ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

অন্যত্র শ্বশুর, পুত্রবধূ নাতিসহ নিহত ১১

গোপালগঞ্জে বাস-কার সংঘর্ষ, এক পরিবারের চার জনসহ হত ৬

প্রকাশিত: ০৬:০১, ৩০ জুন ২০১৭

গোপালগঞ্জে বাস-কার সংঘর্ষ, এক পরিবারের চার জনসহ হত ৬

জনকণ্ঠ ডেস্ক ॥ গোপালগঞ্জে যাত্রীবাহী বাস ও প্রাইভেটকারের মুখোমুখি সংঘর্ষে একই পরিবারের চারসহ ছয়জন নিহত হয়েছে। এছাড়া দেশের বিভিন্নস্থানে সড়ক দুর্ঘটনায় কমপক্ষে ১১ জন নিহত হয়েছে। এর মধ্যে সিরাজগঞ্জে একই পরিবারের তিনসহ চারজন, রাজশাহীতে চাচা-ভাতিজা, পাবনার ঈশ্বরদীতে দুই মোটরসাইকেল আরোহী, টাঙ্গাইলে দুই নারী পথচারী এবং বগুড়ায় এক মোটরসাইকেল আরোহী নিহত হয়। বৃহস্পতিবার এসব দুর্ঘটনা ঘটে। খবর স্টাফ রিপোর্টার ও নিজস্ব সংবাদদাতাদের। গোপালগঞ্জে সড়ক দুর্ঘটনায় একই পরিবারের চারসহ ৬ জন নিহত হয়েছে। বৃহস্পতিবার সকাল ১০ টার দিকে ঢাকা-খুলনা মহাসড়কে কাশিয়ানী মাঝিগাতী গ্রাম এলাকায় দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন সৌদিপ্রবাসী হালিম আকন্দ (৪৯), তার স্ত্রী আসমা বানু (৪২), দু’ছেলে সুমন আকন্দ (১৮) ও সিহাব আকন্দ (৬) এবং তার শ্যালক বাদল হাওলাদার (৪৫)। তাদের গ্রামের বাড়ি বাগেরহাটের শরণখোলা থানার খুড়িয়াখালী গ্রামে। তাদের বহনকারী প্রাইভেটকারের ড্রাইভার (অজ্ঞাত)ও নিহত হয়েছে। জানা গেছে, বাগেরহাটগামী প্রাইভেটকারটির সঙ্গে ঢাকাগামী সেবা গ্রীন লাইন পরিবহনের একটি যাত্রীবাহী বাসের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে প্রাইভেটকারটির সম্পূর্ণ অংশই বাসের নিচে গিয়ে জড়িয়ে যায় এবং বাসসহ রাস্তার পাশে উল্টে পড়ে। এতে প্রাইভেটকারের সব যাত্রীর দেহ ছিন্নভিন্ন হয়ে যায় এবং বাসের অন্তত ১০ যাত্রী আহত হন। পরে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিস দল এসে উদ্ধার কাজ শুরু করে। নিহত বাদল হাওলাদারের বড় ভাই হালিম হাওলাদার জনকণ্ঠকে জানিয়েছেন, বুধবার রাতে হালিম আকন্দ সৌদি আরব থেকে ঢাকায় এসে পৌঁছে। তাকে স্বাগত জানাতে ছোট ভাই, বোন ও ভাগ্নেরা ঢাকা বিমানবন্দরে যায়। সেখান থেকে ভোরে প্রাইভেটকারযোগে তারা বাড়ির উদ্দেশে রওনা হয়। মাঝিগাতী গ্রাম এলাকায় এসে তারা দুর্ঘটনার শিকার হয়। সিরাজগঞ্জে চারজন নিহত উত্তরবঙ্গ মহাসড়কের সিরাজগঞ্জ জেলা সীমানায় বৃহস্পতিবার পৃথক তিনটি সড়ক দুর্ঘটনায় শ্বশুর-পুত্রবধূ ও নাতিসহ চারজন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন কমপক্ষে ২০ জন। সবচেয়ে মর্মান্তিক দুর্ঘটনাটি ঘটে ভোরে রায়গঞ্জের ঘুড়কা বেলতলা এলাকায়। এখানে বাস-মাইক্রোবাসের মুখোমুখি সংঘর্ষে শ্বশুর-পুত্রবধূ ও নাতিসহ চারজন নিহত হয়েছেন। এরা বিদেশফেরত স্বজন হারুন অর রশিদকে ঢাকার এয়ারপোর্ট থেকে আনার জন্য রওনা হয়েছিল। দুর্ঘটনায় অন্তত ৫ জন আহত হয়েছেন। নিহতরা হলেন বগুড়ার কাহালু উপজেলার দামগড়া গ্রামের বাসিন্দা সোলাইমান মিঞা (৬৫), তার ছেলে হারুন-অর রশিদের স্ত্রী লিলি আক্তার (৩২) ও নাতি সাগর (১৩)। নিহত অপরজন মাইক্রোবাস চালক। তার নাম-পরিচয় জানা যায়নি। রায়গঞ্জ ফায়ার সার্ভিস এ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের ওয়্যার হাউস ইন্সপেক্টর জানান, বগুড়া থেকে ঢাকাগামী একটি মাইক্রোবাস ঘটনাস্থলে পৌঁছলে বিপরীত দিক থেকে আসা কুড়িগ্রামগামী ধানসিঁড়ি পরিবহনের যাত্রীবাহী বাসের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে মাইক্রেবাসটি দুমড়ে গিয়ে ঘটনাস্থলেই মারা যান তিনজন। এ ঘটনায় মাইক্রোবাসটির চালকসহ উভয় পরিবহনের আরও ৫ যাত্রী আহত হন। খবর পেয়ে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে আহতদের উদ্ধার করে সিরাজগঞ্জ সদর হাসপাতালে পাঠায়। হাসপাতালে নেয়ারপথে মারা যান মাইক্রোবাসের চালক। অপরদিকে সকাল সাতটায় রায়গঞ্জের সোলমাইল এলাকায় একটি কভার্ডভ্যান রিক্সার ওপর তুলে দিলে ভ্যানের চার যাত্রী গুরুতর আহত হয়। সকাল দশটায় চান্দাইকোনা বগুড়া বাজারে একতা পরিবহন ও উত্তরবঙ্গগামী নিজাম পরিবহনের মুখোমুখি সংঘর্ষে কমপক্ষে ১১ জন আহত হয়েছে। হাটিকুমরুল হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আব্দুল কাদের জিলানী জানান, পৃথক তিনটি সড়ক দুর্ঘটনায় চারজন নিহত হয়েছে। আহতের সংখ্যা ২০ জন। পুঠিয়ায় ট্রাকচাপায় চাচা-ভাতিজা নিহত রাজশাহীর পুঠিয়ায় ট্রাকচাপায় চাচা-ভাতিজা নিহত হয়েছেন। বৃহস্পতিবার দুপুর সোয়া ১২টার দিকে পুঠিয়ার পোল্লাপুকুর মোড়ে এই দুর্ঘটনা ঘটে। নিহতদের বাড়ি রাজশাহী মহানগরীর রামচন্দ্রপুর কেদুরমোড় এলাকায়। তারা হলেন মৃত আবদুল লতিফের ছেলে তুষার হোসেন (২২) ও তার ভাতিজা শাহিন আলী (২০)। শাহিনের বাবার নাম নাজমুল ইসলাম। দুপুরে চাচা-ভাতিজা মোটরসাইকেলে রাজশাহী-ঢাকা মহাসড়ক দিয়ে নাটোরের দিকে যাচ্ছিলেন। পথে পোল্লাপুকুর মোড়ে বিপরীত দিক থেকে আসা একটি বেপরোয়া ট্রাকের সঙ্গে তাদের মুখোমুখি সংঘর্ষ ঘটে। এ সময় ট্রাকটি মোটরসাইকেলটিকে প্রায় ২০০ গজ সামনের দিকে টেনে নিয়ে যায়। পরে ট্রাকটি রাস্তার পাশে খাদে নেমে যায়। এতে ঘটনাস্থলেই চাচা তুষার ও ভাতিজা শাহিনের মৃত্যু হয়। পরে পুলিশ গিয়ে তাদের লাশ উদ্ধার করে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ (রামেক) মর্গে পাঠায়। সার্জেন্ট মনিরুল ইসলাম জানান, দুর্ঘটনার পর ট্রাকের চালক পালিয়ে গেছে। তবে তাকে শনাক্ত করতে পেরেছে পুলিশ। তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। ট্রাকটি (ঢাকা মেট্রো-ট ১৩-৩৮৬৩) জব্দ করা হয়েছে। ঈশ্বরদীতে হোন্ডা উল্টে দু’জন বৃহস্পতিবার দুপুরে ঈশ্বরদীর মুলাডুলিতে হোন্ডা উল্টে ঘটনাস্থলেই দু’জন কম্পিউটার ব্যবসায়ী নিহত হয়েছে। নিহতরা হলেন আটঘরিয়ার আরজুপাড়া গ্রামের হাসিবুর রহমানের ছেলে আশরাফুল হক (২৫) ও দরিনাজিরপুর গ্রামের আব্দুল খলিলের ছেলে শিপন (২৩)। দুপুর দুটার দিকে ১০/১২ টি হোন্ডা নিয়ে দ্রুতগতিতে দাশুড়িয়ায় দাওয়াতে যাচ্ছিলেন। এ সময় মুলাডুলি ইক্ষু ফার্মের সামনে হোন্ডাসহ পড়ে গেলে তারা নিহত হন। টাঙ্গাইলে দুই নারী টাঙ্গাইলের ধনবাড়ীতে মাইক্রোবাসের চাপায় দুই পথচারী নারী নিহত ও একজন আহত হয়েছে। বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৮টার দিকে এ দুঘর্টনাটি ঘটে। দুর্ঘটনায় নিহতরা হলেন- ধনবাড়ী পৌর এলাকার নিজবর্ণী গ্রামের বাবলু বকলের স্ত্রী রেবা বেগম (৩২) ও বেলুটিয়া গ্রামের আব্দুল মজিদের স্ত্রী শাহাতন বেগম (৩০)। জানা যায়, জামালপুরগামী একটি মাইক্রোবাস ধনবাড়ী নিজবর্ণী এলাকায় নিয়ন্ত্রণ হারায়। সকালে হাঁটতে বের হওয়া তিন নারী চাপা পড়েন। এতে ঘটনাস্থলেই একজন নিহত এবং ধনবাড়ী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আরও একজন মারা যান। গুরুতর আহত বাওয়া গ্রামের আব্দুল্লাহ আল মামুন জুয়েলের স্ত্রী ওবায়দা বেগমকে (৪০) ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। মাইক্রোবাসটিকে পুলিশ আটক করেছে। চালকসহ যাত্রীরা পালিয়ে যায়। এ ঘটনায় ধনবাড়ী থানায় একটি মামলা হয়েছে। বগুড়ায় হত ১ বৃহস্পতিবার কাহালু উপজেলায় সড়ক দুর্ঘটনায় সিহান(২০) নামে এক মোটরসাইকেল আরোহী নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আরও ৩ জন আহত হয়। পুলিশ জানায়, আদমদিঘীর নশরতপুরের নুরুল ইসলামের ছেলে সিহান তার দুই বন্ধুকে নিয়ে বেলা ১১ টার দিকে আদমদিঘী থেকে শহরে আসছিল। কাহালুর পোড়াপাড়া এলাকায় মোটরসাইকেল নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে তারা দুর্ঘটনায় পড়ে। এতে মোটরসাইকেল চালক সিহান ঘটনাস্থলেই মারা যায় এবং পথচারীসহ মোটরসাইকেলের অপর দুই আরোহী আহত হন। তাদের বগুড়া মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
×