ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

মহিলা কর্মীদের জন্য নিরাপদ শ্রমবাজার মরিশাস

প্রকাশিত: ০৬:২৩, ৩০ জুন ২০১৭

মহিলা কর্মীদের জন্য নিরাপদ শ্রমবাজার মরিশাস

ফিরোজ মান্না ॥ বাংলাদেশের মহিলা কর্মীদের জন্য সবচেয়ে নিরাপদ শ্রমবাজার পূর্ব আফ্রিকার দেশ মরিশাস। বর্তমানে দেশটিতে ২২ হাজারেরও বেশি কর্মী কাজ করছেন। এর মধ্যে মহিলা কর্মীর সংখ্যা পুরুষ কর্মীর চেয়ে অনেক বেশি। প্রায় ১৪ হাজার নারী কর্মী কাজ করছেন দেশটিতে। গার্মেন্টস ও মাছ প্রক্রিয়াজাতকরণের কাজই প্রধান কাজ। তবে বর্তমানে নির্মাণখাতেও বেশকিছু কর্মী দেশটিতে যাচ্ছেন। তথ্যপ্রযুক্তিখাতেও কর্মী নিয়োগের জন্য দেশটির কর্তৃপক্ষ প্রস্তাব দিয়েছে। সব খাতেই কর্মীরা ভাল বেতন পাচ্ছেন। বিএমইটি বলেছে, বাংলাদেশের এই বাজারটি সবচেয়ে স্থিতিশীল। এখানে কোন অস্থিরতা নেই। বাজারটি আরও বড় করতে কাজ করা হচ্ছে। ১৯৯২ সালে প্রথম ১২ জন মহিলা কর্মী কাজ নিয়ে মরিশাসে গিয়েছিলেন। এখন দেশটিতে ২০ থেকে ২২ হাজার বাংলাদেশী কর্মী কাজ করছেন। অন্য যে কোন দেশের তুলনায় মরিশাসে নারী কর্মীরা স্বস্তিতে কাজ করার সুযোগ পাচ্ছেন। সূত্র জানিয়েছে, ২০০৫ সালে বাংলাদেশ মানবসম্পদ রফতানিখাতে মরিশাসের সঙ্গে আনুষ্ঠানিকভাবে একটি সমঝোতা স্মারক সই করে। এরপর ২০১৩ সালে তৎকালীন বাণিজ্যমন্ত্রীর নেতৃত্বে পাঁচ-সদস্যের একটি দল মরিশাসে গিয়ে তাদের সঙ্গে বাণিজ্যিক চুক্তি স্বাক্ষর করার প্রস্তাব করেছিল। বাণিজ্যিক চুক্তিটি শেষ পর্যন্ত হয়নি। তবে কর্মী নিয়োগের সমঝোতা স্মারকটি চূড়ান্ত চুক্তিতে পরিণত করা হয়। এখন দেশটিতে প্রতিবছর কয়েক শ’ কর্মী নিয়োগ হচ্ছে। ভারত মহাসাগরের অবস্থিত দ্বীপ রাষ্ট্রটি মাত্র ২ হাজার ৪০ বর্গ কিলোমিটারের দেশটিতে জনসংখ্যা মাত্র ১৫ লাখ। পর্যটন খাতে সমৃদ্ধ এই দেশটির উন্নয়নের পেছনে রয়েছে প্রবাসী কর্মীদের কঠোর পরিশ্রম। দেশটিতে নিযুক্ত ২৫ হাজার বিদেশী কর্মীর মধ্যে প্রায় ২২ হাজার কর্মীই বাংলাদেশী। এর মধ্যে নারী কর্মীর সংখ্যা অনেক বেশি। বাংলাদেশী নারী কর্মীরা সেখানে মাছ প্রক্রিয়াকরণ ও বস্ত্র খাতে কাজ করে থাকেন। ওইসব কারখানা ও প্রতিষ্ঠানে কাজের পরিবেশ অনেক উন্নত ও স্বাস্থ্যসম্মত। ফলে কাজ করতে তেমন কোন কষ্ট পোহাতে হয় না কর্মীদের। মরিশাসে নির্মাণ ও বেকারি খাতে কাজ করছেন বাংলাদেশী কর্মীরা। মরিশাসে বাংলাদেশী কর্মীদের বিষয়ে জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) মহাপরিচালক সেলিম রেজা জনকণ্ঠকে বলেন, দেশটির বাজার স্থিতিশীল। অন্য কোন বাজারের মতো এই বাজারে কোন অস্থিরতা নেই। ২০ থেকে ২২ হাজার বাংলাদেশী মহিলা ও পুরুষ কর্মী কাজ করে যাচ্ছেন। দেশের তিন থেকে চারটি জনশক্তি রফতানিকারক প্রতিষ্ঠান মরিশাসে কর্মী পাঠায়। বর্তমানে বাজারটি যেভাবে চলছে তাতে ভবিষ্যতে মরিশাসে বাংলাদেশী কর্মী যাওয়ার সংখ্যা আরও বাড়বে। বাংলাদেশী কর্মীদের সুনাম রয়েছে দেশটিতে। দেশটিতে দক্ষ কর্মীর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। বিশেষ করে বস্ত্র, তথ্যপ্রযুক্তি, বেকারিসহ বিভিন্ন খাতে বাংলাদেশ থেকে আরও বেশি কর্মী পাঠানো সম্ভব। মরিশাসে বাংলাদেশী জনশক্তির অবদান নিয়ে দেশটির কর্তৃপক্ষ খুবই খুশি। বাংলাদেশী মহিলা কর্মীরা সেখানে আবাসিক পরিবেশে কাজ করেন। ফ্যাক্টরির মালিক তাদের খাবার, আবাসস্থল এবং চিকিৎসার সুযোগ সুবিধা দেয়। পূর্ব আফ্রিকার একটি দ্বীপ রাষ্ট্র মরিশাস। দেশটির রাজধানীর নাম পোর্ট লুইস। ওলন্দাজ (পর্তুগীজ) অভিযাত্রীরা ১৫০৭ সালে আদিবাসীবিহীন দ্বীপটি আবিষ্কার করে। ওলন্দাজরা ১৬৩৮ সালে দ্বীপটিতে বসতি স্থাপন শুরু করে। এরপর দ্বীপটি ফরাসী উপনিবেশ শুরু হলে ফরাসীরা এর নামকরণ করে ‘আইল ডি ফ্রান্স’। ১৯৬৮ সালের ১২ মার্চে স্বাধীন কমনওয়েলথ রাজত্ব এবং ১৯৯২ সালের ১২ মার্চে কমনওয়েলথ মধ্যে প্রজাতন্ত্র হয়ে ওঠার আগ পর্যন্ত দেশটি ব্রিটিশ শাসনের অধীনে ছিল। এই দেশটি বর্তমানে অর্থনৈতিকভাবে ভাল অবস্থানে রয়েছে। মরিশাস প্রবাসী বাংলাদেশীরা জানিয়েছেন, বাংলাদেশীরা বস্ত্র ও হস্ত নির্মিত সামগ্রীর ব্যাপক কদর রয়েছে মরিশাসের বাজারে। বাংলাদেশ থেকে যারা গার্মেন্টস খাতে দক্ষতা নিয়ে মরিশাসে যান তারা খুব সহজেই ভাল চাকরি পান। মাছ প্রক্রিয়াজাতকরণে বাংলাদেশী কর্মীরা দক্ষতার সঙ্গে কাজ করছে। সংশ্লিষ্ট খাতেই অভিজ্ঞ কর্মী পাঠানো গেলে মরিশাস বাংলাদেশের একটি ভাল শ্রমবাজার হতে পারে। মরিশাসে বাংলাদেশী নারী কর্মীরা নিরাপত্তার সঙ্গে কাজ করছেন।
×