ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

ময়মনসিংহ মেডিক্যালে আইসিইউর আগুনে আরও ২ জনের মৃত্যু

প্রকাশিত: ০৬:০৩, ৩০ জুন ২০১৭

ময়মনসিংহ মেডিক্যালে আইসিইউর আগুনে আরও ২ জনের মৃত্যু

স্টাফ রিপোর্টার, ময়মনসিংহ ॥ ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিট-আইসিইউতে আগুন লাগার ঘটনায় বৃহস্পতিবার নেত্রকোনার দুর্গাপুরের সখিনা (২০) এবং ময়মনসিংহের তারাকান্দার হাবিবুর রহমান (৩৬) নামে আরও দুইজনসহ এ পর্যন্ত চার রোগী মারা গেছে। এর আগে বুধবার মারা গেছে হেলাল উদ্দিন ও সুরুজ মিয়া। আগুন লাগার আগে আইসিইউতে ছয়জন রোগী চিকিৎসাধীন ছিল। আগুন লাগার পর তাদের লাইফ সাপোর্ট খুলে হাসপাতােেলর করোনারি কেয়ার ইউনিট-সিসিইউতে সরিয়ে নেয়া হয়েছিল। বাকি দুইজনের অবস্থাও সঙ্কটাপন্ন বলে জানিয়েছে হাসপাতাল সূত্র। এদিকে আগুনের ঘটনা তদন্তে গঠিত সাত সদস্যের তদন্ত কমিটি বৃহস্পতিবার ২য় কর্মদিবসে কমিটি প্রধান হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. আবদুল গণির নেতৃত্বে তদন্ত কাজ শুরু করেছে। প্রাথমিকভাবে বিদ্যুতের শর্টসার্কিট থেকে আগুনের সূত্রপাত মনে করা হলেও নাশকতার বিষয়টিও খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানান তদন্ত কমিটি সূত্র। এর আগে মঙ্গলবার আইসিইউয়ের স্টোর রুমের এসিতে বিদ্যুতের শর্টসার্কিট থেকে আগুনের সূত্রপাত বলে জানিয়েছিলেন ফায়ার সার্ভিস স্থানীয় সহকারী পরিচালক শহীদুর রহমান। মঙ্গলবার সকালে হাসপাতালের আইসিইতে এই আগুন লাগে। ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা দেড় ঘণ্টা চেষ্টা চালিয়ে আগুন নেভায়। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষীয় সূত্র জানায়, আগুন লাগার কারণ অনুসন্ধান ও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণে হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডাঃ আবদুল গণিকে প্রধান করে সাত সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে মঙ্গলবার। কমিটিকে তিন কর্মদিবসে তদন্ত রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে। কমিটির অপর সদস্যরা হচ্ছেনÑ আইসিইউ ইউনিটের প্রধান ও ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজের ভাইস প্রিন্সিপাল অধ্যাপক ডাঃ আনম ফজলুল হক পাঠান, হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডাঃ লক্ষ্মী নারায়ণ মজুমদার, ডাঃ আবুল কাশেম, গণপূর্ত অধিদফতরের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী তাওহীদুর রহমান, ফায়ার সার্ভিসের স্থানীয় সহকারী পরিচালক শহীদুর রহমান ও আইসিইউ ইউনিটের কর্তব্যরত নার্স। তদন্ত কমিটির সদস্যরা বৃহস্পতিবার দুপুরে ক্ষতিগ্রস্ত আইসিইউ ইউনিট ঘুরে দেখেন। এ সময় কমিটির সদস্যরা বৈদ্যুতিক সরঞ্জামাদিসহ পুড়ে যাওয়া মূল্যবান যন্ত্রপাতি ও মেশিন দেখেছেন, ছবি তুলেছেন। পরে আইসিইউ ইউনিট প্রধান অধ্যাপক ডাঃ আনম ফজলুল হক পাঠানের কক্ষে বসে বৈঠক করেছেন। তবে বৃহস্পতিবার ২য় কর্মদিবস পর্যন্ত আগুনের প্রকৃত কারণ শনাক্ত করা যায়নি। হাসপাতালের উপ-পরিচালক ও তদন্ত কমিটি প্রধান ডাঃ আবদুল গণি জানিয়েছেন, আগুন লাগার প্রকৃত কারণ খুঁজে বের করতে আগামী রবিবার ফের তদন্ত করবেন তারা। প্রয়োজনে আরও সময় চাওয়া হবে তদন্ত কাজের জন্য। নাম প্রকাশ করা হবে না শর্তে কমিটির এক সদস্য জানান, আগুন লাগার সময় আইসিইউ ইউনিটের স্টোর রুমের এসি বন্ধ ছিল। কাজেই বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিট থেকে আগুনের সূত্রপাত মনে হচ্ছে না। এই ক্ষেত্রে নাশকতার বিষয়টিও ভাবা হচ্ছে। আইসিইউপ্রধান অধ্যাপক ডাঃ পাঠান জানান, ৩ মাস ধরে স্টোর রুমের এসি নষ্ট ছিল। তবে স্টোর রুম থেকেই যে আগুনের সূত্রপাত সেটি নিশ্চিত করেছে ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তাসহ আইসিইউয়ের কর্তব্যরত চিকিৎসক ও নার্স। নাশকতার বিষয়টি উড়িয়ে দিয়ে আইসিইউয়ের একাধিক সূত্র দাবি করেছে বিদ্যমান ব্যবস্থাপনায় আইসিইউতে অনুমতি ছাড়া কারও প্রবেশের সুযোগ নেই। তদন্ত কমিটির সদস্য গণপূর্ত বিভাগের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী তাওহীদুর রহমান জানান, প্রাথমিকভাবে আইসিইউয়ের স্টোর রুমের বৈদ্যুতিক এসি থেকে আগুনের সূত্রপাত বলে মনে করা হচ্ছে। হাসপাতালের আইসিইউতে কোন সার্কিট ব্রেকার না থাকায় সহজেই আগুন ধরে যায় বলে জানান তিনি। বৃহস্পতিবার দেখা গেছে, আগুনের পর থেকে বন্ধ রয়েছে আইসিইউ ইউনিটের চিকিৎসা সেবা কার্যক্রম। নতুন করে কোন রোগী আইসিইউতে নেয়া হচ্ছে না। ফলে ঝুঁকির মুখে পড়েছে হাসপাতালের সঙ্কটাপন্ন রোগীরা। তবে হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডাঃ আবদুল গণি জানিয়েছেন, আইসিইউ সচল করতে পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে। বুধবার ইউনিটের স্টোর ছাড়া ওয়ার্ড ও কর্তব্যরত চিকিৎসকদের বসার জায়গায় বিদ্যুত সরবরাহ দেয়া সম্ভব হয়েছে। আগামী ২-১ দিনের মধ্যে সচল করা সম্ভব হবে আইসিইউ ওয়ার্ড। এদিকে সিসিইউতে চিকিৎসাধীন রোগীর স্বজনরাও উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন চিকিৎসাসেবা নিয়ে। স্বজন রুহুল আমিন জানান, সিসিইউতে চিকিৎসাধীন রোগীরা কেমন আছে বাইরে থেকে জানা সম্ভব হচ্ছে না। নয়তলা নতুন হাসপাতাল ভবনের ৫ম তলার একটি অপারেশন থিয়েটার কমপ্লেক্সকে বিকল্প ব্যবস্থায় আইসিইউ হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছিল। এই ইউনিটে আগুন নেভানোর সীমিত সিলিন্ডার থাকলেও সেটি ব্যবহার করার মতো প্রশিক্ষিত কোন জনবল ছিল না। এছাড়া নতুন এই ভবনটিতে ডিজাইন ও নির্মাণেও রয়েছে আরও নানা ত্রুটি। নয়তলা ভবনে কোন র‌্যাম সিঁড়ি রাখা হয়নি। এক হাজার শয্যার ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ২৫০০-এর বেশি রোগী ভর্তি থেকে চিকিৎসা নেয়ার বিপরীতে ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে মাত্র ১০ শয্যা রয়েছে। অথচ এই ইউনিটে ২৫ শয্যার চাহিদা রয়েছে। ১২টি প্রয়োজনীয় ভেন্টিলেটার এর জায়গায় পুরনো ৩টি মাত্র ভেন্টিলেটর দিয়ে কাজ চালানো হচ্ছিল।
×