ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

সরকারকে রাষ্ট্রের সংযুক্ত তহবিল থেকে ৫ লাখ ৩৫ হাজার ২১৪ কোটি ১৫ লাখ ৯২ হাজার টাকা বরাদ্দের অনুমোদন

সংসদে বাজেট পাস

প্রকাশিত: ০৫:৫৩, ৩০ জুন ২০১৭

সংসদে বাজেট পাস

সংসদ রিপোর্টার ॥ উচ্চতর প্রবৃদ্ধি অর্জনে উন্নয়নের মহাসড়ক ধরে দেশকে এগিয়ে নিতে জাতীয় সংসদে বৃহস্পতিবার ২০১৭-১৮ অর্থবছরের বাজেট কণ্ঠভোটে পাস হয়েছে। নির্দিষ্টকরণ বিল ২০১৭ পাসের মাধ্যমে এই বাজেট পাস হয়। এই বাজেট পাসের মাধ্যমে জাতীয় সংসদ ২০১৮ সালের ৩০ জুন সমাপ্য অর্থবছরের সকল ব্যয় নির্বাহের জন্য সরকারকে রাষ্ট্রের সংযুক্ত তহবিল থেকে ৫ লাখ ৩৫ হাজার ২১৪ কোটি ১৫ লাখ ৯২ হাজার টাকা বরাদ্দের অনুমোদন দিয়েছে। তবে এই বরাদ্দের মধ্যে আগামী অর্থবছরে ব্যয় হবে ৪ লাখ ২৬৬ কোটি টাকা, যা আগামী ১ জুলাই থেকে বাস্তবায়ন শুরু হবে। বিলের ৫৯টি মঞ্জুরি দাবির ওপর আনীত ছাঁটাই প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা শেষে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত দুপুর ১টা ৪৭ মিনিটে নির্দিষ্টকরণ বিল ২০১৭ সংসদে উত্থাপন করেন। বিলের দফাগুলো সংসদে গৃহীত হওয়ার পর তা সংসদে উপস্থিত সদস্যদের কণ্ঠভোটে পাস হয়। সংসদে পাসকৃত এই বাজেট মূলত গ্রস বাজেট। যার পুরো অর্থ ব্যয় হয় না। সংবিধানের বাধ্যবাধকতা অনুযায়ী বাজেটে কিছু অতিরিক্ত টাকা বাজেট বরাদ্দ দেখাতে হয়। যা আবার আয় খাতে দেখিয়ে বাজেটের ভারসাম্য রক্ষা করা হয়। এই বাধ্যবাধকতার কারণে এবারের বাজেটেও ১ লাখ ৩৪ হাজার ৯৪২ কোটি ১৫ লাখ ৯২ হাজার টাকা বাজেটে অতিরিক্ত বরাদ্দ রাখা হয়েছে। যা ব্যয় হবে না। অর্থমন্ত্রী গত ১ জুন জাতীয় সংসদে যে ৪ লাখ ২৬৬ কোটি টাকার বাজেট উত্থাপন করেছেন, সেটাই ব্যয় হবে। সেটাই আগামী অর্থবছরের নিট বাজেট। সংসদ কর্তৃক অনুমোদিত ৫ লাখ ৩৫ হাজার ২১৪ কোটি ১৫ লাখ ৯২ হাজার টাকার মধ্যে সংযুক্ত তহবিলের ওপর দায় হচ্ছে এক লাখ ৬৪ হাজার ৫৩৭ কোটি ৩১ লাখ ৮৩ হাজার টাকা। এই টাকা অনুমোদনের জন্য সংসদের অনুমোদনের প্রয়োজন হয় না। যা সংসদ কর্তৃক সরাসরি গৃহীত হয়। অবশিষ্ট ৩ লাখ ৭০ হাজার ৬৭৬ কোটি ৮৪ লাখ ৯ হাজার টাকা বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে সদস্যদের কণ্ঠভোটে গৃহীত হয়েছে। প্রথমে স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী এবং পরে ডেপুটি স্পীকার এ্যাডভোকেট ফজলে রাব্বি মিয়ার সভাপতিত্বে বৃহস্পতিবার সংসদ অধিবেশন শুরু হয়। প্রথমেই স্পীকার বাজেট পাসের কার্যক্রম শুরু করেন। প্রস্তাবিত বাজেটের ৫৯টি দাবির বিপরীতে ৩৫২টি ছাঁটাই প্রস্তাব দেন বিরোধী দল জাতীয় পার্টি ও স্বতন্ত্র দলীয় সংসদ সদস্যরা। এর মধ্যে বিরোধী দলের সদস্যরা মোট ৭টি দাবির ওপর আলোচনায় অংশ নেন। বাকি প্রস্তাবগুলো গিলোটিনের মাধ্যমে কণ্ঠভোটে পাস করা হয়। বাজেট পাসকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বিরোধী দলের নেতা বেগম রওশদ এরশাদসহ সরকার ও বিরোধী দলের বেশিরভাগ সদস্যই উপস্থিত ছিলেন। ‘উন্নয়নের মহাসড়কে বাংলাদেশ, সময় এখন আমাদের’ শিরোনামে গত পহেলা জুন জাতীয় সংসদে দেশের ইতিহাসে সর্ববৃহৎ ৪ লাখ ২৬৬ কোটি টাকার বাজেট উত্থাপন করেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। সরকার ও বিরোধী দলের হুইপের মধ্যস্থতায় ৭টি দাবির ওপর আলোচনার সিদ্ধান্ত হয়। এ আলোচনায় অংশ নেন জাতীয় পার্টির নুরুল ইসলাম মিলন, নুরুল ইসলাম ওমর, কাজী ফিরোজ রশীদ, বেগম রওশন আরা মান্নান, ফখরুল ইসলাম এবং স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য ডাঃ রুস্তম আলী ফরাজী। দীর্ঘ প্রায় চার ঘণ্টা আলোচনার পর বেলা পৌনে দুইটায় অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত নির্দিষ্টকরণ বিল উত্থাপন করলে সর্বসম্মতক্রমে ২০১৭-১৮ সালের বৃহৎ বাজেটটি কণ্ঠভোটে পাস হয়। তবে গত তিন বছরের তুলনায় এবারই প্রথম বাজেট নিয়ে সংসদে সরকার ও বিরোধী দলের প্রাণবন্ত আলোচনা হয়েছে। বিরোধী দলের পাশাপাশি সরকারী দলেরও অনেক সিনিয়র নেতা-মন্ত্রীও বাজেটের কয়েকটি বিষয় নিয়ে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতকে তুলাধোনা করতে ছাড়েননি। বিশেষ করে ব্যাংক আমানতের ওপর আবগারি শুল্ক বৃদ্ধি এবং ভ্যাট নিয়েই বেশি সমালোচনার মুখে পড়তে হয় অর্থমন্ত্রীকে। তবে বুধবার প্রধানমন্ত্রীর সুপারিশের প্রেক্ষিতে অর্থমন্ত্রী ভ্যাট আইন আগামী দুই বছরের জন্য স্থগিত এবং ব্যাংক আমানতের ওপর আরোপিত আবগারি শুল্ক পুনর্বিন্যাস করলে সরকার ও বিরোধী দলের সংসদ সদস্যরা বৃহস্পতিবার সর্বসম্মতিক্রমে বাজেটটি পাস করেন। এবারের বাজেটের ওপর মোট ১৯ কার্যদিবস আলোচনা হয়। এই ১৯ দিনে সরকার ও বিরোধী দলের মোট ২০৭ জন সংসদ সদস্য ৫৬ ঘণ্টা ১৪ মিনিট আলোচনা করেন। নারী সদস্যদের আপত্তির মুখে বক্তব্য প্রত্যাহার এদিকে ছাঁটাই প্রস্তাবের ওপর আলোচনার সময় জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য ফখরুল ইসলামের নারীদের নিয়ে একটি মন্তব্যকে কেন্দ্র করে প্রতিবাদে ফেটে পড়েন নারী সংসদ সদস্যরা। বাজেটের ওপর মঞ্জুরি দাবি ও ছাঁটাই প্রস্তাবের ওপর বক্তব্য দিতে গিয়ে ফখরুল ইমাম বলেন, ‘মেয়েদের বড় গুণ তারা শোনে তিন লাইন, বোঝে ১৩ লাইন আর লেকচার দেয় ৯৩ লাইন।’ তার এই বক্তব্যে তীব্র আপত্তি জানান নারী সংসদ সদস্যরা। তীব্র আপত্তির মুখে ফখরুল ইসলাম তার এই বক্তব্যে প্রত্যাহার করে নিলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। ব্যাংকিং খাত অত্যন্ত স্পর্শকাতর Ñঅর্থমন্ত্রী অর্থ বিভাগ খাতে ৫৩ হাজার ৮৩৩ কোটি ৮০ লাখ ৭১ হাজার টাকা দাবির বিপরীতে ৭ জন এমপি ছাঁটাই প্রস্তাবে বলেন, অর্থই অনর্থের মূল। অভিযোগ আছে, নানাভাবে টাকা বিদেশে পাচার করা হয়। বেসরকারী ব্যাংক শেষ হয়ে যাচ্ছে। এসব কারণে ব্যাংক কমিশন গঠন করা দরকার তাহলে ঋণখেলাপীরা টাকা দিতে বাধ্য হবে। ব্যাংক খাতে শৃঙ্খলা ফিরে আসবে। বেসরকারী ব্যাংকে সব পরিচালক পারিবারিক। এখানে স্বতন্ত্র কোন পরিচালক নেই। এ কারণে এসব খাতে লুটপাট হচ্ছে। এখানে দুই তৃতীয়াংশ স্বতন্ত্র ব্যাংক পরিচালক থাকা দরকার। তারা বলেন, দেশে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করেন। কারণ যারা ব্যাংক লুটপাট করেছেন অর্থমন্ত্রী তাদের চেনেন না। জবাবে অর্থমন্ত্রী তার বক্তব্যে বলেন, বর্তমানে যেসব অভিযোগ এসেছে তাতে বলা হয়েছে ব্যাংকগুলো পারিবারিক প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। এ খাতে সুশাসন দুর্লভ। ব্যাংকের পরিচালকদের অবশ্যই রেসপন্সসিবিলিটি আছে। এ নিয়ে আইন তৈরি করা হয়েছে। এটা সংসদীয় কমিটি বিবেচনা করছেন। কমিটির সুপারিশ পাওয়ার পর সরকারের অভিমত জানানো হবে। তিনি বলেন, ব্যাংকগুলোকে খামাখা ভর্তুকি দিচ্ছি বলে অনেকে অভিযোগ করেছেন। এটা ঠিক নয়। কারণ ব্যাংকিং খাত হচ্ছে খুবই স্পর্শকাতর খাত। ব্যাংকিং খাতের কোন ধরনের বিপর্যয় সারা দেশের অর্থনীতিকে ধ্বংস করে দিতে পারে। তিনি বলেন, সরকার ব্যবসা করে কোনদিনই ভাল করেনি। এ জন্য সরকারকে ব্যবসা থেকে দূরে রাখি। সুশাসন শব্দটির সীমা ব্যপক। গত ৮ বছরে সরকার ব্যাংকিং খাতে সুশাসনের জন্য অত্যন্ত ন্যায়নিষ্ঠভাবে কাজ করেেছ। এরই মধ্যে এর সুফল আপনারা দেখতে পেয়েছেন। ব্যাংকিং খাতে ৫৮টি ব্যাংক কাজ করছে। আশা করি, আমাদের দেশেও ব্যাংকিং খাত অনেক অগ্রসর হবে। গঠনমূলক সমালোচকরা আমার বন্ধু Ñসেতুমন্ত্রী সড়ক বিভাগ ও সেতু মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দের বিরোধিতা করে বিরোধী দল ও স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যরা বলেন, শুধু রাস্তা নির্মাণ করলেই হবে না, জনগণ যাতে নির্বিঘেœ যাতায়াত করতে পারে সেই ব্যবস্থা করতে হবে। যানজট নিরসনে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে। মহাসড়কে দুর্ঘটনায় মৃত্যুর মিছিল বেড়েই চলেছে। সড়ক নির্মাণের কিছুদিনের মধ্যে তা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। অবশ্যই সড়ক নির্মাণের মান বৃদ্ধি করতে হবে। জবাবে মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, গঠনমূলক সমালোচনা যারা করেন তারা আমার বন্ধু। চাটুকার-মোসাহেবরা আমার শত্রু। কারণ তারা বলবে সব ঠিক আছে। কারোর মনে করা উচিত নয়, আমরা সব ভাল করছি। আমাদেরও ভুল হতে পারে, ভুল হয়। তিনি বলেন, বিএনপি বাজেটের বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলন করেছে। ভাবটা এমন ঈদের পর সরকার পতনের আন্দোলন করবে। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর গঠনমূলক পদক্ষেপের কারণে পাস হওয়া বাজেট নিয়ে এখন সারাদেশেই আনন্দ-উল্লাস ছড়িয়ে পড়েছে। গত তিন বছরের মধ্যে এবারের ঈদে সড়ক দুর্ঘটনার ঘটনা অনেক কম হয়েছে। তিনি বলেন, সড়ক-মহাসড়ক নির্মাণে কিছু কিছু সমস্যা আছে, শতভাগ দুর্নীতি দূর করতে পারিনি। স্বীকার করছি যানজট আছে। এবারের ঈদে এক কোটি মানুষ গ্রামে-গঞ্জে গেছে। স্পিড কম ছিল, কিন্তু যানজট ছিল না। মন্ত্রী-এমপি-ভিআইপিরা উল্টো পথে গেলেই যানজট হয়। জনগণকে আইন মানতে বলার আগে আমাদের নিজেদের আইন মানতে হবে। আমাদের মন-মানসিকতার পরিবর্তন না হলে যানজট দূর হবে না। আর পদ্মা সেতুর কাজ ৪৬ ভাগ অগ্রগতি হয়েছে। মহাসড়কে ত্রি-হুইলার চালানোর ব্যাপারে কারও উৎসাহিত করা উচিত নয়, এতে প্রাণহানির ঘটনা বেশি হচ্ছে। দেশের চিকিৎসকদের ওপর বিশ্বাস রাখুন Ñস্বাস্থ্যমন্ত্রী স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দের বিরুদ্ধে ছাঁটাই প্রস্তাব দিয়ে বিরোধী দল জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্যরা অভিযোগ করেন, সরকার চিকিৎসক দিলেও তারা এলাকায় থাকেন না। অনেক স্থানেই আধুনিক যন্ত্রপাতি নেই। অনেক জেলায় সিসিইউ, আইসিইউ নেই। বাজেট অপ্রতুলতার কারণে তৃণমূলে এ্যাম্বুলেন্স নেই। জননিরাপত্তা কর্মসূচী মুখ থুবড়ে পড়েছে, ফলে জনসংখ্যা বেড়েই যাচ্ছে। সব উন্নয়ন বৃথা যাবে যদি জন্মনিয়ন্ত্রণ করা না যায়। এটি সর্ববৃহৎ সেবা খাত, তাই এ খাতে বাজেট আরও বাড়াতে হবে। জবাবে স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম বলেন, চিকিৎসকদের ওপর বিশ্বাস রাখতে হবে। প্রধানমন্ত্রী দেশের চিকিৎসার ওপর বিশ্বাস করেন বলেই দেশেই চিকিৎসা নেন। অথচ সাবেক রাষ্ট্রপতি এইচ এম এরশাদ বিদেশে চিকিৎসা নেন এটা তার বলা ঠিক নয়। বাজেট বরাদ্দ বৃদ্ধি চান সেটা অর্থমন্ত্রীকে বলুন। বাংলাদেশে অনেক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক, সার্জন রয়েছে। সম্পদের সীমাবদ্ধতা থাকার পরও কাজ করে যাচ্ছি বলেই বিশ্বের অনেক দেশ থেকে স্বাস্থ্য সেবায় অনেক দূর এগিয়ে আছি। এমনকি ভারত, পাকিস্তানের চেয়েও স্বাস্থ্য সেবায় বাংলাদেশ এগিয়ে। প্রত্যেক গ্রামকে যোগাযোগের আওতায় আনা হবে Ñস্থানীয় সরকার মন্ত্রী স্থানীয় সরকার বিভাগ খাতে বরাদ্দের বিরুদ্ধে ছাঁটাই প্রস্তাব এনে বিরোধী দলের সংসদ সদস্যরা অভিযোগ করেন, দেশের অনেকস্থানেই রাস্তাঘাট ধ্বংসের পথে। দক্ষতার অভাবে অনেক রাস্তা নির্মাণের পরেই নষ্ট হয়ে যাচ্ছে, আবার দীর্ঘদিনেও ঠিকাদাররা কাজ শেষ করছে না। ইউনিয়ন পর্যায়ে স্থানীয় সরকারের কোন কর্মকা- পরিচালিত হয় না। দেশ ডিজিটাল হলেও স্থানীয় সরকার বিভাগ এখনও এনালগভাবে চলছে। ঠিকাদাররা দলীয় প্রভাব খাটিয়ে কাজ নিয়ে সঠিকভাবে করছে না, কাজ না করেই বিল নিয়ে যাচ্ছে। এতে করে সরকারের ভাবমূর্তিই নষ্ট হচ্ছে। এসব বন্ধ করতে হবে। আর সারাদেশেই সুষম উন্নয়ন করতে হবে। জবাবে স্থানীয় সরকার মন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, স্থানীয় সরকার উন্নয়নমুখী বিভাগ। নগর ও গ্রামীণ এলাকার অবকাঠামো উন্নয়ন করা হয় এই বিভাগের মাধ্যমে। ৩ লাখ ২১ হাজার ৪৬২ কিলোমিটার রাস্তা নির্মাণ করেছে। প্রত্যেকটা গ্রামকে আমরা যোগাযোগের আওতায় আনছি। ব্যাপকভাবে গ্রামীণ পর্যায়ে অর্থ সঞ্চারন করা হচ্ছে। তিনি বলেন, সমস্যা রাস্তার নয়, সমস্যা হচ্ছে ট্রাফিকের। ধারণ ক্ষমতার বাইরে লোড পড়লেই রাস্তা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। বর্তমান সরকার বিশ্বাস করে, গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়নের মাধ্যমেই সারাদেশকে উন্নয়ন-সমৃদ্ধির পথে নিয়ে যাবে। দেশে এখন স্যানিটারি ব্যবহারের হার ৯৯ ভাগ। অসাধু ব্যবসায়ীরা চালের দাম বাড়িয়েছে Ñখাদ্যমন্ত্রী খাদ্য মন্ত্রণালয়ে বরাদ্দের বিরোধিতা করে বিরোধী দল ও স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যরা বলেছেন, বাংলাদেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ দেশ এবং রফতানির দেশ হিসেবেও পরিচিত। ১০ টাকা কেজি করে চাল বিক্রির রেকর্ড আমাদের রয়েছে। কিন্তু হঠাৎ করে কী হলো মোটা চালের দাম ৫০ টাকা হলো? এটা কেন হলো? মনিটরিংয়ের সু-ব্যবস্থা নেই কেন? সরকার কৃষকদের কাছ থেকে খাদ্য সংগ্রহ করছে তা সঠিকভাবে হচ্ছে না। কৃষকরা ন্যায্যমূল্য পাচ্ছে না। প্রথমেই সরকার আমদানি কর কমিয়ে দিলে জনগণকে এমন দুর্ভোগে পড়তে হতো না। ব্যবসায়ীরা এই সুযোগ নিতে পারত না। এতে করে সাধারণ মানুষের পকেট থেকে অনেক টাকা চলে গেছে। তাই মানুষের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে খাদ্য নিশ্চিত করতে হবে। জবাবে খাদ্যমন্ত্রী এ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম বলেন, অতিসম্প্রতি চালের দাম বৃদ্ধির কারণেই আমার প্রতি এমন বিষোদগার। দেশ খাদ্য স্বয়ংসম্পূর্ণ, বিদেশে রফতানি করার সক্ষমতা অর্জন করেছি এটাও ঠিক। আসলে হাওড় অঞ্চল থেকে বোরো ফসলটি আগে আসেনি। কিন্তু আগাম বন্যার কারণে সব বোরো ধান ধ্বংস হয়ে গেছে। অকাল বন্যা ও অতিবৃষ্টির সুযোগ নিয়ে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী চালের দর বাড়িয়ে দিয়েছে। কিন্তু আমাদের চালের মজুদ একটু কম আছে এটা ঠিক। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে চাল আমদানির ব্যবস্থা করা হয়েছে, আমদানি শুল্ক কমিয়ে দেয়া হয়েছে। মোট ৪ লাখ মেট্রিক টন চাল পাইপ লাইনে রয়েছে। খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আরও চাল আমদানির চিন্তাভাবনা সরকারের রয়েছে। কৃষকরা এবার উৎপাদিত পণ্যের মূল্যে পেয়েছে। হতদরিদ্রদের ১০ টাকা কেজি দরে ৫ মাসে দেড়শ’ কেজি চাল দেয়া হচ্ছে। এ কারণে আর ভিজিএফের কোন প্রয়োজন আছে বলে আমি মনে করি না। তবে বিশেষ ব্যবস্থায় ভিজিএফের মাধ্যমে খাদ্য বিতরণ অব্যাহত থাকবে। খাদ্য আমদানি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এবার খাদ্য মন্ত্রণালয় যে চাল ও গম সংগ্রহ করছে, তার মান নিয়ে প্রশ্ন ওঠার সুযোগ থাকবে না। বর্তমান সরকারের কাছে অসম্ভব বলে কিছু নেই Ñবিদ্যুত প্রতিমন্ত্রী বিদ্যুত বিভাগ খাতে বাজেট বরাদ্দের বিরুদ্ধে ছাঁটাই প্রস্তাব এনে বিরোধী দলের সংসদ সদস্যরা বলেন, ২০১৮ সালের মধ্যে শতভাগ বিদ্যুতের কথা বলা হয়েছে। লোকসান ও ভর্তুকির কথা বলে বিদ্যুতের দাম বাড়ানো যাবে না। আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম অর্ধেকের নিচে নেমে এলেও সরকার ৬ থেকে ৭ বার বিদ্যুতের দাম বাড়িয়েছে। অথচ দেশের অধিকাংশ এলাকায় জনগণ বিদ্যুত পাচ্ছে না, লোডশেডিং হচ্ছে। জবাবে বিদ্যুত প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, বর্তমান সরকারের অভিধানে অসম্ভব বলে কোন কথা নেই। আমরা ১৪৬ উপজেলায় শতভাগ বিদ্যুতায়ন করতে সক্ষম হয়েছি। ২০১৮ সালের মধ্যে আমরা শতভাগ বিদ্যুতের ব্যবস্থা করব। অতীতে ১২-১৪ ঘণ্টা বিদ্যুত থাকত না। গত ৪০ বছরে মাত্র ৩ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুত উৎপাদন হয়েছে। আর শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বর্তমান সরকারের মাত্র ৭ বছরে ১০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুত উৎপাদন হয়েছে। এ সময়ে প্রায় দুই হাজার কিলোমিটার বিদ্যুতের লাইন স্থাপন করেছি। তিনি বলেন, অতীতে বিএনপি সরকার দুর্নীতির কারণে এক মেগাওয়াট বিদ্যুত উৎপাদন করতে পারেনি। সে কারণে দলটি ‘খাম্বা সরকার’ টাইটেল পেয়েছে। সেই অবস্থা থেকে আমরা অনেক দূর এগিয়ে গিয়েছি। শতভাগ প্রি-পেইড মিটারের আমরা ব্যবস্থা করছি। এত অল্প সময়ের মধ্যে আলোকিত বাংলাদেশ সম্ভব হয়েছে একমাত্র প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিরলস পরিশ্রমের কারণে। দেশে শিক্ষার গুণগতমান অনেকে বেড়েছে Ñশিক্ষামন্ত্রী শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে বরাদ্দের বিরোধিতা করে বিরোধী দল ও স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যরা বলেছেন, পিইসি ও জেএসপি পরীক্ষা পদ্ধতি বাতিল করে এসএসসি পরীক্ষার ওপর জোর দেয়া উচিত। এমপিওভুক্ত না করায় সংসদ সদস্যরা প্রায়ই নানা প্রশ্নের মুখোমুখি হচ্ছেন। উন্নয়নের মূল বাধা হচ্ছে ঠিকাদার। এদের বিরুদ্ধে কঠোর আইন করলে দুর্নীতি অনেক কমবে। সামনে নির্বাচন। স্কুল-কলেজের শিক্ষকরাই কিন্তু নির্বাচনে প্রিসাইডিং অফিসারের দায়িত্ব পালন করেন। তাই এমপিওভুক্ত করা উচিত। জবাবে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেন, শিক্ষাকে যুগোপযোগী করতে সুদূরপ্রসারী লক্ষ্য নিয়ে আমরা এগুচ্ছি। সংসদে এইচ এম এরশাদ সাহেব বলেছেন, আমরা নাকি গরু-ছাগলদের পাস করাচ্ছি! তার মতো একজন ব্যক্তির এমন কথা বলা উচিত হয়নি। এতে করে শিক্ষার্থীদের মানসিকতা নষ্ট হবে। তিনি বলেন, শিক্ষার মান অবশ্যই বৃদ্ধি পেয়েছে। দেশে শিক্ষার মান কমে যাচ্ছে এটা বলা যেন অনেকের ফ্যাশনে পরিণত হয়েছে। মানসম্মত শিক্ষায় মানসম্মত শিক্ষক তৈরি করতেও আমরা ব্যাপক পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি। দুই বিলে রাষ্ট্রপতির সম্মতি ॥ জাতীয় সংসদে গৃহীত অর্থ বিল, ২০১৭ এবং নির্দিষ্টকরণ বিল, ২০১৭-এ সম্মতি জ্ঞাপন করেছেন রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ। বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদের গণসংযোগ শাখা থেকে প্রেরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। উল্লেখ্য, গত বুধবার জাতীয় সংসদে অর্থ বিল এবং বৃহস্পতিবার নির্দিষ্টকরণ বিল পাস হয়।
×