটেক্স, ভ্যাট রয়েছে। অর্থাৎ উন্নয়ন কাজের ২৫ ভাগ কাজও হয় না। সুতরাং বলা যায়, আগামী ভোটের আগে ক্ষমতাসীন দলের লুটের বাজেট সংসদে পাস হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী সংসদে বলেছেন আমরা কতটা গণতান্ত্রিক যে, নিজ দলের এমপিরাও অর্থমন্ত্রীকে ছাড় দেয়নি। এ প্রসঙ্গে আমাদের আর বলার কিছু নেই। তামাশা দেখতে ভালই লাগে। তবে চক্ষুলজ্জাহীন তামাশা মানুষের মধ্যে বিরক্তি তৈরি করে। দেশের ক্ষমতাসীনদের মতো চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন ব্যক্তি বোধহয় সব যুগেই ছিল। সেজন্যই ইংরেজী সাহিত্যের জগৎ বিখ্যাত নাট্যকার ও কবি সেক্সপিয়ার পৃথিবীকে একটি রঙ্গমঞ্চ বলেছিলেন। রিজভী বলেন, ক্ষমতাসীনদের অভিনয় দেখে দেশের মানুষ বিস্মিত ও হতবাক। যেন যা কিছু হারায় গিন্নী বলেন কেষ্ট বেটাই চোর। গিন্নীর যেন কোন দায় নেই। অর্থমন্ত্রীকে কেষ্ট বানিয়ে বাজেট নাটকটি দক্ষ পরিচালনার অভাবে জনগণের কাছে হাস্যপদ নাটকে পরিণত হয়েছে। অর্থমন্ত্রীকে নিজ দলের এমপিদের কটুবাক্য বর্ষণকে প্রধানমন্ত্রী উৎকৃষ্ট গণতন্ত্রের নমুনা হিসেবে উল্লেখ করেছেন। মন্ত্রিপরিষদ থেকে বাজেট অনুমতি পাওয়ার সময় যদি ক্ষমতাসীন দলের এমপিরা প্রধানমন্ত্রীর কঠোর সমালোচনা করতেন তাহলে বোঝা যেত আওয়ামী গণতন্ত্রের ওজন কতটুকু। রিজভী বলেন, মূল্য সংযোজন কর ও সম্পূরক শুল্ক আইন ২০১২ আগামী ২ বছরের জন্য স্থগিত করা হয়েছে। এ সিদ্ধান্তে মনে হয় সরকার আবারও যেন তেন প্রকারে ক্ষমতায় আসার খায়েশ পোষণ করছে এবং ক্ষমতায় এসে পুনরায় সে আইনটি চালু করে জনগণের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নেবে। এ আইন দু’বছরের জন্য স্থগিত করা অশুভ ভবিষ্যতের ইঙ্গিতবাহী। আজকে যে বাজেট পাস হলো সেটি গণবিরোধী, উদ্ভট তামাশা, জীবনযাত্রার মানকে নিম্নমুখী করা, মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধিসহ মানব উন্নয়ন প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করা ও জনগণের পকেট কাটার বাজেট। আমরা এ প্রতিক্রিয়াশীল বাজেটের নিন্দা জানাচ্ছি।
×